বেপরোয়া ছাত্রলীগ-নিয়ন্ত্রণ করতে হবে কঠোর হাতে

জ ছাত্রলীগের ৬৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৪৮ সাল থেকে এ ছাত্র সংগঠনটি জাতির প্রতিটি গৌরবের ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত। বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধ পর্যন্ত এ সংগঠনটির রয়েছে কেন্দ্রীয় ভূমিকা। স্বাধীনতার পরও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বহু গণতান্ত্রিক ও অগ্রসর আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। এমন একটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী খুবই গৌরবের বিষয়। স্বাভাবিকভাবেই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নেতাকর্মীদের অভিনন্দিত হওয়ার কথা। কিন্তু গতকাল পত্রিকায়


প্রকাশিত ছাত্রলীগের অপকর্মের বিভিন্ন বিবরণ যারা পড়েছেন তারা অভিনন্দন জানাতে কুণ্ঠিত হবেন। শুধু কুণ্ঠিত নয়, ঐতিহ্যবাহী এ সংগঠনের অতীত ইতিহাস যারা জানেন তারা লজ্জা বোধ করবেন। ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি ও বখরা আদায় ও হামলার জের ধরে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) বন্ধ হওয়ার খবরটি গতকাল বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে প্রতিটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। গুরুত্ব পেয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্রলীগের অপকীর্তির বিবরণ। ছাত্রদের ওপর হামলার দায়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রলীগ কর্মীকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনের মুখে। ক্যাম্পাসে ভাংচুর ও সন্ত্রাস সৃষ্টির জন্য নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ৬ ছাত্রলীগ কর্মীকে বহিষ্কারের সংবাদও গতকাল প্রকাশিত হয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে সেখানেও ছাত্রলীগের হাত রয়েছে। দেখা যাচ্ছে, দেশের চার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গত কয়েক দিনেই ছাত্রলীগের সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও অপতৎপরতার কারণে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। ছাত্রলীগ কর্মীদের বিচারের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন করতে হয়েছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিতে হয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, এটুকুতেই ছাত্রলীগের অপকর্মের বিবরণ শেষ হয় না। হলে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠনটি গোলাগুলি করেছে, নিজ সংগঠনের কর্মীর ওপর চড়াও হয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ৩ নেতাকর্মী। পত্রিকায় প্রকাশিত এসব খবর দেখে অনেকেই মনে করতে পারেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা সম্প্রতি বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গৌরবময় ইতিহাসের স্মৃতিচারণের বদলে অগৌরবের ইতিহাস সৃষ্টিতেই যেন ব্যস্ত তারা। এটি খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। এ ছাত্র সংগঠনটি ক্ষমতাসীন সরকারি দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। অভিযোগ আছে, ক্যাম্পাসগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের অপকর্মে মদদ দেয়। কোথাও কোথাও ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রশ্রয়ও থাকে। যদি তা-ই হয়, তবে তাদের এ বেপরোয়া আচরণের দায় সরকারের ওপরও বর্তাবে। সবচেয়ে বড় কথা, যে কোনো ছাত্র সংগঠনের সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, বখরা আদায়, ভাংচুরের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে তা থামানোর দায়িত্ব সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। গতকালের পত্রিকায় চার-চারটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের খবর এসেছে, যেগুলোতে অস্থিরতা তৈরির পেছনে ছাত্রলীগ ভূমিকা পালন করেছে। শিক্ষার পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থে ছাত্রলীগের মধ্যে থাকা সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, অস্ত্রবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। বর্তমান সরকারের সময় শিক্ষাঙ্গন অপেক্ষাকৃত শান্ত ছিল। ছাত্রলীগের কিছু অপকীর্তি ছাড়া বড় কোনো অসন্তোষ দেখা দেয়নি। আমরা চাই, এ স্থিতিশীল ধারা বজায় থাকুক। প্রকৃত সন্ত্রাসী নয়, প্রকৃত শিক্ষার্থীরাই ছাত্রলীগে থাকুক। প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক ও ন্যায়নিষ্ঠ রাজনীতির ধারায় সক্রিয় থাকুক ছাত্রলীগ। এ জন্য সংগঠনটির নেতাকর্মীদের কঠোর হস্তে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি থেকে সরিয়ে আনতে হবে। একের পর এক দুঃসংবাদ নয়, ইতিবাচক খবর তৈরি হোক তাদের মাধ্যমে_ এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

No comments

Powered by Blogger.