পুলিশে দুর্নীতি বাড়ছে, কমছে সেবার মান
পুলিশে দুর্নীতি বাড়ছে। বাড়ছে ক্ষমতার অপব্যবহার। কমছে সেবার মান। থানায় গিয়ে মানুষ প্রতিকার পাচ্ছে না। পাচ্ছে খারাপ ব্যবহার। তল্লাশি চৌকির নামে মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে। পুলিশের ‘চেইন অব কমান্ড’ ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে কি না, তা নিয়েও আলোচনা হতে পারে। পুলিশ সপ্তাহ উদ্বোধনের পর প্রথম অনুষ্ঠানেই বর্তমান পুলিশি ব্যবস্থার চিত্র এভাবে তুলে ধরেন আইজির পদমর্যাদাপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পুলিশের সমন্বয়ক ফণীভূষণ চৌধুরী।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর সম্মেলনে তাঁর এ বক্তব্য মিলনায়তনে উত্তাপ ছড়ায়। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার বেনজীর আহমেদ উত্তেজিত হয়ে বক্তব্যের মাঝেই ফণীভূষণকে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন।
গতকাল সকালে রাজারবাগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধন করেন। এরপর সম্মেলন শুরু হয়। সেখানে সারা দেশের পুলিশ সুপার (এসপি) ও তাঁর ওপরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সম্মেলনের শুরুতে উন্মুক্ত আলোচনায় পুলিশ কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ের সীমাবদ্ধতা ও চাহিদাগুলো তুলে ধরেন। তখন মিলনায়তনে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার ছিল না। প্রায় শেষের দিকে সাংবাদিকেরা যখন ঢোকেন তখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন পুলিশের জ্যেষ্ঠতম কর্মকর্তা ফণীভূষণ চৌধুরী।
পুলিশ সমন্বয়ক বলেন, ‘আমি মনে করি এবং জনগণও মনে করে, বিগত বছরে পুলিশের সেবার মান অনেকাংশে কমে গেছে। আমি থানার কথা সুনির্দিষ্টভাবে বলব। থানায় সেবার মান কমছে। থানায় গিয়ে মানুষ ভালো ব্যবহার পাচ্ছে না, প্রতিকার পাচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে থানায় মামলা বা জিডি নিতে অনীহা প্রকাশ করা হয়। এ ধরনের উদাহরণ ভূরি ভূরি আছে। ঢাকা মহানগরে চেকপোস্টের (তল্লাশি চৌকি) নামে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে। এসব অভিযোগ সম্পর্কে আমার চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও ভালো জানেন। আইজিপি জানেন কি না, জানি না।’
ফণীভূষণ এ সময় আরও বলেন, ‘এই সরকারের হাত ধরে পুলিশের অনেক অর্জন এসেছে। গত তিন বছরে আমরা যা পেয়েছি এত অল্প সময়ের মধ্যে এর আগের কোনো সরকার পুলিশকে দেয়নি। এত কিছু পাওয়ার পর আমরা করদাতা দেশের মানুষকে কতটুকু সেবা দিতে পেরেছি, সেটা মনে হয় এখন আত্মসমালোচনার দরকার। মাঠপর্যায়ের পরিদর্শকদের প্রথম শ্রেণী এবং উপপরিদর্শক ও সার্জেন্টদের দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নীত করা হয়েছে। কিন্তু তাঁদের কাছ থেকে জনগণকে সেবাদানের নিশ্চয়তা পাচ্ছি না। তার মানে কী, তাঁদের প্রশিক্ষণ, মোটিভেশন ঠিকমতো হচ্ছে না, ঠিকমতো জবাবদিহি নিশ্চিত করা হচ্ছে না?’
ফণীভূষণের এই বক্তব্যের মাঝেই তাঁকে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন ডিএমপি কমিশনার বেনজীর আহমেদ। একপর্যায়ে তিনি হাত তুলে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, ‘আমি এর জবাব দিতে চাই।’ ফণীভূষণ চৌধুরী বক্তব্য থামিয়ে বলেন, ‘আমি শেষ করি, আপনি পরে বলতে পারবেন।’ বেনজীর আহমেদ তারপরও কিছু বলার চেষ্টা করলে প্রতিমন্ত্রী ও আইজিপি তাঁকে বসতে বলেন। এ নিয়ে পুরো হলের ভেতর গুঞ্জন-কানাকানি শুরু হয়। কর্মকর্তারা নানা ধরনের মন্তব্য করতে শুরু করেন। সম্মেলনের পরও এ নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে উত্তপ্ত আলোচনা চলে।
ফণীভূষণ চৌধুরীর বক্তব্য শেষ হলে কর্মকর্তাদের শান্ত করতে আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার মাইক্রোফোনের সামনে গিয়ে বলেন, ‘আত্মজিজ্ঞাসার বিষয়টি চলমান প্রক্রিয়া। তবে সার্বিক প্রেক্ষাপটে একটা কথা বলতে পারি, তরুণ কর্মকর্তারা আমাদের আশার আলো দেখাচ্ছেন। তাঁরা আমাদের ভালো অবস্থায় নিয়েছেন। আগামীতে তাঁরা আরও ভাল করবেন।’ আইজির এ বক্তব্যের পর তরুণ কর্মকর্তারা সমর্থন জানিয়ে হাততালি দেন।
এর রেশ ধরে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক বলেন, ‘পুলিশ সমন্বয়ক কিছুটা অতিরিক্ত বললেও এর অস্তিত্ব আছে। দায়িত্ব পালনে কিছু ব্যর্থতা থাকা স্বাভাবিক। জেলায় যাঁরা দায়িত্বে আছেন, তাঁদের পুলিশের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করে আরও সুশৃঙ্খল হওয়া দরকার।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেন, দুর্নীতি একটি অপ্রিয় বাস্তবতা। এটা সারা বিশ্বে আছে। যারা দুর্নীতি করবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশ-সাংবাদিক যেই দুর্নীতি করুক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, থানায় ওসিদের বিরুদ্ধে নানা কথা শোনা যায়। এর কিছু ঠিকও হতে পারে।
উন্মুক্ত আলোচনা: এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতেই উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে পুলিশ কর্মকর্তারা বিভিন্ন অভাব-অভিযোগের কথা তুলে ধরে বলে সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা জানান। এ সময় সিআইডির প্রধান মোখলেসুর রহমান বলেন, পুলিশ সংস্কারের সবচেয়ে বড় দিক হলো এর আইন সংস্কার করা। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে একটি আইনের খসড়া তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়। খসড়াটি এখন ডিপফ্রিজে চলে গেছে।
পরে এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘পুলিশের সংস্কার দরকার। আমরা ধীরে ধীরে পুস্তকে (সংস্কার প্রস্তাব) যা আছে সেভাবে কাজ করছি। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে পারি, এটা ফাইলবন্দী হয়ে নেই। মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকেরা এ নিয়ে গবেষণা-পড়াশোনা করছেন।’ প্রতিমন্ত্রীর এ মন্তব্য শুনে উপস্থিত কর্মকর্তারা হেসে ওঠেন।
উন্মুক্ত আলোচনায় ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ বলেন, পুলিশের অনেক জরুরি সিদ্ধান্ত বছরের পর বছর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পড়ে থাকে। পৃথক পুলিশ বিভাগ থাকলে এ ধরনের জটিলতা তৈরি হতো না।
ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি আসাদুজ্জামান মিয়া বলেন, পুলিশ বাহিনীতে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মকর্তা নিয়োগেও মন্ত্রণালয়ের অনুমতি লাগে। এটা ডিআইজিদের হাতে দেওয়ার পক্ষে মত দেন তিনি।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার আবদুল বাতেন বলেন, গড়ে প্রতিদিন ১৩ জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (ভিআইপি) গাজীপুরের ওপর দিয়ে যাতায়াত করেন। পুলিশকে তাঁদের নিরাপত্তা দিতে হয়। এ জন্য অন্য কাজ করা যায় না। আসলেই কারা নিরাপত্তা পাবেন, তার একটি নীতিমালা থাকা উচিত।
মাদারীপুরের পুলিশ সুপার নজরুল হোসেন বলেন, র্যাব সদর দপ্তরের বাইরে ১২টি ব্যাটালিয়ন ও বিভিন্ন জেলায় ক্যাম্প রয়েছে। এসব ক্যাম্পের লোকজন নিজেদের মতো চলেন। জেলা পুলিশের অধীনে ক্যাম্পগুলো দিলে কাজের সুবিধা হবে।
র্যাবের মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমান এর বিরোধিতা করে বলেন, ক্যাম্পগুলো চলে র্যাবের ব্যাটালিয়নের অধীনে। কোনো বাহিনী তার কমান্ড ভাগাভাগি করতে পারে না।
বরগুনার পুলিশ সুপার মাহবুবর রহমান বলেন, চিঠিপত্র আনা-নেওয়ার জন্য পুলিশ কনস্টেবলদের মাসে মাত্র ৩০ টাকা ডাক-ভাতা দেওয়া হয়। এটা বাড়িয়ে ১০০ টাকা করা উচিত। তাঁর বক্তব্যের পর একাধিক পুলিশ সুপার বলেন, ডাক-ভাতা মাসে এক হাজার টাকা করা দরকার।
আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন অতিরিক্ত আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক। সম্মেলনের পরে ফণীভূষণের এসব মন্তব্য নিয়ে কথা বলতে চাইলে আইজিপি এবং ডিএমপি কমিশনার কিছু বলতে চাননি। পরে ফণীভূষণ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার যা বলার আমি সম্মেলনেই বলেছি।’
পুলিশের সাবেক আইজিপি এএসএম শাহজাহান এ বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রত্যেক জিনিসেরই ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক থাকে। এ ধরনের মিটিংয়ে অনেক সময়ই আসল সমস্যা উদ্ঘাটন করা হয় না। সেটা যদি কেউ করে তাহলে তা ইতিবাচক। মন্ত্রীরাও তাঁদের বলতে দিয়েছেন সেটাও তো ইতিবাচক। খালি ভালো ভালো সব ভালো এটাই বলে যাব, আর কোনো দিক খারাপ থাকলে বলব না, এটা ঠিক নয়।’
গতকাল সকালে রাজারবাগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধন করেন। এরপর সম্মেলন শুরু হয়। সেখানে সারা দেশের পুলিশ সুপার (এসপি) ও তাঁর ওপরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সম্মেলনের শুরুতে উন্মুক্ত আলোচনায় পুলিশ কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ের সীমাবদ্ধতা ও চাহিদাগুলো তুলে ধরেন। তখন মিলনায়তনে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার ছিল না। প্রায় শেষের দিকে সাংবাদিকেরা যখন ঢোকেন তখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন পুলিশের জ্যেষ্ঠতম কর্মকর্তা ফণীভূষণ চৌধুরী।
পুলিশ সমন্বয়ক বলেন, ‘আমি মনে করি এবং জনগণও মনে করে, বিগত বছরে পুলিশের সেবার মান অনেকাংশে কমে গেছে। আমি থানার কথা সুনির্দিষ্টভাবে বলব। থানায় সেবার মান কমছে। থানায় গিয়ে মানুষ ভালো ব্যবহার পাচ্ছে না, প্রতিকার পাচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে থানায় মামলা বা জিডি নিতে অনীহা প্রকাশ করা হয়। এ ধরনের উদাহরণ ভূরি ভূরি আছে। ঢাকা মহানগরে চেকপোস্টের (তল্লাশি চৌকি) নামে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে। এসব অভিযোগ সম্পর্কে আমার চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও ভালো জানেন। আইজিপি জানেন কি না, জানি না।’
ফণীভূষণ এ সময় আরও বলেন, ‘এই সরকারের হাত ধরে পুলিশের অনেক অর্জন এসেছে। গত তিন বছরে আমরা যা পেয়েছি এত অল্প সময়ের মধ্যে এর আগের কোনো সরকার পুলিশকে দেয়নি। এত কিছু পাওয়ার পর আমরা করদাতা দেশের মানুষকে কতটুকু সেবা দিতে পেরেছি, সেটা মনে হয় এখন আত্মসমালোচনার দরকার। মাঠপর্যায়ের পরিদর্শকদের প্রথম শ্রেণী এবং উপপরিদর্শক ও সার্জেন্টদের দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নীত করা হয়েছে। কিন্তু তাঁদের কাছ থেকে জনগণকে সেবাদানের নিশ্চয়তা পাচ্ছি না। তার মানে কী, তাঁদের প্রশিক্ষণ, মোটিভেশন ঠিকমতো হচ্ছে না, ঠিকমতো জবাবদিহি নিশ্চিত করা হচ্ছে না?’
ফণীভূষণের এই বক্তব্যের মাঝেই তাঁকে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন ডিএমপি কমিশনার বেনজীর আহমেদ। একপর্যায়ে তিনি হাত তুলে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, ‘আমি এর জবাব দিতে চাই।’ ফণীভূষণ চৌধুরী বক্তব্য থামিয়ে বলেন, ‘আমি শেষ করি, আপনি পরে বলতে পারবেন।’ বেনজীর আহমেদ তারপরও কিছু বলার চেষ্টা করলে প্রতিমন্ত্রী ও আইজিপি তাঁকে বসতে বলেন। এ নিয়ে পুরো হলের ভেতর গুঞ্জন-কানাকানি শুরু হয়। কর্মকর্তারা নানা ধরনের মন্তব্য করতে শুরু করেন। সম্মেলনের পরও এ নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে উত্তপ্ত আলোচনা চলে।
ফণীভূষণ চৌধুরীর বক্তব্য শেষ হলে কর্মকর্তাদের শান্ত করতে আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার মাইক্রোফোনের সামনে গিয়ে বলেন, ‘আত্মজিজ্ঞাসার বিষয়টি চলমান প্রক্রিয়া। তবে সার্বিক প্রেক্ষাপটে একটা কথা বলতে পারি, তরুণ কর্মকর্তারা আমাদের আশার আলো দেখাচ্ছেন। তাঁরা আমাদের ভালো অবস্থায় নিয়েছেন। আগামীতে তাঁরা আরও ভাল করবেন।’ আইজির এ বক্তব্যের পর তরুণ কর্মকর্তারা সমর্থন জানিয়ে হাততালি দেন।
এর রেশ ধরে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক বলেন, ‘পুলিশ সমন্বয়ক কিছুটা অতিরিক্ত বললেও এর অস্তিত্ব আছে। দায়িত্ব পালনে কিছু ব্যর্থতা থাকা স্বাভাবিক। জেলায় যাঁরা দায়িত্বে আছেন, তাঁদের পুলিশের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করে আরও সুশৃঙ্খল হওয়া দরকার।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেন, দুর্নীতি একটি অপ্রিয় বাস্তবতা। এটা সারা বিশ্বে আছে। যারা দুর্নীতি করবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশ-সাংবাদিক যেই দুর্নীতি করুক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, থানায় ওসিদের বিরুদ্ধে নানা কথা শোনা যায়। এর কিছু ঠিকও হতে পারে।
উন্মুক্ত আলোচনা: এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতেই উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে পুলিশ কর্মকর্তারা বিভিন্ন অভাব-অভিযোগের কথা তুলে ধরে বলে সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা জানান। এ সময় সিআইডির প্রধান মোখলেসুর রহমান বলেন, পুলিশ সংস্কারের সবচেয়ে বড় দিক হলো এর আইন সংস্কার করা। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে একটি আইনের খসড়া তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়। খসড়াটি এখন ডিপফ্রিজে চলে গেছে।
পরে এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘পুলিশের সংস্কার দরকার। আমরা ধীরে ধীরে পুস্তকে (সংস্কার প্রস্তাব) যা আছে সেভাবে কাজ করছি। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে পারি, এটা ফাইলবন্দী হয়ে নেই। মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকেরা এ নিয়ে গবেষণা-পড়াশোনা করছেন।’ প্রতিমন্ত্রীর এ মন্তব্য শুনে উপস্থিত কর্মকর্তারা হেসে ওঠেন।
উন্মুক্ত আলোচনায় ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ বলেন, পুলিশের অনেক জরুরি সিদ্ধান্ত বছরের পর বছর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পড়ে থাকে। পৃথক পুলিশ বিভাগ থাকলে এ ধরনের জটিলতা তৈরি হতো না।
ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি আসাদুজ্জামান মিয়া বলেন, পুলিশ বাহিনীতে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মকর্তা নিয়োগেও মন্ত্রণালয়ের অনুমতি লাগে। এটা ডিআইজিদের হাতে দেওয়ার পক্ষে মত দেন তিনি।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার আবদুল বাতেন বলেন, গড়ে প্রতিদিন ১৩ জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (ভিআইপি) গাজীপুরের ওপর দিয়ে যাতায়াত করেন। পুলিশকে তাঁদের নিরাপত্তা দিতে হয়। এ জন্য অন্য কাজ করা যায় না। আসলেই কারা নিরাপত্তা পাবেন, তার একটি নীতিমালা থাকা উচিত।
মাদারীপুরের পুলিশ সুপার নজরুল হোসেন বলেন, র্যাব সদর দপ্তরের বাইরে ১২টি ব্যাটালিয়ন ও বিভিন্ন জেলায় ক্যাম্প রয়েছে। এসব ক্যাম্পের লোকজন নিজেদের মতো চলেন। জেলা পুলিশের অধীনে ক্যাম্পগুলো দিলে কাজের সুবিধা হবে।
র্যাবের মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমান এর বিরোধিতা করে বলেন, ক্যাম্পগুলো চলে র্যাবের ব্যাটালিয়নের অধীনে। কোনো বাহিনী তার কমান্ড ভাগাভাগি করতে পারে না।
বরগুনার পুলিশ সুপার মাহবুবর রহমান বলেন, চিঠিপত্র আনা-নেওয়ার জন্য পুলিশ কনস্টেবলদের মাসে মাত্র ৩০ টাকা ডাক-ভাতা দেওয়া হয়। এটা বাড়িয়ে ১০০ টাকা করা উচিত। তাঁর বক্তব্যের পর একাধিক পুলিশ সুপার বলেন, ডাক-ভাতা মাসে এক হাজার টাকা করা দরকার।
আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন অতিরিক্ত আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক। সম্মেলনের পরে ফণীভূষণের এসব মন্তব্য নিয়ে কথা বলতে চাইলে আইজিপি এবং ডিএমপি কমিশনার কিছু বলতে চাননি। পরে ফণীভূষণ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার যা বলার আমি সম্মেলনেই বলেছি।’
পুলিশের সাবেক আইজিপি এএসএম শাহজাহান এ বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রত্যেক জিনিসেরই ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক থাকে। এ ধরনের মিটিংয়ে অনেক সময়ই আসল সমস্যা উদ্ঘাটন করা হয় না। সেটা যদি কেউ করে তাহলে তা ইতিবাচক। মন্ত্রীরাও তাঁদের বলতে দিয়েছেন সেটাও তো ইতিবাচক। খালি ভালো ভালো সব ভালো এটাই বলে যাব, আর কোনো দিক খারাপ থাকলে বলব না, এটা ঠিক নয়।’
No comments