পুলিশের প্রতি প্রধানমন্ত্রী-মানবাধিকার রক্ষায় সর্বোচ্চ সতর্ক থাকুন

পুলিশের পাঁচটি পদ 'এ' গ্রেডে (সচিব পদমর্যাদা) উন্নীত করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া পরিদর্শক পদ প্রথম এবং উপপরিদর্শক পদ দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নীত করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স মাঠে পুলিশ সপ্তাহ-২০১২ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশে না থাকলেও বিশেষ বিবেচনায় সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা যখন পুলিশি দায়িত্ব পালন করবেন, তখন যাতে


কোনোভাবেই জনগণের মানবাধিকার লঙ্ঘিত না হয়, সে দিকটি সর্বোচ্চ বিবেচনায় রাখতে এবং নারী ও শিশুর প্রতি আরও সহানুভূতিশীল হতে হবে। পুলিশের সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পেঁৗছে দিতে সরকারের নানা পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে ২০২টি
ক্যাডার পদসহ ২১ হাজার নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। অবশিষ্ট ৫৩১টি ক্যাডার পদসহ ১১ হাজার ৩১টি পদ সৃষ্টির প্রক্রিয়ায় রয়েছে। পুলিশ বাহিনীতে ৩২ হাজার ৩১টি ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পদ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 'এ' গ্রেডে পাঁচটি পদ সৃষ্টির পরিকল্পনা রয়েছে। তিন মাসের মধ্যে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে পুলিশ বাহিনীতে 'এ' গ্রেডভুক্ত দুটি পদ (আইজি ও পুলিশ বাহিনীর সমন্বয়ক) রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী অপরাধী শনাক্ত করতে প্রচলিত সোর্স নির্ভরতা কমিয়ে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের প্রতি নির্দেশ দেন। এ ছাড়া পুলিশের প্রত্যেক সদস্যকেই পুলিশিংয়ে দক্ষ হয়ে ওঠারও নির্দেশ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উত্তরণ, জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থি দমন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা এবং বিডিআর হত্যাযজ্ঞের তদন্তসহ বিভিন্ন কাজে আপনাদের দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রশংসিত। আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা আছে, কিন্তু পেশাদারিত্ব ও আন্তরিকতার মাধ্যমে সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে আপনারা অনেক ভালো কাজ করতে পারেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে, তখনই পুলিশ বাহিনীর উন্নয়নে কাজ করেছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার পুলিশের বাজেট ৬০০ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০০ কোটি টাকায় উন্নীত এবং আপনাদের জন্য ঝুঁকি ভাতা ও কল্যাণ তহবিল গঠন করেছিল। আগামী বাজেটে ঝুঁকি ভাতা বৃদ্ধির চেষ্টা করা হবে।
তিনি বলেন, এবার আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পুলিশ বাহিনীর জন্য ৮৭৫টি পিকআপ, ২ হাজার ৯১৩টি মোটরসাইকেল কেনা হয়েছে। কান্ট্রি বোট ও রেসকিউ বোট কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সারাদেশে ৩০টি ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার ও চারটি পিটিসির জনবল বাড়ানোর কাজ চলছে।
প্রশিক্ষণ ভাতার বিষয়টিও সরকারের বিবেচনাধীন রয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। শিল্প-পুলিশ দেশের শিল্প এলাকাগুলোতে যেভাবে কাজ করছে, সেভাবে ট্যুরিস্ট পুলিশ, মেরিন পুলিশ ও ক্যাম্পাস পুলিশ বাহিনী গঠনেও কাজ করছে সরকার। ভিভিআইপি, বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় স্বয়ংসম্পূর্ণ এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ফোর্স গঠনের বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, সন্ত্রাসী ও জঙ্গি কার্যক্রম দমনে ন্যাশনাল পুলিশ ব্যুরো অব কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট গঠনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। একটা স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রযুক্তিনির্ভর পৃথক পুলিশ ইউনিট গঠনের কাজও এগিয়ে চলেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক মন্দা সত্ত্বেও গত অর্থবছরে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ জিডিপি অর্জিত হয়েছে। এ পর্যন্ত ২ হাজার ৮৯৪ মেগাওয়াট নতুন বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করেছি; কিন্তু কোনো কোনো মহল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করতে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। আপনাদের সেসব অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সজাগ থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এ বাংলার মাটিতে হবেই।
প্রধানমন্ত্রী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে শহীদ পুলিশ সদস্যদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। এর আগে তিনি সুসজ্জিত প্যারেড পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন। বীরত্বপূর্ণ ও ধারাবাহিক অবদানের জন্য ৫৯ পুলিশ সদস্যের মধ্যে পদক বিতরণ করেন তিনি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) হাসান মাহমুদ খন্দকার ও অতিরিক্ত আইজি (প্রশাসন) শহিদুল হক। ৭ জানুয়ারি বোটানিক্যাল গার্ডেনে রাউন্ডআপ কনফারেন্সের মাধ্যমে পাঁচ দিনের পুলিশ সপ্তাহ শেষ হবে।

No comments

Powered by Blogger.