মনের জানালা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহতাব খানম দীর্ঘদিন ধরে কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিষয়টি পড়াচ্ছেন। তিনি আপনার মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান দেবেন। অল্প কথায় আপনার সমস্যা তুলে ধরুন। আপনার সঠিক পরিচয় না দিতে চাইলে অন্য কোনো নাম ব্যবহার করুন।


স্থানস্বল্পতার কারণে সব চিঠির উত্তর দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। আমরা দুঃখিত।
—বি. স.
সমস্যা: আমি দোকানে কাজ করি। সমস্যা হচ্ছে প্রায়ই খুব প্রয়োজনীয় এবং সাধারণ কথাও ভুলে যাই। এমনকি মানুষের চেহারাও ঠিকমতো মনে রাখতে পারি না। আত্মীয়স্বজন থেকে শুরু করে সেলিব্রেটিদের শনাক্ত করতেও ধাঁধায় পড়ে যাই। বই অথবা কোনো লেখা পড়লে কিছুদিন পর তার প্রায় কিছুই মনে থাকে না। কখনো কখনো দেখা যায়, একই লেখা নতুন মনে করে তিনবারও পড়েছি। পাশাপাশি বলে রাখি, আমার ঘুমের কোনো সমস্যা হয় না এবং মাথায় বড় কোনো আঘাতও লাগেনি। তবে কেন এমন হচ্ছে? এটা কি মনোযোগের অভাব? নাকি এমনটা হতেই পারে, এসব নিয়ে খুবই বিব্রতকর অবস্থায় আছি।
অনিত্য
তারাকান্দা, ময়মনসিংহ।

পরামর্শ: তুমি দোকানে কী ধরনের কাজ করো, তা উল্লেখ করোনি। এই ভুলে যাওয়াটা তোমার কাজের ক্ষেত্রে কী প্রভাব ফেলছে, জানালে ভালো হতো। তবে বোঝা যাচ্ছে, এ ব্যাপারটি তোমাকে মানসিকভাবে বিব্রত করছে। এটা কি ছোটবেলা থেকেই হচ্ছে? তাহলে বুঝতে হবে তোমার মনোযোগের অভাব রয়েছে। আর যদি সাম্প্রতিককালে হয়, তাহলে ধরে নেওয়া যেতে পারে যে তোমার জীবনে কোনো মানসিক চাপ সৃষ্টির মতো ঘটনা ঘটেছে। ইতিবাচক দিকটি হচ্ছে, তোমার ঘুমের কোনো সমস্যা নেই। ঘুম ভালো হলে কিন্তু আমরা মানসিক ও শারীরিকভাবে বেশ ভালো থাকতে পারি। খুব জরুরি যে বিষয়, সেগুলো প্রতিদিন একটি নোটবুকে লিখে রাখবে। দিন শুরু করার আগে দেখে নেবে সেদিন কোন কাজগুলো করা দরকার। এ ছাড়া মনোযোগ বাড়ানোর জন্য তুমি মেডিটেশন করতে পারো। দিনের কোনো একটি সময়ে বিশেষ কোনো দৃশ্য বা বস্তু বা আওয়াজের প্রতি সম্পূর্ণ মনোনিবেশ করে বেশ কিছুক্ষণ নিজের ইন্দ্রিয়গুলো ব্যস্ত রাখবে। এই সময়ে অন্য কোনো চিন্তা মাথায় আনবে না। এ ছাড়া নিঃশ্বাসের ব্যায়াম করলে মানসিক চাপ অনেক কমে যায়। যোগব্যায়ামের কোনো বই বা সিডি সংগ্রহ করে সেগুলো চর্চা করতে পারলে খুব উপকার পাবে। তোমার সমস্যাটি খুব গুরুতর মনে হচ্ছে না। আমরা সবাই প্রতিদিন কমবেশি প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো ভুলে যাই। তুমি বই পড় জেনে খুব ভালো লাগল।
সমস্যা: আমরা দুজন দুজনকে দেখেই প্রেম করছি। আমাদের প্রেম প্রায় তিন মাস হচ্ছে। কিন্তু কিছুদিন পর আমার নম্বরে অন্য একটি মেয়ে কথা বলতে চায় এবং তিন-চার দিন কথাও বলেছি। বিষয়টা আমার পছন্দের মানুষকেও জানিয়েছি। ওই মেয়ে আমাকে ভালোবাসতে চায়। কিন্তু তাকে বলে দিই যে আমি প্রেম করছি। সে তবু আমাকে ভালোবাসতে চায়। আমার নম্বরে মিসড কল দেয়। আসল কথা হচ্ছে, সে আমাকে
নাকি কোনো দিন দেখেনি। আমিও তাকে আদৌ দেখিনি। আমার প্রেমিকা কিন্তু আমাকে অনেক বিশ্বাস করে। আমিও তাকে কম বিশ্বাস করি না। আমি ওই মেয়েকে কীভাবে বোঝাব যে ওকে ভালোবাসা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

পরামর্শ: ভালোবাসা বলতে তোমরা আসলে কী বোঝো, তা নিজেদের কাছে পরিষ্কার করলে ভালো হয়। প্রকৃত ভালোবাসার সম্পর্ক কী এত অল্প সময়ে হতে পারে? প্রথমে পরস্পরকে একজন ভালো বন্ধু এবং পরম শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে নিতে হবে। দুজনের ভালো গুণাবলির সঙ্গে যে ত্রুটিগুলো রয়েছে, সেগুলো মেনে নেওয়ার মতো মনোভাব থাকতে হবে। যদি বুঝতে পারো তোমরা পরস্পরকে যে যেমন আছে সেভাবে শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস করতে পারো, তাহলেই ধীরে ধীরে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে। মেয়েটি তোমাকে ‘ভালোবাসতে চায়’ এ কথাটি কিছুটা মেকি শোনায়, তাই না? তা ছাড়া তুমি যখন বলছ, তুমি অন্য একজনকে ভালোবাসো, তখন তোমাকে এ ধরনের প্রস্তাব দেওয়াটা খুব শোভন নয়। তুমি যাকে ভালোবাসো, তার প্রতি তুমি যদি সত্যিই অঙ্গীকারবদ্ধ থাকো এবং তোমার অনুভূতি আন্তরিক হয়, তাহলে অন্য মেয়ের সঙ্গে কোনো রকম সম্পর্ক রাখাটা ভুল ও অন্যায় হবে। তার সঙ্গে কেবল বন্ধুত্বও রাখা যাবে না। কারণ, মেয়েটি তো তোমাকে অন্যভাবে চাইছে। তোমাকে অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে খুব অল্প কথায় বলে দিতে হবে তুমি ওর প্রস্তাবে অপারগ। এরপর মেয়েটির ফোন আর ধরবে না, কেমন? এই একাধিক অনৈতিক সম্পর্ক জীবনে অনেক জটিলতা সৃষ্টি করছে, পড়ালেখা, কাজকর্মে ক্ষতি হচ্ছে। অচেনা-অজানা মানুষের সঙ্গে এই অবিরাম আলাপচারিতা মোটেও সুস্থতা নির্দেশ করে না। আলোচনার বিষয়গুলো খুব রুচিকর ও ভদ্র পর্যায়ে থাকে না। আশা করি তুমি এই আসক্তিতে ঢুকে না গিয়ে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাববে। অসুস্থ চর্চা জীবনে কী ক্ষতি বয়ে নিয়ে আসছে, তা বোঝার চেষ্টা করবে।

No comments

Powered by Blogger.