বললেন প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন-মিয়ানমার থেকে বিতাড়নই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান

রোহিঙ্গাদের বিতাড়ন বা জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) পরিচালিত আশ্রয় শিবিরে পাঠানোই রোহিঙ্গা সমস্যার ‘একমাত্র সমাধান’ বলে মন্তব্য করেছেন মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন। গত বৃহস্পতিবার ইউএনএইচসিআরের প্রধান অ্যান্টনিও গার্টারের কাছে তিনি এমন মন্তব্য করেন।


তবে রোহিঙ্গাদের দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়টি নাকচ করেছেন গার্টার। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন বা দায়িত্ব নেওয়া ইউএনএইচসিআরের দায়িত্ব নয়।
রোহিঙ্গারা বিশেষ করে মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে বাস করছে। তবে মিয়ানমার তাদের নাগরিকত্ব দেয়নি। বিভিন্ন সময় সীমান্ত পেরিয়ে তারা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। সম্প্রতি রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে স্থানীয় বৌদ্ধদের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় অন্তত ৮০ জন নিহত হয়। এ সময় রোহিঙ্গারা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করলে বাংলাদেশ সরকার তাদের ফেরত পাঠায়। তাই রোহিঙ্গা সমস্যা নতুন করে আলোচনায় আসে। মিয়ানমারে প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে।
মিয়ানমারের প্রেসিডেন্টের ওয়েবসাইটের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, থেইন সেইন বলেছেন, ‘নৃতাত্ত্বিকভাবে যারা আমাদের জনগণ, আমরা তাদের দায়িত্ব নেব। কিন্তু মিয়ানমারে অবৈধভাবে প্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের দায়িত্ব নেওয়া আমাদের পক্ষে অসম্ভব। রোহিঙ্গারা নৃতাত্ত্বিকভাবে আমাদের জনগণ নয়।’
সাবেক জেনারেল থেইন সেইন বলেন, ‘আমাদের মতে, রোহিঙ্গাদের ইউএনএইচসিআরের পরিচালনায় শরণার্থী শিবিরে পাঠানোই এই সমস্যার একমাত্র সমাধান। যদি তৃতীয় কোনো দেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে চায়, তাহলে আমরা রোহিঙ্গাদের সেখানে পাঠিয়ে দেব।’ থেইন সেইন বর্তমান রোহিঙ্গা সমস্যাকে তাঁর দেশে চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার ও গণতন্ত্রের পথে অগ্রযাত্রার হুমকি বলে উল্লেখ করেন।
রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে মিয়ানমারের প্রেসিডেন্টের এই অবস্থান নাকচ করে দিয়ে ইউএনএইচসিআরের প্রধান অ্যান্টনিও গার্টার বলেন, ‘ইউএনএইচসিআর শুধু সেই ধরনের উদ্বাস্তু মানুষের দায়িত্ব নেয়, যারা বিশেষ কোনো বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে এক দেশ থেকে পালিয়ে অন্য দেশে আশ্রয় নেয়। কিন্তু রোহিঙ্গা সমস্যাটি একেবারেই তেমন কোনো বিষয় নয়।’
ইউএনএইচসিআরের এশিয়ার মুখপাত্র কিট্টি ম্যাককিনসে বলেন, ‘মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নিজের নাগরিক বলেই মনে করে না। আমরা মনে করি, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হলো তাদের নাগরিকত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করা। তাই আমরা রোহিঙ্গাদের অন্য কোথাও পুনর্বাসন করার বিষয়ে সহায়তা করব না। শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা হয়ে আমরা শরণার্থী তৈরি করতে পারি না।’
ইউএনএইচসিআরের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমারের বাইরে বাস করছে। বাংলাদেশ বা মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের রাখতে চাইছে না। তৃতীয় কোনো দেশও রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে রাজি নয়। এএফপি ও ওয়াশিংটন পোস্ট।

No comments

Powered by Blogger.