সাত স্তর পাঁচ রং- শুধু চা নয়, যেন এক কাপ রহস্য-শ্রীমঙ্গলের রমেশ রামের অভিনব উদ্ভাবন by মোরসালিন মিজান
শ্রীমঙ্গল থেকে ফিরে ॥ হ্যাঁ, শুধু চা বলা মুশকিল, বরং এক কাপ রহস্য! আর এ রহস্যের স্রষ্টা শ্রীমঙ্গলের রমেশ রাম গৌড়। সরল সাদা দেখতে মানুষটি। কিন্তু ভীষণ রঙিন চা তৈরি করেন। এক কাপ চায়ে সাতটি স্তর! পাঁচ পাঁচটি স্বতন্ত্র রং! বিশ্বাস করা কঠিন। তবে ঘটনা সত্য।
আর তাই এক সময়ের সাধারণ চা বিক্রেতার খ্যাতি এখন সিনেমার নায়কের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। সিলেট শ্রীমঙ্গল তো বটেই, গোটা দেশের লোক তাঁকে চেনে। চা বাগানের নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি আলাদা সময় করে নীকণ্ঠে যান তাঁরা। রমেশের চায়ের স্বাদ নেন। যাঁদের চায়ের অত তেষ্টা নেই সেই তারাও একবার ঢুঁ না মেরে পারেন না। এ কারণে শহরতলীর কালীঘাট সড়কের দোকানটি রীতিমতো পর্যটন স্পট এখন।
গত বুধবার সন্ধ্যায় সেখানে গিয়ে দেখা যায়, চমৎকার খোলামেলা পরিবেশ। দোকানের ভেতরে বসার জায়গা। বাইরেও তাই। সবখানে উৎসবের আমেজ। চায়ের আপ্যায়ন। কৌতুহলীরা এক স্তর দুই স্তর করে সপ্তম স্তর পর্যন্ত অর্ডার করছেন। কাপ ঘুরিয়ে দেখছেন। ছোট করে চুমুক দিচ্ছেন। ঘ্রাণ নিচ্ছেন। সে কি ভাললাগার অনুভূতি! কেউ কেউ আবার দোকানের ভেতরের একটি প্রশস্ত দেয়ালের দিকে ঝুঁকে ছিলেন। কাছে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে দেশের প্রায় সব জাতীয় দৈনিকের কাটিং। চমৎকার করে সাজানো। সাত স্তরবিশিষ্ট চায়ের প্রশংসা করে লেখা প্রতিবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে চা আর চায়ের উদ্ভাবকের ছবি। বিদেশী চা-প্রেমী ও গবেষকদের মুগ্ধতা অনুমান করা যায় আলাদা করে সাজানো ইংরেজী কাটিংগুলো দেখে। এগুলো বিভিন্ন সময় বিদেশের পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছে। ইন্টারনেটের চা সংক্রান্ত আলোচনায় প্রবেশ করলেও পাওয়া যায় রমেশ রাম গৌড়কে। টেলিভিশনেও নিয়মিত বিরতিতে সাক্ষাতকার যাচ্ছে তাঁর। সব মিলিয়ে যথেষ্ট উজ্জ্বল তারকাটি তিনি। তাই তাঁকে মাত্রই চেনা গেল। চুপ করে বসেছিলেন ক্যাশ কাউন্টারে। মাঝে মধ্যেই উঠে যাচ্ছিলেন পাশের রান্নাঘরে। বোঝা যাচ্ছিল, এখনও নিজ হাতে চা বানান। তদারকি করেন।
এরই একপর্যায়ে এই প্রতিবেদক চায়ের অর্ডার করেন। আধাঘণ্টা পর চা আসে। না ঠিক কাপে নয়, মগ ভর্তি চা। বাইরের অংশে দেখা যায়, পাঁচটি স্বতন্ত্র রং। পরিষ্কার সাতটি ভাগে বিভক্ত। চায়ের গরম ধোঁয়ার সঙ্গে অদ্ভুত সুন্দর ঘ্রাণ যেন আহ্বান করেÑ চুমুক দিন। আর চুমুক দেয়ামাত্রই নতুন বিস্ময়! একেকটি স্তরের স্বাদ একেক রকম। একটি স্তর শেষ হলে নতুন আরেকটি স্বাদ দিয়ে শুরু হয় পরের স্তর। এভাবে যত নিচে নামা যায় ততই বাড়ে স্বাদ। পুরো কাপ শেষ করতে করতে কথা হয় রমেশ রাম গৌড়ের সঙ্গে। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, অনেকেই আমাকে শ্রীমঙ্গলের মানুষ জানেন। আমার গ্রামের বাড়ি আসলে ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছায়। হঠাৎ বাবা মারা যাওয়ার পর বড় বিপদ নেমে এসেছিল জীবনে। অগত্যা ভাগ্যের অন্বেষণে বের হই। ২০০০ সালের মার্চে এসে পৌঁছি চা বাগান পরিবেষ্টিত শ্রীমঙ্গল শহরে। সঙ্গে তখন স্ত্রী, তিন ছেলে ও দুই মেয়ে। পকেটে সাকল্যে ১ হাজার ৫শ’ টাকা। রমেশ জানান, এর পর এই কাজ ওই কাজ হয়ে চায়ের দোকান দেন তিনি। বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট সংলগ্ন কাকিয়াছড়া চা বাগানের পাশের একটি জায়গায় আর দশজনের মতো ব্যবসা শুরু করেন। তবে কাজের প্রতি প্রেম ছিল। তাই চা কত ভাল করা যায় সেদিকে ছিল দৃষ্টি। রাতে দোকান বন্ধ করার পর চা নিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা-নীরিক্ষা করতেন। এভাবে আজকের চা তৈরি সম্ভব হয় বলে জানান তিনি। প্রথমে দুই স্তর চা। পরে ধীরে ধীরে এক গ্লাসে সাতটি স্তর তৈরি করতে সমর্থ হন তিনি। রমেশ জানান, সরকারের টি বোর্ডসহ দেশী-বিদেশী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাঁর চা পরীক্ষা করেছে। কিন্তু কেমিক্যাল কিংবা অস্বাভাবিক কোন উপাদান খুঁজে পায়নি। এর পর থেকে তাঁরা উল্টো তাঁর কাস্টমার হয়েছেন। নিয়মিত চা খেতে আসেন। কিন্তু চায়ে বাড়তি কী দেন আপনি? এত ভাল স্বাদ কী করে হয়? উত্তরে তিনি যা বলেন তা অনেকের বিশ্বাসই হবে না। রমেশ বলেন, আর দশজনের মতো বাজার থেকে পাতা সংগ্রহ করে চা তৈরি করি। সঙ্গে অন্য অনেকের মতো ব্যবহার করি আদা, দারচিনি, লং, এলাচি ইত্যাদি মসলা। লেবুও মিশিয়ে নেই। দুধ চায়ে ব্যবহার করি গরুর খাঁটি দুধ। এই তো! তবে কোন্ চায়ে কোন্ উপাদান কিংবা কোন্ কোন্ উপাদান কী পরিমাণে ব্যবহার করবেন তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। তবে এর বেশিকিছু কখনও বলেন না তিনি। কৌশলটি লুকিয়ে রেখে চলেছেন দিনের পর দিন। তাই সাত স্তর চা তৈরির এ কৌশল আজ অবধি বাইরে কোথাও প্রকাশিত হয়নি। শিখিয়েছেন কেবল নিজের তিন ছেলে আর এক ভাইকে। তাও দিব্যি দিয়েছেনÑ কাউকে শেখানো যাবে না। এই ভাই ও সন্তানেরা এখন তাঁর চায়ের দোকানেই কাজ করছে। দিব্যির ব্যাপারে যারপরনাই সতর্ক তারা। মজার ব্যাপার হচ্ছে, বিয়ের পর মেয়েরা অন্যের ঘরে চলে যাবে বলে তাদেরও কৌশলটি তিনি শেখাননি। জানা যায়, দোকানে তিনি চা তৈরি করেন দরজা বন্ধ করে! একই কারণে নিজের দোকানের বাইরে গিয়ে কোথাও চা তৈরি করেন না। সিসিটিভি, টেলিভিশন ক্যামেরার ব্যাপারে দারুণ সতর্ক থাকেন। রমেশ চান, তাঁর চা শ্রীমঙ্গলে এসেই খেয়ে যাক সবাই। এ কারণেই এমন লুকোচুরি বলে জানান তিনি। মৃত্যু পর্যন্ত এ গোপনীয়তা বজায় রাখার ইচ্ছা তাঁর।
তবে রহস্যের সন্ধান করা মানুষের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। হয়ত তাই প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে নীলকণ্ঠে যাচ্ছেন তাঁরা। নিজের মতো করে বোঝার চেষ্টা করছেন চা রহস্য। দেশের ভিআইপি, ভিভিআইপি অতিথিরা হরহামেশা যাচ্ছেন। বিদেশী পর্যটকরা তো নিয়মিত কাস্টমার। বর্তমানে তাঁর নীলকণ্ঠ চা ক্যাবিনে সাত লেয়ারের চা ৭০ টাকা, ছয় লেয়ারের চা ৬০ টাকা, পাঁচ লেয়ারের চা ৫০ টাকা, চার লেয়ারের চা ৪০ টাকা, তিন লেয়ারের চা ২০ টাকা, দুই লেয়ারের চা ১০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এর বাইরে একটি চা-কে তিনি বলেন, হাই স্পেশাল চা। এর দাম ২০ টাকা। স্পেশাল দুধ চা ১০ টাকা। গ্রীন চা, আদা চা, লাল চা, লেবু চা পাঁচ টাকা করে। তবে দামের পার্থক্য যাই হোক না কেন, সব ক্ষেত্রেই স্বাদটি অসাধারণ। এ কারণে অনেকেই তাঁকে বিদেশে নিয়ে যেতে চেয়েছেন। ওখানে গিয়ে চা বানানোর প্রস্তাব করেছেন। বাড়ি গাড়ির কথা বলেছেন। কিন্তু তিনি রাজি হননি। কারণ, নিজের দেশকে তিনি ভালবাসেন। লক্ষণীয় যে, এই উদ্ভাবককেও একই রকম ভালবাসেন শ্রীমঙ্গলের মানুষ। তাঁর চা-কে নিজেদের এলাকার উদ্ভাবন ভেবে গর্ব করেন। ‘র’ বললেই হলো। নিয়ে যান রমেশের দোকানে। তাঁদের এমন ভালবাসায় সত্যি কৃতজ্ঞ রমেশ রাম। বলেন, এলাকার মানুষ সব সময় আমাকে সাহায্য করেন। আর যাঁরা সারাদেশে থেকে, বিদেশ থেকে তাঁর চা পান করতে আসেন তাঁদের দেখে মন ভরে যায় তাঁর। বলেন, অনেক বড় বড় মানুষ আছেন শ্রীমঙ্গলে। তাঁদের ওখানে সবাই যান না কিন্তু আমার এখানে আসেন। এর পর আর কোন কথা আছে? আসলেই তো, এর পর আর কোন কথা থাকে? তাই আলোচনা এখানেই শেষ হয়। তবে চা পানের স্বাদটি অভিজ্ঞতাটি থেকে যায়। এ অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই আরও বহুকাল মানুষকে দিয়ে যাবে নীলকণ্ঠে।
গত বুধবার সন্ধ্যায় সেখানে গিয়ে দেখা যায়, চমৎকার খোলামেলা পরিবেশ। দোকানের ভেতরে বসার জায়গা। বাইরেও তাই। সবখানে উৎসবের আমেজ। চায়ের আপ্যায়ন। কৌতুহলীরা এক স্তর দুই স্তর করে সপ্তম স্তর পর্যন্ত অর্ডার করছেন। কাপ ঘুরিয়ে দেখছেন। ছোট করে চুমুক দিচ্ছেন। ঘ্রাণ নিচ্ছেন। সে কি ভাললাগার অনুভূতি! কেউ কেউ আবার দোকানের ভেতরের একটি প্রশস্ত দেয়ালের দিকে ঝুঁকে ছিলেন। কাছে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে দেশের প্রায় সব জাতীয় দৈনিকের কাটিং। চমৎকার করে সাজানো। সাত স্তরবিশিষ্ট চায়ের প্রশংসা করে লেখা প্রতিবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে চা আর চায়ের উদ্ভাবকের ছবি। বিদেশী চা-প্রেমী ও গবেষকদের মুগ্ধতা অনুমান করা যায় আলাদা করে সাজানো ইংরেজী কাটিংগুলো দেখে। এগুলো বিভিন্ন সময় বিদেশের পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছে। ইন্টারনেটের চা সংক্রান্ত আলোচনায় প্রবেশ করলেও পাওয়া যায় রমেশ রাম গৌড়কে। টেলিভিশনেও নিয়মিত বিরতিতে সাক্ষাতকার যাচ্ছে তাঁর। সব মিলিয়ে যথেষ্ট উজ্জ্বল তারকাটি তিনি। তাই তাঁকে মাত্রই চেনা গেল। চুপ করে বসেছিলেন ক্যাশ কাউন্টারে। মাঝে মধ্যেই উঠে যাচ্ছিলেন পাশের রান্নাঘরে। বোঝা যাচ্ছিল, এখনও নিজ হাতে চা বানান। তদারকি করেন।
এরই একপর্যায়ে এই প্রতিবেদক চায়ের অর্ডার করেন। আধাঘণ্টা পর চা আসে। না ঠিক কাপে নয়, মগ ভর্তি চা। বাইরের অংশে দেখা যায়, পাঁচটি স্বতন্ত্র রং। পরিষ্কার সাতটি ভাগে বিভক্ত। চায়ের গরম ধোঁয়ার সঙ্গে অদ্ভুত সুন্দর ঘ্রাণ যেন আহ্বান করেÑ চুমুক দিন। আর চুমুক দেয়ামাত্রই নতুন বিস্ময়! একেকটি স্তরের স্বাদ একেক রকম। একটি স্তর শেষ হলে নতুন আরেকটি স্বাদ দিয়ে শুরু হয় পরের স্তর। এভাবে যত নিচে নামা যায় ততই বাড়ে স্বাদ। পুরো কাপ শেষ করতে করতে কথা হয় রমেশ রাম গৌড়ের সঙ্গে। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, অনেকেই আমাকে শ্রীমঙ্গলের মানুষ জানেন। আমার গ্রামের বাড়ি আসলে ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছায়। হঠাৎ বাবা মারা যাওয়ার পর বড় বিপদ নেমে এসেছিল জীবনে। অগত্যা ভাগ্যের অন্বেষণে বের হই। ২০০০ সালের মার্চে এসে পৌঁছি চা বাগান পরিবেষ্টিত শ্রীমঙ্গল শহরে। সঙ্গে তখন স্ত্রী, তিন ছেলে ও দুই মেয়ে। পকেটে সাকল্যে ১ হাজার ৫শ’ টাকা। রমেশ জানান, এর পর এই কাজ ওই কাজ হয়ে চায়ের দোকান দেন তিনি। বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট সংলগ্ন কাকিয়াছড়া চা বাগানের পাশের একটি জায়গায় আর দশজনের মতো ব্যবসা শুরু করেন। তবে কাজের প্রতি প্রেম ছিল। তাই চা কত ভাল করা যায় সেদিকে ছিল দৃষ্টি। রাতে দোকান বন্ধ করার পর চা নিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা-নীরিক্ষা করতেন। এভাবে আজকের চা তৈরি সম্ভব হয় বলে জানান তিনি। প্রথমে দুই স্তর চা। পরে ধীরে ধীরে এক গ্লাসে সাতটি স্তর তৈরি করতে সমর্থ হন তিনি। রমেশ জানান, সরকারের টি বোর্ডসহ দেশী-বিদেশী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাঁর চা পরীক্ষা করেছে। কিন্তু কেমিক্যাল কিংবা অস্বাভাবিক কোন উপাদান খুঁজে পায়নি। এর পর থেকে তাঁরা উল্টো তাঁর কাস্টমার হয়েছেন। নিয়মিত চা খেতে আসেন। কিন্তু চায়ে বাড়তি কী দেন আপনি? এত ভাল স্বাদ কী করে হয়? উত্তরে তিনি যা বলেন তা অনেকের বিশ্বাসই হবে না। রমেশ বলেন, আর দশজনের মতো বাজার থেকে পাতা সংগ্রহ করে চা তৈরি করি। সঙ্গে অন্য অনেকের মতো ব্যবহার করি আদা, দারচিনি, লং, এলাচি ইত্যাদি মসলা। লেবুও মিশিয়ে নেই। দুধ চায়ে ব্যবহার করি গরুর খাঁটি দুধ। এই তো! তবে কোন্ চায়ে কোন্ উপাদান কিংবা কোন্ কোন্ উপাদান কী পরিমাণে ব্যবহার করবেন তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। তবে এর বেশিকিছু কখনও বলেন না তিনি। কৌশলটি লুকিয়ে রেখে চলেছেন দিনের পর দিন। তাই সাত স্তর চা তৈরির এ কৌশল আজ অবধি বাইরে কোথাও প্রকাশিত হয়নি। শিখিয়েছেন কেবল নিজের তিন ছেলে আর এক ভাইকে। তাও দিব্যি দিয়েছেনÑ কাউকে শেখানো যাবে না। এই ভাই ও সন্তানেরা এখন তাঁর চায়ের দোকানেই কাজ করছে। দিব্যির ব্যাপারে যারপরনাই সতর্ক তারা। মজার ব্যাপার হচ্ছে, বিয়ের পর মেয়েরা অন্যের ঘরে চলে যাবে বলে তাদেরও কৌশলটি তিনি শেখাননি। জানা যায়, দোকানে তিনি চা তৈরি করেন দরজা বন্ধ করে! একই কারণে নিজের দোকানের বাইরে গিয়ে কোথাও চা তৈরি করেন না। সিসিটিভি, টেলিভিশন ক্যামেরার ব্যাপারে দারুণ সতর্ক থাকেন। রমেশ চান, তাঁর চা শ্রীমঙ্গলে এসেই খেয়ে যাক সবাই। এ কারণেই এমন লুকোচুরি বলে জানান তিনি। মৃত্যু পর্যন্ত এ গোপনীয়তা বজায় রাখার ইচ্ছা তাঁর।
তবে রহস্যের সন্ধান করা মানুষের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। হয়ত তাই প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে নীলকণ্ঠে যাচ্ছেন তাঁরা। নিজের মতো করে বোঝার চেষ্টা করছেন চা রহস্য। দেশের ভিআইপি, ভিভিআইপি অতিথিরা হরহামেশা যাচ্ছেন। বিদেশী পর্যটকরা তো নিয়মিত কাস্টমার। বর্তমানে তাঁর নীলকণ্ঠ চা ক্যাবিনে সাত লেয়ারের চা ৭০ টাকা, ছয় লেয়ারের চা ৬০ টাকা, পাঁচ লেয়ারের চা ৫০ টাকা, চার লেয়ারের চা ৪০ টাকা, তিন লেয়ারের চা ২০ টাকা, দুই লেয়ারের চা ১০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এর বাইরে একটি চা-কে তিনি বলেন, হাই স্পেশাল চা। এর দাম ২০ টাকা। স্পেশাল দুধ চা ১০ টাকা। গ্রীন চা, আদা চা, লাল চা, লেবু চা পাঁচ টাকা করে। তবে দামের পার্থক্য যাই হোক না কেন, সব ক্ষেত্রেই স্বাদটি অসাধারণ। এ কারণে অনেকেই তাঁকে বিদেশে নিয়ে যেতে চেয়েছেন। ওখানে গিয়ে চা বানানোর প্রস্তাব করেছেন। বাড়ি গাড়ির কথা বলেছেন। কিন্তু তিনি রাজি হননি। কারণ, নিজের দেশকে তিনি ভালবাসেন। লক্ষণীয় যে, এই উদ্ভাবককেও একই রকম ভালবাসেন শ্রীমঙ্গলের মানুষ। তাঁর চা-কে নিজেদের এলাকার উদ্ভাবন ভেবে গর্ব করেন। ‘র’ বললেই হলো। নিয়ে যান রমেশের দোকানে। তাঁদের এমন ভালবাসায় সত্যি কৃতজ্ঞ রমেশ রাম। বলেন, এলাকার মানুষ সব সময় আমাকে সাহায্য করেন। আর যাঁরা সারাদেশে থেকে, বিদেশ থেকে তাঁর চা পান করতে আসেন তাঁদের দেখে মন ভরে যায় তাঁর। বলেন, অনেক বড় বড় মানুষ আছেন শ্রীমঙ্গলে। তাঁদের ওখানে সবাই যান না কিন্তু আমার এখানে আসেন। এর পর আর কোন কথা আছে? আসলেই তো, এর পর আর কোন কথা থাকে? তাই আলোচনা এখানেই শেষ হয়। তবে চা পানের স্বাদটি অভিজ্ঞতাটি থেকে যায়। এ অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই আরও বহুকাল মানুষকে দিয়ে যাবে নীলকণ্ঠে।
No comments