অলস পড়ে আছে কৃষকের হিসাব by আনোয়ার পারভেজ
বগুড়ার গাবতলী উপজেলার সন্ধ্যাবাড়ি গ্রামের প্রান্তিক চাষি সাঈদ আলী (৭৫)। ২০১০ সালের শুরুর দিকে তিনি সোনালী ব্যাংকের গাবতলী সদর শাখায় ১০ টাকার বিনিময়ে একটি হিসাব খোলেন। কিছুদিনের মধ্যে সেচ খাতে ডিজেলে দেওয়া সরকারের কৃষি-ভর্তুকির কিছু টাকা জমা পড়ে তাঁর ওই হিসাব নম্বরে।
ভর্তুকির টাকা তুলে নেওয়ার পর দীর্ঘ আড়াই বছরেও কৃষক সাঈদ আর ব্যাংকমুখো হননি। অথচ ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলার উদ্দেশ্য ছিল—কৃষি ভর্তুকির টাকা উত্তোলনের পাশাপাশি কৃষকেরা যাতে সাধ্যমতো তাঁদের হিসাব নম্বরে সঞ্চয় করতে পারেন।
কৃষক আবু সাঈদ হতাশার সুরে বলেন, ‘ধান আবাদ করবার য্যায়া দাম পাচ্চি না, পেঁয়াজ আবাদ করবার য্যায়া পুঁজি হারাচ্চি। ফসল আবাদ করবার যায়্যা যে টেকা খরচ হচ্চে, ফসল তোলার পর সেই খরচ আর ঘরত উঠিচ্চে না। বাপ-দাদার পেশা ধরে রাখবার যায়্যা সংসারের দায়-দেনা শুধু বাড়িচ্চে আর বাড়িচ্চে। হাতত টেকা-পয়সা না থাকলে ব্যাংকত জমা রাখমো কী? ১০ টাকায় কেন, মাগনা অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ দিলেও হামাকেরে মতো কৃষকের এখন ব্যাংকত টেকা জমা করার মতো সাধ্য নাই।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু গাবতলীর সন্ধ্যাবাড়ি গ্রামের কৃষক আবু সাঈদ নন, বগুড়ার ১২ উপজেলায় তাঁর মতো আরও তিন লাখ ৪ হাজার ২৫৮ জন কৃষকের ব্যাংক হিসাব খোলা থাকলেও কেউ এসব হিসাব নম্বরে লেনদেন করেন না। কৃষক লেনদেন না করায় এসব ব্যাংক হিসাব অলস পড়ে আছে দীর্ঘদিন। অলস পড়ে থাকা এসব ব্যাংক হিসাব নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ব্যাংক কর্মকর্তারা। হিসাব চালু রাখতে নিয়মিত তথ্য ও নথি হালনাগাদ করতে হচ্ছে। বিপুল এই হিসাব নম্বরের নথি হালনাগাদ করতে গিয়ে ব্যাংকগুলোকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। হিসাব নম্বরগুলো এখন রীতিমতো বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যাংকগুলোর কাছে।
কৃষকদের দাবি, চাষাবাদে লাগাতার লোকসানের মুখে পড়ায় তাঁরা ব্যাংকে এক টাকাও জমা করতে পারছেন না। উৎপাদিত কৃষিপণ্যের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় তাঁদের হাতে নগদ টাকা নেই। এ কারণে তাঁরা ১০ টাকার ব্যাংক হিসাবে লেনদেন করতে পারছেন না।
নন্দীগ্রাম উপজেলার কালিকাপুরের কৃষক আবদুস সামাদ বলেন, ‘বাজারত জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বারিচ্চে। মঙ্গা দামে (বেশি দামে) সার-বীজ কিনে জমিত ফসল আবাদ করিচ্চি। আবাদ করবার য্যায়া যে টেকা খরচ হচ্চে, সেই টেকা আর ঘরত উঠিচ্চে না। ঋণ করে দেনা শোধ করা লাগিচ্চে। ব্যাংকত যাওয়া লাগিচ্চে ঠিকই। তবে টেকা রাখবার জন্যি নয়, ঋণ নেওয়ার জন্যি। হামাগেরে মতো কৃষকের পিঠ দেওয়ালত ঠেকে গেচে।’
সারিয়াকান্দির ফুলবাড়ির কৃষক আবদুল বারী বলেন, ‘সরকার যখন ডিজেলের টেকা দিচিল, ব্যাংকত য্যায়া টেকা তুলে লিচি। হামার অ্যাকাউন্ট খোলা আচে এডা জানি না।’
সদর উপজেলার সাজাপুরের কৃষক ইদ্রিস আলী বলেন, ‘১০ টেকার অ্যাকাউন্ট দিয়ে হামাগেরে লাভ কী? হামাগেরে দরকার ধানের ঠিকমতো দাম। আর কম দামের সার, বিদ্যুৎ। সেডা কি হামরায় পাচ্চি? চাষাবাদ করে পকেট ফাঁকা। ব্যাংকত যামো কী লিয়া?’
রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) শাহনগর শাখার ব্যবস্থাপক এ কে এম ফেরদৌস বলেন, ‘এসব ব্যাংক হিসাব এখন ব্যাংকের কাছে বোঝা।’
জনতা ব্যাংক বগুড়া অঞ্চলের উপমহাব্যবস্থাপক শামিম আহম্মেদ বলেন, ‘কৃষকদের ব্যাংকমুখী করতে আগামী দিনে নানা উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
বগুড়া কৃষিসম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক এ এইচ এম বজলুর রশীদ বলেন, ‘কৃষিতে লোকসানের কারণেই তাঁরা ব্যাংকবিমুখ কি না, সেটা কৃষি বিভাগের জানা নেই।’
বগুড়ার জেলা প্রশাসক সারোয়ার মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘১০ টাকায় খোলা তিন লাখ ব্যাংক হিসাবে কৃষকেরা লেনদেন করেন না, বিষয়টি জানা ছিল না। ভবিষ্যতে জেলা সমন্বয় কমিটির সভায় বিষয়টি তোলা হবে এবং কৃষকদের ব্যাংকমুখীকরণে উৎসাহিত করতে কৃষি বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হবে।’
কৃষক আবু সাঈদ হতাশার সুরে বলেন, ‘ধান আবাদ করবার য্যায়া দাম পাচ্চি না, পেঁয়াজ আবাদ করবার য্যায়া পুঁজি হারাচ্চি। ফসল আবাদ করবার যায়্যা যে টেকা খরচ হচ্চে, ফসল তোলার পর সেই খরচ আর ঘরত উঠিচ্চে না। বাপ-দাদার পেশা ধরে রাখবার যায়্যা সংসারের দায়-দেনা শুধু বাড়িচ্চে আর বাড়িচ্চে। হাতত টেকা-পয়সা না থাকলে ব্যাংকত জমা রাখমো কী? ১০ টাকায় কেন, মাগনা অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ দিলেও হামাকেরে মতো কৃষকের এখন ব্যাংকত টেকা জমা করার মতো সাধ্য নাই।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু গাবতলীর সন্ধ্যাবাড়ি গ্রামের কৃষক আবু সাঈদ নন, বগুড়ার ১২ উপজেলায় তাঁর মতো আরও তিন লাখ ৪ হাজার ২৫৮ জন কৃষকের ব্যাংক হিসাব খোলা থাকলেও কেউ এসব হিসাব নম্বরে লেনদেন করেন না। কৃষক লেনদেন না করায় এসব ব্যাংক হিসাব অলস পড়ে আছে দীর্ঘদিন। অলস পড়ে থাকা এসব ব্যাংক হিসাব নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ব্যাংক কর্মকর্তারা। হিসাব চালু রাখতে নিয়মিত তথ্য ও নথি হালনাগাদ করতে হচ্ছে। বিপুল এই হিসাব নম্বরের নথি হালনাগাদ করতে গিয়ে ব্যাংকগুলোকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। হিসাব নম্বরগুলো এখন রীতিমতো বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যাংকগুলোর কাছে।
কৃষকদের দাবি, চাষাবাদে লাগাতার লোকসানের মুখে পড়ায় তাঁরা ব্যাংকে এক টাকাও জমা করতে পারছেন না। উৎপাদিত কৃষিপণ্যের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় তাঁদের হাতে নগদ টাকা নেই। এ কারণে তাঁরা ১০ টাকার ব্যাংক হিসাবে লেনদেন করতে পারছেন না।
নন্দীগ্রাম উপজেলার কালিকাপুরের কৃষক আবদুস সামাদ বলেন, ‘বাজারত জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বারিচ্চে। মঙ্গা দামে (বেশি দামে) সার-বীজ কিনে জমিত ফসল আবাদ করিচ্চি। আবাদ করবার য্যায়া যে টেকা খরচ হচ্চে, সেই টেকা আর ঘরত উঠিচ্চে না। ঋণ করে দেনা শোধ করা লাগিচ্চে। ব্যাংকত যাওয়া লাগিচ্চে ঠিকই। তবে টেকা রাখবার জন্যি নয়, ঋণ নেওয়ার জন্যি। হামাগেরে মতো কৃষকের পিঠ দেওয়ালত ঠেকে গেচে।’
সারিয়াকান্দির ফুলবাড়ির কৃষক আবদুল বারী বলেন, ‘সরকার যখন ডিজেলের টেকা দিচিল, ব্যাংকত য্যায়া টেকা তুলে লিচি। হামার অ্যাকাউন্ট খোলা আচে এডা জানি না।’
সদর উপজেলার সাজাপুরের কৃষক ইদ্রিস আলী বলেন, ‘১০ টেকার অ্যাকাউন্ট দিয়ে হামাগেরে লাভ কী? হামাগেরে দরকার ধানের ঠিকমতো দাম। আর কম দামের সার, বিদ্যুৎ। সেডা কি হামরায় পাচ্চি? চাষাবাদ করে পকেট ফাঁকা। ব্যাংকত যামো কী লিয়া?’
রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) শাহনগর শাখার ব্যবস্থাপক এ কে এম ফেরদৌস বলেন, ‘এসব ব্যাংক হিসাব এখন ব্যাংকের কাছে বোঝা।’
জনতা ব্যাংক বগুড়া অঞ্চলের উপমহাব্যবস্থাপক শামিম আহম্মেদ বলেন, ‘কৃষকদের ব্যাংকমুখী করতে আগামী দিনে নানা উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
বগুড়া কৃষিসম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক এ এইচ এম বজলুর রশীদ বলেন, ‘কৃষিতে লোকসানের কারণেই তাঁরা ব্যাংকবিমুখ কি না, সেটা কৃষি বিভাগের জানা নেই।’
বগুড়ার জেলা প্রশাসক সারোয়ার মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘১০ টাকায় খোলা তিন লাখ ব্যাংক হিসাবে কৃষকেরা লেনদেন করেন না, বিষয়টি জানা ছিল না। ভবিষ্যতে জেলা সমন্বয় কমিটির সভায় বিষয়টি তোলা হবে এবং কৃষকদের ব্যাংকমুখীকরণে উৎসাহিত করতে কৃষি বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হবে।’
No comments