মহামূল্য ইলিশ-ভরা মৌসুমেও হাহাকার
আষাঢ় এসেছে সেই কবে, চলে যাওয়ার সময়ও ঘনীভূত। ঋতুর হিসাবে শ্রাবণ ছুঁই ছঁই, তবু দেখা মিলছে না বর্ষার সেই বহুল প্রার্থিত মাছটির। না, এবার বাজারে ইলিশের সমাগম নেই বললেই চলে। ইলিশ বলে যে মাছটির দেখা মাছের বাজারে মেলে, তা কোন বছরের মাছ নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই।
অনেক হিমায়িত মাছই যে এ বছর জালে আটকা পড়েনি তা নিশ্চিত। কিন্তু দাম আকাশছোঁয়া। ছোটখাটো ইলিশের দামও ধরাছোঁয়ার বাইরে। আকারে একটু বড় হলে তো কথাই নেই। নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে এখনও বাঙালির প্রিয় এ মাছটি। তাই তো মধ্যবর্ষাতেও অনেকের হেঁশেলে এখনও রূপালি ইলিশ ঢুকতে পারেনি। মূল্যমানে বাজারের সবচেয়ে দামি মাছ হিসেবে আখ্যায়িত করা হলেও ভুল হবে না। শুধু বাংলাদেশের বাঙালিই নয়, পশ্চিমবঙ্গেও ইলিশের জন্য হাহাকার চলছে। জামাইষষ্ঠীর আগে বাংলাদেশ থেকে কিছু মাছ রফতানি করায় উৎসবে মুখরক্ষা হয়েছে সেখানকার বাঙালির। কিন্তু দাম কলকাতার বাজারেও চড়া। উপায়ান্তর না দেখে পদ্মার ইলিশের আশা ছেড়ে এখন ইরাবতির ইলিশের দিকে মনোনিবেশ করেছেন তারা। ইরাবতির ইলিশ নাকি প্রতি কেজি ২০০ রুপিতে মিলবে। কয়েক বছর ধরে কলকাতার ব্যবসায়ীরা ইরাবতির হিমায়িত ইলিশের দিকে ঝুঁকলেও এবার মিয়ানমার থেকে টাটকা ইলিশ আমদানির চেষ্টা চলছে। ইলিশ আমদানি, শুল্ক, বাজারদর নিয়ে দিলি্ল-কলকাতা দেনদরবারও শুরু হয়েছে। কিন্তু আমাদের বাজারে ইলিশের চরম সংকটেও কর্তাব্যক্তিদের নড়াচড়ার আভাস মিলছে না। ইলিশের উৎপাদন কম, এ বছর উৎপাদন বাড়ানোর উপায় নেই। সামনের বছর হয়তো জাটকা ধরায় কড়াকড়ি আরোপ করলে উৎপাদন বেশি হতে পারে। এখন প্রশ্ন, মৌসুমে ইলিশ না খেয়েই কি বাঙালির বর্ষা কেটে যাবে? যে ইলিশ ধরা পড়ছে সে ইলিশ কি বাজারে আসছে নাকি আর সবকিছুর মতো ফড়িয়ারা ইলিশেও কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছেন? বৈশাখে যে হিমায়িত মাছের দর কেজিতে দুই থেকে তিন হাজার ছিল, বর্ষায় এসে তা একটুও হেরফের হবে না এ যুক্তি কীভাবে মানা যায়? ভোলা থেকে খবর এসেছে, মৌসুমের সবচেয়ে বড় ইলিশ ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। বিরল দুই কেজি ওজনের ইলিশের এ দাম হয়তো ন্যায্য। কিন্তু অনেক ছোট ইলিশও তো শহরের বাজারে প্রায় একই দরে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু বাজারে দাম কমানোর উদ্যোগ কোথায়?
No comments