হ্যালো প্রধানমন্ত্রী... অভূতপূর্ব সাড়ায় উদ্দীপ্ত শেখ হাসিনা

টেলিফোনে অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারী ছুটির দিন শুক্রবার সকাল থেকে রাত অবধি যখনই সময় পেয়েছেন তখনই দেশ-বিদেশ থেকে তাঁর মোবাইলে আসা ফোন ধরে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।


এসব টেলিফোনে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত ঘোষণায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর পাশাপাশি অনেকেই ফোন করে তাঁকে সাহস যোগাচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রী সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে প্রত্যয়ী এবং উদ্দীপ্ত। তিনি মনে করছেন, মুক্তিযুদ্ধের পর আবারও দেশের মানুষ পদ্মা সেতুকে জাতীয় মর্যাদার বিষয় হিসেবে বিবেচনা করে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। স্কুলের ছোট শিশু, দিনমজুর থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকেও প্রবাসী বাঙালীরা দেশের আত্মসম্মান অক্ষুণœ রেখে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণায় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি এই সেতু নির্মাণে অর্থায়নের ব্যাপারেও আগ্রহ প্রকাশ করছেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে।
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী (মিডিয়া) মাহবুবুল হক শাকিল জনকণ্ঠকে জানান, শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও পদ্মা সেতু নিয়ে অনেক ফোন পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁদের মধ্যে অনেক প্রবাসীও পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়নের ব্যাপারেও আগ্রহ দেখিয়েছেন। সেতু নির্মাণের জন্য বন্ড ছেড়ে অর্থ সংগ্রহেরও পরামর্শ দিয়েছেন কেউ কেউ। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। সারাদিনের ব্যস্ততার মাঝেও যখনই সময় পাচ্ছেন, তখনই ফোন ধরছেন প্রধানমন্ত্রী।
শাকিল জানান, দেশ-বিদেশ থেকে প্রধানমন্ত্রীর মোবাইলে ফোন করে সাহস জুগিয়ে অনেকেই বলেছেন, সাহস নিয়ে এগিয়ে যান, দেশের মানুষ আপনার সঙ্গে রয়েছে। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পুরো বাঙালী জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে। আজ আপনার নেতৃত্বে পদ্মা সেতু নির্মাণের ব্যাপারে গোটা জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে আপনার নেতৃত্বে এগিয়ে এসেছে। একাত্তরেও যেমন মুষ্টিমেয় বিরোধিতাকারী ছিল, এখনও রয়েছে। যারা নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করতে চায়। ওদের কথায় কান দেবেন না। আপনি পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজে হাত দিন, গোটা জাতি তাদের সাধ্য অনুযায়ী আপনাকে অর্থ যোগান দেবে।
মাহবুবুল হক শাকিল জানান, স্কুলছাত্র থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলছেন। প্রধানমন্ত্রী সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে প্রত্যয়ী এবং উদ্দীপ্ত। তিনি মনে করছেন, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের পর আবারও দেশের মানুষ পদ্মা সেতুকে জাতীয় মর্যাদার বিষয় হিসেবে বিবেচনা করে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী গত ৪ জুলাই জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের রূপরেখা তুলে ধরেন। অর্থ সংগ্রহে ৭৫০ মিলিয়ন ডলারের বন্ড ছাড়ার পরিকল্পনার পাশাপাশি রিজার্ভ থেকেও অর্থায়নের কথা বলেন। এ বিষয়ে শাকিল জানান, প্রবাসীরা ফোনে প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, তাঁরা যে পরিমাণ অর্থ বিদেশ থেকে দেশে পাঠায়, সেই রেমিটেন্সের পরিমাণও সাধ্যমতো বাড়ানোর চেষ্টা করবেন।
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী আরও জানান, জাহাঙ্গীরনগর ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ প্রকল্পে অর্থ সহায়তা দিতে চেয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের কিছু ছাত্র তাদের হাত খরচের টাকা বাঁচিয়ে উপাচার্যের কাছে মোট ছয় হাজার টাকা জমা দিয়েছেন। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাঁদের একদিনের বেতন পদ্মা সেতুর জন্য দেয়ার কথা বলেছেন। গোপালগঞ্জের করপাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দারা দুই লাখ টাকা দেবেন জানিয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংগঠন, বেসরকারী ব্যাংক এবং বীমা কোম্পানি ইতোমধ্যে পদ্মা সেতুতে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসক সম্মেলন শেষে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সমিতির বার্ষিক নৈশভোজে বাংলাদেশ এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সচিব আবু আলম মোহাম্মদ শহীদ খান বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে আমরা সরকারী কর্মকর্তারা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত। বেতন-ভাতা থেকে শুরু করে প্রয়োজনে আমরা জনগণের দুয়ারে দুয়ারে যেতে রাজি। একই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। সামান্য একটা পদ্মা সেতু করতে পারব না?
দশম শ্রেণীর এক ছাত্র, নওগাঁর মান্ডার এক কলেজ ছাত্র এবং ঝিনাইদহের এক দিনমজুর টেলিফোনে পদ্মা সেতুর জন্য অর্থ দিতে চেয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে আরও বলেন, নতুন প্রজন্মের মধ্যে আমি যে উন্মেষ দেখেছি, তাদের মর্যাদাবোধ আমাকে আশান্বিত করে, আমরা এগিয়ে যাব। আমরা নতুন আঙ্গিকে পদ্মা সেতু করতে চাই। সোজা কথায় দোতলা ব্রিজ। ওপরে গাড়ি চলবে, আর নিচ দিয়ে যাবে ট্রেন।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী গত ৪ জুলাই সংসদে এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তাঁর দুটি মোবাইল ফোন নম্বর এবং ই-মেইল ঠিকানা নাগরিকদের উদ্দেশে প্রকাশ করে দেন। তাঁর পরিবারের সদস্যদের নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ অবৈধ সুযোগ নিতে চাইলে তা সরাসরি তাঁকে জানানোর অনুরোধ করেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর ফোন নম্বর হলো- ০১৭১১-৫২০০০০ এবং ০১৮১৯-২৬০৩৭১, আর ই-মেইল ঠিকানা হলো- ংযবরশযযধংরহধ@যড়ঃসধরষ.পড়স

No comments

Powered by Blogger.