কেমন আছেন গ্রামের মানুষ-২: হাটবাজারে পাকা ফসলের স্তূপ, বাজারে ক্রেতা কম, দামও কম-সরকারের নীতির কারণে ফসলে মার খাচ্ছেন কৃষক by ইফতেখার মাহমুদ
দেশের উত্তর-দক্ষিণ যেখানেই যান, কৃষকের উঠানে আর হাটে পাকা ফসলের স্তূপ চোখে পড়বে। ফড়িয়াদের গুদামেও গত বছরের ধান-পাট রয়ে গেছে। বাজারে ক্রেতা কম, দামও কম। এ পরিস্থিতির জন্য সরকারের সংগ্রহনীতি ও সঠিক সময়ে উদ্যোগ না নেওয়াকে দায়ী করছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।
দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গার চাতালগুলোতে ধান মাড়াই চলছে ধীরগতিতে। বাজারে বস্তা বস্তা ভুট্টা পড়ে আছে, ক্রেতা নেই। যশোর-চুয়াডাঙ্গায় পাট কাটা শুরু হয়েছে। তাই যাঁরা অধিক লাভের আশায় গত বছর পাট ধরে রেখেছিলেন, তাঁরা তা দ্রুত ছেড়ে দিচ্ছেন।
কৃষকদের অভিযোগ, সরকার চার মাস সময় নিয়ে ধীরগতিতে ধান-চাল সংগ্রহ করছে। অন্যদিকে
বোরো ধান কাটার সময়টাতে সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচির আওতায় বিপুল পরিমাণ চাল বাজারে সরবরাহ করা হয়েছে। ফলে ধানের দাম বাড়ছে না।
এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার আক্রমণে গত দুই বছরে অর্ধেকেরও বেশি মুরগির খামার বন্ধ হয়ে গেছে। মুরগির প্রধান খাবার ভুট্টার চাহিদা কমে দামও পড়তির দিকে। সরকারি-বেসরকারি মিলগুলো পাট কেনা কমিয়ে দিয়েছে। ফলে পাটের বাজারও মন্দা।
প্রধান ফসলগুলোর এই হাল হওয়ায় অনেক কৃষককে বিকল্প আয়ের উদ্যোগ নিতে দেখা গেছে। দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চলে ফল, সবজি ও পানের চাষ বেশ বেড়েছে। কিন্তু সেখানেও নানা বিপদ এসে হাজির হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গার কৃষকেরা জানান, পানগাছে গোড়াপচা রোগ দেখা দিচ্ছে। ঠাকুরগাঁও ও দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকেরা বাড়ির উঠানে ও উঁচু জমিতে উন্নত জাতের আম, লিচু, বেল, লেবুর গাছ লাগিয়েছেন। কিন্তু এলাকায় ফল বিক্রির বড় হাট না থাকায় লোকসানের ঝুঁকির কারণে বাড়ি থেকেই ফড়িয়াদের কাছে তা বিক্রি করে দিচ্ছেন কৃষক।
ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকেরা আম্রপালি (আমের একটি জাত) ও লিচুর আবাদ বাড়িয়ে দিয়েছেন। অনেকে মিশ্র সবজি ও ফলের বাগান গড়ে তুলেছেন। কৃষকেরা জানান, এবার দেরিতে বৃষ্টি হওয়ায় আমগাছে মুকুল ধরতে দেরি হয়েছে। অনেক গাছের আম বড় হয়নি। ঠাকুরগাঁও এলাকায় এক কেজি আম ২০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেল আর লেবুতেও দাম পাচ্ছেন না কৃষক। তবে এবার সবজির ফলন ভালো, দামও ভালো।
সংগ্রহ ও সরবরাহ প্রায় সমান: খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এ বছর সরকার চালকল মালিকদের কাছ থেকে আট লাখ টন ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে গত ৩ মে থেকে সংগ্রহ শুরু করেছে। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মাত্র তিন লাখ ৬৪ হাজার টন চাল সংগ্রহ করেছে।
কিন্তু একই সময়ে সরকারের টেস্ট রিলিফ (টিআর), কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচিসহ (কাবিখা) বিভিন্ন কর্মসূচির আওতায় প্রায় তিন লাখ টন চাল-গম বণ্টন করা হয়েছে। এই চালের বেশির ভাগই বাজারে বিক্রি হয়েছে।
সরকারি হিসাবে প্রতি কেজি চালের উৎপাদন খরচ পড়েছে ২৪ টাকা। কিন্তু ঠাকুরগাঁও ও বগুড়ার হাট-বাজারে প্রতি কেজি চাল ২৩ থেকে ২৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি মণ ধান ৫২০ থেকে ৫৪০ টাকা। ময়মনসিংহ, চুয়াডাঙ্গা ও যশোরে অবশ্য চালের দাম কিছুটা বেশি, কেজি ২৫ থেকে ২৬ টাকা। এখানে ধানের মণ ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকা।
খাদ্য বিভাগের মহাপরিচালক আহমদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আগামী মাস থেকে টিআরের চাল দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হবে। শুরু হবে দুস্থ-দরিদ্র পরিবারগুলোর জন্য বিনা মূল্যে চাল বিতরণ কার্যক্রম ভিজিএফ। অন্য কর্মসূচির চাল বাজারে চলে যাওয়ায় দামের ওপর প্রভাব পড়ে। কিন্তু ভিজিএফে যারা চাল পায়, তারা তা বিক্রি করে না। ফলে বাজারে চালের দাম কিছুটা বাড়বে।
ভুট্টার বাজারে উল্টো চিত্র: উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে লাভজনক ফসল ছিল ভুট্টা। ঠাকুরগাঁও, বগুড়া ও চুয়াডাঙ্গায় কৃষকের উঠানে উঠানে ভুট্টার স্তূপ। প্রতি মণ ভুট্টা সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। কৃষক জানান, গত বছর পড়তি বাজারেও এক মণ ভুট্টা ৬০০ টাকার নিচে বিক্রি হয়নি।
বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) চলতি মাসের জন্য দেওয়া খাদ্যের দামবিষয়ক পূর্বাভাসে ভুট্টার দাম সামনের দিনে বাড়বে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে পোলট্রি খাবারনির্ভর এই ফসলটির দাম এবার গতবারের অর্ধেক। দেশের অর্ধেকেরও বেশি পোলট্রি খামার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভুট্টার দাম কমে গেছে।
অন্যদিকে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত দেশের পোলট্রিশিল্পের প্রধান কাঁচামাল হিসেবে ভুট্টার ব্যবহার হয়। এই শিল্পের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে দেশে ভুট্টা চাষও বেড়ে চলতি বছর প্রায় ১৬ লাখ টনে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু গত দুই বছরে দেশে পোলট্রি খামারের সংখ্যা এক লাখ ১৫ হাজার থেকে কমে ৬৫ হাজারে নেমেছে। ফলে ভুট্টার চাহিদা ও দাম দুটিই কমেছে।
বাংলাদেশ ভুট্টা অ্যাসোসিয়েশনের হিসাবে গত বছর ভুট্টা ব্যবসায়ীরা খামারগুলোর কাছে এক মণ ভুট্টা বিক্রি করেছেন ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকায়। চলতি বছর তা ৬০০ টাকায় নেমেছে।
ভুট্টা অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মিজানুল হক প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে পোলট্রিশিল্পের প্রয়োজনের তুলনায় তিন লাখ টন অতিরিক্ত ভুট্টা উৎপাদিত হয়েছে। ফলে দাম কমছে। সরকার যদি পোলট্রি খামারগুলো চালু করার ব্যাপারে সহায়তা দিত, তাহলে ডিম, মুরগির দামও বাড়ত না। আর ভুট্টার দামও কমত না।
পাট কাটা শুরু, কেনায় নেই সমন্বয়: চুয়াডাঙ্গা ও যশোরের দিকে বাছা পাট কাটা শুরু হয়েছে। মূল জমি থেকে পরিণত পাটগাছ বেছে বেছে তা কাটছে কৃষক। পাট কাটা পুরোপুরি শুরু হতে আরও ১৫-২০ দিন সময় লাগবে। সাধারণত বাছা পাটের মণ কোনো বছরই দেড় হাজার থেকে দুই হাজার টাকার নিচে বিক্রি হয় না। এবার এক হাজার ২০০ টাকার ওপরে দাম উঠছে না।
চুয়াডাঙ্গার খুদিয়াখালি গ্রামের পাটচাষি আইয়ুব আলী জানান, এক বিঘা জমিতে ১০ মণ পাট হয়। পাট রোপণ থেকে শুরু করে কাটা, পচানো ও শুকানো বাবদ খরচ হয় ১০ হাজার টাকা। এবার প্রতি মণ পাট এক হাজার টাকার ওপরে বিক্রি করতে পারেননি তিনি। ফলে খরচ আর দাম প্রায় সমানে সমান।
পাটচাষিরা জানান, যশোর, চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলে সাধারণ নিম্নমানের পাট হয়। ২০১০ সালেও এখানকার পাট এক হাজার ২০০ থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। এবার বছরের কোনো সময়ই পাটের দর এক হাজার টাকার ওপরে ওঠেনি।
কাঁচা পাট রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএ) থেকে জানানো হয়েছে, দুই বছর ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচা পাটের দর কম। ২০০৯-১০ সালে প্রতি টন নিম্নমানের পাট বিক্রি হয়েছে ৬০০ থেকে ৮০০ ডলারে। আর উন্নত মানের পাটের দর হাজার ডলার ছাড়িয়েছিল। গত বছর থেকে নিম্নমানের পাট প্রতি টন ৪০০ থেকে ৪৫০ ডলারে বিক্রি হচ্ছে।
২০০৯ ও ১০ সালে পাটের দাম ভালো পাওয়ায় কৃষক ২০১১ সালে পাট চাষের পরিমাণ বাড়িয়ে দেন। গত বছর ভালো দাম না পাওয়ায় এ বছর পাটের উৎপাদন কিছুটা কমতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
পাট ব্যবসায়ীরা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমে যাওয়ার পাশাপাশি পাট কেনার ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি মিল এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা রয়েছে। পাট ব্যবহারকারী সরকারি মিল, বেসরকারি মিল, পাটসুতা উৎপাদনকারী মিল ও কাঁচা পাট রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো আলাদা আলাদাভাবে পাট কেনে। পাট মন্ত্রণালয় থেকে সবগুলো পাটকলের পাট কেনার ক্ষেত্রে সমন্বয় আনার জন্য ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বারবার বলা হলেও এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
বিজিএর সহসভাপতি শেখ সৈয়দ আলী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে এ বছর পাটের দাম বাড়তে পারে। তবে সরকার মংলা বন্দর দিয়ে পাট রপ্তানি বাড়ানোর ব্যবস্থা করলে পরিবহন ব্যয় কমবে। নতুন পাট ওঠার আগেই সরকার বিভিন্ন মানের পাটের সর্বনিম্ন মূল্য ঘোষণা করে কোন ধরনের মিল কত পাট কিনবে, তার সমন্বয় করলে পাটের বাজার আবারও চাঙা হবে।
কৃষকদের অভিযোগ, সরকার চার মাস সময় নিয়ে ধীরগতিতে ধান-চাল সংগ্রহ করছে। অন্যদিকে
বোরো ধান কাটার সময়টাতে সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচির আওতায় বিপুল পরিমাণ চাল বাজারে সরবরাহ করা হয়েছে। ফলে ধানের দাম বাড়ছে না।
এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার আক্রমণে গত দুই বছরে অর্ধেকেরও বেশি মুরগির খামার বন্ধ হয়ে গেছে। মুরগির প্রধান খাবার ভুট্টার চাহিদা কমে দামও পড়তির দিকে। সরকারি-বেসরকারি মিলগুলো পাট কেনা কমিয়ে দিয়েছে। ফলে পাটের বাজারও মন্দা।
প্রধান ফসলগুলোর এই হাল হওয়ায় অনেক কৃষককে বিকল্প আয়ের উদ্যোগ নিতে দেখা গেছে। দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চলে ফল, সবজি ও পানের চাষ বেশ বেড়েছে। কিন্তু সেখানেও নানা বিপদ এসে হাজির হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গার কৃষকেরা জানান, পানগাছে গোড়াপচা রোগ দেখা দিচ্ছে। ঠাকুরগাঁও ও দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকেরা বাড়ির উঠানে ও উঁচু জমিতে উন্নত জাতের আম, লিচু, বেল, লেবুর গাছ লাগিয়েছেন। কিন্তু এলাকায় ফল বিক্রির বড় হাট না থাকায় লোকসানের ঝুঁকির কারণে বাড়ি থেকেই ফড়িয়াদের কাছে তা বিক্রি করে দিচ্ছেন কৃষক।
ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকেরা আম্রপালি (আমের একটি জাত) ও লিচুর আবাদ বাড়িয়ে দিয়েছেন। অনেকে মিশ্র সবজি ও ফলের বাগান গড়ে তুলেছেন। কৃষকেরা জানান, এবার দেরিতে বৃষ্টি হওয়ায় আমগাছে মুকুল ধরতে দেরি হয়েছে। অনেক গাছের আম বড় হয়নি। ঠাকুরগাঁও এলাকায় এক কেজি আম ২০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেল আর লেবুতেও দাম পাচ্ছেন না কৃষক। তবে এবার সবজির ফলন ভালো, দামও ভালো।
সংগ্রহ ও সরবরাহ প্রায় সমান: খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এ বছর সরকার চালকল মালিকদের কাছ থেকে আট লাখ টন ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে গত ৩ মে থেকে সংগ্রহ শুরু করেছে। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মাত্র তিন লাখ ৬৪ হাজার টন চাল সংগ্রহ করেছে।
কিন্তু একই সময়ে সরকারের টেস্ট রিলিফ (টিআর), কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচিসহ (কাবিখা) বিভিন্ন কর্মসূচির আওতায় প্রায় তিন লাখ টন চাল-গম বণ্টন করা হয়েছে। এই চালের বেশির ভাগই বাজারে বিক্রি হয়েছে।
সরকারি হিসাবে প্রতি কেজি চালের উৎপাদন খরচ পড়েছে ২৪ টাকা। কিন্তু ঠাকুরগাঁও ও বগুড়ার হাট-বাজারে প্রতি কেজি চাল ২৩ থেকে ২৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি মণ ধান ৫২০ থেকে ৫৪০ টাকা। ময়মনসিংহ, চুয়াডাঙ্গা ও যশোরে অবশ্য চালের দাম কিছুটা বেশি, কেজি ২৫ থেকে ২৬ টাকা। এখানে ধানের মণ ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকা।
খাদ্য বিভাগের মহাপরিচালক আহমদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আগামী মাস থেকে টিআরের চাল দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হবে। শুরু হবে দুস্থ-দরিদ্র পরিবারগুলোর জন্য বিনা মূল্যে চাল বিতরণ কার্যক্রম ভিজিএফ। অন্য কর্মসূচির চাল বাজারে চলে যাওয়ায় দামের ওপর প্রভাব পড়ে। কিন্তু ভিজিএফে যারা চাল পায়, তারা তা বিক্রি করে না। ফলে বাজারে চালের দাম কিছুটা বাড়বে।
ভুট্টার বাজারে উল্টো চিত্র: উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে লাভজনক ফসল ছিল ভুট্টা। ঠাকুরগাঁও, বগুড়া ও চুয়াডাঙ্গায় কৃষকের উঠানে উঠানে ভুট্টার স্তূপ। প্রতি মণ ভুট্টা সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। কৃষক জানান, গত বছর পড়তি বাজারেও এক মণ ভুট্টা ৬০০ টাকার নিচে বিক্রি হয়নি।
বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) চলতি মাসের জন্য দেওয়া খাদ্যের দামবিষয়ক পূর্বাভাসে ভুট্টার দাম সামনের দিনে বাড়বে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে পোলট্রি খাবারনির্ভর এই ফসলটির দাম এবার গতবারের অর্ধেক। দেশের অর্ধেকেরও বেশি পোলট্রি খামার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভুট্টার দাম কমে গেছে।
অন্যদিকে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত দেশের পোলট্রিশিল্পের প্রধান কাঁচামাল হিসেবে ভুট্টার ব্যবহার হয়। এই শিল্পের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে দেশে ভুট্টা চাষও বেড়ে চলতি বছর প্রায় ১৬ লাখ টনে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু গত দুই বছরে দেশে পোলট্রি খামারের সংখ্যা এক লাখ ১৫ হাজার থেকে কমে ৬৫ হাজারে নেমেছে। ফলে ভুট্টার চাহিদা ও দাম দুটিই কমেছে।
বাংলাদেশ ভুট্টা অ্যাসোসিয়েশনের হিসাবে গত বছর ভুট্টা ব্যবসায়ীরা খামারগুলোর কাছে এক মণ ভুট্টা বিক্রি করেছেন ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকায়। চলতি বছর তা ৬০০ টাকায় নেমেছে।
ভুট্টা অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মিজানুল হক প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে পোলট্রিশিল্পের প্রয়োজনের তুলনায় তিন লাখ টন অতিরিক্ত ভুট্টা উৎপাদিত হয়েছে। ফলে দাম কমছে। সরকার যদি পোলট্রি খামারগুলো চালু করার ব্যাপারে সহায়তা দিত, তাহলে ডিম, মুরগির দামও বাড়ত না। আর ভুট্টার দামও কমত না।
পাট কাটা শুরু, কেনায় নেই সমন্বয়: চুয়াডাঙ্গা ও যশোরের দিকে বাছা পাট কাটা শুরু হয়েছে। মূল জমি থেকে পরিণত পাটগাছ বেছে বেছে তা কাটছে কৃষক। পাট কাটা পুরোপুরি শুরু হতে আরও ১৫-২০ দিন সময় লাগবে। সাধারণত বাছা পাটের মণ কোনো বছরই দেড় হাজার থেকে দুই হাজার টাকার নিচে বিক্রি হয় না। এবার এক হাজার ২০০ টাকার ওপরে দাম উঠছে না।
চুয়াডাঙ্গার খুদিয়াখালি গ্রামের পাটচাষি আইয়ুব আলী জানান, এক বিঘা জমিতে ১০ মণ পাট হয়। পাট রোপণ থেকে শুরু করে কাটা, পচানো ও শুকানো বাবদ খরচ হয় ১০ হাজার টাকা। এবার প্রতি মণ পাট এক হাজার টাকার ওপরে বিক্রি করতে পারেননি তিনি। ফলে খরচ আর দাম প্রায় সমানে সমান।
পাটচাষিরা জানান, যশোর, চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলে সাধারণ নিম্নমানের পাট হয়। ২০১০ সালেও এখানকার পাট এক হাজার ২০০ থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। এবার বছরের কোনো সময়ই পাটের দর এক হাজার টাকার ওপরে ওঠেনি।
কাঁচা পাট রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএ) থেকে জানানো হয়েছে, দুই বছর ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচা পাটের দর কম। ২০০৯-১০ সালে প্রতি টন নিম্নমানের পাট বিক্রি হয়েছে ৬০০ থেকে ৮০০ ডলারে। আর উন্নত মানের পাটের দর হাজার ডলার ছাড়িয়েছিল। গত বছর থেকে নিম্নমানের পাট প্রতি টন ৪০০ থেকে ৪৫০ ডলারে বিক্রি হচ্ছে।
২০০৯ ও ১০ সালে পাটের দাম ভালো পাওয়ায় কৃষক ২০১১ সালে পাট চাষের পরিমাণ বাড়িয়ে দেন। গত বছর ভালো দাম না পাওয়ায় এ বছর পাটের উৎপাদন কিছুটা কমতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
পাট ব্যবসায়ীরা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমে যাওয়ার পাশাপাশি পাট কেনার ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি মিল এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা রয়েছে। পাট ব্যবহারকারী সরকারি মিল, বেসরকারি মিল, পাটসুতা উৎপাদনকারী মিল ও কাঁচা পাট রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো আলাদা আলাদাভাবে পাট কেনে। পাট মন্ত্রণালয় থেকে সবগুলো পাটকলের পাট কেনার ক্ষেত্রে সমন্বয় আনার জন্য ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বারবার বলা হলেও এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
বিজিএর সহসভাপতি শেখ সৈয়দ আলী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে এ বছর পাটের দাম বাড়তে পারে। তবে সরকার মংলা বন্দর দিয়ে পাট রপ্তানি বাড়ানোর ব্যবস্থা করলে পরিবহন ব্যয় কমবে। নতুন পাট ওঠার আগেই সরকার বিভিন্ন মানের পাটের সর্বনিম্ন মূল্য ঘোষণা করে কোন ধরনের মিল কত পাট কিনবে, তার সমন্বয় করলে পাটের বাজার আবারও চাঙা হবে।
No comments