সেনাবাহিনী ও গণতন্ত্র : মিসরের অভিজ্ঞতা by তারেক শামসুর রেহমান
মিসরে সেনাবাহিনী কর্তৃক ক্ষমতা গ্রহণের পর যে প্রশ্নটি এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে, তা হচ্ছে সেনাবাহিনী কি মিসরে সত্যিকার অর্থে প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারবে? উন্নয়নশীল বিশ্বে সেনাবাহিনী ও গণতন্ত্র একটি বিতর্কিত বিষয়। সেনাবাহিনী একবার ক্ষমতা দখল করলে তারা তা ছাড়তে চায় না।
এ নিয়ে নানা তত্ত্ব, নানা গ্রন্থ রয়েছে। পঞ্চাশ থেকে সত্তরের দশক পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে সেনা অভ্যুত্থান হয়েছে। এটি একপর্যায়ে একাডেমিক বিষয়েও পরিণত হয়েছে। আমরা বাংলাদেশে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্তও করেছি। দীর্ঘদিন পৃথিবীর কোনো দেশে সামরিক অভ্যুত্থানের কোনো খবর আমাদের কাছে নেই। কেননা পশ্চিমা বিশ্বে এখন আর এটি গ্রহণযোগ্য নয়। অথচ একসময় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকা তথা লাতিন আমেরিকায় জাতীয়তাবাদী সরকারকে উৎখাত করার জন্য সিআইএ সেখানে বিভিন্ন দেশে সামরিক অভ্যুত্থান সংঘটিত করেছে। স্বভাবতই মিসর নিয়ে তাই প্রশ্ন থাকবে অনেকের। সনাতন অর্থে যেভাবে সামরিক অভ্যুত্থান হয়, সেভাবে মিসরে সামরিক অভ্যুত্থান হয়নি। সেনাবাহিনী হোসনি মুবারককে উৎখাত করেনি। বরং মুবারক ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছেন সেনা কাউন্সিলের কাছে, সেনাপ্রধানের হাতে নয়। ফিল্ড মার্শাল হুসেইন তানতাবি সেনাপ্রধান নন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং মুবারকের দীর্ঘদিনের বন্ধু। মুবারকই তাঁকে এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন। যদিও সেনাপ্রধান লে. জেনারেল সামি হাফেজ আনান কাউন্সিলে আছেন। এটাকে আমরা বলতে পারি 'Soft Coup deetist বা 'ভদ্রজনোচিত সামরিক অভ্যুত্থান'।
সামরিক-বেসামরিক সম্পর্কের ইতিহাস বলে সেনাবাহিনী কখনো সিভিলিয়ানদের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়, কখনো দেয় না। নিজেরা দল গঠন করে রাজনৈতিক পরিচয়ে ক্ষমতা পরিচালনা করে। যেমনটি হয়েছিল ১৯৫২ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে এখন পর্যন্ত মিসরে (লিবারেশন র্যালি, ন্যাশনাল ইউনিয়ন, আরব সোশ্যালিস্ট ইউনিয়ন ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি)। সেনাবাহিনী ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছে, এমন ইতিহাসও আছে। জেনারেল বাবাঙ্গিদা নাইজেরিয়ায় ক্ষমতা দখল করেছিলেন ১৯৮৫ সালে। ১৯৯৩ সালের ১৮ নভেম্বর তিনি নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট আর্নেস্ট গোবেকারের কাছে ক্ষমতা তুলে দিয়েছিলেন। তবুও আগে জেনারেল ওবাসানজিও সিভিলিয়ান সেগু সাগারির হাতে ১৯৭৯ সালে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছিলেন। ১৯৮৬ সালে জেনারেল দাহানও ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছিলেন সুদানে ১৯৮৬ সালে। কিন্তু সুদানে জেনারেল ওমর আল বসির ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় আছেন। ক্ষমতা তিনি ছাড়েননি। তুলনামূলক বিচারে আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকায় সেনা-অভ্যুত্থান বেশি হয়েছে। আফ্রিকায় সত্তরের দশকে যেসব সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে, সেখানে একটি মার্কসীয় দর্শন কাজ করেছিল। আফ্রিকার অনেক দেশে (ইথিওপিয়া, বেনিন, ভাহোসি, সিয়েরা লিওন প্রভৃতি) তরুণ অফিসাররা ক্ষমতা দখল করে সেসব দেশে 'সমাজতন্ত্র' নির্মাণে ব্রতী হয়েছিলেন। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ওই সব নেতার পক্ষে তার সমর্থনও ছুড়ে দিয়েছিল। এটা করতে গিয়ে ষাটের দশকে সোভিয়েত ইউনিয়ন তার সমাজতান্ত্রিক দর্শনেও কিছু কিছু পরিবর্তন এনেছিল (Socialist Orientation)। ইউরোপে সামরিক অভ্যুত্থানের সর্বশেষ খবর পাওয়া গিয়েছিল ১৯৭৪ সালে পর্তুগালে, যদিও সামরিক অভ্যুত্থানের চেয়ে এই অভ্যুত্থান ছিল ভিন্ন ধরনের। যার কারণে সেনাবাহিনীর তরুণ অফিসাররা সেদিন প্রশংসিত হয়েছিলেন। সেনাবাহিনী সেদিন স্বৈরাচারী সরকারকে উৎখাত করেছিল; কিন্তু ক্ষমতা নেয়নি। পর্তুগালের বাইরে সাইপ্রাসে ১৯৭৪ সালে, গ্রিসে ১৯৬৯ সালে ও ফ্রান্সে ১৯৫৮ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের খবর পাওয়া যায়। লাতিন আমেরিকায় ১৯৫১ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত সেনাবাহিনী সেখানকার ১১টি দেশে ক্ষমতা দখল করে। ১৯৬৫ সালের পর অন্তত আটটি ক্ষেত্রে সেনাবাহিনী ব্যারাকে ফিরে যায়; কিন্তু পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে আবার রাষ্ট্রক্ষমতায় ফিরে আসে। ১৯৮০ সাল পর্যন্ত এসব দেশে একাধিকবার কুদেতা ও পাল্টা কুদেতা সংঘটিত হয়েছে। লাতিন আমেরিকায় এক সময়ে প্রচলিত প্রবাদ রয়েছে_একবার সেনাবাহিনীর প্রধান হতে পারলে সে দেশের প্রেসিডেন্ট হওয়া যায়। স্নায়ুযুদ্ধের অবসানের সঙ্গে সঙ্গে লাতিন আমেরিকাসহ সারা বিশ্বে সামরিক অভ্যুত্থানের প্রবণতা কমে আসছে।
সেনাবাহিনী মূলত দুই ধরনের ভূমিকা পালন করে। আরবিট্রেট ও রুলার। আরবিট্রেটরে সেনাবাহিনী সরাসরি রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে না। তবে বাইরে থেকে রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে প্রভাব খাটায়। অনেক ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর কিছু অফিসার প্রথমে সেনা সদর দপ্তর দখল করে। তাঁদের পেছনে সেনাবাহিনীর একটি বড় অংশের সমর্থন থাকে। তাঁরা পরোক্ষভাবে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে প্রভাব খাটান। তবে সাধারণ নিয়মে রাষ্ট্রের প্রধান বা চিফ এঙ্িিকউটিভ ও ব্যুরোক্রেসির ওপর তাঁরা সরাসরি কর্তৃত্ব করেন না। অনেক ক্ষেত্রে এসব দ্বৈত শাসনের উদ্ভব হয়। ১৯৩৬ থেকে ১৯৪১ সাল পর্যন্ত ইরাকের সেনাবাহিনী এ ভূমিকা পালন করে গেছে। সিরিয়ায় ১৯৪৯ সালের দিকে নূ্যনতম তিনবার সেনাবাহিনী এ ভূমিকা পালন করেছে। সাবসাহারা আফ্রিকায় ১৯৭০ সালের আগ পর্যন্ত সেনাবাহিনীর ভূমিকা ছিল 'আরব্রিটেটর'-এর। দ্বিতীয় মডেল, অর্থাৎ রুলার_এখানে সেনাবাহিনী সরাসরি 'রুলার'-এর ভূমিকায় চলে যায়। কর্নেল আদিব সিসত্র্যাকলি ১৯৫২ সালে সিরিয়ায় সেনাবাহিনীকে আরবিট্রেটরের ভূমিকা থেকে 'রুলার'-এর ভূমিকায় নিয়ে গিয়েছিলেন। মিসরে কর্নেল নাসেরের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর ভূমিকা (১৯৫৩-১৯৬১) ছিল এমনি। আমোস পলিস্যটার, ইজিপ্ট: দি প্রেইটরিয়ান স্টেট (১৯৭৪) গ্রন্থে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে সামরিক একনায়কতন্ত্রের জন্ম হয় (জায়ার, ডাহোমি, উগান্ডা, সিয়েরা লিওন, পাকিস্তান)। সেনানায়করা তাঁদের ক্ষমতাকে নিয়মসিদ্ধ করার জন্য কখনোসখনো নিজেদের পছন্দমতো একটি শাসনতন্ত্র তৈরি করে (ব্রাজিল) এবং রাজনৈতিক সংগঠনেরও জন্ম দেন (মিসর)। ইতিহাসে আছে অনেক সেনাপ্রধান জনপ্রিয় হয়েছেন (আর্জেন্টিনায় বোরেন, তুরস্কের কামাল পাশা, মিসরে নাসের)। সেনাবাহিনী কর্তৃক রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে অংশগ্রহণের দুটি মডেলের কথা সমাজবিজ্ঞানীরা বলেছেন। এই দুটি মডেল হচ্ছে 'পেনিট্রেশন মডেল' ও 'এসক্যালেশন মডেল'। একদলীয় রাষ্ট্র কাঠামোয় (উত্তর কোরিয়া) সাধারণত 'পেনিট্রেশন মডেল' কাজ করে। অন্যদিকে 'এসক্যালেশন মডেল' হচ্ছে পরোক্ষভাবে সেনাবাহিনী ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে। তারা সাধারণত সরকারের বাইরে 'প্রেসার গ্রুপ' হিসেবে কাজ করে। এ ক্ষেত্রে সেনাবাহিনী সরাসরি ক্ষমতা নিতে চায় না। তবে প্রেশার খাটিয়ে তারা তাদের স্বার্থ আদায় করে নেয়। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী এখন মিসরে এই 'এসক্যালেশন মডেল' অনুসরণ করবে।
মিসরে সেনাবাহিনী একটি শক্তি। কোন রাজনৈতিক শক্তির পক্ষে এই শক্তিকে অস্বীকার করা যাবে না। মিসরের ২১০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির ১০ থেকে ১৫ ভাগ নিয়ন্ত্রণ করে সেনাবাহিনী। তেল, দুধ, বেকারি, পানি, সিমেন্ট, গ্যাসোলিন, রিসোর্ট ও যানবাহন উৎপাদন শিল্পের সঙ্গে সেনাবাহিনী জড়িত। কোনো সরকারের পক্ষেই এটি অস্বীকার করা সহজ হবে না। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী সরকারের বাইরে থেকে প্রভাব খাটাবে। তবে সেনাবাহিনীর পক্ষে একটি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি উপহার দেওয়া কতটুকু সম্ভব হবে_সে ব্যাপারে আমি পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারছি না। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়া কোনো বিষয় নয়। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গড়ে ওঠে। যেমনটি গড়ে উঠেছে তুরস্কে। তুরস্কের ইতিহাস সেনা অভ্যুত্থানের ইতিহাস। তুরস্কের ইতিহাসে সেনাবাহিনী বারবার হস্তক্ষেপ করেছে। কিন্তু ১৯৯৬ সালের পর থেকেই সেখানে একটি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির জন্ম হয়েছে। সেখানে ১৯৯৬ সালের পর থেকেই একটি ইসলামপন্থী দল (ইসলামিক জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি) সেখানে ক্ষমতা পরিচালনা করে আসছে। জনগণ তাদের বারবার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। সেনাবাহিনীর সঙ্গে দলটির সম্পর্ক ভালো নয়। এর পরও সরকার পরিচালনায় তারা কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে না। মিসরে এখন একটি 'তুরস্ক মডেল'-এর সৃষ্টি হতে পারে। নির্বাচন দিয়ে সেনাবাহিনী ব্যারাকে ফিরে যাবে। কেননা সেনা শাসন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারাও পছন্দ করেন না। দ্বিতীয় যে বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ, তা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের ভূমিকা। প্রাপ্ত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মিসরে তরুণ সমাজের নেতৃত্বে যে মুবারকবিরোধী একটি জনমত তৈরি হয়েছিল, এটা হোয়াইট হাউস প্রশাসনের অজানা ছিল না। এমনও দেখা গেছে, মিসরের এই 'Facebook Revolution'-এর সঙ্গে যাঁরা জড়িত ছিলেন, তাঁদের কেউ কেউ ওয়াশিংটনে প্রশিক্ষণও নিয়েছেন। বিশেষ করে Kabaya Movement কিংবা April 6 Movement-কে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা থেকে সাহায্য ও সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক Carnegic Endowment, RAND কিংবা National Endowment for Democracy-এর মতো গবেষণা সংস্থাগুলো মিসরের এ ধরনের সংস্থাকে আর্থিক সহযোগিতাও করেছে। ২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় সন্ত্রাসী হামলার পর জঅঘউ মধ্যপ্রাচ্যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করে আসছে। এটা করতে গিয়ে তারা তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছে। মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও অহিংস পদ্ধতি। এ লক্ষ্যে সংগঠিত হওয়ার জন্য তারা বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাকে উৎসাহ ও সংগঠিত হতে সাহায্যও করেছে। Kabaya Movement-এ ধরনেরই একটি সংগঠন, যারা মুবারকবিরোধী আন্দোলনে একটি ভূমিকা পালন করেছিল। RAND তাদের একটি গবেষণায় মন্তব্য করেছিল এভাবে, 'Us support for reform initiatives is best cavied out through non-governmental and non-Profit institutions'|
মোদ্দাকথা, সংস্কার আনতে বেসরকারি সংস্থাগুলোকে উৎসাহী করা। এটা উন্নয়নশীল বিশ্বে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের তত্ত্বও বটে। পাঠক, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বাংলাদেশে তথাকথিত সুশীল সমাজের উত্থানের কথা স্মরণ করুন। মিসরে যুক্তরাষ্ট্রের যথেষ্ট স্বার্থ রয়েছে। স্বার্থ রয়েছে ইসরায়েলেরও। এখানে একটি কট্টরপন্থী ইসলামিক শক্তির উত্থান (লেবাননে হিজবুল্লাহ ও ফিলিস্তিনে হামাস) তাদের স্বার্থে আঘাত হানবে। তাই বিখ্যাত ও ঐতিহাসিক ইসলামিক ব্রাদারহুড পার্টিকে ভেঙে Al-Wasat পার্টি গঠন কিংবা Kabaya Movement-এর জন্ম দেওয়া সুদূরপ্রসারী ওয়াশিংটনের স্ট্র্যাটেজিরই ফল। Kabaya Movement-এর জন্ম ২০০৪ সালে। উদ্যোক্তা ছিলেন আবু লা আলা মাদি একসময় ইসলামিক ব্রাদারহুড পার্টির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ইসলামিক ব্রাদারহুড পার্টি নিষিদ্ধ থাকায় এর সমর্থকরা Ikhwan Muslim Brotherhood movement-এর জন্ম দিয়েছেন। এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাঈদ এল কাতাতিনি। ওয়াশিংটন গোপনে এই সংগঠনটিকে উৎসাহী করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। সুতরাং একজন মুবারক চলে গেলেও ওয়াশিংটন মিসরে তার স্বার্থ হারাবে, এটা মনে করার কোন কারণ নেই। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা জানেন ওয়াশিংটন Greater Middle East Policy নিয়ে কাজ করে চলছে, যেখানে মিসরের অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই সংগত কারণেই মিসরের গণতন্ত্র নিয়ে প্রশ্ন থাকবেই। কেমন হবে এই গণতন্ত্র? ইসলামপন্থী হিসেবে ব্যাপক পরিচিত ও পুরনো সংগঠন (জন্ম ১৯২৮) হিসেবে পরিচিত ইসলামিক ব্রাদারহুডের ভূমিকাই বা কী? দলটির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা আদৌ কি প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে? নাকি একটি বিকল্প শক্তি সেখানে ক্ষমতা নেবে, যাদের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক রয়েছে? আগামী কয়েক মাস এসব প্রশ্ন বারবার আলোচিত হতে থাকবে। তবে একটা কথা বলা যায়_সেনাবাহিনী পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তার ভূমিকা নিশ্চিত করেই একটি নতুন রাজনৈতিক শক্তির কাছে সেনাবাহিনী ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। তুরস্কের ইসলামিক জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির একটি সংস্করণ হতে পারে মিসরের ইসলামিক ব্রাদারহুড, যারা নতুন একটি দল গঠন করার কথা ঘোষণা করেছে।
লেখক : অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিশ্লেষক
tsrahmanbd@yahoo.com
সামরিক-বেসামরিক সম্পর্কের ইতিহাস বলে সেনাবাহিনী কখনো সিভিলিয়ানদের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়, কখনো দেয় না। নিজেরা দল গঠন করে রাজনৈতিক পরিচয়ে ক্ষমতা পরিচালনা করে। যেমনটি হয়েছিল ১৯৫২ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে এখন পর্যন্ত মিসরে (লিবারেশন র্যালি, ন্যাশনাল ইউনিয়ন, আরব সোশ্যালিস্ট ইউনিয়ন ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি)। সেনাবাহিনী ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছে, এমন ইতিহাসও আছে। জেনারেল বাবাঙ্গিদা নাইজেরিয়ায় ক্ষমতা দখল করেছিলেন ১৯৮৫ সালে। ১৯৯৩ সালের ১৮ নভেম্বর তিনি নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট আর্নেস্ট গোবেকারের কাছে ক্ষমতা তুলে দিয়েছিলেন। তবুও আগে জেনারেল ওবাসানজিও সিভিলিয়ান সেগু সাগারির হাতে ১৯৭৯ সালে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছিলেন। ১৯৮৬ সালে জেনারেল দাহানও ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছিলেন সুদানে ১৯৮৬ সালে। কিন্তু সুদানে জেনারেল ওমর আল বসির ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় আছেন। ক্ষমতা তিনি ছাড়েননি। তুলনামূলক বিচারে আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকায় সেনা-অভ্যুত্থান বেশি হয়েছে। আফ্রিকায় সত্তরের দশকে যেসব সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে, সেখানে একটি মার্কসীয় দর্শন কাজ করেছিল। আফ্রিকার অনেক দেশে (ইথিওপিয়া, বেনিন, ভাহোসি, সিয়েরা লিওন প্রভৃতি) তরুণ অফিসাররা ক্ষমতা দখল করে সেসব দেশে 'সমাজতন্ত্র' নির্মাণে ব্রতী হয়েছিলেন। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ওই সব নেতার পক্ষে তার সমর্থনও ছুড়ে দিয়েছিল। এটা করতে গিয়ে ষাটের দশকে সোভিয়েত ইউনিয়ন তার সমাজতান্ত্রিক দর্শনেও কিছু কিছু পরিবর্তন এনেছিল (Socialist Orientation)। ইউরোপে সামরিক অভ্যুত্থানের সর্বশেষ খবর পাওয়া গিয়েছিল ১৯৭৪ সালে পর্তুগালে, যদিও সামরিক অভ্যুত্থানের চেয়ে এই অভ্যুত্থান ছিল ভিন্ন ধরনের। যার কারণে সেনাবাহিনীর তরুণ অফিসাররা সেদিন প্রশংসিত হয়েছিলেন। সেনাবাহিনী সেদিন স্বৈরাচারী সরকারকে উৎখাত করেছিল; কিন্তু ক্ষমতা নেয়নি। পর্তুগালের বাইরে সাইপ্রাসে ১৯৭৪ সালে, গ্রিসে ১৯৬৯ সালে ও ফ্রান্সে ১৯৫৮ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের খবর পাওয়া যায়। লাতিন আমেরিকায় ১৯৫১ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত সেনাবাহিনী সেখানকার ১১টি দেশে ক্ষমতা দখল করে। ১৯৬৫ সালের পর অন্তত আটটি ক্ষেত্রে সেনাবাহিনী ব্যারাকে ফিরে যায়; কিন্তু পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে আবার রাষ্ট্রক্ষমতায় ফিরে আসে। ১৯৮০ সাল পর্যন্ত এসব দেশে একাধিকবার কুদেতা ও পাল্টা কুদেতা সংঘটিত হয়েছে। লাতিন আমেরিকায় এক সময়ে প্রচলিত প্রবাদ রয়েছে_একবার সেনাবাহিনীর প্রধান হতে পারলে সে দেশের প্রেসিডেন্ট হওয়া যায়। স্নায়ুযুদ্ধের অবসানের সঙ্গে সঙ্গে লাতিন আমেরিকাসহ সারা বিশ্বে সামরিক অভ্যুত্থানের প্রবণতা কমে আসছে।
সেনাবাহিনী মূলত দুই ধরনের ভূমিকা পালন করে। আরবিট্রেট ও রুলার। আরবিট্রেটরে সেনাবাহিনী সরাসরি রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে না। তবে বাইরে থেকে রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে প্রভাব খাটায়। অনেক ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর কিছু অফিসার প্রথমে সেনা সদর দপ্তর দখল করে। তাঁদের পেছনে সেনাবাহিনীর একটি বড় অংশের সমর্থন থাকে। তাঁরা পরোক্ষভাবে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে প্রভাব খাটান। তবে সাধারণ নিয়মে রাষ্ট্রের প্রধান বা চিফ এঙ্িিকউটিভ ও ব্যুরোক্রেসির ওপর তাঁরা সরাসরি কর্তৃত্ব করেন না। অনেক ক্ষেত্রে এসব দ্বৈত শাসনের উদ্ভব হয়। ১৯৩৬ থেকে ১৯৪১ সাল পর্যন্ত ইরাকের সেনাবাহিনী এ ভূমিকা পালন করে গেছে। সিরিয়ায় ১৯৪৯ সালের দিকে নূ্যনতম তিনবার সেনাবাহিনী এ ভূমিকা পালন করেছে। সাবসাহারা আফ্রিকায় ১৯৭০ সালের আগ পর্যন্ত সেনাবাহিনীর ভূমিকা ছিল 'আরব্রিটেটর'-এর। দ্বিতীয় মডেল, অর্থাৎ রুলার_এখানে সেনাবাহিনী সরাসরি 'রুলার'-এর ভূমিকায় চলে যায়। কর্নেল আদিব সিসত্র্যাকলি ১৯৫২ সালে সিরিয়ায় সেনাবাহিনীকে আরবিট্রেটরের ভূমিকা থেকে 'রুলার'-এর ভূমিকায় নিয়ে গিয়েছিলেন। মিসরে কর্নেল নাসেরের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর ভূমিকা (১৯৫৩-১৯৬১) ছিল এমনি। আমোস পলিস্যটার, ইজিপ্ট: দি প্রেইটরিয়ান স্টেট (১৯৭৪) গ্রন্থে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে সামরিক একনায়কতন্ত্রের জন্ম হয় (জায়ার, ডাহোমি, উগান্ডা, সিয়েরা লিওন, পাকিস্তান)। সেনানায়করা তাঁদের ক্ষমতাকে নিয়মসিদ্ধ করার জন্য কখনোসখনো নিজেদের পছন্দমতো একটি শাসনতন্ত্র তৈরি করে (ব্রাজিল) এবং রাজনৈতিক সংগঠনেরও জন্ম দেন (মিসর)। ইতিহাসে আছে অনেক সেনাপ্রধান জনপ্রিয় হয়েছেন (আর্জেন্টিনায় বোরেন, তুরস্কের কামাল পাশা, মিসরে নাসের)। সেনাবাহিনী কর্তৃক রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে অংশগ্রহণের দুটি মডেলের কথা সমাজবিজ্ঞানীরা বলেছেন। এই দুটি মডেল হচ্ছে 'পেনিট্রেশন মডেল' ও 'এসক্যালেশন মডেল'। একদলীয় রাষ্ট্র কাঠামোয় (উত্তর কোরিয়া) সাধারণত 'পেনিট্রেশন মডেল' কাজ করে। অন্যদিকে 'এসক্যালেশন মডেল' হচ্ছে পরোক্ষভাবে সেনাবাহিনী ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে। তারা সাধারণত সরকারের বাইরে 'প্রেসার গ্রুপ' হিসেবে কাজ করে। এ ক্ষেত্রে সেনাবাহিনী সরাসরি ক্ষমতা নিতে চায় না। তবে প্রেশার খাটিয়ে তারা তাদের স্বার্থ আদায় করে নেয়। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী এখন মিসরে এই 'এসক্যালেশন মডেল' অনুসরণ করবে।
মিসরে সেনাবাহিনী একটি শক্তি। কোন রাজনৈতিক শক্তির পক্ষে এই শক্তিকে অস্বীকার করা যাবে না। মিসরের ২১০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির ১০ থেকে ১৫ ভাগ নিয়ন্ত্রণ করে সেনাবাহিনী। তেল, দুধ, বেকারি, পানি, সিমেন্ট, গ্যাসোলিন, রিসোর্ট ও যানবাহন উৎপাদন শিল্পের সঙ্গে সেনাবাহিনী জড়িত। কোনো সরকারের পক্ষেই এটি অস্বীকার করা সহজ হবে না। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী সরকারের বাইরে থেকে প্রভাব খাটাবে। তবে সেনাবাহিনীর পক্ষে একটি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি উপহার দেওয়া কতটুকু সম্ভব হবে_সে ব্যাপারে আমি পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারছি না। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়া কোনো বিষয় নয়। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গড়ে ওঠে। যেমনটি গড়ে উঠেছে তুরস্কে। তুরস্কের ইতিহাস সেনা অভ্যুত্থানের ইতিহাস। তুরস্কের ইতিহাসে সেনাবাহিনী বারবার হস্তক্ষেপ করেছে। কিন্তু ১৯৯৬ সালের পর থেকেই সেখানে একটি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির জন্ম হয়েছে। সেখানে ১৯৯৬ সালের পর থেকেই একটি ইসলামপন্থী দল (ইসলামিক জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি) সেখানে ক্ষমতা পরিচালনা করে আসছে। জনগণ তাদের বারবার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। সেনাবাহিনীর সঙ্গে দলটির সম্পর্ক ভালো নয়। এর পরও সরকার পরিচালনায় তারা কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে না। মিসরে এখন একটি 'তুরস্ক মডেল'-এর সৃষ্টি হতে পারে। নির্বাচন দিয়ে সেনাবাহিনী ব্যারাকে ফিরে যাবে। কেননা সেনা শাসন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারাও পছন্দ করেন না। দ্বিতীয় যে বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ, তা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের ভূমিকা। প্রাপ্ত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মিসরে তরুণ সমাজের নেতৃত্বে যে মুবারকবিরোধী একটি জনমত তৈরি হয়েছিল, এটা হোয়াইট হাউস প্রশাসনের অজানা ছিল না। এমনও দেখা গেছে, মিসরের এই 'Facebook Revolution'-এর সঙ্গে যাঁরা জড়িত ছিলেন, তাঁদের কেউ কেউ ওয়াশিংটনে প্রশিক্ষণও নিয়েছেন। বিশেষ করে Kabaya Movement কিংবা April 6 Movement-কে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা থেকে সাহায্য ও সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক Carnegic Endowment, RAND কিংবা National Endowment for Democracy-এর মতো গবেষণা সংস্থাগুলো মিসরের এ ধরনের সংস্থাকে আর্থিক সহযোগিতাও করেছে। ২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় সন্ত্রাসী হামলার পর জঅঘউ মধ্যপ্রাচ্যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করে আসছে। এটা করতে গিয়ে তারা তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছে। মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও অহিংস পদ্ধতি। এ লক্ষ্যে সংগঠিত হওয়ার জন্য তারা বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাকে উৎসাহ ও সংগঠিত হতে সাহায্যও করেছে। Kabaya Movement-এ ধরনেরই একটি সংগঠন, যারা মুবারকবিরোধী আন্দোলনে একটি ভূমিকা পালন করেছিল। RAND তাদের একটি গবেষণায় মন্তব্য করেছিল এভাবে, 'Us support for reform initiatives is best cavied out through non-governmental and non-Profit institutions'|
মোদ্দাকথা, সংস্কার আনতে বেসরকারি সংস্থাগুলোকে উৎসাহী করা। এটা উন্নয়নশীল বিশ্বে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের তত্ত্বও বটে। পাঠক, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বাংলাদেশে তথাকথিত সুশীল সমাজের উত্থানের কথা স্মরণ করুন। মিসরে যুক্তরাষ্ট্রের যথেষ্ট স্বার্থ রয়েছে। স্বার্থ রয়েছে ইসরায়েলেরও। এখানে একটি কট্টরপন্থী ইসলামিক শক্তির উত্থান (লেবাননে হিজবুল্লাহ ও ফিলিস্তিনে হামাস) তাদের স্বার্থে আঘাত হানবে। তাই বিখ্যাত ও ঐতিহাসিক ইসলামিক ব্রাদারহুড পার্টিকে ভেঙে Al-Wasat পার্টি গঠন কিংবা Kabaya Movement-এর জন্ম দেওয়া সুদূরপ্রসারী ওয়াশিংটনের স্ট্র্যাটেজিরই ফল। Kabaya Movement-এর জন্ম ২০০৪ সালে। উদ্যোক্তা ছিলেন আবু লা আলা মাদি একসময় ইসলামিক ব্রাদারহুড পার্টির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ইসলামিক ব্রাদারহুড পার্টি নিষিদ্ধ থাকায় এর সমর্থকরা Ikhwan Muslim Brotherhood movement-এর জন্ম দিয়েছেন। এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাঈদ এল কাতাতিনি। ওয়াশিংটন গোপনে এই সংগঠনটিকে উৎসাহী করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। সুতরাং একজন মুবারক চলে গেলেও ওয়াশিংটন মিসরে তার স্বার্থ হারাবে, এটা মনে করার কোন কারণ নেই। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা জানেন ওয়াশিংটন Greater Middle East Policy নিয়ে কাজ করে চলছে, যেখানে মিসরের অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই সংগত কারণেই মিসরের গণতন্ত্র নিয়ে প্রশ্ন থাকবেই। কেমন হবে এই গণতন্ত্র? ইসলামপন্থী হিসেবে ব্যাপক পরিচিত ও পুরনো সংগঠন (জন্ম ১৯২৮) হিসেবে পরিচিত ইসলামিক ব্রাদারহুডের ভূমিকাই বা কী? দলটির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা আদৌ কি প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে? নাকি একটি বিকল্প শক্তি সেখানে ক্ষমতা নেবে, যাদের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক রয়েছে? আগামী কয়েক মাস এসব প্রশ্ন বারবার আলোচিত হতে থাকবে। তবে একটা কথা বলা যায়_সেনাবাহিনী পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তার ভূমিকা নিশ্চিত করেই একটি নতুন রাজনৈতিক শক্তির কাছে সেনাবাহিনী ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। তুরস্কের ইসলামিক জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির একটি সংস্করণ হতে পারে মিসরের ইসলামিক ব্রাদারহুড, যারা নতুন একটি দল গঠন করার কথা ঘোষণা করেছে।
লেখক : অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিশ্লেষক
tsrahmanbd@yahoo.com
No comments