পদ্মা সেতুর অর্থায়নে নানামুখী তৎপরতা by আরিফুর রহমান

পদ্মা সেতু প্রকল্পে সহযোগিতা অব্যাহত রাখা এবং নতুন করে অর্থায়ন ও ঋণচুক্তির জন্য উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। অতিরিক্ত অর্থায়নে রাজি করাতেও সরকারের প্রতিনিধিরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এর ধারাবাহিকতায় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) এবং ইসলামী


উন্নয়ন ব্যাংককে (আইডিবি) পৃথক চিঠি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। নতুন করে অর্থায়ন ও ঋণচুক্তির অনুরোধ জানিয়ে এই তিন সংস্থার প্রধানকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ চিঠি দেওয়া হয়েছে। আর অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সিনিয়র সচিব ইকবাল মাহমুদ আইডিবির বোর্ড সভায় অংশ নিতে তিন দিনের সফরে বৃহস্পতিবার জেদ্দায় গেছেন।
অন্যদিকে বিশ্বব্যাংকে বাংলাদেশের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক কাজী আমিনুল ইসলাম এবং দক্ষিণ এশিয়ার পক্ষে নির্বাহী পরিচালক মুকেশ প্রসাদ সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. সৈয়দ আবদুস সামাদের ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের নতুন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন নিয়ে আলোচনা করার কথা। মন্ত্রিসভার বৈঠকে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও সরকার এখনো বৈদেশিক ঋণ পাওয়ার আশা করছে।
ইআরডি সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়নের ব্যাপারে নতুন চুক্তির প্রস্তাব দিয়ে গত বুধবার তিন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সদর দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এতে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে কিভাবে একটা সমাধানে আসা যায়, সে বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে। তবে বিশ্বব্যাংকের বিষয়ে চিঠিতে কিছুই উল্লেখ করা হয়নি।
সূত্র জানায়, এডিবি, জাইকা ও আইডিবির অর্থায়নে পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। বিশ্বব্যাংক ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি বাতিল করায় যে ঘাটতি তৈরি হয়েছে, তা পূরণে এ তিন সংস্থাকে অনুরোধ জানানো হবে।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকেরও ফিরে আসার সুযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে। গত সপ্তাহে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বিশ্বব্যাংককে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য কোনো চিঠি এখন দেওয়া হবে না। ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের পক্ষে নির্বাহী পরিচালক বিষয়টি নিয়ে বিশ্বব্যাংকের নতুন প্রেসিডেন্টসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিশ্বব্যাংক সদর দপ্তর থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেলে সরকারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হবে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সিনিয়র সচিব ইকবাল মাহমুদ ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) নির্বাহী পরিচালকদের বোর্ড সভায় অংশ নিতে গতকাল জেদ্দার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। ইআরডি সচিব বাংলাদেশের পক্ষে আইডিবির নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি বোর্ড সভায় পদ্মা সেতুতে সহযোগিতা অব্যাহত রাখা এবং অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দের জন্য আইডিবিকে অনুরোধ জানাবেন বলে জানা গেছে। আগামীকাল আইডিবির বোর্ড সভা শুরু হবে, ১৬ জুলাই শেষ হবে। ১৭ জুলাই তিনি ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন।
এদিকে বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. সৈয়দ আবদুস সামাদ জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের বৈঠকে যোগ দিতে গত শনিবার নিউ ইয়র্কে গেছেন। সেখানে পৃথক দুটি সেমিনারে তাঁর প্যানেলিস্ট হিসেবে অংশ নেওয়ার কথা। সেমিনারে বিশ্বব্যাংকের নতুন প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিমের যোগ দেওয়ার কথা। সেমিনারের কোনো এক সময়ে ড. সৈয়দ আবদুস সামাদ কিমের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে সূত্র জানিয়েছিল। তবে উভয়ের মধ্যে কোনো আলোচনা হয়েছে কি-না তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। আজ শনিবার ড. এস এ সামাদের ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে।
ইআরডি সূত্র জানায়, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ভাইস প্রেসিডেন্ট মিস লক্ষ্মী ভ্যাঙ্কটচলম আগামী ২৯ জুলাই ঢাকা সফরে আসছেন। দুই দিনের ঢাকা সফরে তিনি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সিনিয়র সচিব ইকবাল মাহমুদের সঙ্গে দেখা করবেন। তিনি একই সঙ্গে প্রাণসহ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
এডিবির ঢাকা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি খাতে এডিবির অর্থায়নে চলমান প্রকল্পগুলোর সর্বশেষ অবস্থা দেখতে তিনি ঢাকায় আসছেন। এ ছাড়া প্রাণসহ কিছু প্রতিষ্ঠানের ঋণের কিছু অনুরোধ রয়েছে; এসব বিষয় চূড়ান্ত করবেন।
পদ্মা সেতুতে পুনঃ অর্থায়ন নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা হবে কি-না এ ব্যাপারে এডিবির এক কর্মকর্তা গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, মিস লক্ষ্মী পদ্মা সেতু নিয়ে কাজ করেন না। তাই এ বিষয়ে আলোচনার কোনো সুযোগ নেই। তবে সরকার ইচ্ছা করলে তাঁর সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করতে পারে। সে ক্ষেত্রে তিনি বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সঙ্গে আলোচনা করার কথা বলতে পারেন।
এডিবির ঢাকা কার্যালয়ের আরেক কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, সরকারের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থায়ন ও চুক্তির বিষয়টি নিয়ে সংস্থার সদর দপ্তরে আলোচনা হবে। এরপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। পদ্মা সেতু প্রকল্পে এডিবির অর্থায়নের সুযোগ রয়েছে।
জাইকার ঢাকা কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, জাইকার আবাসিক প্রতিনিধি বর্তমানে জাপানে অবস্থান করছেন। আগামী সপ্তাহে তিনি ঢাকায় ফিরবেন। এরপর জাইকার অবস্থান পরিষ্কার করা হবে বলে তিনি জানান। তবে এখনো জাপান সরকারের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি।
প্রসঙ্গত, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক গত ২৯ জুন ঋণচুক্তি বাতিল করে। ফলে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) সঙ্গে করা চুক্তিও স্বাভাবিকভাবেই বাতিল হয়ে গেছে। এ অবস্থায় নতুন করে ঋণচুক্তি করতে হবে। তবে ইসলামী উন্নয়ন সংস্থার (আইডিবি) সঙ্গে ঋণচুক্তি বহাল রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.