অচলাবস্থা নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নিন-বুয়েট পরিস্থিতি

দেশের অন্যতম সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অচলাবস্থায় আমরা উদ্বিগ্ন। বর্তমানে বুয়েট প্রশাসন ও শিক্ষক সমিতি মুখোমুখি অবস্থানে। তিন দিন ধরে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অবস্থান ধর্মঘট চালিয়ে আসছেন।


গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গেলে উপাচার্যকে শিক্ষক সমিতির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের পরামর্শ দেন তিনি। আমরাও মনে করি, আলোচনাই হলো সমস্যা সমাধানের উত্তম পথ। কিন্তু যেখানে দুই পক্ষ দুই মেরুতে অবস্থান করছে, সেখানে আলোচনা কীভাবে হবে? শিক্ষক সমিতির সভাপতি বলেছেন, উপাচার্য ও সহ-উপাচার্য পদত্যাগের আগে আলোচনা নয়। অন্যদিকে উপাচার্য নজরুল ইসলাম বলেছেন, তিনি পদত্যাগ করবেন না। গতকাল প্রথম আলো অনলাইনের খবর অনুযায়ী, পুরকৌশল অনুষদের ডিন মুহাম্মদ জাকারিয়ার নেতৃত্বাধীন অভ্যন্তরীণ কমিটি অন্তত একটি ক্ষেত্রে অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে।
বুয়েটের অচলাবস্থায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বুয়েট এলামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা জামিলুর রেজা চৌধুরীও। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনাকালে শিক্ষক সমিতি ধর্মঘট প্রত্যাহার করলেও তারা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন মেনে নেয়নি। গত সপ্তাহে শিক্ষক সমিতি ধর্মঘটের কর্মসূচি নিলে উপাচার্য তাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেন। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা না করে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ায় বুয়েট পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। শিক্ষকদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেন শিক্ষার্থীরাও।
উপাচার্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের যে ঘোষণা দিয়েছেন, তা শিক্ষকদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার আগে এ রকম সিদ্ধান্ত দিলে হয়তো শিক্ষক সমিতি সরাসরি অগ্রাহ্য করতে পারত না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে প্রশাসনের পাশাপাশি শিক্ষকদের আস্থা অর্জনও তাঁর জন্য জরুরি। উপাচার্যের বিরুদ্ধে দলীয়করণ ও স্বজনপ্রীতির যেসব অভিযোগ আছে, জাকারিয়া কমিটির প্রতিবেদনের পর তার সবকিছু অস্বীকারের উপায় নেই।
বুয়েটের মতো একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দেশের সীমা ছাড়িয়ে বাইরেও যার উজ্জ্বল ভাবমূর্তি আছে, সেই প্রতিষ্ঠানকে এভাবে অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দেওয়া যায় না। আবার দাবিদাওয়া আদায়ে শিক্ষকেরাও ট্রেড ইউনিয়নের মতো কথায় কথায় ধর্মঘটে যাবেন, তা-ও সমর্থনযোগ্য নয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যের পদটি অন্যান্য প্রশাসনিক পদের মতো নয়; এর কার্যকারিতা ও গ্রহণযোগ্যতা নির্ভর করে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের আস্থার ওপর। সেই আস্থা কেউ নষ্ট করলে তার প্রতিষ্ঠানে থাকা কতটা সমীচীন, তা-ও ভেবে দেখার বিষয়। আমরা চাই, অবিলম্বে বুয়েটে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসুক। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করি।

No comments

Powered by Blogger.