পবিত্র কোরআনের আলো-'হাওয়ারিরা' ঈসা (আ.)-এর সাহায্যে এগিয়ে এলেন
৫০. ওয়ামুসাদ্দিক্বাল্ লিমা- বাইনা ইয়াদাইয়্যা মিনাত্ তাওরা-তি ওয়ালিউহিল্লা লাকুম বা'দ্বাল্লাযী হুর্রিমা আ'লাইকুম ওয়াজি'তুকুম বিআ-ইয়াতিম্ মির্ রাবি্বকুম; ফাত্তাক্বুল্লা-হা ওয়াআত্বীঊ'ন। ৫১. ইন্নাল্লা-হা রাব্বী ওয়া রাব্বুকুম ফা'বুদূহু; হা-যা- সিরা-ত্বুম্ মুছতাক্বীম।
৫২. ফালাম্মা- আহাচ্ছা ঈ'ছা- মিনহুমুল কুফরা ক্বা-লা মান আনসা-রী ইলাল্লাহি; ক্বা-লাল হাওয়া-রিয়ূ্যনা নাহ্নু আনসা-রুল্লাহি; আ-মান্না- বিল্লাহি ওয়াশহাদ বিআন্না- মুছলিমূন। [সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৫০-৫২]
অনুবাদ : ৫০. (মাসীহ আরো বললেন) তাওরাতের যে বাণী আমার কাছে রয়েছে আমি তার সত্যায়নকারী, আর তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে এমন কিছু জিনিসও আমি তোমাদের জন্য হালাল করে দেব, আমি তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে এই নিদর্শন নিয়েই এসেছি। অতএব তোমরা আল্লাহর প্রতি দায়িত্বনিষ্ঠ হও এবং আমার অনুসরণ করো।
৫১. নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা আমার প্রভু এবং তোমাদেরও প্রভু। অতএব তোমরা তাঁরই ইবাদত করো। এটাই হচ্ছে একমাত্র সোজা পথ।
৫২. অতঃপর ঈসা মসীহ যখন তাদের দিক থেকে অর্থাৎ বনি ইসরাইলের দিক থেকে অবাধ্যতার আঁচ করলেন তখন তিনি তাঁর সহচরদের ডেকে বললেন, তোমাদের মধ্যে কে আছ আল্লাহর পথে আমার সাহায্যকারী হবে। তখন হাওয়ারিরা (শ্বেতাঙ্গ) বলল, আমরা আল্লাহর ওপর ইমান এনেছি, আপনি সাক্ষী থাকুন, আমরা আল্লাহর অনুগত বান্দা।
ব্যাখ্যা : এই আয়াতগুলোতেও আগের আয়াতের ধারাবাহিকতায় ঈসা মসীহ (আ.)-এর কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, হজরত ঈসা (আ.) বনি ইসরাইল বংশোদ্ভূত নবী। তিনি প্রথমেই বনি ইসরাইলের লোকদের তাঁর নবুয়ত মেনে নিয়ে তাদের ধর্ম সংস্কারের পথে আসার আহ্বান জানালেন। ৫০ নম্বর আয়াতে মসীহের নবুয়তের সত্যতা এবং তিনি যে তাওরাতের সত্যায়নকারী ছিলেন এ তথ্য বলা হয়েছে। এরপর তাদের সংস্কারের একটি মাত্র ইতিবাচক বিষয়ের কথা উল্লেখ করা হয়। সেটি হলো তাওরাতে যেসব বিষয় হারাম বা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল এমন কিছু বিষয় হালাল করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। ধর্ম সংস্কারের এরূপ ইতিবাচক দিকনির্দেশনা নিশ্চয়ই ছিল বনি ইসরাইলের মন নরম করার জন্য। তিনি তাদের বোঝাতে চেষ্টা করলেন যে আমি তোমাদেরই লোক এবং তোমাদের কল্যাণের জন্যই আমি আল্লাহর নির্দেশে আমাদের ধর্ম সংস্কার করব। কিন্তু এতে কোনো ফল হলো না। ইহুদিরা ঈসা মসীহকে (আ.) তাদের নবী হিসেবে মেনে নিতে চাইল না। ইহুদি ধর্মগুরুরা মনে করল এতে তাদের গুরুত্ব কমে যাবে, তাদের কায়েমী স্বার্থে আঘাত লাগবে।
ঈসা মসীহ (আ.) যখন দেখলেন তাঁর নিজ বংশের লোকেরা তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে, তখন তিনি জেরুজালেম ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে গেলেন। কোনো কোনো তাফসিরকারের মতে, তিনি মিসরে পালিয়ে গিয়েছিলেন। আবার কারো কারো মতে, সিরিয়া বা এশিয়া মাইনরের দিকে পালিয়ে গিয়েছিলেন। সে সময় তিনি স্ববংশের অত্যাচারী ধর্মগুরুদের হাত থেকে বাঁচার জন্য তাঁর সানি্নধ্যে এসে আল্লাহর পথে সাহায্যের জন্য গণমানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। তখন 'হাওয়ারিরা' তাঁকে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি নিয়ে এগিয়ে এসেছিলেন। ইতিহাসের এই হাওয়ারিরা কারা তা নিয়ে মতভেদ আছে। কারো কারো মতে, 'হাওয়ারি' বলা হতো ধোপা সম্প্রদায়কে। আবার কারো কারো মতে, হওয়ারি বলা হতো শ্বেতাঙ্গ এক গোত্রকে। আবার এ নিয়েও বিতর্ক আছে। হাওয়ারিরা বনি ইসরাইল বংশোদ্ভূত ছিল না, অন্য কোনো জাতির লোক ছিল। তাফসিরকারদের মধ্যে আবার এ নিয়েও বিতর্ক আছে যে হজরত ঈসা (আ.) একান্তভাবে বনি ইসরাইল সম্প্রদায়ের নবী ছিলেন এবং বনি ইসরাইল বহির্ভূত অন্য সম্প্রদায়কে ধর্মের দাওয়াত দেওয়া তাঁর কাজ ছিল। অধমের ধারণা, এ বিতর্কের সূত্রপাত সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। প্রাচীনকালে অনেক নবীরই জন্ম এবং কর্ম সীমাবদ্ধ ছিল নিজ গোত্রের ভেতরে, এর মানে গোত্রবহির্ভূত মানুষকে ধর্মের দাওয়াত দেওয়া_একত্ববাদ এবং সত্য ও ন্যায়ের পথে আহ্বান জানানো নিষিদ্ধ ছিল এমন নয়। পরবর্তীকালে হজরত ঈসা (আ.)-এর ধর্ম ইহুদি সম্প্রদায়ের বাইরে প্রচারিত ও প্রসারিত হয়েছিল।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
No comments