খুনী হাফিজুর মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে
ছোট বোনের স্বামীর পরকীয়ায় বাধা দেয়ায় গুলি চালিয়ে জাতীয় পার্টির নেতা ও গার্মেন্টস ব্যবসায়ী মোজাম্মেল হোসেন মিলনকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি খুনী হাফিজুর রহমান। বর্তমানে কারাগারে বসেই মামলা তুলে নেয়ার জন্য নিহতের পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে।
মাঝে মধ্যেই ভাড়া করা লোকজন পাঠিয়ে মামলার বাদী নিহতের স্ত্রী মেহেরুন নিসা কলিসহ পরিবারের সবাইকে ভয় দেখাচ্ছে। মামলা তুলে না নিলে মিলনের পরিণতি বরণ করতে হবে বলে আসামির পরিবারের লোকজন এবং আসামিদের ভাড়া করা সন্ত্রাসীরা হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। অব্যাহত হুমকির মুখে নিহতের পরিবার অনেকটাই পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ব্যবসায়ী ও রাজধানীর মতিঝিল থানা জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন মিলন স্ত্রী মেহেরুন নিসা কলির একমাত্র ছেলে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র মোহাম্মদ সাদাবকে নিয়ে রাজধানীর শাহজাহানপুর থানাধীন রাজারবাগ লাইনের আউর্টার সার্কুলার রোডের ৯৫৬ নম্বর বাড়িতে বসবাস করছিলেন। মোজাম্মেল হোসেন মিলনের বোন খালেদা পারভীন বেবী। বেবীর স্বামী হাফিজুর রহমান। দীর্ঘ দিন ধরেই হাফিজুর রহমান পরকীয়ায় জড়িত। বিষয়টি নিয়ে পরিবারে চরম অশান্তি চলে আসছিল। ঘটনাটি বেবীর বড় ভাই মোজাম্মেল হোসেন মিলন জানতে পারেন।
পারিবারিকভাবে বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে গত ২৯ মে ঘটনার রাতে শান্তিবাগের ১৪৩ নম্বর ৬ষ্ঠ তলার বেবীর বাসায় যান মিলন। আলোচনার এক পর্যায়ে পরকীয়ার বিষয়টি উত্থাপন করায় হাফিজুর রহমান উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। এরপর কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার লাইসেন্সকৃত শটগান বের করে মিলনের গলায় ঠেকিয়ে গুলি চালাতে থাকে। এতে ঘটনাস্থলেই মিলনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় থানায় হাফিজুর রহমানকে প্রধান আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। এদিকে খুনের পর থেকেই হাফিজুর পালিয়ে যায়।
হাফিজুর রহমানকে গ্রেফতার করতে মাঠে নামে পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দারা। চলতে থাকে ধারাবাহিক অভিযান। অভিযানের ধারাবাহিকতায় গত ১০ জুন রবিবার রাত ১০টায় র্যাব-৩ এর একটি চৌকস দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর নন্দীপাড়া এলাকায় অভিযান চালায়। অভিযানের বিষয়টি আঁচ করতে পেরে পালানোর চেষ্টা করে খুনী হাফিজুর রহমান। এ সময় কৌশলে র্যাব তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। পরে আদালতের মাধ্যমে খুনীকে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
নিহত মিলনের স্ত্রী কলি জানান, কারাগারে বসেই কলকাঠি নাড়ছে আসামি হাফিজুর রহমান। হাফিজুর রহমানের পরিবারের সদস্য সালাহ উদ্দিন বকুল, বকুলের স্ত্রী মনোয়ার বেগম, নাদিরা, রহুল আমিন, জিন্নাহসহ অনেকেই বিভিন্নভাবে মোবাইল ফোনে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। বলছে, মামলা তুলে না নিলে তাদের মিলনের পরিণতি বরণ করতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে তারা পুরোপুরি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। জীবন বাঁচানোর জন্য অনেকটাই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
এ ব্যাপারে শাহজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিছুল হক বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে বলে জনকণ্ঠকে জানান।
No comments