জমিদার রতন ব্যানার্জির বাড়ি
প্রাচীন ঐতিহ্যের স্মৃতি কালের গহ্বরে ঢাকা পড়লেও এর নিদর্শন চিরকাল অম্লান থাকে। রূপগঞ্জের মুড়াপাড়ার জমিদার বাড়িটি তেমনই একটি স্মৃতিচিহ্ন। এ বাড়িটিকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে রূপগঞ্জের ইতিহাস, কৃষ্টি, সভ্যতা ও আজকের এই কোলাহলপূর্ণ জনবসতি।
শীতলক্ষ্যা নদীর তীর ঘেঁষে মহাকালের নীরব সাক্ষী হয়ে আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে এ জমিদার বাড়ি। ছায়া নিবিড় পরিবেশে গড়ে ওঠা মনোমুগ্ধকর এ জমিদার বাড়ির যে কোন ভ্রমণপিপাসুর মন কাড়ে।
গোড়াপত্তনের ইতিহাস : রাজধানী ঢাকা থেকে মাত্র ১৮ কিলোমিটার দূরে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানার মুড়াপাড়া এলাকায় ৫২ বিঘা জমির ওপর এই প্রকা- জমিদার বাড়ি অবস্থিত। জমিদার বাবু রাম রতন ব্যানার্জী তৎকালীন মুড়াপাড়া জমিদার বংশের প্রতিষ্ঠাতা এবং জমিদারদের উর্ধতন ষষ্ঠ পুরুষ। তিনিই মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ির গোড়াপত্তন করেন। রাম রতন ব্যানার্জীর পুত্র পিতাম্বর ব্যানার্জী এবং তৎপুত্র প্রতাপ চন্দ্র ব্যানার্জী শাহজাদপুরের জমিদারি ক্রয় করে জমিদারি বর্ধন করেন। কথিত আছে, জমিদারি ক্রয় সূত্রে প্রতাপ ব্যানার্জীর সঙ্গে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঠাকুরদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের প্রগাঢ় বন্ধুত্ব ছিল। ১৮৮৯ সালে প্রতাপ চন্দ্র ব্যানার্জীর পৈতৃক এজমালি পুরনো বাড়ি ত্যাগ করে আলোচ্য এ প্রাসাদের পেছনের অংশ নির্মাণ করে বসবাস শুরু করেন। প্রতাপ চন্দ্র ব্যানার্জীর পুত্র বিজয় চন্দ্র ব্যানার্জী ১৮৯৯ সালে প্রাসাদের সম্মুখ অংশের একতলা ভবন নির্মাণ ও সেখানে ২টি পুকুর খনন করার পর হƒদরোগে মারা যান। তিনি ছিলেন এ অঞ্চলের প্রথম গ্র্যাজুয়েট। বিজয় চন্দ্র ব্যানার্জীর দুই সুযোগ্য পুত্র জগদীশ চন্দ্র ব্যানার্জী ও আশুতোষ চন্দ্র ব্যানার্জী ১৯০৯ সালে প্রাসাদটির দোতলার কাজ সম্পন্ন করেন। এ অঞ্চলে জগদীশ চন্দ্র ব্যানার্জীর নাম সমধিক প্রসিদ্ধ। কারণ তিনি দু’বার দিলির কাউন্সিল অব স্টেটের পূর্ববঙ্গ থেকে সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। জমিদার জগদীশ চন্দ্র ব্যানার্জী প্রজা সাধারণের কল্যাণসাধনের জন্য স্থাপন করেছেন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও পুকুর। ১৯৪৭ সালে তৎকালীন জমিদার জগদীশ চন্দ্র ব্যানার্জী সপরিবারে কলকাতায় চলে যান। ফলে জগদীশ চন্দ্র ব্যানার্জীর প্রতাপশালী সেই রাজবাড়িটি বিরান হয়ে যায়।
বর্তমানে জমিদার বাড়ি : ১৯৪৮ সালে এই ঐতিহ্যবাহী বাড়িটি সরকারের দখলে চলে আসে। তৎকালীন সরকার এখানে একটি হাসপাতাল স্থাপন করে। কিছুকাল এটি কিশোর সংশোধনী কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহƒত হয়। পরে ১৯৬৬ সালে এখানে হাইস্কুল ও কলেজ স্থাপিত হয়। বর্তমানে এই জমিদার বাড়িটি মুড়াপাড়া ডিগ্রি কলেজ হিসেবে ব্যবহƒত হচ্ছে। যা আছে এই বাড়িতে : বিশাল দোতলা এ জমিদার বাড়িটিতে রয়েছে মোট ৯৫টি কক্ষ। নাচঘর, আস্তাবল, উপাসনালয়, ভান্ডার, কাচারি ঘরসহ সবই। বিশালাকৃতির প্রধান ফটক পেরিয়ে ঢুকতে হয় ভেতরে। অন্দর মহলে রয়েছে আরও ২টি ফটক। সর্বশেষ ফটক পেরিয়ে মেয়েদের ¯œানের জন্য ছিল শানবাঁধা পুকুর। পুকুরের চারধার উঁচু দেয়ালে ঘেরা। এখানে প্রবেশ বাইরের লোকদের জন্য ছিল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সচরাচর কোন পুরুষ যেত না সেখানে। তখন এটি ছিল নীরব এক অন্তপুরী। কিন্তু বর্তমান দৃশ্যপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। অন্দর মহল থেকে শুরু করে জমিদার বাড়ির সম্পূর্ণ সীমানায় থাকে দর্শনার্থীদের ভিড়। পুকুরের চার ধার মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়। বাড়ির সামনে রয়েছে আরও একটি বিশাল পুকুর। পুকুরটির চারদিক নকশি কাটা ঢালাই লোহার গ্রিল দিয়ে ঘেরা। আর চারদিকে চারটি শানবাঁধানো ঘাট। দীঘি বলেও কেউ মনে করতে পারেন। পুকুরজুড়ে পানি টলমল করে। এত স্বচ্ছ পানি বোধ করি এতদাঞ্চলে নেই। এ পুকুরের পানির বৈশিষ্ট্যটাই অন্য রকমের। পানিতে জমিদার বাড়ির প্রতিচ্ছবি ঢেউয়ের তালে দুলছে। মূলত এ পুকুরটি তৈরি করা হয়েছে বাড়ির সৌন্দর্য বর্ধনের জন্যই। পুকুরের পরিমাপটাও অনেকটা প্রতিচ্ছবির হিসাব মিলিয়েই তৈরি করা। পুকুরসংলগ্ন মন্দির। মন্দিরে বড় দু’টি চূড়া রয়েছে। তা প্রায় ৩০ ফুট উঁচু। এর প্রবেশ দ্বারগুলো খিলান দিয়ে নির্মিত। মন্দিরের মূল কক্ষ বেশ ছোট এবং অন্ধকার। মন্দিরের বাঁ পাশ ঘেঁষে ছায়াঘেরা শান্ত-শ্যামল প্রকা- আম্রকানন রয়েছে। গাছগুলো বেশ পুরনো। একই মাপের ঝাঁকড়ানো গাছ। ডাল-পালা ছড়ানো, অনেকটা ছাতার মতো। অসংখ্য গাছ। প্রায় প্রতিটি আম গাছের গোড়া পাকা করা। এখানে আছে সারি সারি পান ও সুপারি বাগান। এছাড়া জমিদার বাড়ির প্রবেশমুখেই সারি সারি ঝাউ গাছ।
যেভাবে যাবেন : ঢাকা থেকে জমিদার বাড়িতে আসতে সময় লাগে ৪০/৫০ মিনিট। বাসে কিংবা সিএনজি প্রাইভেট কারে করে আসতে পারেন এখানে। রাজধানী ঢাকার সায়েদাবাদ অথবা গুলিস্থান থেকে মেঘলা পরিবহন অথবা নরসিংদীগামী যে কোন বাসে চেপে এলে ভাড়া লাগবে ২৫ টাকা। সে ক্ষেত্রে সিএনজিতে লাগে ২শ’ থেকে ২৫০ টাকার মতো। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রূপগঞ্জের রূপসী বাসস্ট্যান্ড কিংবা ভুলতা পর্যন্ত এলে বেবিট্যাক্সি অথবা রিকশাযোগে পিচঢালা রাস্তায় সহজেই আসা যায় এ জমিদার বাড়িতে। রাজধানীর ডেমরাঘাট হয়ে উত্তর দিকের রাস্তা ধরে মাঝিনা ঘাট পাড় থেকে নৌকায় শীতলক্ষ্যা নদী পার হলেই রূপগঞ্জের জমিদার বাড়ি।
মীর আব্দুল আলীম, রূপগঞ্জ
গোড়াপত্তনের ইতিহাস : রাজধানী ঢাকা থেকে মাত্র ১৮ কিলোমিটার দূরে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানার মুড়াপাড়া এলাকায় ৫২ বিঘা জমির ওপর এই প্রকা- জমিদার বাড়ি অবস্থিত। জমিদার বাবু রাম রতন ব্যানার্জী তৎকালীন মুড়াপাড়া জমিদার বংশের প্রতিষ্ঠাতা এবং জমিদারদের উর্ধতন ষষ্ঠ পুরুষ। তিনিই মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ির গোড়াপত্তন করেন। রাম রতন ব্যানার্জীর পুত্র পিতাম্বর ব্যানার্জী এবং তৎপুত্র প্রতাপ চন্দ্র ব্যানার্জী শাহজাদপুরের জমিদারি ক্রয় করে জমিদারি বর্ধন করেন। কথিত আছে, জমিদারি ক্রয় সূত্রে প্রতাপ ব্যানার্জীর সঙ্গে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঠাকুরদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের প্রগাঢ় বন্ধুত্ব ছিল। ১৮৮৯ সালে প্রতাপ চন্দ্র ব্যানার্জীর পৈতৃক এজমালি পুরনো বাড়ি ত্যাগ করে আলোচ্য এ প্রাসাদের পেছনের অংশ নির্মাণ করে বসবাস শুরু করেন। প্রতাপ চন্দ্র ব্যানার্জীর পুত্র বিজয় চন্দ্র ব্যানার্জী ১৮৯৯ সালে প্রাসাদের সম্মুখ অংশের একতলা ভবন নির্মাণ ও সেখানে ২টি পুকুর খনন করার পর হƒদরোগে মারা যান। তিনি ছিলেন এ অঞ্চলের প্রথম গ্র্যাজুয়েট। বিজয় চন্দ্র ব্যানার্জীর দুই সুযোগ্য পুত্র জগদীশ চন্দ্র ব্যানার্জী ও আশুতোষ চন্দ্র ব্যানার্জী ১৯০৯ সালে প্রাসাদটির দোতলার কাজ সম্পন্ন করেন। এ অঞ্চলে জগদীশ চন্দ্র ব্যানার্জীর নাম সমধিক প্রসিদ্ধ। কারণ তিনি দু’বার দিলির কাউন্সিল অব স্টেটের পূর্ববঙ্গ থেকে সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। জমিদার জগদীশ চন্দ্র ব্যানার্জী প্রজা সাধারণের কল্যাণসাধনের জন্য স্থাপন করেছেন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও পুকুর। ১৯৪৭ সালে তৎকালীন জমিদার জগদীশ চন্দ্র ব্যানার্জী সপরিবারে কলকাতায় চলে যান। ফলে জগদীশ চন্দ্র ব্যানার্জীর প্রতাপশালী সেই রাজবাড়িটি বিরান হয়ে যায়।
বর্তমানে জমিদার বাড়ি : ১৯৪৮ সালে এই ঐতিহ্যবাহী বাড়িটি সরকারের দখলে চলে আসে। তৎকালীন সরকার এখানে একটি হাসপাতাল স্থাপন করে। কিছুকাল এটি কিশোর সংশোধনী কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহƒত হয়। পরে ১৯৬৬ সালে এখানে হাইস্কুল ও কলেজ স্থাপিত হয়। বর্তমানে এই জমিদার বাড়িটি মুড়াপাড়া ডিগ্রি কলেজ হিসেবে ব্যবহƒত হচ্ছে। যা আছে এই বাড়িতে : বিশাল দোতলা এ জমিদার বাড়িটিতে রয়েছে মোট ৯৫টি কক্ষ। নাচঘর, আস্তাবল, উপাসনালয়, ভান্ডার, কাচারি ঘরসহ সবই। বিশালাকৃতির প্রধান ফটক পেরিয়ে ঢুকতে হয় ভেতরে। অন্দর মহলে রয়েছে আরও ২টি ফটক। সর্বশেষ ফটক পেরিয়ে মেয়েদের ¯œানের জন্য ছিল শানবাঁধা পুকুর। পুকুরের চারধার উঁচু দেয়ালে ঘেরা। এখানে প্রবেশ বাইরের লোকদের জন্য ছিল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সচরাচর কোন পুরুষ যেত না সেখানে। তখন এটি ছিল নীরব এক অন্তপুরী। কিন্তু বর্তমান দৃশ্যপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। অন্দর মহল থেকে শুরু করে জমিদার বাড়ির সম্পূর্ণ সীমানায় থাকে দর্শনার্থীদের ভিড়। পুকুরের চার ধার মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়। বাড়ির সামনে রয়েছে আরও একটি বিশাল পুকুর। পুকুরটির চারদিক নকশি কাটা ঢালাই লোহার গ্রিল দিয়ে ঘেরা। আর চারদিকে চারটি শানবাঁধানো ঘাট। দীঘি বলেও কেউ মনে করতে পারেন। পুকুরজুড়ে পানি টলমল করে। এত স্বচ্ছ পানি বোধ করি এতদাঞ্চলে নেই। এ পুকুরের পানির বৈশিষ্ট্যটাই অন্য রকমের। পানিতে জমিদার বাড়ির প্রতিচ্ছবি ঢেউয়ের তালে দুলছে। মূলত এ পুকুরটি তৈরি করা হয়েছে বাড়ির সৌন্দর্য বর্ধনের জন্যই। পুকুরের পরিমাপটাও অনেকটা প্রতিচ্ছবির হিসাব মিলিয়েই তৈরি করা। পুকুরসংলগ্ন মন্দির। মন্দিরে বড় দু’টি চূড়া রয়েছে। তা প্রায় ৩০ ফুট উঁচু। এর প্রবেশ দ্বারগুলো খিলান দিয়ে নির্মিত। মন্দিরের মূল কক্ষ বেশ ছোট এবং অন্ধকার। মন্দিরের বাঁ পাশ ঘেঁষে ছায়াঘেরা শান্ত-শ্যামল প্রকা- আম্রকানন রয়েছে। গাছগুলো বেশ পুরনো। একই মাপের ঝাঁকড়ানো গাছ। ডাল-পালা ছড়ানো, অনেকটা ছাতার মতো। অসংখ্য গাছ। প্রায় প্রতিটি আম গাছের গোড়া পাকা করা। এখানে আছে সারি সারি পান ও সুপারি বাগান। এছাড়া জমিদার বাড়ির প্রবেশমুখেই সারি সারি ঝাউ গাছ।
যেভাবে যাবেন : ঢাকা থেকে জমিদার বাড়িতে আসতে সময় লাগে ৪০/৫০ মিনিট। বাসে কিংবা সিএনজি প্রাইভেট কারে করে আসতে পারেন এখানে। রাজধানী ঢাকার সায়েদাবাদ অথবা গুলিস্থান থেকে মেঘলা পরিবহন অথবা নরসিংদীগামী যে কোন বাসে চেপে এলে ভাড়া লাগবে ২৫ টাকা। সে ক্ষেত্রে সিএনজিতে লাগে ২শ’ থেকে ২৫০ টাকার মতো। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রূপগঞ্জের রূপসী বাসস্ট্যান্ড কিংবা ভুলতা পর্যন্ত এলে বেবিট্যাক্সি অথবা রিকশাযোগে পিচঢালা রাস্তায় সহজেই আসা যায় এ জমিদার বাড়িতে। রাজধানীর ডেমরাঘাট হয়ে উত্তর দিকের রাস্তা ধরে মাঝিনা ঘাট পাড় থেকে নৌকায় শীতলক্ষ্যা নদী পার হলেই রূপগঞ্জের জমিদার বাড়ি।
মীর আব্দুল আলীম, রূপগঞ্জ
No comments