যশোরের পাম চাষীরা বিপাকে
চার বছর আগে যশোরের চাষীরা পাম চাষ শুরু করেছিলেন। সেই গাছে এখন ফল ধরেছে। কিন্তু চাষীরা জানেন না এটা কি করবেন? এর কোন ক্রেতা নেই। তাই এখন তাদের চোখে মুখে হতাশা। এক কথায় তারা হয়েছেন প্রতারিত। কৃষি বিভাগ বলছে, দেখা যাক কি করা যায়। বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, কৃষি কর্মকর্তাদের প্রলোভনে পড়ে ৪ বছর আগে পাম চাষ শুরু করেছিলেন যশোরের চাষীরা। তাদের গাছে এখন থোকা থোকা ফল ধরেছে। কিন্তু সেই ফল তাদের খুশির বদলে হতাশা নিয়ে এসেছে। কেননা পাম ফলের কোন ক্রেতা নেই আবার চাষীরাও জানেন না কিভাবে ফল থেকে তেল বের করতে হয়। পাম চাষের প্রলোভনে আটকে তাদের চোখেমুখে এখন শুধুই হতাশা। সরেজমিনে যশোর সদর উপজেলার ছোট মেঘলা গ্রামের আব্দুর রব ও মোঃ রফিকুল ইসলামের পাম বাগানে গিয়ে দেখা যায়, চার বছর বয়সী গাছগুলো এখনও মাটির কোল ছেড়ে দিগন্তে ডানা মেলেনি। কিন্তু এরই মধ্যে ফলের ছড়াছড়ি। জাম রঙের ফলগুলো জামের চেয়ে কিছুটা বড়। কলার মোচার মতো কাঁদিতে ধরা অনেক ফল শুকিয়ে যাচ্ছে। আবার পাশেই নতুন কাঁদি আসছে। লম্বা শীষের ফুল দেখিয়ে আব্দুর রব বললেন, এগুলো পুরুষ ফুল। এ থেকে ফল হবে না। পাশের আরেক গাছে গুচ্ছ ধরে ফুটে থাকা ফুল আদরের ভঙ্গিমায় হাতে ধরে জানালেন, নারী এ ফুলে শিগগিরই আবার ফল দেবে। পরক্ষণেই তার প্রশ্ন, কিন্তু এ ফল আমি কি করব? যে ক্ষেতে ধান-পাটের আবাদ বন্ধ করে তিনি পামের বাগান করেছেন, সে বাগান আজ কেবল তার চোখের পানি হয়েই ঝরছে। আব্দুর রব ও মো. রফিকুল ইসলামের মতো যশোরের পাম চাষীরা কেউই জানে না তাদের গন্তব্য কোথায়? কোথায় গেলে মিলবে তাদের জিজ্ঞাসার জবাব? যাদের জানার কথা তারা সবাই লাপাত্তা। কৃষকদের অভিভাবক কৃষি বিভাগও মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে। পাম চাষীরা জানান, গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সেনাপ্রধান মঈন উ আহমেদের আগ্রহে দেশে পাম চাষের উদ্যোগ নেয়া হয়। তখন সেনাবাহিনী ও গ্র্রিন বাংলাদেশ নামের একটি সংস্থা তাদের পাম গাছের চারা সরবরাহ করে। সেনাবাহিনী বিনামূল্যে চারা দেয়। আর গ্রিন বাংলাদেশ চাষীদের কাছে প্রতিটি চারার দাম নিয়েছিল ৮শ’ ৫০ টাকা। শর্ত ছিল ৪ বছর তারা সার, কীটনাশক, সেচ দেবে ও পরিচর্যা করবে। কিন্তু টাকা পরিশোধের পর সংস্থাটি কোনো খবর নেয়নি। যশোরের অফিসটিও বন্ধ করে দিয়েছে। আব্দুর রব আরও জানান, তিনি ৬০টি চারা রোপণ করেন। ইতিমধ্যে তার পাম বাগানে ৩০টি গাছে ফল এসেছে। বাকি গাছে ফল আসার পথে। আব্দুর রব ও মো. রফিকুল ইসলামের প্রতিবেশী সিরাজুল ইসলাম ও বাবুদা, চৌগাছা উপজেলার কাঁদবিলা গ্রামের আব্দুুর রহিম মুনশি ও মশিয়ার রহমান, ঝিকরগাছা উপজেলার হাজিরালীর হজরত আলী, মল্লিকপুর গ্রামের তরিকুল ইসলাম ও জাফরনগর গ্রামের ইসমাইল হোসেন, আব্দুর রহিম, হবিবর রহমান ও মাহমুদুল হাসানের পাম বাগানের খবর জানা গেছে। তারা প্রত্যেকে ৫০ থেকে শতাধিক পাম গাছ লাগিয়েছেন। তাদের সবার গাছেই ফল এসেছে। ‘সবুজ গাছের তরল সোনা বদলে দেবে বাংলাদেশ’ এ প্রত্যয়ে ভোজ্যতেলসমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে পাম চাষ প্রসারের জন্য কাজ করছে আইসিসি এ্যাগ্রো কমপ্লেক্স লিমিটেড। সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের প্রায় সব এলাকার মাটি পাম চাষের উপযুক্ত। বাংলাদেশে পামের চারা রোপণের আড়াই থেকে ৪ বছরের মধ্যে গাছে ফল আসে। প্রতি গাছে ১০টিরও বেশি কাঁদি হয়। প্রতি কাঁদিতে ফল ধরে ২০ কেজির বেশি। এ হিসাবে একটি গাছে ২শ’ কেজি ফল ধরে। মালয়েশিয়ান পামওয়েল কাউন্সিলের প্রতিবেদন অনুসারে, উৎপাদিত ফল থেকে ২৫ ভাগ তেল পাওয়া যায়। সাজেদ রহমান, যশোর
No comments