চ্যান্সেলর বা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা চায় বুয়েট শিক্ষক সমিতি-চতুর্থ দিনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল খুবই কম
আলোচনার পথে আসতে চায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) শিক্ষক সমিতি। তবে চলমান সঙ্কট নিরসনে উপাচার্যের সঙ্গে নয়, বরং চ্যান্সেলর ও রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান অথবা প্রধানমন্ত্রী বা শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা চায় শিক্ষক সমিতি। সমিতি মনে করে যার পদত্যাগের জন্য
আন্দোলন তার সঙ্গে আলোচনার কোন মানে হয় না। শুক্রবার অবস্থান ধর্মঘটের চতুর্থ দিন এই মনোভাব তুলে ধরলেন সমিতির নেতারা। এদিকে প্রথম তিন দিন অনেকে অংশ নিলেও চতুর্থ দিনে এসে কর্মসূচীতে আন্দোলনকারীদের সংখ্যা হঠাৎই কমে গেছে। সকাল থেকে একটি ধিক্কার ব্যানার টাঙানো হলেও কর্মর্র্সূচীতে শিক্ষক শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল একেবারই কম। এছাড়া পরীক্ষায় নম্বর কমিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে হলে হলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচীতে আসতে বাধ্য করার অভিযোগ তুলেছেন আবাসিক শিক্ষার্থীরা। এদিকে এবার সমিতির সঙ্গে সুর মিলিয়ে বুয়েটে দলীয়করণ ও অনিয়মের অভিযোগ এনেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াতপন্থী সাদাদলের শিক্ষকরা।
এদিকে সরকার ও কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে শিক্ষক সমিতির তোলা অভিযোগের বিষয়ে সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। টানা চার দিন ক্যাম্পাসের আন্দোলনে কারা উন্নতমানের খাবার সরবরাহ করেছে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা। এমনকি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সমিতি যেখানে ভূতাপেক্ষ নিয়োগ নিয়ে আন্দোলন করছেন সেখানে সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মুজিবুর রহমানের নিয়োগই ছিল ভূতাপেক্ষ বলে অভিযোগ উঠেছে। কেবল তাই নয়, বুয়েটে তার নিয়োগের সময় ১৬ মেধাবীকে ডিঙ্গিয়ে মেধাতালিকার ১৭ নম্বর ব্যক্তি হয়েও নিয়োগ পান তিনি। এমন এক অবস্থায় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ভূতাপেক্ষ নিয়োগ নিয়ে সমিতি কিভাবে আন্দোলন করে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগের বিষয়ে সমিতির পক্ষ থেকে অবশ্য দাবি করা হয়েছে সভাপতির নিয়োগ ভূতাপেক্ষ ছিল না। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে বুূয়েটের শিক্ষক সমিতির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সঙ্কট সমাধানে সিন্ডিকেটকে নির্দেশ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টানা অসন্তোষের মধ্যে গণভবনে উপাচার্যসহ সিন্ডিকেট সদস্যদের ডেকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করুন। চ্যান্সেলর ও রাষ্ট্রপতির কাছে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনের প্রস্তাব পাঠান উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম নজরুল ইসলাম। একই সঙ্গে বলেছেন, আমি কোন অপরাধ করিনি। ‘অনৈতিক’ একটি দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পদত্যাগ করা হবে আরেকটি অনৈতিক কাজ। আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতি অনিয়মের যদি একটিও প্রমাণিত হয় তবে আমি সরে যাব। চ্যান্সেলরের কাছে কমিশনের প্রস্তাব পাঠিয়েছি। আশা করি সংশ্লিষ্টরা এখন বিষয়টি বুঝবেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন উপাচার্য। বুয়েটের সার্বিক পরিস্থিতি মনিটরিংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যাক্তি হিসেবে ইউজিসির চেয়ারম্যনের কাছে সার্বিক চিত্র তুলে ধরেন উপাচার্য। অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষক সমিতির নেতারাও জানেন তাঁরা যা বলছেন, তার একটি অভিযোগও প্রমাণ করা যাবে না। তা জেনেও শিক্ষক সমিতির নেতারা আন্দোলন করছেন। তার পরও আমি তাদের প্রতি আহ্বান জানাই বিচার বিভাগীয় কমিশনের ওপরে তো আর কারও অনাস্থা থাকার কথা নয়। আশা করি সকলে বুঝবেন আলোচনার মাধ্যমে সঙ্কট সমাধান করবেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পরে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আলোচনার প্রস্তাব অবশ্যই দেব। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাদা আলাদাভাবে আলোচনা চলছে। তবে শিক্ষক সমিতির নেতারা বললেন, উপাচার্যের সঙ্গে নয়, বরং আচার্য ও রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান অথবা প্রধানমন্ত্রী বা শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা বসতে পারি আমরা। সমিতি মনে করে যার পদত্যাগের জন্য আন্দোলন তার সঙ্গে আলোচনার কোন মানে হয় না। সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আশরাফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, আমরা যাদের পদত্যাগের জন্য আন্দোলন করছি, যার জন্য আজ ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী-অ্যালামনাই এ্যাসোসিয়েশন ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নেমেছে, তার সঙ্গে আলোচনার কোন অবকাশ নেই। ভিসির সঙ্গে আগে বহুবার আলোচনা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেও সমাধান হয়নি। আচার্য ও রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে সঙ্কট কাটানো যেতে পারে। শিক্ষক সমিতির কোষাধ্যক্ষ আতাউর রহমান বলেন, যার পদত্যাগের জন্য আমরা আন্দোলন করছি, তার সঙ্গে বসার কোন যৌক্তিকতা নেই।
প্রধানমন্ত্রী কিংবা আচার্য ছাড়া আমরা আর কারও সঙ্গে কথা বলতে রাজি না। আশা করি বুয়েটের সঙ্কট কাটাতে তাঁরা এগিয়ে আসবেন। এদিকে আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু চতুর্থ দিনে এসে কর্মসূচীতে আন্দোলনকারীদের সংখ্যা হঠাৎই কমে যাওয়ার ঘটনা এবং আন্দোলনে বাইরের ব্যক্তিদের মাধ্যমে খাবার সরবরাহসহ নানা খবরে তোলপাড় শুরু হয়েছে। সকাল থেকে একটি ধিক্কার ব্যানার টাঙানো হলেও কর্মসূচীতে শিক্ষক শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল একেবারই কম। ব্যানারে শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘গদি ধরে মারো টান ভিসি হবে হবে খান খান’, ‘অপসারণ চাই, অপসারণ ছাডা উপায় নাই’, ‘জনাব, ভিসি আপনার লজ্জা-শরম থাকাই উচিত ছিল’, ‘বারে বারে ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান, নতুন ভিসি দে’ ইত্যাদি ইত্যাদি। শুক্রবার দিনভর ক্যাম্পাসে আলোচনা চলেছে আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়া এবং একটি বিশেষ গোষ্ঠীর মাধ্যমে বাইরে থেকে আন্দোলনে খাবার সরবরাহ করার ঘটনা নিয়ে। বৃহস্পতিবার মধ্য রাতে বুয়েটে জামায়াতপন্থী কিছু ব্যাক্তির মাধ্যমে বাইরে থেকে উন্নতমানের খাবার সরবরাহ করার খবর ছড়িয়ে পড়ে হলে হলে। শুক্রবারও ছিল এটিই আলোচনায়। এছাড়া পরীক্ষায় নম্বর কমিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে হলে হলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচীতে আসতে বাধ্য করার অভিযোগ তুলেছেন আবাসিক শিক্ষার্থীরা। সাংবাদিকদের কাছে হলে শিক্ষার্থীরা নাম প্রকাশ করে কথা বলতেও সাহস পেল না। তাঁরা অভিযোগ করেছেন, সমিতির দুই নেত্রী ও তিন নেতা হলে হলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের ভয় দেখিয়েছেন, আন্দোলনে না আসলে পরীক্ষায় নম্বর কমিয়ে দেবে বিভাগীয় প্রধানরা। বিভাগীয় প্রধানরা আন্দোলনে আছেন বলে শাসিয়েও দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তাদের। আন্দোলনে শিক্ষার্থী কমে গেল কেন? সকলে তো বলছেন, আন্দোলনকারীদের চেয়ে ক্যাম্পাসে সাংবাদিকই বেশি। কারণ কী? এমন প্রশ্নের জবাবে এক শিক্ষক নেতা বললেন, হয়তো কোন কারণে আজ আসছে না। শনিবার হয়তো আসবে। তবে শিক্ষার্থীরা বললেন ভিন্ন কথা। তারা বলেছেন, শিক্ষক সমিতির নেতাদের অভিযোগের ভিত্তি নিয়ে ইতোমধ্যেই শিক্ষার্থীদের মনে নানা প্রশ্নের জন্ম নিয়েছে। অধিকাংশ শিক্ষার্থীই বুঝতে পারছেন সমিতির কয়েক নেতার আধিপত্য বিস্তারের খেলাই এই আন্দোলন। এদিকে দিনের পর দিন শিক্ষক ধর্মঘট এবং এখন বন্ধ থাকায় বড় ধরনের সেশনজনের আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
উল্লেখ্য, উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে বুয়েটের শিক্ষক সমিতি এর আগে গত ৭ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করেন। এর পর প্রধানমন্ত্রী শিক্ষকদের দাবি বিবেচনার আশ্বাস দিলে সমিতি আন্দোলন এক মাসের জন্য স্থগিত করে। পরে শিক্ষক সমিতির দাবি অনুসারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির তদন্ত কমিটি গঠন হয়। সমিতির দাবি অনুসারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সমন্বয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, বুয়েট শিক্ষক সমিতির অভিযোগের বিষয় দীর্ঘ এক মাস তদন্ত করেও কোন সত্যতার পাওয়া যায়নি। উপাচার্যসহ কর্তৃপক্ষের নেয়া কোন কাজে অধ্যাদেশ বা আইনের কোন ব্যত্যয় ঘটেনি। সমিতির নেতৃবৃন্দের অভিযোগ সত্য নয়। আর উপ-উপাচার্যের পদ বিলুপ্তির দাবিও যৌক্তিক নয়। উপ-উপাচার্যের পদ সৃষ্টি ও এই পদে নিয়োগের বিষয়টি সম্পূর্ণ সরকার ও চ্যান্সেলরের এখতিয়ার, উপচার্যের নয়। কিন্তু প্রতিবেদন পক্ষে না যাওয়ায় এর পরই দ্বিতীয় দফা আন্দোলন শুরু করে শিক্ষক সমিতি। এদিকে শুক্রবার বুয়েটের শিক্ষক সমিতির সঙ্গে সুর মিলিয়ে বুয়েটে দলীয়করণ ও অনিয়মের অভিযোগ এনেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াতপন্থী সাদা দলের শিক্ষকরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত শিক্ষকদের সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সদরুল আমিন ২৫০ শিক্ষকের পক্ষে এক বিবৃতিতে বলেছেন, নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করছেন বুয়েটের শিক্ষকরা। দেশের প্রায় সবকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্লজ্জ দলীয়করণের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আদর্শ ও উদ্দেশ্য চরমভাবে ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে।
এদিকে সরকার ও কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে শিক্ষক সমিতির তোলা অভিযোগের বিষয়ে সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। টানা চার দিন ক্যাম্পাসের আন্দোলনে কারা উন্নতমানের খাবার সরবরাহ করেছে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা। এমনকি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সমিতি যেখানে ভূতাপেক্ষ নিয়োগ নিয়ে আন্দোলন করছেন সেখানে সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মুজিবুর রহমানের নিয়োগই ছিল ভূতাপেক্ষ বলে অভিযোগ উঠেছে। কেবল তাই নয়, বুয়েটে তার নিয়োগের সময় ১৬ মেধাবীকে ডিঙ্গিয়ে মেধাতালিকার ১৭ নম্বর ব্যক্তি হয়েও নিয়োগ পান তিনি। এমন এক অবস্থায় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ভূতাপেক্ষ নিয়োগ নিয়ে সমিতি কিভাবে আন্দোলন করে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগের বিষয়ে সমিতির পক্ষ থেকে অবশ্য দাবি করা হয়েছে সভাপতির নিয়োগ ভূতাপেক্ষ ছিল না। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে বুূয়েটের শিক্ষক সমিতির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সঙ্কট সমাধানে সিন্ডিকেটকে নির্দেশ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টানা অসন্তোষের মধ্যে গণভবনে উপাচার্যসহ সিন্ডিকেট সদস্যদের ডেকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করুন। চ্যান্সেলর ও রাষ্ট্রপতির কাছে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনের প্রস্তাব পাঠান উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম নজরুল ইসলাম। একই সঙ্গে বলেছেন, আমি কোন অপরাধ করিনি। ‘অনৈতিক’ একটি দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পদত্যাগ করা হবে আরেকটি অনৈতিক কাজ। আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতি অনিয়মের যদি একটিও প্রমাণিত হয় তবে আমি সরে যাব। চ্যান্সেলরের কাছে কমিশনের প্রস্তাব পাঠিয়েছি। আশা করি সংশ্লিষ্টরা এখন বিষয়টি বুঝবেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন উপাচার্য। বুয়েটের সার্বিক পরিস্থিতি মনিটরিংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যাক্তি হিসেবে ইউজিসির চেয়ারম্যনের কাছে সার্বিক চিত্র তুলে ধরেন উপাচার্য। অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষক সমিতির নেতারাও জানেন তাঁরা যা বলছেন, তার একটি অভিযোগও প্রমাণ করা যাবে না। তা জেনেও শিক্ষক সমিতির নেতারা আন্দোলন করছেন। তার পরও আমি তাদের প্রতি আহ্বান জানাই বিচার বিভাগীয় কমিশনের ওপরে তো আর কারও অনাস্থা থাকার কথা নয়। আশা করি সকলে বুঝবেন আলোচনার মাধ্যমে সঙ্কট সমাধান করবেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পরে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আলোচনার প্রস্তাব অবশ্যই দেব। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাদা আলাদাভাবে আলোচনা চলছে। তবে শিক্ষক সমিতির নেতারা বললেন, উপাচার্যের সঙ্গে নয়, বরং আচার্য ও রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান অথবা প্রধানমন্ত্রী বা শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা বসতে পারি আমরা। সমিতি মনে করে যার পদত্যাগের জন্য আন্দোলন তার সঙ্গে আলোচনার কোন মানে হয় না। সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আশরাফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, আমরা যাদের পদত্যাগের জন্য আন্দোলন করছি, যার জন্য আজ ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী-অ্যালামনাই এ্যাসোসিয়েশন ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নেমেছে, তার সঙ্গে আলোচনার কোন অবকাশ নেই। ভিসির সঙ্গে আগে বহুবার আলোচনা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেও সমাধান হয়নি। আচার্য ও রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে সঙ্কট কাটানো যেতে পারে। শিক্ষক সমিতির কোষাধ্যক্ষ আতাউর রহমান বলেন, যার পদত্যাগের জন্য আমরা আন্দোলন করছি, তার সঙ্গে বসার কোন যৌক্তিকতা নেই।
প্রধানমন্ত্রী কিংবা আচার্য ছাড়া আমরা আর কারও সঙ্গে কথা বলতে রাজি না। আশা করি বুয়েটের সঙ্কট কাটাতে তাঁরা এগিয়ে আসবেন। এদিকে আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু চতুর্থ দিনে এসে কর্মসূচীতে আন্দোলনকারীদের সংখ্যা হঠাৎই কমে যাওয়ার ঘটনা এবং আন্দোলনে বাইরের ব্যক্তিদের মাধ্যমে খাবার সরবরাহসহ নানা খবরে তোলপাড় শুরু হয়েছে। সকাল থেকে একটি ধিক্কার ব্যানার টাঙানো হলেও কর্মসূচীতে শিক্ষক শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল একেবারই কম। ব্যানারে শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘গদি ধরে মারো টান ভিসি হবে হবে খান খান’, ‘অপসারণ চাই, অপসারণ ছাডা উপায় নাই’, ‘জনাব, ভিসি আপনার লজ্জা-শরম থাকাই উচিত ছিল’, ‘বারে বারে ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান, নতুন ভিসি দে’ ইত্যাদি ইত্যাদি। শুক্রবার দিনভর ক্যাম্পাসে আলোচনা চলেছে আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়া এবং একটি বিশেষ গোষ্ঠীর মাধ্যমে বাইরে থেকে আন্দোলনে খাবার সরবরাহ করার ঘটনা নিয়ে। বৃহস্পতিবার মধ্য রাতে বুয়েটে জামায়াতপন্থী কিছু ব্যাক্তির মাধ্যমে বাইরে থেকে উন্নতমানের খাবার সরবরাহ করার খবর ছড়িয়ে পড়ে হলে হলে। শুক্রবারও ছিল এটিই আলোচনায়। এছাড়া পরীক্ষায় নম্বর কমিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে হলে হলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচীতে আসতে বাধ্য করার অভিযোগ তুলেছেন আবাসিক শিক্ষার্থীরা। সাংবাদিকদের কাছে হলে শিক্ষার্থীরা নাম প্রকাশ করে কথা বলতেও সাহস পেল না। তাঁরা অভিযোগ করেছেন, সমিতির দুই নেত্রী ও তিন নেতা হলে হলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের ভয় দেখিয়েছেন, আন্দোলনে না আসলে পরীক্ষায় নম্বর কমিয়ে দেবে বিভাগীয় প্রধানরা। বিভাগীয় প্রধানরা আন্দোলনে আছেন বলে শাসিয়েও দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তাদের। আন্দোলনে শিক্ষার্থী কমে গেল কেন? সকলে তো বলছেন, আন্দোলনকারীদের চেয়ে ক্যাম্পাসে সাংবাদিকই বেশি। কারণ কী? এমন প্রশ্নের জবাবে এক শিক্ষক নেতা বললেন, হয়তো কোন কারণে আজ আসছে না। শনিবার হয়তো আসবে। তবে শিক্ষার্থীরা বললেন ভিন্ন কথা। তারা বলেছেন, শিক্ষক সমিতির নেতাদের অভিযোগের ভিত্তি নিয়ে ইতোমধ্যেই শিক্ষার্থীদের মনে নানা প্রশ্নের জন্ম নিয়েছে। অধিকাংশ শিক্ষার্থীই বুঝতে পারছেন সমিতির কয়েক নেতার আধিপত্য বিস্তারের খেলাই এই আন্দোলন। এদিকে দিনের পর দিন শিক্ষক ধর্মঘট এবং এখন বন্ধ থাকায় বড় ধরনের সেশনজনের আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
উল্লেখ্য, উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে বুয়েটের শিক্ষক সমিতি এর আগে গত ৭ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করেন। এর পর প্রধানমন্ত্রী শিক্ষকদের দাবি বিবেচনার আশ্বাস দিলে সমিতি আন্দোলন এক মাসের জন্য স্থগিত করে। পরে শিক্ষক সমিতির দাবি অনুসারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির তদন্ত কমিটি গঠন হয়। সমিতির দাবি অনুসারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সমন্বয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, বুয়েট শিক্ষক সমিতির অভিযোগের বিষয় দীর্ঘ এক মাস তদন্ত করেও কোন সত্যতার পাওয়া যায়নি। উপাচার্যসহ কর্তৃপক্ষের নেয়া কোন কাজে অধ্যাদেশ বা আইনের কোন ব্যত্যয় ঘটেনি। সমিতির নেতৃবৃন্দের অভিযোগ সত্য নয়। আর উপ-উপাচার্যের পদ বিলুপ্তির দাবিও যৌক্তিক নয়। উপ-উপাচার্যের পদ সৃষ্টি ও এই পদে নিয়োগের বিষয়টি সম্পূর্ণ সরকার ও চ্যান্সেলরের এখতিয়ার, উপচার্যের নয়। কিন্তু প্রতিবেদন পক্ষে না যাওয়ায় এর পরই দ্বিতীয় দফা আন্দোলন শুরু করে শিক্ষক সমিতি। এদিকে শুক্রবার বুয়েটের শিক্ষক সমিতির সঙ্গে সুর মিলিয়ে বুয়েটে দলীয়করণ ও অনিয়মের অভিযোগ এনেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াতপন্থী সাদা দলের শিক্ষকরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত শিক্ষকদের সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সদরুল আমিন ২৫০ শিক্ষকের পক্ষে এক বিবৃতিতে বলেছেন, নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করছেন বুয়েটের শিক্ষকরা। দেশের প্রায় সবকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্লজ্জ দলীয়করণের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আদর্শ ও উদ্দেশ্য চরমভাবে ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে।
No comments