সড়ক সংস্কার-সময়ে এক ফোঁড় দিন
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কেবল মিরসরাইয়ের ৪০ কিলোমিটার এলাকাতে সহস্রাধিক ছোট-বড় গর্ত সৃষ্টির যে খবর শুক্রবার সমকালে ছাপা হয়েছে, তা থেকে গোটা দেশের সড়ক পরিস্থিতি বোঝা কঠিন হয় না। ওই প্রতিবেদনের সঙ্গে প্রকাশিত আলোকচিত্রে স্পষ্ট_ কীভাবে বালি-খোয়ার জোড়াতালি দিয়ে সচল রাখার চেষ্টা চলছে।
নানা বিবেচনায় দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রুটটিরই যদি এই দশা হয়, অন্যান্য সড়ক-মহাসড়কের পরিস্থিতি সহজেই অনুমেয়। এর ফলে যাত্রী ও মালপত্র পরিবহনে যে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, সময় ও অর্থের যে অপচয় হচ্ছে, তার দায় আসলে কার? আমরা দেখেছি, গত বছর ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কসহ নানা রুটে এমন পরিস্থিতি এবং পরিণতিতে পরিবহন ধর্মঘট শুরুর পর নীতিনির্ধারকরা দ্রুত সক্রিয় হয়েছিলেন। বরাদ্দও মিলেছিল স্বল্পতম সময়ে। নতুন যোগাযোগমন্ত্রীর সক্রিয়তাও দৃশ্যমান। তিনি যেভাবে বিভিন্ন এলাকায় সড়ক সংস্কার ও নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করছেন, তা নাগরিক সমাজের প্রশংসা কুড়িয়েছে। কাজে গতি আনয়নেও নিচ্ছেন নানা পদক্ষেপ। দুই সপ্তাহ আগে ঢাকা-গাজীপুর মহাসড়কের সংস্কার কাজে ঠিকাদারের গাফিলতির জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠিয়েছেন। ঢাকায় সদ্য সমাপ্ত জেলা প্রশাসক সম্মেলনেও সড়ক ও জনপথে বিড়ম্বনা দূর করতে দিয়েছেন নানা নির্দেশনা। তারপরও সড়ক-মহাসড়ক সংস্কার কাজে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি কিন্তু অধরাই থেকে যাচ্ছে। আমাদের মনে আছে, মার্চের গোড়ার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন প্রকল্প পরিদর্শনে গিয়ে যোগাযোগমন্ত্রী বলেছিলেন যে, বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই ওই মহাসড়কসহ দেশের অন্যান্য রুটে সংস্কার কাজ সম্পন্ন হবে। কাজে গতি আনতে নিজের এবং মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সব ধরনের ছুটিও বাতিলের ঘোষণা দিয়েছিলেন। বাস্তবে সংস্কার কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। ফলে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে মন্ত্রীকে নতুন সময়সীমা বাঁধতে হয়েছে_ ঈদুল ফিতরের আগেই সংস্কার কাজ সম্পন্ন হতে হবে। অন্যদিকে বর্ষা মৌসুম শুরুর পর থেকেই কিন্তু পরিস্থিতি প্রকট হচ্ছে। ইতিমধ্যে সংস্কার করা সড়কেও নতুন করে গর্ত দেখা দিচ্ছে। গত বর্ষায় মিরসরাই থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার সড়কে কার্পেটিং করা হয়েছিল। এই মৌসুমে তা আগের চেহারা ফিরে পেয়েছে বলে সমকালের প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে। সড়ক সংস্কারের দাবিতে বরগুনাসহ কয়েকটি এলাকায় বিক্ষোভমূলক কর্মসূচিও দেখা যাচ্ছে। বৃষ্টিস্বল্পতার বর্ষাতেই যদি এমন হয়; এই আশঙ্কা অমূলক নয় যে, সামনের শ্রাবণে পরিস্থিতি আরও প্রতিকূল হবে। প্রতি বছর বর্ষায় সড়ক-মহাসড়কের এই দুরবস্থা কি চলতেই থাকবে? বলাবাহুল্য, বরাদ্দের পর্যাপ্ততা, ঠিকাদারদের দক্ষতা, উপকরণগত উপযুক্ততা, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আন্তরিকতা, সব পর্যায়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত ছাড়া এ থেকে মুক্তি কঠিনই। আমরা আশা করি, যোগাযোগমন্ত্রী সে ক্ষেত্রেও নিরলস থাকবেন। অভিযোগ রয়েছে, অতিরিক্ত ওজনের পরিবহন ও বেপরোয়া গতিও সড়কের জন্য ক্ষতিকর। সড়ক ও সেতুতে কার্যকর ওজন মেশিন এ ক্ষেত্রে কাজে দেবে। কিন্তু আমরা মনে করি, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বর্ষা মৌসুমে সড়ক সংস্কারের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসা। এই সময়ের কাজ যেমন টেকসই হতে পারে না, তেমনই থাকে দুর্নীতিরও অবারিত সুযোগ। স্তরে স্তরে দুর্নীতির মনোভাব থেকেই সময়টা বেছে নেওয়া হয় বলে কেউ কেউ মনে করেন। এই অভিযোগের জবাব দিতে সরকার কি প্রস্তুত? আমরা যে পদ্ধতিতে মহাসড়ক নির্মাণ ও সংস্কার করি, সে ব্যাপারেও বিশেষজ্ঞদের দ্বিমত রয়েছে। শীতপ্রধান দেশের কার্পেটিং পদ্ধতি বর্ষা ও রৌদ্রবহুল বাংলাদেশে কতটা চলনসই_ দীর্ঘ মেয়াদে তা ভাবা যেতে পারে। স্বল্প মেয়াদে বর্ষাকালের ঘেরাটোপ থেকে বের হয়ে আসা গেলেই পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
No comments