চরাচর-উপকারী বন্ধু মৌমাছি by আলম শাইন

মৌমাছি মানুষের পরম উপকারী বন্ধু। পতঙ্গকুলের মধ্যে এমন উপকারী বন্ধু দ্বিতীয়টি আর নেই। কথায় আছে, মৌমাছির মধু খেলে যেমন উপকার হয়, তেমনই মৌমাছির হুলের খোঁচা খেলেও উপকৃত হওয়া যায়। অর্থাৎ মধু সর্বরোগের মহৌষধ। খেলে উপকার বৈ অপকার হবে না।


অপরদিকে এই পতঙ্গের হুলের খোঁচায় আক্রান্ত হলে বাত এবং ম্যালরিয়া জ্বর হয় উপশম। তবে অবশ্যই তা পরিমাণ মতো হতে হবে। না হলে আবার মৃত্যুও ঘটতে পারে। যার অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে। এ পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা ওষুধসহ নানা জিনিসপত্র আবিষ্কার করেছেন। গিয়েছেন চাঁদেও। কিন্তু পারেননি একটা জিনিস আবিষ্কার করতে; আর তা হচ্ছে মধু। শত চেষ্টা করেও ফুলের রস থেকে তাঁরা এক ফোঁটা মধু তৈরি করতে পারেননি। অথচ মৌমাছির মতো অতি ক্ষুদ্র একটা পতঙ্গ ফুলের রস খেয়ে তার নিজের শরীরের ভেতর থেকে অপূর্ব কৌশলে মধু সৃষ্টি করছে। যার একটি ফোঁটা তৈরি করতে তাকে খেতে হচ্ছে শখানেক ফুলের রস। এ হচ্ছে মধু সৃষ্টির রহস্য।
অপরদিকে এই রহস্যময়ী পতঙ্গের মৃত্যুতেও রয়েছে রহস্য। দুভাবেই মৌমাছি দ্রুত ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। প্রথমত মানুষের হাতে। মধু আহরণ করতে গিয়ে নির্বিচারে পুড়িয়ে ফেলছে অথবা পিষে মারছে। অনেকটা প্রবাদের মতো, 'উপকারী গাছের ছাল থাকে না।' দ্বিতীয়ত, 'ভারোয়া মাইট' নামক এক ধরনের ছারপোকার আক্রমণ। এই পোকা মৌমাছির শরীর ফুটো করে মশার মতো রক্ত সেবন করতে থাকে। শেষাবধি মৌমাছির শরীরে ভাইরাস ঢুকিয়ে তাদের ইমিউন সিস্টেম অকেজো করে দেয়। তারপর তারা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। একপর্যায়ে তা মৌমাছির চাকে মহামারির আকার ধারণ করে। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, মাত্র এক হাজার ভারোয়া পোকা সংক্রমণ ঘটিয়ে প্রায় ৬০ হাজার মৌমাছির জীবননাশ করমে সক্ষম। এমনটি হতে থাকলে অচিরেই মৌশিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। তাতে করে শুধু বাংলাদেশই নয়, সমগ্র বিশ্বের মধু উৎপাদন শিল্প স্থবির হয়ে আসবে। ব্যবহৃত হবে ফুলের পরাগায়নে। বিষয়টি চিন্তা করে ব্রিটেনের অ্যাবরডিন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক জেনেটিক কৌশল আবিষ্কার করেছেন। যাতে করে ভারোয়া মাইট পোকার ভাইরাস সৃষ্টিকারী জিনটিকে নিপাত করে দেওয়া সম্ভব হবে। নিঃসন্দেহে এটি একটি সুখকর বার্তা। পাশাপাশি দুঃখকর বার্তাটি হচ্ছে, তদ্রুপ একটি জেনেটিক কৌশল আবিষ্কার হয়নি; এখনো যা মানুষের ওপর প্রয়োগ করা যায়। তাহলে অন্তত অকারণে মানুষ অমন উপকারী বন্ধুদের দলিত-মথিত করতে পারত না। একটু হলেও হাত কাঁপত। মনে পড়ত মধু নামক মহৌষধের উপকারের কথা। নিজের নবজাতকের মুখে মধু দেওয়ার কথাও মনে হতো। এ সবই আমাদের দ্বারা সম্ভব জেনেটিক কৌশল আবিষ্কার ছাড়াও। যদি আমরা প্রকৃত মানুষ হই তাহলে আর কিছু না হোক অন্তত অকারণে জীব বা পতঙ্গ হত্যা থেকে বিরত থাকা যেত।
আলম শাইন

No comments

Powered by Blogger.