রেল ক্রসিংয়ে বাস-য পলায়তি...
যাত্রীবাহী বিমানে পাইলটের জন্য প্যারাসুটে নেমে পড়ার ব্যবস্থা নেই। যাত্রীবাহী বাসেও চালকের ডান দিকে দরজা রাখা হয় না। এ ধরনের ব্যবস্থার কারণ স্পষ্ট_ বিপদের সময় যেন চালক 'যে পলায় সে বাঁচে' বলে সটকে পড়তে না পারে। কিন্তু ডান দিকের দরজা না থাকলেই যে বাসের চালক নিজের চেয়ে যাত্রীদের কথা বেশি ভাববেন, তার নিশ্চয়তা নেই।
শনিবার দুুপুরে মহাখালী লেভেল ক্রসিংয়ে এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে। রোববার সমকালে 'অল্পের জন্য' শিরোনামে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, সূচনা পরিবহনের একটি বাস রেল ক্রসিংয়ের খুব কাছে চলে এলে ট্রেন আসার সংকেত বাজতে শুরু করে। অদূরে ট্রেনটিও দেখা যেতে থাকে। এ অবস্থায় যাত্রীদের মধ্যে কী ধরনের উৎকণ্ঠা বিরাজ করে, তা সহজেই অনুুমেয়। তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে এক হুলস্থূল কাণ্ড বেধে যায়। কেউ কাউকে স্থান ছেড়ে দিতে চায় না, বরং বাঁচার জন্য প্রত্যেকের আপ্রাণ চেষ্টা এক সঙ্গে অনেকের মৃত্যুর ঝুঁকি সৃষ্টি করে। এমন অবস্থায় ভরসা হতে পারে চালকের বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতা। কিন্তু সূচনা পরিবহনের বাসের চালক ট্রেনটিকে এগিয়ে আসতে দেখে যাত্রীদের জীবনের কথা না ভেবে নিজেই পালিয়ে গেলেন। এ কঠিন সময়ে ত্রাণকর্তা হিসেবে গাড়ির হাল ধরেন একজন হেলপার। তিনি গাড়িটিকে ক্ষিপ্রতার সঙ্গে একটু পেছনে সরাতে না সরাতেই ট্রেনটি মহাখালী রেল ক্রসিং অতিক্রম করে যায়। জীবন রক্ষা পায় বাসের যাত্রীদের। তার দায়িত্ববোধ প্রশংসিত হবেই। একই সঙ্গে আলোচিত হবে গাড়ির মূল চালকের দায়িত্বহীনতা। সাম্প্রতিক সময়ে গাড়িচালকদের ইস্যুটি ব্যাপক আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। সড়কপথ যেন ক্রমেই আরও বেশি অনিরাপদ এবং নানা মহল থেকেই বলা হচ্ছে, এর পেছনে চালকদের দায় কম নয়। মহাখালী রেল ক্রসিংয়ে ট্রেন আসতে দেখে রেললাইনের ওপর গাড়ি ফেলে চালকের সটকে পড়ার ঘটনা চালকদের সম্পর্কে অভিযোগকেই জোরালো করবে। কিন্তু বাসের হেলপারের কথাও ভুললে চলবে না। তিনি প্রাণভয় তুচ্ছ করে যাত্রীদের বাঁচিয়েছেন। এমন কর্মীর হাতেই থাকুক গাড়ির স্টিয়ারিং।
No comments