মন্ত্রী কি সরকারকে সময়সীমা বেঁধে দিতে পারেন?-পরিবহন-শ্রমিকদের সমাবেশে বিষোদ্গার
সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থেকে শাজাহান খান পরিবহন খাতের শ্রমিকদের নিয়ে মূলত যা করছেন, তাকে সোজা কথায় বলা যায় দলবাজি। গত সোমবার রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বাংলাদেশ পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের এক সমাবেশে তিনি যানবাহনের চালকদের খুশি রাখতে যেসব কথাবার্তা বলেছেন,
তাতে দায়িত্ববোধের পরিচয় পাওয়া যায় না। নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত অভিনয়শিল্পী ইলিয়াস কাঞ্চন, তারানা হালিম প্রমুখের বিরুদ্ধে অপমানসূচক স্লোগান ও প্রতিকৃতি নিয়ে যে অসৌজন্য করা হয়েছে, তা-ও নিন্দনীয়।
নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেছেন, ট্রেনে মানুষ মারা গেলে সাংবাদিকেরা বলেন না ট্রেনচালক ঘাতক, নৌ-দুর্ঘটনায়ও চালকদের ঘাতক বলা হয় না। কিন্তু সড়কের যানবাহন চালকদের বলা হয় ঘাতক। কী হাস্যকর কথা! মন্ত্রী কি ট্রেন চালনা ও নৌযান চালনার সঙ্গে বাস-ট্রাক চালনার পার্থক্য বুঝতে পারেন না? মন্ত্রীর এমন বক্তব্য বাস-ট্রাকের চালকদের আরও বেপরোয়াভাবে যান চালাতে উৎসাহিত করতে পারে।
সোমবারের সমাবেশে শাজাহান খান দাবি তুলেছেন, সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যু হলে দুর্ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যানের চালকের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় (হত্যার অভিযোগে) মামলা করা চলবে না। ওই সমাবেশ থেকে যে ১১ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়েছে, সেসবের মধ্যে এ দাবিটিও আছে। এ অযৌক্তিক দাবি মানা হলে বাস-ট্রাকের চালকেরা এখনো যেটুকু সাবধানতা অবলম্বন করেন, তা-ও আর করার প্রয়োজন বোধ করবেন না।
শাজাহান খান সরকারের নৌপরিবহনমন্ত্রী, আবার বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নেতাও। মন্ত্রী হয়ে তিনি যখন শ্রমিকদের দাবি বাস্তবায়নের জন্য সরকারকে সময়সীমা বেঁধে দেন—তখন প্রশ্ন জাগে, এটা তিনি করতে পারেন কি না? সমাবেশে তাঁর নেতৃত্বাধীন পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের তৈরি করা তালিকার ভিত্তিতে মৌখিক ও মাঠ-পরীক্ষার ভিত্তিতে গাড়িচালকের লাইসেন্সদেওয়ার দাবি করা হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, ফেডারেশন তালিকা দেওয়ার কে? কী অধিকারেই বা তারা দাবি তুলেছে যে তাদের তালিকাভুক্ত লোকদের মৌখিক ও মাঠ-পরীক্ষা নিয়ে লাইসেন্স দিতে হবে?
সংবাদমাধ্যম ও নাগরিক সমাজকে আক্রমণ করে বালখিল্য কথাবার্তার পাশাপাশি শাজাহান খান বলেছেন, পরিবহন-শ্রমিকদের জন্য আত্মাহুতি দিতে হলেও তিনি পিছপা হবেন না। বেশ কথা, কিন্তু শ্রমিকদের নিয়ে দলবাজি করাই যদি তাঁর কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ বলে মনে হয়, তাহলে মন্ত্রিত্ব ধরে রেখে সরকারের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা কেন?
No comments