মৃদুকন্ঠ-সরকার বদলের সাবলীলতা by খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ
সম্প্রতি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদল ঘটেছে। দীর্ঘ তিন দশকেরও অধিককাল পর বামফ্রন্ট ক্ষমতাচ্যুত হলো। অনেকটা অবিশ্বাস্য ভরাডুবি। বিজয়ীর বেশে ক্ষমতায় আসীন হলেন তৃণমূলের মমতা ব্যানার্জি। মমতার ক্ষমতা গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পরাজিত বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।
বামফ্রন্টের মুখপাত্র মন্তব্য করলেন, 'শুধু ক্ষমতায় থাকার জন্যই ব্রামফ্রন্টের জন্ম হয়নি। দায়িত্বশীল বিরোধী দলের ভূমিকাও পালন করতে হবে।' গরম কথা বলায় অভ্যস্ত মমতাও যেন ক্ষমতার গরমকে হজম করে ফেললেন। নরম হয়ে গেলেন আচরণে। নম্র হলেন কথাবার্তায়।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য পরাজিত হয়েই পদত্যাগ করলেন। ফলাফল সরকারিভাবে প্রকাশের জন্য অপেক্ষা করলেন না। নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি-এমন দাবিও করলেন না। মমতা বামফ্রন্টকর্মীদের ওপর বদলা নিলেন না। বরং সংযত আচরণের পরামর্শ দিলেন নিজ কর্মীদের। জ্বালাও-পোড়াও হলো না। বাকসন্ত্রাস হলো না। ক্ষমতা বদল হলো সাবলীলভাবে, হৃদ্যতার মধ্যে, উৎসবমুখর পরিবেশে। গণতন্ত্রের সৌন্দর্য প্রত্যক্ষ করল সবাই। সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের জনগণও।
বাংলাদেশে কী ঘটেছিল? এখন কী ঘটছে? ২০০১ সালে চারদলীয় জোট ক্ষমতায় আসীন হয়ে সংখ্যালঘু ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ওপর যে অমানুষিক অত্যাচার-নিপীড়ন চালিয়েছিল, তা মধ্যযুগের ভিনদেশি রাজা-বাদশাহদের অন্য দেশ দখলের চিত্রকেও ম্লান করে দেয়। বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া, নারী, এমনকি কিশোরীদের ওপর যৌন অত্যাচার, বাড়ি-জমি জবরদখল, জোরপূর্বক চাঁদা আদায়-আরো কত ধরনের অনাচার হয়েছিল, তার কিছুটা নিয়ে একটা তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত হয়েছে। প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হোক। দেশবাসী, বিশ্ববাসী জানুক, কী ঘটেছিল তখন। এর নাম কি ক্ষমতা বদল, নাকি রাজ্য জয়?
আজও চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেই মমতাময়ী মায়ের বুকফাটা অনুরোধ, 'বাবা, তোমরা এক-একজন করে ঘরে ঢোকো, আমার মেয়ে স্বল্পবয়সী কিশোরী।' ধর্ষণকারীরা উল্লাস করে দলবেঁধে যখন এক সংখ্যালঘু ঘরে কিশোরী ধর্ষণের জন্য ঢুকছিল, তখন কিংকর্তব্যবিমূঢ় মায়ের আর্তনাদে আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠেছিল। কিন্তু বিজয়ী দলের সোনার ছেলেদের হৃদয় স্পর্শ করেনি। দীর্ঘকাল পর বিচার হয়েছে। সেদিনেরই সেই সাহসী কিশোরী রায়ে সন্তুষ্ট হলেও বলেছেন, রায় আরো কঠোর হওয়া উচিত ছিল। তাঁর মনোবেদনা আমরা বুঝি। সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা নেই। শুধু আহ্বান, দেশটা তোমার, আমার-সভ্য মানুষের। অসভ্য সন্ত্রাসীদের আইনের ঝাঁটা দিয়ে নিরস্ত্র করাই আমাদের সবার দায়িত্ব। সন্ত্রাস দিয়ে সন্ত্রাস দমন করা যায় না। সেটি বর্বরতা। গণতন্ত্র নয়।
চোখের সামনে আরো ভেসে ওঠে চট্টগ্রামের বাঁশখালী গ্রামের একটি সংখ্যালঘু পরিবারকে পুড়িয়ে মারার দৃশ্য। রাতে বাইরে থেকে দরজা আটকে ঘরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পুড়ে গিয়েছিল পুরো পরিবার। ভেঙে গিয়েছিল অনেক স্বপ্ন। মুছে গিয়েছিল অনেক সম্ভাবনা। নিষ্ঠুরতার সাক্ষী হয়ে বেঁচে আছেন মাত্র একজন, যিনি টিনের ঘরটির দোতলা থেকে লাফিয়ে পড়ে আহত হয়েও দৌড়ে পালিয়েছিলেন। বিধাতা সব অপরাধেরই বুঝি সাক্ষী রেখে দেন। কিন্তু সেই সাক্ষীকেও চারদলীয় আমলে নির্বাক থাকতে হয়েছে। পালিয়ে থাকতে হয়েছে। এমনি শত শত হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছিল ২০০১ সালের ক্ষমতা হস্তান্তরের পরের সময়ে। জামায়াত-বিএনপি দুঃখ প্রকাশ করেনি। লজ্জিতও হয়নি। বরং তদন্ত প্রতিবেদনকে ভুল বলে আখ্যায়িত করেছে। এটাই প্রমাণ করে, ঘটনাগুলো ঘটনাক্রমে ঘটেনি। ঘটানো হয়েছিল সুপরিকল্পিতভাবে।
২০০৯ সালে ক্ষমতার বদল ঘটেছিল আবারও। মহাজোট অবশ্য চারদলীয় মহাযজ্ঞ অনুসরণ করেনি। প্রতিহিংসার কিছু ঘটনা ঘটেছিল, যা না ঘটলে ভালো হতো। চারদলীয় পরিকল্পিত প্রতিহিংসার তুলনায় ২০০৯ সালে উন্নতি পরিলক্ষিত হয়েছে, যা স্বীকার করতেই হয়। তবে ২০০৯ সালের পর উল্লেখযোগ্য সন্ত্রাস ঘটেছে। ছাত্রলীগের মারামারি-টেন্ডারবাজি, স্থানীয় দলাদলি-সন্ত্রাস, মাদক-সন্ত্রাস, ব্যক্তি-সন্ত্রাস এবং ক্ষমতাসীনদের দাপট আমরা প্রত্যক্ষ করেছি-যা সামাজিক অস্থিরতার প্রতিচিত্র। এটাকে ক্ষমতা বদলের প্রতিহিংসা বলে চিহ্নিত করা অনুচিত।
এখন ফিরে তাকানো যাক সরাসরি রাষ্ট্রীয় রাজনীতিতে। পশ্চিমবঙ্গে মমতার ক্ষমতারোহণ অনুষ্ঠানে বুদ্ধদেব উপস্থিত থেকেছেন। অভিনন্দনও জানিয়েছেন। বাংলাদেশে মহাজোটের ক্ষমতারোহণ অনুষ্ঠানে আসেননি খালেদা জিয়া। ২০০১ সালের চারদলীয় জোটের ক্ষমতারোহণ অনুষ্ঠানেও যাননি শেখ হাসিনা। খালেদা জিয়া একধাপ এগিয়ে নির্বাচনে বিশাল বিজয় অর্জনকারী মহাজোটের ক্ষমতারোহণকে অবৈধ আখ্যায়িত করলেন। সংসদ সদস্যরা নির্বাচিত হয়েছেন সংসদে অংশগ্রহণের জন্য। কিন্তু চারদলীয় জোটের সংসদ সদস্যরা সংসদে যাচ্ছেন না। সংসদে কথা বলার দায়িত্বও পালন করছেন না। অধিকারও রক্ষা করছেন না। বরং উল্টো বাইরে বসে সরকারকে পদত্যাগ করতে বলছেন। টেনেহিঁচড়ে নামাবেন বলে হুমকিও দিচ্ছেন।
গণতন্ত্রে তো টেনে নামানোর বিধান নেই। একমাত্র অস্ত্রের মুখেই টেনে নামানো যায়। কোনো গণতান্ত্রিক দলের মুখে এমন উচ্চারণ শোভন নয়। একটা দখলদার ভাব ফুটে ওঠে এসব উচ্চারণে।
ভারত বা শ্রীলঙ্কায় ক্ষমতাবদল হলে চলমানতা বজায় থাকে, ভব্যতা-ভদ্রতা বজায় থাকে। শুধু সরকারি ও বিরোধী দলের ভূমিকা বদল হয়। বিশ্বের উন্নত গণতান্ত্রিক দেশের ক্ষমতার পালাবদলে স্বাচ্ছন্দ্য থাকে। বাংলাদেশে কেন এই অনাসৃষ্টি? বিষয়টি নিবিড় পরীক্ষার দাবি রাখে।
পশ্চিমবঙ্গে হোক বা ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারেই হোক-ক্ষমতায় আরোহণকারী এবং ক্ষমতা থেকে অবতরণকারী উভয়েই প্রথমে ভারতীয়, শেষেও ভারতীয়। উভয়েই মহাত্মা গান্ধীকে জাতির পিতা হিসেবে সম্মান করেন। উভয়েই ভারতীয় সংবিধান তথা রাষ্ট্রীয় মূলনীতিতে দৃঢ়বিশ্বাসী। চীন বা পাকিস্তানের হুমকির মুখে উভয়ে একাট্টা। তাঁরাও ঝগড়াঝাঁটি করেন। কিন্তু তা ভাইয়ে ভাইয়ে, বন্ধুতে বন্ধুতে ঝগড়া। শত্রুর সঙ্গে ঝগড়া নয়।
বাংলাদেশ একটি নতুন জাতিরাষ্ট্র হিসেবে জন্মলাভ করল বায়ান্ন, চুয়ান্ন, বাষট্টি, ছেষট্টি, ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলন পেরিয়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে। একাত্তরের জনযুদ্ধে মুসলিম-হিন্দু-খ্রিস্টান কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছেন। সবার রক্ত একসঙ্গে মিশেছে মুক্তির সাগরে। কেউ ধর্মের জন্য যুদ্ধ করেননি। যুদ্ধ করেছেন স্বাধীন রাষ্ট্র অর্জনের জন্য, যে রাষ্ট্রে ধর্মীয় বৈষম্য থাকবে না, বর্ণ বা জাত-পাতের বৈষম্য থাকবে না-সবার জন্য উন্মুক্ত হবে সমান সুযোগ, সমানাধিকার।
স্বাধীনতার পর প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও জাসদসহ অন্যরাও কিছু আসনে জিতেছিল। সরকারবিরোধীরাও কিন্তু সংসদে এসেছিলেন। কেউ কেউ উগ্র কথাবার্তা বলেছেন। কিন্তু সংসদে এসেছেন। স্বাধীনতাবিরোধীদের (মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত এবং সন্ত্রাসী বাম) উৎপাত ছিল। কিন্তু তাঁরা নির্বাচিত ছিলেন না। জাতীয় বিভাজন ছিল না।
বিভাজন সৃষ্টি করা হলো পঁচাত্তরে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নয়, বরং ঘৃণ্যতম সন্ত্রাসের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে বন্দুকের নলের মুখে নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে দেওয়া হলো। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা জবরদখল করা হলো। বাড়ির সশস্ত্র প্রহরী কর্তৃক গৃহকর্তাকে হত্যা করে বাড়ি জবরদখল করার মতো ঘটনা।
আইনের চোখে, সভ্যতার চোখে ও গণতন্ত্রের চোখে এটি ছিল জংলী বর্বরতা। ক্ষমতা বদল নয়। তাই হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্ট মোশতাক, সায়েম ও জিয়ার ক্ষমতা দখলকে বেআইনি ঘোষণা করেছেন। বোঝাই যায়, মূল খলনায়ক ছিলেন জেনারেল জিয়া। যাঁর দায়িত্ব ছিল রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তা বিধান করা, তিনিই হত্যাকারীদের আশ্রয়দাতার ভূমিকা পালন করলেন।
হত্যাকাণ্ডের মূল কারণ শুধু রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল নয়, বরং রাষ্ট্রের চরিত্রই পাল্টে ফেলা। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে পাকিস্তানি বাংলাদেশে রূপান্তর করা। সন্ত্রাসী কাণ্ডটি ঘটানো হয়েছিল পাকিস্তানি মদদে; মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানিদের এ দেশীয় সহচরদের সহযোগিতায়। এ জন্যই পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে 'ইসলামিক রিপাবলিক অব বাংলাদেশ' বলে সম্বোধন করেছিলেন ভুট্টো। পাকিস্তানের মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বার্তা থেকে তেমনটাই জানা যায়। পরিকল্পনাটি সেই দিনই বাস্তবায়িত হয়নি। ধীরে ধীরে সে লক্ষ্যেই তারা এগোচ্ছিল। চারদলীয় জোট সরকার দ্রুত অগ্রসর হতে গিয়ে হোঁচট খেয়েছে।
রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি পাল্টানো হলো। আধুনিক রাষ্ট্রকে একটি ধর্মীয় রাষ্ট্রে (পাকিস্তানের মতো) পরিণত করা হলো। হত্যা-সন্ত্রাস উসকে দেওয়া হলো (পাকিস্তানের মতো)। সামরিক আইন তো বেশি দিন রাখা যায় না। তাই উল্টোযাত্রা ধরে রাখার জন্য সৃষ্টি করা হলো প্রথমে বিএনপি (জিয়া), পরে আরো একটি দল, জাতীয় পার্টি (এরশাদ)। এরশাদ প্রথম দখলদার নন বিধায় নমনীয়। জিয়া মূল দখলদার বিধায় তাঁর দল বিএনপি পাকিস্তানি ভাবধারা আঁকড়ে রাখতে চাইছে।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-সংঘাতের মূল কথা এটাই। বিএনপি-জামায়াত মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন না করলে এ সংঘাতের অবসান হবে না। কোনো আলাপ-আলোচনা, দরকষাকষি বা ছাড় প্রদান এ সমস্যার সমাধান করবে না। জামায়াত হয়তো পাল্টাবে না। কিন্তু বিএনপির পাল্টানোর প্রয়োজন এবং সুযোগ দুটোই রয়েছে। প্রধান একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের ধারায় ফিরে আসার প্রয়োজন খুব বেশি।
সুযোগ আছে এ জন্য বলছি যে দলটির তৃণমূল পর্যায়ে আদর্শগত সমস্যা অতটা নেই। নেতাদের মধ্যেও অনেকে মুক্তিযোদ্ধা ও প্রগতিশীল। কিন্তু বর্তমান শীর্ষ নেতৃত্বই (সব ক্ষমতা একটি পরিবারে) পরিবর্তনের প্রতিবন্ধক। যাঁরা পরিবর্তন চেয়েছেন, তাঁরাই বহিষ্কৃত হয়েছেন, ছিটকে পড়েছেন। দলের মহাসচিব আবদুল মান্নানও কক্ষচ্যুত হলেন। ছিটকে পড়লেন আরো অনেক দেশপ্রেমিক নেতা। দলটির মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা হলে অবস্থার উন্নতি হবে। ধর্মান্ধ দল থেকে দূরে সরে থাকলেও দলটির প্রগতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে। মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতি মেনে মূলধারার রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তন করলে বিএনপি দক্ষিণপন্থী গণতান্ত্রিক দল হিসেবে স্থায়িত্ব অর্জন করবে। এমন পরিস্থিতিতেই মাত্র রাজনৈতিক শত্রুতার বদলে রাজনৈতিক বিরোধিতা আশা করা যায়। দলের দেশপ্রেমিক নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টায় এমন উত্তরণ ঘটা সম্ভব। স্বাধীনতার ৪০ বছর পার হয়েছে। এখন সব নাগরিককে একাট্টা হয়ে বলতে হবে, রাজনৈতিক দলের মধ্যে অর্থনীতি নিয়ে দ্বিমত থাকতে পারবে, শাসনব্যবস্থা নিয়ে দ্বিমত থাকতে পারবে, কর্মসূচির অগ্রাধিকার নিয়ে দ্বিমত থাকতে পারবে; কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা অসাম্প্রদায়িকতা, গণতান্ত্রিকতা, জাতীয়তাবোধ এবং সম্পদের মোটামুটি সুষম বণ্টন নিয়ে দ্বিমত থাকতে পারবে না। এই চেতনার জন্মদাতা এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জনক বঙ্গবন্ধুর অবস্থান নিয়েও সমমত হতে হবে। তিনি কোনো দলের নন। তিনি সমগ্র জাতির। বঙ্গবন্ধু জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। এ চেতনার বন্ধনই জাতিকে বিভক্তি থেকে মুক্তি দেবে। একাত্তরের মতো কোটি প্রাণকে একটি হৃদয়ে গ্রথিত করবে।
লেখক : সাবেক ডেপুটি গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য পরাজিত হয়েই পদত্যাগ করলেন। ফলাফল সরকারিভাবে প্রকাশের জন্য অপেক্ষা করলেন না। নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি-এমন দাবিও করলেন না। মমতা বামফ্রন্টকর্মীদের ওপর বদলা নিলেন না। বরং সংযত আচরণের পরামর্শ দিলেন নিজ কর্মীদের। জ্বালাও-পোড়াও হলো না। বাকসন্ত্রাস হলো না। ক্ষমতা বদল হলো সাবলীলভাবে, হৃদ্যতার মধ্যে, উৎসবমুখর পরিবেশে। গণতন্ত্রের সৌন্দর্য প্রত্যক্ষ করল সবাই। সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের জনগণও।
বাংলাদেশে কী ঘটেছিল? এখন কী ঘটছে? ২০০১ সালে চারদলীয় জোট ক্ষমতায় আসীন হয়ে সংখ্যালঘু ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ওপর যে অমানুষিক অত্যাচার-নিপীড়ন চালিয়েছিল, তা মধ্যযুগের ভিনদেশি রাজা-বাদশাহদের অন্য দেশ দখলের চিত্রকেও ম্লান করে দেয়। বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া, নারী, এমনকি কিশোরীদের ওপর যৌন অত্যাচার, বাড়ি-জমি জবরদখল, জোরপূর্বক চাঁদা আদায়-আরো কত ধরনের অনাচার হয়েছিল, তার কিছুটা নিয়ে একটা তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত হয়েছে। প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হোক। দেশবাসী, বিশ্ববাসী জানুক, কী ঘটেছিল তখন। এর নাম কি ক্ষমতা বদল, নাকি রাজ্য জয়?
আজও চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেই মমতাময়ী মায়ের বুকফাটা অনুরোধ, 'বাবা, তোমরা এক-একজন করে ঘরে ঢোকো, আমার মেয়ে স্বল্পবয়সী কিশোরী।' ধর্ষণকারীরা উল্লাস করে দলবেঁধে যখন এক সংখ্যালঘু ঘরে কিশোরী ধর্ষণের জন্য ঢুকছিল, তখন কিংকর্তব্যবিমূঢ় মায়ের আর্তনাদে আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠেছিল। কিন্তু বিজয়ী দলের সোনার ছেলেদের হৃদয় স্পর্শ করেনি। দীর্ঘকাল পর বিচার হয়েছে। সেদিনেরই সেই সাহসী কিশোরী রায়ে সন্তুষ্ট হলেও বলেছেন, রায় আরো কঠোর হওয়া উচিত ছিল। তাঁর মনোবেদনা আমরা বুঝি। সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা নেই। শুধু আহ্বান, দেশটা তোমার, আমার-সভ্য মানুষের। অসভ্য সন্ত্রাসীদের আইনের ঝাঁটা দিয়ে নিরস্ত্র করাই আমাদের সবার দায়িত্ব। সন্ত্রাস দিয়ে সন্ত্রাস দমন করা যায় না। সেটি বর্বরতা। গণতন্ত্র নয়।
চোখের সামনে আরো ভেসে ওঠে চট্টগ্রামের বাঁশখালী গ্রামের একটি সংখ্যালঘু পরিবারকে পুড়িয়ে মারার দৃশ্য। রাতে বাইরে থেকে দরজা আটকে ঘরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পুড়ে গিয়েছিল পুরো পরিবার। ভেঙে গিয়েছিল অনেক স্বপ্ন। মুছে গিয়েছিল অনেক সম্ভাবনা। নিষ্ঠুরতার সাক্ষী হয়ে বেঁচে আছেন মাত্র একজন, যিনি টিনের ঘরটির দোতলা থেকে লাফিয়ে পড়ে আহত হয়েও দৌড়ে পালিয়েছিলেন। বিধাতা সব অপরাধেরই বুঝি সাক্ষী রেখে দেন। কিন্তু সেই সাক্ষীকেও চারদলীয় আমলে নির্বাক থাকতে হয়েছে। পালিয়ে থাকতে হয়েছে। এমনি শত শত হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছিল ২০০১ সালের ক্ষমতা হস্তান্তরের পরের সময়ে। জামায়াত-বিএনপি দুঃখ প্রকাশ করেনি। লজ্জিতও হয়নি। বরং তদন্ত প্রতিবেদনকে ভুল বলে আখ্যায়িত করেছে। এটাই প্রমাণ করে, ঘটনাগুলো ঘটনাক্রমে ঘটেনি। ঘটানো হয়েছিল সুপরিকল্পিতভাবে।
২০০৯ সালে ক্ষমতার বদল ঘটেছিল আবারও। মহাজোট অবশ্য চারদলীয় মহাযজ্ঞ অনুসরণ করেনি। প্রতিহিংসার কিছু ঘটনা ঘটেছিল, যা না ঘটলে ভালো হতো। চারদলীয় পরিকল্পিত প্রতিহিংসার তুলনায় ২০০৯ সালে উন্নতি পরিলক্ষিত হয়েছে, যা স্বীকার করতেই হয়। তবে ২০০৯ সালের পর উল্লেখযোগ্য সন্ত্রাস ঘটেছে। ছাত্রলীগের মারামারি-টেন্ডারবাজি, স্থানীয় দলাদলি-সন্ত্রাস, মাদক-সন্ত্রাস, ব্যক্তি-সন্ত্রাস এবং ক্ষমতাসীনদের দাপট আমরা প্রত্যক্ষ করেছি-যা সামাজিক অস্থিরতার প্রতিচিত্র। এটাকে ক্ষমতা বদলের প্রতিহিংসা বলে চিহ্নিত করা অনুচিত।
এখন ফিরে তাকানো যাক সরাসরি রাষ্ট্রীয় রাজনীতিতে। পশ্চিমবঙ্গে মমতার ক্ষমতারোহণ অনুষ্ঠানে বুদ্ধদেব উপস্থিত থেকেছেন। অভিনন্দনও জানিয়েছেন। বাংলাদেশে মহাজোটের ক্ষমতারোহণ অনুষ্ঠানে আসেননি খালেদা জিয়া। ২০০১ সালের চারদলীয় জোটের ক্ষমতারোহণ অনুষ্ঠানেও যাননি শেখ হাসিনা। খালেদা জিয়া একধাপ এগিয়ে নির্বাচনে বিশাল বিজয় অর্জনকারী মহাজোটের ক্ষমতারোহণকে অবৈধ আখ্যায়িত করলেন। সংসদ সদস্যরা নির্বাচিত হয়েছেন সংসদে অংশগ্রহণের জন্য। কিন্তু চারদলীয় জোটের সংসদ সদস্যরা সংসদে যাচ্ছেন না। সংসদে কথা বলার দায়িত্বও পালন করছেন না। অধিকারও রক্ষা করছেন না। বরং উল্টো বাইরে বসে সরকারকে পদত্যাগ করতে বলছেন। টেনেহিঁচড়ে নামাবেন বলে হুমকিও দিচ্ছেন।
গণতন্ত্রে তো টেনে নামানোর বিধান নেই। একমাত্র অস্ত্রের মুখেই টেনে নামানো যায়। কোনো গণতান্ত্রিক দলের মুখে এমন উচ্চারণ শোভন নয়। একটা দখলদার ভাব ফুটে ওঠে এসব উচ্চারণে।
ভারত বা শ্রীলঙ্কায় ক্ষমতাবদল হলে চলমানতা বজায় থাকে, ভব্যতা-ভদ্রতা বজায় থাকে। শুধু সরকারি ও বিরোধী দলের ভূমিকা বদল হয়। বিশ্বের উন্নত গণতান্ত্রিক দেশের ক্ষমতার পালাবদলে স্বাচ্ছন্দ্য থাকে। বাংলাদেশে কেন এই অনাসৃষ্টি? বিষয়টি নিবিড় পরীক্ষার দাবি রাখে।
পশ্চিমবঙ্গে হোক বা ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারেই হোক-ক্ষমতায় আরোহণকারী এবং ক্ষমতা থেকে অবতরণকারী উভয়েই প্রথমে ভারতীয়, শেষেও ভারতীয়। উভয়েই মহাত্মা গান্ধীকে জাতির পিতা হিসেবে সম্মান করেন। উভয়েই ভারতীয় সংবিধান তথা রাষ্ট্রীয় মূলনীতিতে দৃঢ়বিশ্বাসী। চীন বা পাকিস্তানের হুমকির মুখে উভয়ে একাট্টা। তাঁরাও ঝগড়াঝাঁটি করেন। কিন্তু তা ভাইয়ে ভাইয়ে, বন্ধুতে বন্ধুতে ঝগড়া। শত্রুর সঙ্গে ঝগড়া নয়।
বাংলাদেশ একটি নতুন জাতিরাষ্ট্র হিসেবে জন্মলাভ করল বায়ান্ন, চুয়ান্ন, বাষট্টি, ছেষট্টি, ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলন পেরিয়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে। একাত্তরের জনযুদ্ধে মুসলিম-হিন্দু-খ্রিস্টান কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছেন। সবার রক্ত একসঙ্গে মিশেছে মুক্তির সাগরে। কেউ ধর্মের জন্য যুদ্ধ করেননি। যুদ্ধ করেছেন স্বাধীন রাষ্ট্র অর্জনের জন্য, যে রাষ্ট্রে ধর্মীয় বৈষম্য থাকবে না, বর্ণ বা জাত-পাতের বৈষম্য থাকবে না-সবার জন্য উন্মুক্ত হবে সমান সুযোগ, সমানাধিকার।
স্বাধীনতার পর প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও জাসদসহ অন্যরাও কিছু আসনে জিতেছিল। সরকারবিরোধীরাও কিন্তু সংসদে এসেছিলেন। কেউ কেউ উগ্র কথাবার্তা বলেছেন। কিন্তু সংসদে এসেছেন। স্বাধীনতাবিরোধীদের (মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত এবং সন্ত্রাসী বাম) উৎপাত ছিল। কিন্তু তাঁরা নির্বাচিত ছিলেন না। জাতীয় বিভাজন ছিল না।
বিভাজন সৃষ্টি করা হলো পঁচাত্তরে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নয়, বরং ঘৃণ্যতম সন্ত্রাসের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে বন্দুকের নলের মুখে নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে দেওয়া হলো। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা জবরদখল করা হলো। বাড়ির সশস্ত্র প্রহরী কর্তৃক গৃহকর্তাকে হত্যা করে বাড়ি জবরদখল করার মতো ঘটনা।
আইনের চোখে, সভ্যতার চোখে ও গণতন্ত্রের চোখে এটি ছিল জংলী বর্বরতা। ক্ষমতা বদল নয়। তাই হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্ট মোশতাক, সায়েম ও জিয়ার ক্ষমতা দখলকে বেআইনি ঘোষণা করেছেন। বোঝাই যায়, মূল খলনায়ক ছিলেন জেনারেল জিয়া। যাঁর দায়িত্ব ছিল রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তা বিধান করা, তিনিই হত্যাকারীদের আশ্রয়দাতার ভূমিকা পালন করলেন।
হত্যাকাণ্ডের মূল কারণ শুধু রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল নয়, বরং রাষ্ট্রের চরিত্রই পাল্টে ফেলা। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে পাকিস্তানি বাংলাদেশে রূপান্তর করা। সন্ত্রাসী কাণ্ডটি ঘটানো হয়েছিল পাকিস্তানি মদদে; মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানিদের এ দেশীয় সহচরদের সহযোগিতায়। এ জন্যই পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে 'ইসলামিক রিপাবলিক অব বাংলাদেশ' বলে সম্বোধন করেছিলেন ভুট্টো। পাকিস্তানের মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বার্তা থেকে তেমনটাই জানা যায়। পরিকল্পনাটি সেই দিনই বাস্তবায়িত হয়নি। ধীরে ধীরে সে লক্ষ্যেই তারা এগোচ্ছিল। চারদলীয় জোট সরকার দ্রুত অগ্রসর হতে গিয়ে হোঁচট খেয়েছে।
রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি পাল্টানো হলো। আধুনিক রাষ্ট্রকে একটি ধর্মীয় রাষ্ট্রে (পাকিস্তানের মতো) পরিণত করা হলো। হত্যা-সন্ত্রাস উসকে দেওয়া হলো (পাকিস্তানের মতো)। সামরিক আইন তো বেশি দিন রাখা যায় না। তাই উল্টোযাত্রা ধরে রাখার জন্য সৃষ্টি করা হলো প্রথমে বিএনপি (জিয়া), পরে আরো একটি দল, জাতীয় পার্টি (এরশাদ)। এরশাদ প্রথম দখলদার নন বিধায় নমনীয়। জিয়া মূল দখলদার বিধায় তাঁর দল বিএনপি পাকিস্তানি ভাবধারা আঁকড়ে রাখতে চাইছে।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-সংঘাতের মূল কথা এটাই। বিএনপি-জামায়াত মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন না করলে এ সংঘাতের অবসান হবে না। কোনো আলাপ-আলোচনা, দরকষাকষি বা ছাড় প্রদান এ সমস্যার সমাধান করবে না। জামায়াত হয়তো পাল্টাবে না। কিন্তু বিএনপির পাল্টানোর প্রয়োজন এবং সুযোগ দুটোই রয়েছে। প্রধান একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের ধারায় ফিরে আসার প্রয়োজন খুব বেশি।
সুযোগ আছে এ জন্য বলছি যে দলটির তৃণমূল পর্যায়ে আদর্শগত সমস্যা অতটা নেই। নেতাদের মধ্যেও অনেকে মুক্তিযোদ্ধা ও প্রগতিশীল। কিন্তু বর্তমান শীর্ষ নেতৃত্বই (সব ক্ষমতা একটি পরিবারে) পরিবর্তনের প্রতিবন্ধক। যাঁরা পরিবর্তন চেয়েছেন, তাঁরাই বহিষ্কৃত হয়েছেন, ছিটকে পড়েছেন। দলের মহাসচিব আবদুল মান্নানও কক্ষচ্যুত হলেন। ছিটকে পড়লেন আরো অনেক দেশপ্রেমিক নেতা। দলটির মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা হলে অবস্থার উন্নতি হবে। ধর্মান্ধ দল থেকে দূরে সরে থাকলেও দলটির প্রগতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে। মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতি মেনে মূলধারার রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তন করলে বিএনপি দক্ষিণপন্থী গণতান্ত্রিক দল হিসেবে স্থায়িত্ব অর্জন করবে। এমন পরিস্থিতিতেই মাত্র রাজনৈতিক শত্রুতার বদলে রাজনৈতিক বিরোধিতা আশা করা যায়। দলের দেশপ্রেমিক নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টায় এমন উত্তরণ ঘটা সম্ভব। স্বাধীনতার ৪০ বছর পার হয়েছে। এখন সব নাগরিককে একাট্টা হয়ে বলতে হবে, রাজনৈতিক দলের মধ্যে অর্থনীতি নিয়ে দ্বিমত থাকতে পারবে, শাসনব্যবস্থা নিয়ে দ্বিমত থাকতে পারবে, কর্মসূচির অগ্রাধিকার নিয়ে দ্বিমত থাকতে পারবে; কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা অসাম্প্রদায়িকতা, গণতান্ত্রিকতা, জাতীয়তাবোধ এবং সম্পদের মোটামুটি সুষম বণ্টন নিয়ে দ্বিমত থাকতে পারবে না। এই চেতনার জন্মদাতা এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জনক বঙ্গবন্ধুর অবস্থান নিয়েও সমমত হতে হবে। তিনি কোনো দলের নন। তিনি সমগ্র জাতির। বঙ্গবন্ধু জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। এ চেতনার বন্ধনই জাতিকে বিভক্তি থেকে মুক্তি দেবে। একাত্তরের মতো কোটি প্রাণকে একটি হৃদয়ে গ্রথিত করবে।
লেখক : সাবেক ডেপুটি গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক
No comments