নৌনিরাপত্তা সপ্তাহ-নিশ্চিত হোক যাত্রীদের নিরাপত্তা ও সেবার মান

বাংলাদেশে প্রতিবছর কোথাও না কোথাও নৌ-দুর্ঘটনা ঘটে। সব দুর্ঘটনার খবর তেমনভাবে প্রচার মাধ্যমে আসে না। বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে শখন সেটা সংবাদ মাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হয়। প্রতিবছর বাংলাদেশে নৌ-দুর্ঘটনায় কত মানুষ মারা যাচ্ছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু বছরের পর বছর নৌ-দুর্ঘটনা ঘটছে।


মারা যাচ্ছে শত শত মানুষ। এই নৌ-দুর্ঘটনার নেপথ্যের প্রধান কারণ, নিয়ম মেনে নৌযান না চালানো। একদিকে নৌযান মালিকদের মুনাফার লোভ যেমন দায়ী, তেমনি যাত্রীদের অসচেতনতার দায়ও এড়িয়ে যাওয়া যায় না। এখন ঝড়-বৃষ্টির মৌসুম। এই সময়েই নৌ-দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। কিছুদিন আগেও একটি লঞ্চডুবিতে কয়েকজনের জীবনহানি ঘটেছে। এই অবস্থায় গতকাল থেকে শুরু হয়েছে নৌ-নিরাপত্তা সপ্তাহ।
বাংলাদেশের নদীপথ সংকুচিত হয়ে এলেও বেশ কয়েকটি এলাকায় এখনো যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম নৌযান। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলার সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগের মাধ্যম নৌপথ। ওইসব এলাকার মানুষ সড়কপথকে দ্বিতীয় মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। প্রতিদিন ঢাকার সদরঘাট থেকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় অনেক লঞ্চ ছেড়ে যায়। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের নৌপথেও নৌযান চলাচল করে। আজকাল শ্যালো ইঞ্জিনচালিত বড় বড় নৌকাও নৌপথে চলছে। যদিও এই শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকা নদীর পানিকে দূষিত করছে, তার পরও নৌপথে চলাচলে গতি এনেছে এই শ্যালো ইঞ্জিন। বাংলাদেশে প্রায় ২৫ হাজার নৌযান রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেকই অনিবন্ধিত। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অবগত রয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাবে কর্তৃপক্ষও যেন ঠুঁটো জগন্নাথ। শুধু নিবন্ধিত নৌযানের জন্য পাঁচ বন্দরে রয়েছে জরিপকারকের পাঁচটি পদ। কিন্তু এই পদের বিপরীতে এখন কর্মরত আছেন মাত্র একজন। নৌ-দুর্ঘটনা প্রতিরোধে নিয়মিত পরিদর্শনের প্রয়োজন হয়। এখানেও নেই প্রয়োজনীয় লোকবল। পরিদর্শক ও ম্যাজিস্ট্রেটের অভাব রয়েছে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের। এ বিষয়টি নিয়ে সংসদীয় কমিটিতে আলোচনা হয়েছে। একজন নৌ-স্থপতি নিয়োগের ব্যাপারে আদালতের নির্দেশনাও আছে। কিন্তু সে নির্দেশনা বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশে নৌ-দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হচ্ছে, নিয়ম মেনে নৌযান তৈরি না করা। মালিকরা নিজেদের পছন্দমতো নৌযান তৈরি করছেন। বেআইনিভাবে তৈরি করা নৌযান চলছে দেশের নদীপথে। অন্যদিকে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের ব্যাপার তো আছেই। অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন থেকে লঞ্চ মালিকদের বিরত রাখা যাচ্ছে না। তেমনি যাত্রীরাও সচেতন নয়। বর্ষার সময়, বিশেষ করে ঝড়-বৃষ্টির মৌসুমে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে নৌপথে চলাচল করা যেমন নিরাপদ নয়, তেমনি যাত্রীদেরও এসব নৌযান এড়িয়ে চলা উচিত। কিন্তু যাত্রীরাও অনেক সময় চলাচলে বিবেচনাবোধের পরিচয় দেয় না।
নৌ-দুর্ঘটনা প্রতিরোধে যাদের প্রধান ভূমিকা পালন করা উচিত সেই সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের প্রয়োজনীয় লোকবল নেই। কিন্তু লোকবল নেই_এই অজুহাতে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না। আমাদের নৌপথ নিরাপদ করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে যাত্রীদের নির্বিঘ্ন চলাচল। বন্ধ করতে হবে অহেতুক অনাকাঙ্ক্ষিত প্রাণহানি। সেবার মান নিশ্চিত করতে হবে। এসব নিশ্চিত করার দায়িত্ব যাদের, সেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ভেবে দেখবে নিশ্চয়?

No comments

Powered by Blogger.