কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন-জীর্ণ গাড়ি নিয়ে ইঁদুর-বিড়াল খেলা

ঢাকা শহরের রাস্তায় ফিটনেসবিহীন গাড়ি, আর সে গাড়ি ঠেকাতে চলছে ইঁদুর-বিড়াল খেলা। অন্যদিকে চোখের আড়ালে সে ইঁদুর ছেড়ে দেওয়ার বা দেখেও না দেখার খেলাও চলছে। অবস্থা এতটাই তীব্র যে ঢাকা শহরের রাস্তার দিকে তাকালে মনে হয় সেকেলে কোনো শহর।


এ ব্যাপারে যানবাহনের মালিকরা যেমন দায়ী, তেমনি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের অবহেলা-অনিয়মও সমান দায়ী। ফলে জনগণকে দিতে হচ্ছে নানা খেসারত। নিয়ম-অনিয়মের মধ্য দিয়ে বারবার বাড়ানো হচ্ছে গণপরিবহনের ভাড়া। কিন্তু যাত্রীরা সেই ভাঙাচোরা গাড়িতে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে। নিয়ম অনুসারে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কাছ থেকে যেকোনো ধরনের গাড়ি রাস্তায় চলাচলের উপযুক্ত কি না সে বিষয়ে ফিটনেস সার্টিফিকেট গ্রহণ করতে হয়। কিন্তু কে শোনে কার কথা! অধিকন্তু অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে চলাচলে অনুপযুক্ত গাড়িকে ফিটনেস সনদ দেওয়ার অভিযোগ তো রয়েছেই। যে কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও পুলিশের অভিযানও কার্যকর হয়ে উঠতে পারছে না। সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে তারা হিমশিম খাচ্ছে।
দৈনিক কালের কণ্ঠের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, ঢাকা শহরে মোট ৮০ হাজার ফিটনেসহীন গাড়ি চলছিল। বিআরটিএর চেয়ারম্যান প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, ৮০ হাজারের মধ্যে ২০ থেকে ২৫ হাজার গাড়ি কমেছে কর্তৃপক্ষের ডাম্পিং এবং অভিযানের কারণে। এ সংখ্যা আরো কমবে বলে তিনি আশা করছেন। অর্থাৎ চেয়ারম্যানের স্বীকারোক্তি অনুসারেই এখনো ৫০ হাজারের বেশি পুরনো, রাস্তায় চলাচলের অনুপযুক্ত গাড়ি রাজধানীময় দৌড়ে বেড়াচ্ছে। উল্লেখ্য, এ অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি এক দিনে হয়নি। বছরের পর বছর ধরে ঢাকার রাস্তায় এমন সব গাড়ি চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে, যেগুলো শুধু জরাজীর্ণই নয়, কোনো কোনো গাড়ির অংশবিশেষ খুলে পড়ে গেছে। পুরনো ব্রেক-ক্লাচ, স্টিয়ারিং হুইল বা চাকার গাড়ি দুর্ঘটনার বিশেষ কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ধরনের গাড়ি চলাচলের অনুপযোগী ঘোষণা করার মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব যাঁদের, তাঁরা বছরের পর বছর ধরে এসব গাড়ি চলতে দিচ্ছেন কী করে? শুধু তাই নয়, যে গাড়িতে ৩০টি আসন থাকার কথা, অধিক মুনাফার জন্য সে গাড়িকে ৪০ আসনের করে রাস্তায় চালানো হচ্ছে। ৪০ যাত্রীর উপযুক্ত লক্কড়ঝক্কড় একটি গাড়ি ১০০ যাত্রী নিয়ে ঢাকার সব বড় রাস্তায় ছুটে বেড়াচ্ছে। প্রায় প্রতিটি বড় রাস্তার আশপাশে রয়েছে স্কুল। আমরা প্রায়ই নির্মম যেসব দুর্ঘটনা দেখে থাকি, তার অন্যতম কারণও এই ফিটনেসবিহীন গাড়ি।
এ অবস্থার দ্রুত সমাধান প্রয়োজন। আর সে জন্য দায়সারা গোছের অভিযান-কালচার বন্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় না ব্যবহার করতে সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রচারণা চালানো প্রয়োজন। ফিটনেসবিহীন, পুরনো গাড়ি এবং যথোপযুক্ত আসনের অতিরিক্ত আসন তৈরির কারণে কঠোর শাস্তির বিধান করাও এখন অপরিহার্য। সেইসঙ্গে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে ফিটনেসবিহীন গাড়ি চিহ্নিত করে তা ব্যবহার না করার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ইঁদুর-বিড়াল খেলা নয়, যানবাহন চলাচলের ব্যাপারে উন্নত দেশগুলোর মতো কঠোর না হলে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি থেকে রেহাই পাওয়া যাবে না।

No comments

Powered by Blogger.