চালু হলো ইজিপি-পদ্ধতি বদলে দিলে টেন্ডারবাজি বন্ধ হবে

২০০৮ সালের নির্বাচনে মহাজোটের নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের উল্লেখ ছিল। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে হলে দেশে ই-গভর্ন্যান্স নিশ্চিত করতে হবে। সেই পথে একধাপ এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। চালু হলো ইলেকট্রনিক গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট ব্যবস্থা বা ইজিপি। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইজিপি ওয়েব পোর্টাল উদ্বোধন করেছেন।


ওয়েব পোর্টাল উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বলেছেন, ইজিপি চালুর ফলে টেন্ডার নিয়ে সব ধরনের অনিয়ম বন্ধ হয়ে যাবে। দেশে আর টেন্ডারবাজি থাকবে না। সরকারি ক্রয়ে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে।
বাংলাদেশের সরকারি ক্রয় কার্যক্রমে এডিপির শতকরা ৭৫ ভাগ ব্যয় হয়। এই বিপুল ব্যয়ের মাধ্যমটি তাই স্বচ্ছ থাকা জরুরি। সে কারণেই সরকারি ক্রয়ের জন্য নিজস্ব একটি পোর্টাল বা ওয়েবসাইট থাকা খুব জরুরি ছিল। সরকারি ক্রয় কার্যক্রম পরিচালিত হয় টেন্ডারের মাধ্যমে। এই পোর্টালটি চালুর মাধ্যমে এখন থেকে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত টেন্ডারের সব নথি অনলাইনে সম্পাদন করা যাবে। এই পদ্ধতিটি পুরোপুরি চালু হয়ে গেলে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তালমিলিয়ে চলতে পারবে। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার একটি নীতি হচ্ছে অনলাইন প্রকিউরমেন্ট। বাংলাদেশ ইজিপির মাধ্যমে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার সেই নীতিটিও বাস্তবায়ন করল। এই পোর্টাল উদ্বোধন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটা প্রণিধানযোগ্য।
আগেই বলা হয়েছে, ইজিপি চালুর ফলে দেশে টেন্ডারবাজি আর থাকবে না। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের এই কথাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশে এই টেন্ডারবাজি যেন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে। বিশেষ করে বর্তমান সরকারকে টেন্ডারবাজি বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। সব সরকারের আমলেই ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র ও যুব সংগঠনের নেতা-কর্মীদের টেন্ডাবাজির মহোৎসবে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। দেশের বিভিন্ন এলাকায় টেন্ডার বাঙ্ ছিনতাই থেকে শুরু করে, জোর করে টেন্ডারের কাজ নিয়ে নেওয়াটা যেন রীতিতে পরিণত হয়েছিল। এর একটি বিকল্প বের করা জরুরি ছিল। যেকোনো ক্ষমতাসীন দলের জন্য এটা বিব্রতকর একটি অবস্থার সৃষ্টি করে। সেই বিব্রতকর অবস্থা থেকে ক্ষমতাসীন দল ও সরকারকে রক্ষা করার জন্য একটি বিকল্প ব্যবস্থা জরুরি হয়ে পড়েছিল। এ অবস্থায় ইজিপি চালু হওয়া গুরুত্ব বহন করে। ইজিপি বা ইলেক্ট্রনিক গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট ব্যবস্থা চালু হলে টেন্ডার বাঙ্ ছিনতাই থেকে শুরু করে টেন্ডার শিডিউল জোর করে দখল করে নেওয়ার প্রবণতা একেবারেই বন্ধ হয়ে যাবে। ইজিপি চালু করে সরকার একটি জরুরি ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। অনলাইনে ঠিকাদার রেজিস্ট্রেশন, টেন্ডার আহ্বান, টেন্ডার দাখিল, টেন্ডার উন্মুক্তকরণ, মূল্যায়ন, অনুমোদন ও কার্যাদেশ প্রদানের ব্যবস্থা থাকলে প্রকাশ্য টেন্ডাবাজি থেকে দেশ রক্ষা পাবে। এ ক্ষেত্রে কাগজের শিডিউল ক্রয়ের কোনো সুযোগ থাকবে না। তবে এ প্রক্রিয়া সফল করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হবে। ইজিপি চালুর পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রশিক্ষিত করে তোলাও জরুরি। সরকার এ ব্যাপারেও নিশ্চয় দৃষ্টি দেবে।
যেকোনো ব্যবস্থায় যেখানে অনিয়ম আছে, সেখানে অনিয়মের শেকড়ে হাত দিতে হবে। অনিয়মের মূল জায়গায় আঘাত করতে পারলে অনিয়ম দূর করা সম্ভব। শুধু পদ্ধতি বদলে দিলেই অনেক অনিয়ম দূর করা সম্ভব। ইজিপি তেমনি একটি পদ্ধতি। এটি পুরোপুরি চালু হলে টেন্ডারবাজি অনেকটাই দূর করা সম্ভব।

No comments

Powered by Blogger.