পাকিস্তান যেন বেদখল হয়ে আছে by জাভিদ হুসেইন

পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে আমেরিকান অপারেশনে ওসামা বিন লাদেনকে হত্যার পর এবং সম্প্রতি মেহরান নৌঘাঁটিতে সন্ত্রাসী আক্রমণে বহু মূল্যবান জীবন ও কয়েক বিলিয়ন রুপি মূল্যের অরিয়ন এয়ারক্রাফট ধ্বংস হওয়ার পর সব কিছু দেখে মনে হচ্ছে_পাকিস্তান রাষ্ট্রটি বেদখল হয়ে গেছে।


এ ধারণা আরো বদ্ধমূল হওয়ার কারণ একদিকে একের পর এক বেসরকারি নাগরিকদের ওপর হামলা, সেনাঘাঁটিতে একদিকে সন্ত্রাসী হামলা, অন্যদিকে আমাদের উপজাতি এলাকায় অব্যাহতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলা ও অব্যাহতভাবে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আরো অধিক সক্রিয় হওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের চাপ প্রয়োগ। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন পাকিস্তানের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অনেক ত্যাগের কথা বলেছেন। কিন্তু একই সঙ্গে তিনি উল্লেখ করেছেন যে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে এখনো অনেক কাজ বাকি রয়ে গেছে। ইসলামাবাদে তিনি সংবাদ সম্মেলনে এ কথাও বলেছেন যে পাকিস্তানের নেতারা তাঁকে নিশ্চিত করেছেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আরো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ পাকিস্তান নেবে। এভাবেই পাকিস্তানি নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখা হয়েছে। অবশ্যই এ চাপের পাশাপাশি পাকিস্তানের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন এবং জাতীয় ঐক্য ও আফগানিস্তানে শান্তির প্রতি সহযোগিতার প্রতিশ্রুতিও রয়েছে।
পাকিস্তান দেশটির ভঙ্গুর নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং বাইরের কঠিন চাপ আমাদের বলে দেয় যে দেশের স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা ও অগ্রগতি সর্বোচ্চ হুমকির মুখে। জনগণ ও সরকারকে অবশ্যই এ আতঙ্ক থেকে মুক্ত হওয়ার একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে হবে। এ আতঙ্ক সমাজকে কুরে কুরে খাচ্ছে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ব্যাপারে কোনো সংশয় নেই। রাজনৈতিক স্বার্থে যে গোষ্ঠীই সহিংসতাকে ব্যবহার করুক, তাদের কঠিন হাতে দমন করতে হবে। যারা সাধারণ মানুষের ওপর হামলা করছে, জাতীয় সম্পদ ধ্বংস করছে তারা পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় শত্রু। একই কথা প্রযোজ্য ওই সব গোষ্ঠীর ব্যাপারেও, যারা পাকিস্তানের মাটিকে ব্যবহার করে অন্য দেশে সন্ত্রাসী হামলা করার উদ্দেশে। বর্তমান এ চাপের পরিস্থিতিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে এবং একে প্রশ্রয় দেওয়া আত্মঘাতী কার্যক্রম ছাড়া আর কিছু নয়। এ কথাও সত্যি, পাকিস্তানের সরকারও একই রকম যেকোনো ধরনের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি এ কথাও সত্যি যে পাকিস্তানের মাটিতেই অনেক তালেবান নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন, যাঁরা গোপনে এখানে বসবাস করে আসছিলেন। তার বড় উদাহরণ যুক্তরাষ্ট্রের অপারেশনে নিহত ওসামা বিন লাদেন, যাঁকে পাকিস্তানের গোয়েন্দারা চিহ্নিত করতে পারেননি। এ কথাও সত্যি যে বাইরের দেশের অনেক সন্ত্রাসী এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সন্ধান পাওয়া গেছে, যাদের পাকিস্তানে কোনো গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। সুস্পষ্টভাবে এ কথা বলা যায় যে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিশেষ করে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দুঃখজনকভাবে ব্যর্থ হয়েছে সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করতে। এটা পরিষ্কার নয় যে এই অদক্ষতার জন্য সরকারের কোন স্তর দায়ী, নাকি সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আমাদের গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলো আপস করছে, নাকি আমাদের গোয়েন্দাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে একটি অংশের প্রতি নজর না দেওয়া, নাকি এ তিনটি বিষয়ই দায়ী।

পাকিস্তানের দ্য ন্যাশন পত্রিকায় প্রকাশিত
ভাষান্তর : মহসীন হাবিব

No comments

Powered by Blogger.