আর কত ভুয়া ডাক্তার? by একরামুল হক শামীম

সফদার ডাক্তার'কে আমরা চিনি কবি হোসনে আরার কবিতা থেকে। এখন নতুন করে চিনছি আরেক রকমের ডাক্তারদের। এই শ্রেণীর ডাক্তারের কোনো চিকিৎসা সনদ নেই। কিন্তু তারা চিকিৎসা প্রদান করে যাচ্ছেন। এমনকি জটিল অপারেশনও করছেন। পত্রিকায় প্রকাশিত কয়েকটি সংবাদ শিরোনাম তুলে ধরা যাক : মোহাম্মদপুরে ভুয়া ডাক্তার গ্রেফতার,


কাশিয়ানীতে ভুয়া ডাক্তার গ্রেফতার, গুলশানে ভুয়া ডাক্তার গ্রেফতার, বাউফলে ভুয়া ডাক্তারসহ চারজন গ্রেফতার, বরিশালে চার ভুয়া ডাক্তার গ্রেফতার, ওষুধের দোকানি থেকে দেড় লাখ টাকা বেতনের চিকিৎসক। এসব সংবাদে উঠে এসেছে কীভাবে ভুয়া ডাক্তারদের দ্বারা প্রতারিত হচ্ছে রোগীরা।
পাবনার চাটমোহর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের এ. ওহাব খান কাজ শুরু করেছিলেন এলাকায় একটি ওষুধের দোকান দেওয়ার মাধ্যমে। সেখান থেকেই এক সময় তিনি হয়ে যান স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ। এখানেই ঘটনার শেষ নয়। তিনি ঢাকার সিকদার উইমেন্স মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে চাকরিও পেয়ে যান। বেতন মাসে দেড় লাখ টাকা। যিনি নিজেই ভুয়া ডাক্তার তিনি কীভাবে শিক্ষার্থীদের মেডিকেল সায়েন্স শিখাচ্ছেন_ তা প্রশ্নবিদ্ধ। ওহাব খানের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। কেউ বলছেন, তিনি অষ্টম শ্রেণী পাস। আবার কেউ বলছেন, তিনি আলিম পাস। গুলশানের ঘটনাটি গত জুন মাসের। র‌্যাবের সহযোগিতায় ভ্রাম্যমাণ আদালত গুলশান ১ নম্বর সড়কের গুলশান শপিং সেন্টারের দ্বিতীয় তলায় প্রয়াত ডাক্তার মোহাম্মদ কামাল হোসেনের চেম্বার থেকে ভুয়া ডাক্তার এমরান হোসেনকে গ্রেফতার করে। এমরান তার বাবা কামাল হোসেনের নাম ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে রোগী দেখে আসছিলেন। এমরান হোসেনের জন্য বিষয়টা এমন ছিল যে, উত্তরাধিকার সূত্রে বাবার চিকিৎসা সনদও তিনি পেয়ে গেছেন। এর আগে ভুয়া ডাক্তার শনাক্ত হওয়ার সাম্প্রতিক ঘটনাটি পাবনা জেলার। পাবনার বিভিন্ন উপজেলায় কয়েক বছর ধরে নিজেকে নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন হিসেবে পরিচয় দিয়ে আসছিলেন আমিনুল ইসলাম শান্ত। কিন্তু অবশেষে জানা গেল তিনি দাখিল পাস করা সাহেব আলী। ভুয়া সনদ ব্যবহার করে তিনি ডাক্তার সেজে বসেছিলেন। তার ব্যবহৃত প্রেসক্রিপশনে যোগ্যতা হিসেবে এমবিবিএস (ঢাকা), বিসিএস (স্বাস্থ্য), এফসিপিএস (ইএনটি কোর্স), অ্যাডভান্সড ট্রেইন্ড ইন নাক-কান-গলা (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়), প্রাক্তন আবাসিক মেডিকেল অফিসার, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কালিহাতী, টাঙ্গাইল; প্রাক্তন এমও পিজি হাসপাতাল ইত্যাদি লেখা রয়েছে। এভাবে একের পর এক ভুয়া ডাক্তার ধরা পড়ার ঘটনা শঙ্কা জাগায়। এভাবে চলতে থাকলে মানুষ ডাক্তারদের প্রতি আস্থাহীন হয়ে পড়বে। এতে স্বাস্থ্যসেবায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। অবস্থা এমন যে, এখন কোনো ডাক্তারের চেম্বারে গিয়ে প্রথমেই তার সার্টিফিকেট দেখতে হবে। তারপর সংশ্লিষ্ট মেডিকেল কলেজে ফোন করে খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হতে হবে। কিন্তু ডাক্তার প্রকৃতই ডাক্তার কি-না এমন নিশ্চয়তা যদি নিতে হয় তাহলে তো বিড়ম্বনার শেষ নেই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখা উচিত। ভুয়া ডাক্তার শনাক্ত করে শাস্তি প্রদান ও জনগণকে সচেতন করার দায়িত্ব এ দুটি প্রতিষ্ঠানকেই সবার আগে নিতে
হবে।
 

No comments

Powered by Blogger.