জনপ্রশাসন-স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সামরিক বাহিনী তলব by আলী ইমাম মজুমদার
পৃথিবীর যেকোনো দেশে সামরিক বাহিনীর সৃজন ও বিকাশ ঘটে মূলত দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রয়োজনে। বহিঃশত্রুর আক্রমণ কিংবা বিচ্ছিন্নতাবাদের প্রচেষ্টা প্রতিহত করার মাধ্যমে তারা এ দায়িত্ব পালন করে। এ ছাড়া গুরুতর জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলায়ও সামরিক বাহিনীকে প্রায় দেশেই ব্যবহার করা হয়।
তদুপরি কোনো কোনো ক্ষেত্রে জনশৃঙ্খলার বড় ধরনের অবনতি হলেও বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় সামরিক বাহিনী তলবের অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে জাতীয় নির্বাচন চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় সামরিক বাহিনীর ব্যবহারের দৃষ্টান্তও সুপ্রতিষ্ঠিত। এর প্রধান কারণ জাতীয় নির্বাচন অনেক বড় কলেবরে একই দিনে কিংবা ভারতের মতো বৃহৎ দেশে ৮-১০ দিনে অনুষ্ঠিত হয়। এ ধরনের ব্যাপকভিত্তিক কার্যক্রম চলাকালে মূলত বেসামরিক প্রশাসনের পক্ষে জনশৃঙ্খলা রক্ষা সামর্থ্যের বাইরে চলে যায়। তাই তার সামর্থ্য বৃদ্ধির জন্য সামরিক বাহিনী তলবের যৌক্তিকতা কখনো তেমন প্রশ্নবিদ্ধ হয়নি।
তবে যে ধরনের কাজে বেসামরিক প্রশাসনের পর্যাপ্ত সামর্থ্য রয়েছে, সেখানে সামরিক বাহিনী তলবের যৌক্তিকতা সংশয়ের সৃষ্টি করে। তেমনি একটি কাজ আসন্ন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। দেশের সমগ্র জনগোষ্ঠীর অতি ক্ষুদ্র একটি অংশ এ করপোরেশন এলাকার ভোটার। এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সূচনা থেকেই একাধিক প্রার্থী সামরিক বাহিনী নিয়োগের দাবি করতে থাকেন। আর নির্বাচন কমিশন প্রথম দিকে নেতিবাচক অবস্থান নিলেও শেষ পর্যন্ত এ দাবি বিবেচনায় নেয়। সন্দেহ নেই, কমিশনের এ সিদ্ধান্ত যথার্থ। তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কিছুদিন আগের একটি বক্তব্যে দেখেছিলাম, অন্য অনেকের মতোই তিনিও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সামরিক বাহিনী নিয়োগের প্রস্তাবে বিব্রত এবং নিতান্ত অনিচ্ছার সঙ্গেই ক্ষেত্রবিশেষে সামরিক বাহিনী তলবের নির্দেশ দিয়েছেন। এখানে উল্লেখ করা আবশ্যক, ইতিপূর্বেও স্থানীয় নির্বাচনে ক্ষেত্রবিশেষে সামরিক বাহিনী নিয়োগ করা হয়েছে।
তাহলে প্রশ্ন থাকে, বেসামরিক প্রশাসনের পর্যাপ্ত সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও সামরিক বাহিনী নিয়োগের দাবি কেন আসছে, আর কেনই বা তা বিবেচনায় নিতে হয়? নির্বাচন কমিশনকে এসব নির্বাচন পরিচালনায় মূলত জনপ্রশাসনের মাঠপর্যায়ে দুটো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান, জেলা প্রশাসন ও পুলিশের সহায়তা নিতে হয়। এ ধরনের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জনশৃঙ্খলা রক্ষার দক্ষতা ও জনবলের ঘাটতি তাদের আদৌ নেই। কিন্তু অকপটে যেটা বলা চলে, একটি আস্থার সংকটে এ পরিস্থিতি ক্রমবর্ধমান রূপ নিচ্ছে। মূলত দেখা যায়, যারা রাষ্ট্রক্ষমতার বিপরীতে অবস্থান করছে, তাদের তরফ থেকেই সামরিক বাহিনী তলবের দাবি আসে। ধরেই নিতে হয়, তারা জনপ্রশাসনকে যথেষ্ট আস্থায় নিতে পারছে না। আর এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে প্রশাসন ও পুলিশের জেলা/উপজেলা পর্যায়ের কিছু অতি উৎসাহী কর্মকর্তার, যে সরকার ক্ষমতায় থাকে, তার স্থানীয় নেতৃত্বকে তোষণনীতির জন্য। যে দল ক্ষমতায় থাকে তাদের বেশ কিছু স্থানীয় নেতাও এই অবস্থার সৃষ্টির জন্য বড় রকম দায়ী। ওপরে বর্ণিত কর্মকর্তারা তাঁদের প্রভাববলয়কে কিছুটা উপেক্ষা করলেই এসব নেতা কোনো কোনো ক্ষেত্রে সংহারমূর্তি ধারণ করেন। তাই কিছু কর্মকর্তা অনিচ্ছুক হয়েও এ ধরনের তোষণনীতির মিছিলে শরিক হন। আবার মর্যাদাসম্পন্ন ব্যতিক্রমও উভয় ক্ষেত্রেই লক্ষ করা যায়। তবে সংখ্যাটি আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পাচ্ছে।
অতি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে আন্তরিকতার কোনো অভাব ছিল, এটা লক্ষণীয় হয়নি। জোরজবরদস্তি করে, সরকার-সমর্থক প্রার্থীদের জয়ী করানোর কোনো নির্দেশ কেন্দ্রীয়ভাবে থাকলে; ভৈরব বাজার, নকলা, নালিতাবাড়ী, শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ ও কচুয়ার মতো পৌরসভায় সরকারদলীয় প্রার্থীদের পরাজিত হওয়ার কথা নয়। নির্বাচন কমিশন সব সামর্থ্য নিয়ে ব্যাপক প্রচেষ্টা আর সরকারের সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সরকার-সমর্থক কিছু স্থানীয় নেতা আর তাঁদের সন্তুষ্টি বিধানে তৎপর কিছু কর্মকর্তার আচরণ একটি সফল নির্বাচনের ক্রান্তিলগ্নে কিছুটা হলেও কালিমালেপন করেছে। এ ধরনের নেতা আর কর্মকর্তা বিগত বেশ কিছুকাল ধরে আমাদের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাটি পঙ্কিল করে তুলছে। ক্ষতির আপাতত প্রধান শিকার হয়েছে জনপ্রশাসন। তাদের ওপর আস্থার সংকট প্রতিষ্ঠানগুলোর মর্যাদা ও গ্রহণযোগ্যতা ক্রমান্বয়ে খাটো করছে। আর চূড়ান্ত ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে সরকার। তাকে অতি ছোট বেসামরিক কাজেও সেনা তলব করতে হয়। সামগ্রিক বিবেচনায় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
আমরা লক্ষ করি, কোনো অসাংবিধানিক শক্তি যাতে রাষ্ট্রক্ষমতা নিতে না পারে, সে বিষয়ে সব রাজনৈতিক দল একই সুরে কথা বলে। তবে সে ধরনের প্রচেষ্টা রোধ করতে হলে বেসামরিক প্রশাসনের সামর্থ্য বৃদ্ধি তথা ছোটখাটো কাজ যেমন—স্থানীয় সরকার নির্বাচন বা চট্টগ্রাম বন্দরের শৃঙ্খলা রক্ষা ইত্যাদি কাজে কথায় কথায় সামরিক বাহিনী তলবের প্রয়োজনীয়তা বন্ধ করতে হবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে লক্ষণীয়, আন্তরিকভাবে সে প্রচেষ্টা কোনো রাজনৈতিক দলই ক্ষমতায় থাকার সময় গ্রহণ করে না। মাঠপর্যায়ের ঘটনাবলি শক্ত কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে শুধরানো অসম্ভব কোনো কাজও নয়। তবে ধারাবাহিকভাবে বিপরীতটাই ঘটে চলছে। জনপ্রশাসনের ওপর আস্থার সংকটই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা চালু করার অন্যতম কারণ ছিল। আর ২০০৬ সালের শেষে সে ব্যবস্থাও হুমকির মুখোমুখি এবং ২০১১ সালে বিলুপ্তি ঘটে। তবে ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত। অথচ জনপ্রশাসন যদি সবার আস্থাভাজন থাকে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তাই অনেকাংশে ফুরিয়ে যাবে।
গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাকে মজবুত ও টেকসই করতে হলে বেসামরিক প্রশাসনকে গ্রহণযোগ্য ও কার্যকর করতে হবে। তার ভাবমূর্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও জোরদারের জন্য সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে সবচেয়ে বেশি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও সাময়িক লাভ-ক্ষতি বিবেচনায় না নিয়ে দেশের সামগ্রিক স্বার্থে এবং তাদের প্রতিষ্ঠানের ওপর জনগণের আস্থা ও মর্যাদা বৃদ্ধির প্রয়োজনে নিবেদিত থাকা দরকার। সে ক্ষেত্রে তাদের সামর্থ্যে থাকা কাজ করতে সামরিক বাহিনী তলবের আবশ্যকতাই থাকবে না। আসবে না এ ধরনের দাবিও। দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হবে গণতন্ত্রের ভিত।
আলী ইমাম মজুমদার: সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে জাতীয় নির্বাচন চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় সামরিক বাহিনীর ব্যবহারের দৃষ্টান্তও সুপ্রতিষ্ঠিত। এর প্রধান কারণ জাতীয় নির্বাচন অনেক বড় কলেবরে একই দিনে কিংবা ভারতের মতো বৃহৎ দেশে ৮-১০ দিনে অনুষ্ঠিত হয়। এ ধরনের ব্যাপকভিত্তিক কার্যক্রম চলাকালে মূলত বেসামরিক প্রশাসনের পক্ষে জনশৃঙ্খলা রক্ষা সামর্থ্যের বাইরে চলে যায়। তাই তার সামর্থ্য বৃদ্ধির জন্য সামরিক বাহিনী তলবের যৌক্তিকতা কখনো তেমন প্রশ্নবিদ্ধ হয়নি।
তবে যে ধরনের কাজে বেসামরিক প্রশাসনের পর্যাপ্ত সামর্থ্য রয়েছে, সেখানে সামরিক বাহিনী তলবের যৌক্তিকতা সংশয়ের সৃষ্টি করে। তেমনি একটি কাজ আসন্ন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। দেশের সমগ্র জনগোষ্ঠীর অতি ক্ষুদ্র একটি অংশ এ করপোরেশন এলাকার ভোটার। এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সূচনা থেকেই একাধিক প্রার্থী সামরিক বাহিনী নিয়োগের দাবি করতে থাকেন। আর নির্বাচন কমিশন প্রথম দিকে নেতিবাচক অবস্থান নিলেও শেষ পর্যন্ত এ দাবি বিবেচনায় নেয়। সন্দেহ নেই, কমিশনের এ সিদ্ধান্ত যথার্থ। তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কিছুদিন আগের একটি বক্তব্যে দেখেছিলাম, অন্য অনেকের মতোই তিনিও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সামরিক বাহিনী নিয়োগের প্রস্তাবে বিব্রত এবং নিতান্ত অনিচ্ছার সঙ্গেই ক্ষেত্রবিশেষে সামরিক বাহিনী তলবের নির্দেশ দিয়েছেন। এখানে উল্লেখ করা আবশ্যক, ইতিপূর্বেও স্থানীয় নির্বাচনে ক্ষেত্রবিশেষে সামরিক বাহিনী নিয়োগ করা হয়েছে।
তাহলে প্রশ্ন থাকে, বেসামরিক প্রশাসনের পর্যাপ্ত সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও সামরিক বাহিনী নিয়োগের দাবি কেন আসছে, আর কেনই বা তা বিবেচনায় নিতে হয়? নির্বাচন কমিশনকে এসব নির্বাচন পরিচালনায় মূলত জনপ্রশাসনের মাঠপর্যায়ে দুটো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান, জেলা প্রশাসন ও পুলিশের সহায়তা নিতে হয়। এ ধরনের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জনশৃঙ্খলা রক্ষার দক্ষতা ও জনবলের ঘাটতি তাদের আদৌ নেই। কিন্তু অকপটে যেটা বলা চলে, একটি আস্থার সংকটে এ পরিস্থিতি ক্রমবর্ধমান রূপ নিচ্ছে। মূলত দেখা যায়, যারা রাষ্ট্রক্ষমতার বিপরীতে অবস্থান করছে, তাদের তরফ থেকেই সামরিক বাহিনী তলবের দাবি আসে। ধরেই নিতে হয়, তারা জনপ্রশাসনকে যথেষ্ট আস্থায় নিতে পারছে না। আর এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে প্রশাসন ও পুলিশের জেলা/উপজেলা পর্যায়ের কিছু অতি উৎসাহী কর্মকর্তার, যে সরকার ক্ষমতায় থাকে, তার স্থানীয় নেতৃত্বকে তোষণনীতির জন্য। যে দল ক্ষমতায় থাকে তাদের বেশ কিছু স্থানীয় নেতাও এই অবস্থার সৃষ্টির জন্য বড় রকম দায়ী। ওপরে বর্ণিত কর্মকর্তারা তাঁদের প্রভাববলয়কে কিছুটা উপেক্ষা করলেই এসব নেতা কোনো কোনো ক্ষেত্রে সংহারমূর্তি ধারণ করেন। তাই কিছু কর্মকর্তা অনিচ্ছুক হয়েও এ ধরনের তোষণনীতির মিছিলে শরিক হন। আবার মর্যাদাসম্পন্ন ব্যতিক্রমও উভয় ক্ষেত্রেই লক্ষ করা যায়। তবে সংখ্যাটি আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পাচ্ছে।
অতি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে আন্তরিকতার কোনো অভাব ছিল, এটা লক্ষণীয় হয়নি। জোরজবরদস্তি করে, সরকার-সমর্থক প্রার্থীদের জয়ী করানোর কোনো নির্দেশ কেন্দ্রীয়ভাবে থাকলে; ভৈরব বাজার, নকলা, নালিতাবাড়ী, শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ ও কচুয়ার মতো পৌরসভায় সরকারদলীয় প্রার্থীদের পরাজিত হওয়ার কথা নয়। নির্বাচন কমিশন সব সামর্থ্য নিয়ে ব্যাপক প্রচেষ্টা আর সরকারের সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সরকার-সমর্থক কিছু স্থানীয় নেতা আর তাঁদের সন্তুষ্টি বিধানে তৎপর কিছু কর্মকর্তার আচরণ একটি সফল নির্বাচনের ক্রান্তিলগ্নে কিছুটা হলেও কালিমালেপন করেছে। এ ধরনের নেতা আর কর্মকর্তা বিগত বেশ কিছুকাল ধরে আমাদের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাটি পঙ্কিল করে তুলছে। ক্ষতির আপাতত প্রধান শিকার হয়েছে জনপ্রশাসন। তাদের ওপর আস্থার সংকট প্রতিষ্ঠানগুলোর মর্যাদা ও গ্রহণযোগ্যতা ক্রমান্বয়ে খাটো করছে। আর চূড়ান্ত ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে সরকার। তাকে অতি ছোট বেসামরিক কাজেও সেনা তলব করতে হয়। সামগ্রিক বিবেচনায় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
আমরা লক্ষ করি, কোনো অসাংবিধানিক শক্তি যাতে রাষ্ট্রক্ষমতা নিতে না পারে, সে বিষয়ে সব রাজনৈতিক দল একই সুরে কথা বলে। তবে সে ধরনের প্রচেষ্টা রোধ করতে হলে বেসামরিক প্রশাসনের সামর্থ্য বৃদ্ধি তথা ছোটখাটো কাজ যেমন—স্থানীয় সরকার নির্বাচন বা চট্টগ্রাম বন্দরের শৃঙ্খলা রক্ষা ইত্যাদি কাজে কথায় কথায় সামরিক বাহিনী তলবের প্রয়োজনীয়তা বন্ধ করতে হবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে লক্ষণীয়, আন্তরিকভাবে সে প্রচেষ্টা কোনো রাজনৈতিক দলই ক্ষমতায় থাকার সময় গ্রহণ করে না। মাঠপর্যায়ের ঘটনাবলি শক্ত কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে শুধরানো অসম্ভব কোনো কাজও নয়। তবে ধারাবাহিকভাবে বিপরীতটাই ঘটে চলছে। জনপ্রশাসনের ওপর আস্থার সংকটই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা চালু করার অন্যতম কারণ ছিল। আর ২০০৬ সালের শেষে সে ব্যবস্থাও হুমকির মুখোমুখি এবং ২০১১ সালে বিলুপ্তি ঘটে। তবে ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত। অথচ জনপ্রশাসন যদি সবার আস্থাভাজন থাকে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তাই অনেকাংশে ফুরিয়ে যাবে।
গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাকে মজবুত ও টেকসই করতে হলে বেসামরিক প্রশাসনকে গ্রহণযোগ্য ও কার্যকর করতে হবে। তার ভাবমূর্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও জোরদারের জন্য সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে সবচেয়ে বেশি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও সাময়িক লাভ-ক্ষতি বিবেচনায় না নিয়ে দেশের সামগ্রিক স্বার্থে এবং তাদের প্রতিষ্ঠানের ওপর জনগণের আস্থা ও মর্যাদা বৃদ্ধির প্রয়োজনে নিবেদিত থাকা দরকার। সে ক্ষেত্রে তাদের সামর্থ্যে থাকা কাজ করতে সামরিক বাহিনী তলবের আবশ্যকতাই থাকবে না। আসবে না এ ধরনের দাবিও। দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হবে গণতন্ত্রের ভিত।
আলী ইমাম মজুমদার: সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
No comments