দর্শনীয় ময়মনসিংহ by পাশা শাহ

বাংলাদেশের অন্যতম নদ ব্রহ্মপুত্রের তীরে অবস্থিত ছিমছাম পরিচ্ছন্ন শহর ময়মনসিংহ। নাগরিক ক্লান্তি আর জরা এখনও তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। ঐতিহাসিক এবং অধুনা স্থাপনাসহ বিভিন্ন কারণে ময়মনসিংহ বিখ্যাত। ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে রাজবাড়ী, ঐতিহাসিক বীরাঙ্গনা ছকিনার সমাধি এবং অদূরে মুক্তাগাছা রাজবাড়ী।


দেশের অন্যতম বৃহৎ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহে অবস্থিত। এ ছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং মেডিকেল কলেজ ময়মনসিংহকে সমৃদ্ধ করেছে।
রাজধানীর দূষণ আর জ্যাম অতিক্রম করে সকাল সাড়ে ১০টায় পেঁৗছলাম মাসকান্দা বাসস্ট্যান্ডে। সকালের নাস্তা শেষ করে অটোবাইকে রওনা হলাম নদীতীরের উদ্দেশে। নদীর তীর ঘেঁষে পর্যটকদের জন্য গড়ে উঠেছে মনোরম পার্ক। পার্কে দেখা গেল অসংখ্য প্রকৃতিপ্রেমীর আনাগোনা। এরই মধ্যে দেখা মিলল কয়েকজন বিদেশির, যারা প্রকৃতিকে মনোযোগ সহকারে ক্যামেরাবন্দি করছেন। এককালের প্রমত্তা ব্রহ্মপুত্র এখন অনেকটাই শান্ত। তবুও বর্ষার আগমনে নদীর এখন পূর্ণ যৌবন। দু'ধারে ঘন কাশবন। বর্ষার শেষে শরৎ এলেই ফুলে ফুলে সাদা হয়ে যাবে নদীর দু'কূল। নদীর ওপরে সুবিশাল আকাশে অনিন্দ্যসুন্দর মেঘের আনাগোনা। ভরা নদীতে চলছে অসংখ্য পালতোলা নৌকা। এ দৃশ্য অন্য রকম।
ব্রহ্মপুত্রের তীরে রয়েছে বেশ আধুনিক এবং তথ্যবহুল শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন গ্যালারি। সপ্তাহের বৃহস্পতিবার ছাড়া প্রতিদিন গ্যালারি দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। গ্যালারিতে জয়নুল আবেদিনের আঁকা চিত্রশিল্পসহ বেশকিছু দুর্লভ আলোকচিত্র প্রদর্শিত হচ্ছে। এ ছাড়া রয়েছে জয়নুল আবেদিনের ব্যবহৃত বিভিন্ন দ্রব্য এবং তৈজসপত্র। গ্যালারি দেখা শেষ করে নদীর তীর ধরে হেঁটে রওনা হলাম আদালত ভবনের দিকে। আদালত ভবনের পাশেই রাজবাড়ী অবস্থিত যা বর্তমানে মহিলা টিচার্স ট্রেনিং সেন্টার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এক সময়ের বিখ্যাত নাটক 'অয়োময়'-এর এ বাড়িতেই শুটিং হয়েছিল। প্রাচীন স্থাপত্যকলায় নির্মিত বাড়িটি বেশ বড় এবং দৃষ্টিনন্দন। বাড়ির প্রবেশদ্বারে শ্বেত নারীমূর্তি দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করবে।
আদালত ভবনের সামনে থেকে মুক্তাগাছা যাওয়ার বাসে উঠলাম। এছাড়া টাউন হল থেকেও টেম্পোতে চড়ে মুক্তাগাছায় যাওয়া যাবে। মুক্তাগাছা বাজারে নেমে হেঁটে রাজবাড়ীতে যাওয়া যায়। সরাসরি গাড়ি নিয়েও যাওয়া যাবে। রাজবাড়ীর প্রধান ফটকের পাশে আছে শত শত বছরের পুরনো মন্দির। এটি বহুবার সংস্কারের পর বর্তমান আকার ধারণ করেছে। এ মন্দিরে এখনও পূজা-অর্চনা হয়, পুরোহিত বসে।
মুক্তাগাছায় এলেই একটি বিখ্যাত খাবারের নাম শুনবেন। ভোজনরসিকদের জন্য এখানে রয়েছে মুক্তাগাছার ঐতিহাসিক মণ্ডা। রাজবাড়ীর সামনের বাজারেই পাবেন আদি ও আসল দাবিদার মণ্ডার দোকান। মণ্ডার দোকানের মালিক জানান, তাদের প্রতিষ্ঠান রমেন্দ্রনাথ পাল অ্যান্ড ব্রার্দাসই আদি মণ্ডার দোকান। ১৮২৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এ দোকানটির বর্তমান মালিক মূল মালিকের পঞ্চম বংশধর। মুক্তাগাছায় এসে যদি মণ্ডা চেখে দেখা না হয় তাহলে পুরো ভ্রমণটাই অপূর্ণ থেকে যাবে।
মুক্তাগাছা থেকে সরাসরি ঢাকার বাস আছে। মণ্ডার দোকান দেখে যখন বের হলাম তখন সন্ধ্যা ৬টা বেজে গেছে। বাসস্ট্যান্ডে আসতেই দেখলাম বাস ছাড়ার অপেক্ষায় আছে। টিকিট কেটে উঠে পড়লাম। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ বাস ছেড়ে দিল ঢাকার উদ্দেশে। শেষ বিকেলের আকাশটা বেশ রঙিন হয়ে উঠেছিল। নদীর ওপর বিকেলের আকাশ দেখা হলো না। তবে এমন সুন্দর জায়গায় একদিনের ভ্রমণে অনেক কিছুই অসম্পূর্ণ থেকে যায়। তবুও রাজধানীর টানে ময়মনসিংহকে পেছনে ফেলে আমাদের বাস সবেগে ছুটে চলল ঢাকার দিকে।
 

No comments

Powered by Blogger.