পবিত্র কোরআনের আলো-ইসলাম রক্ষায় সর্বাত্মক যুদ্ধে পক্ষ-বিপক্ষ চিহ্নিত করা হয়েছে

৯০. ইল্লাল্লাযীনা ইয়াসিলূনা ইলা ক্বাওমিম বাইনাকুম ওয়া বাইনাহুম মীছাক্বুন আও জাঊকুম হাসিরাত সুদূরুহুম আইঁ ইউক্বাতিলূকুম আও ইউক্বাতিলূ ক্বাওমাহুম; ওয়া লাও শাআল্লাহু লাসাল্লাত্বাহুম 'আলাইকুম ফালাক্বাতালূকুম; ফা-ইনি'তাযালূকুম ফালাম ইউক্বাতিলূকুম ওয়া আল্ক্বাও ইলাইকুমুস সালামা; ফামা জা'আলাল্লাহু লাকুম 'আলাইহিম সাবীলা।


৯১. সাতাজিদূনা আখারীনা ইউরীদূনা আইঁ ইয়্যা'মানূকুম ওয়া ইয়া'মানূ ক্বাওমাহুম; কুল্লামা রুদ্দূ ইলাল ফিত্নাতি উর্কিসূ ফীহা; ফা-ইল্লাম ইয়া'তাযিলূকুম ওয়া ইউল্ক্বূ ইলাইকুমুস সালামা ওয়া ইয়াকুফ্ফূ আইদিয়াহুম ফাখুযূহুম ওয়াক্বতুলূহুম হাইছু ছাকি্বফ্তুমূহুম; ওয়া উলায়িকুম জা'আল্না লাকুম 'আলাইহিম সুল্ত্বানাম মুবীনা।
[সুরা : আন-নিসা, আয়াত : ৯০-৯১]
অনুবাদ
৯০. যারা তোমাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ কোনো সম্প্রদায়ের সঙ্গে এসে মিলিত হয়, তাদের বিষয়টা ভিন্ন। আবার যারা তোমাদের সামনে এমন মানসিক অবস্থায় এসে হাজির হয় যে, তারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত নয় এবং তাদের স্বজাতির বিরুদ্ধেও যুদ্ধ করতে প্রস্তুত নয়, তাদের বিষয়টাও ভিন্ন। আল্লাহ তায়ালা যদি চাইতেন, তাহলে তোমাদের ওপর এদের ক্ষমতাবান করে দিতে পারতেন। সেই অবস্থায় তারা অবশ্যই তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করত। অতএব, এরা যদি তোমাদের কাছ থেকে দূরে থাকে, অর্থাৎ লড়াই থেকে বিরত থাকে এবং তোমাদের কাছে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বা সন্ধির প্রস্তাব পাঠায়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কোনো যুদ্ধাভিযানের অনুমোদন আল্লাহ দিতে পারেন না।
৯১. আরেক দলকে তোমরা পাবে, যারা তোমাদের দিক থেকে শান্তি ও নিরাপত্তা চায়, অনুরূপভাবে তাদের স্বজাতির কাছ থেকেও শান্তি ও নিরাপত্তা চায়। কিন্তু যখনই কোনো কলহ-বিবাদ সৃষ্টির পরিবেশ সামনে আসে, তখনই দেখা যায়, তারা এতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এরা যদি তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা থেকে বিরত না হয় এবং কোনো সন্ধির প্রস্তাব তোমাদের কাছে পেশ না করে অথবা নিজেদের অস্ত্র সংবরণ না করে, তাহলে তাদের তোমরা যেখানেই পাবে, সেখানেই গ্রেপ্তার করবে এবং যুদ্ধরত অবস্থায় হত্যা করবে। এরা হচ্ছে সেসব লোক, যাদের ওপর আমি তোমাদের সুস্পষ্ট কর্তৃত্ব দান করেছি।
ব্যাখ্যা
আগের আয়াতে অবাধ্য কাফিরদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। যেখানেই তাদের পাওয়া যায়, সেখানেই হত্যা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এসব আয়াতেও বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, কাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া উচিত এবং কাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা উচিত নয়। কাফিররা যেভাবে চারদিক থেকে মুসলমানদের গলা টিপে ধরার কৌশল অবলম্বন করেছে, তাতে কাফিরদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের যুদ্ধ করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছিল। ৯০ নম্বর আয়াতে সবিস্তারে বলা হয়েছে, এই যুদ্ধ-পরিস্থিতির মধ্যেও কাকে কাকে যুদ্ধের আওতার বাইরে রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই বলা হয়েছে, সন্ধিচুক্তিভুক্ত কোনো সম্প্রদায়ের শরণাপন্ন বা আশ্রিতদের কথা। আর বলা হয়েছে, যারা স্বীয় সম্প্রদায়ের পক্ষ হয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে রাজি নয় এবং স্বীয় সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতেও রাজি নয়। এ ছাড়া যারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে রাজি নয়, বরং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য সন্ধির প্রস্তাব পাঠায়। এ রকম অবস্থায় এসব ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ না হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
৯১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে সেসব লোকের কথা, যারা প্রকৃতপক্ষে মুনাফিক ও বহুরূপী। তারা মুখে মুখে শান্তি ও নিরাপত্তা চায়, কিন্তু যখনই কলহ-বিবাদের কোনো পরিবেশ সৃষ্টি হয়, তখনই গোলযোগ সৃষ্টির জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে। এরা যতক্ষণ যুদ্ধ থেকে বিরত না হবে কিংবা সন্ধিচুক্তি না করবে অথবা অস্ত্র সংবরণ না করবে, ততক্ষণ তাদের যেখানেই পাওয়া যাবে, সেখানেই গ্রেপ্তার করতে হবে বা যুদ্ধরত অবস্থায় হত্যা করতে হবে। সন্ধিচুক্তি করার পর যারা চুক্তি ভঙ্গ করেছে, তাদের বিরুদ্ধেও অনুরূপ কঠোর ব্যবস্থাই গ্রহণ করতে হবে। অতীতের খাতির-পরিচয়ের সূত্র ধরে এদের কোনো রকম ছাড় দেওয়া যে উচিত হবে না, তাও এই আয়াতে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.