গাদ্দাফির মৃত্যু-আরব নবজাগরণের প্রেক্ষিতে লিবিয়া by এম সাখাওয়াত হোসেন
মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার আরব দেশগুলো এক রক্তাক্ত অধ্যায়ের মধ্য দিয়ে পরিবর্তিত হচ্ছে। যুদ্ধ, রক্ত আর ধ্বংসের মধ্য দিয়ে সূচিত পরিবর্তনের ধারা অব্যাহত রয়েছে। উত্তর আফ্রিকার এই ধাক্কা তেলসমৃদ্ধ উপসাগরীয় দেশগুলোতে লেগেছে।
সীমিত পরিসরে হলেও রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের মধ্যে এখনো রয়েছে উত্তর আফ্রিকার সবচেয়ে সমৃদ্ধ ও সর্ববৃহৎ তেল উৎপাদনকারী দেশ লিবিয়া। গৃহযুদ্ধের মধ্যে রয়েছে লোহিত সাগরের তীরবর্তী দেশ ইয়েমেন। আর ইসরায়েলবিরোধী দেশ সিরিয়া। সিরিয়ার সীমান্তবর্তী বৃহত্তম অ-আরব দেশ ইরানও রয়েছে অস্থিরতার মধ্যে। বিশ্ব ভূ-রাজনীতির ভাষায় এ অঞ্চলের অস্থিরতাকে বলা হচ্ছে ‘ক্রিসেন্ট অব ক্রাইসিস’। এই অস্থিরতার কারণ কোথাও সামাজিক বিপ্লব আবার কোথাও এর সূত্র ধরে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রপতি জর্জ ডব্লিউ বুশের তত্ত্ব অনুযায়ী ‘রিজিম চেঞ্জ’-এর মহড়া।
লিবিয়ায় যা ঘটেছে, সেটা সামাজিক বা রাজনৈতিক পরিবর্তন তেমনভাবে বলা যাবে না। কারণ ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ। বস্তুতপক্ষে, লিবিয়ার পরিবর্তন বহিঃশক্তির সরাসরি হস্তক্ষেপের এক নগ্ন উদাহরণ। লিবিয়ার ৪২ বছরের একনায়ক মুয়াম্মার গাদ্দাফি সর্বদাই পশ্চিমের, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের চক্ষুশূল ছিলেন।
যেসব দেশ তথাকথিত ক্রিসেন্ট অব ক্রাইসিসের অন্তর্ভুক্ত, ঘটনাক্রমে সেগুলো মুসলিম দেশ হিসেবে পরিচিত এবং সিংহভাগ প্রাকৃতিক সম্পদের অধিকারী। প্রায় সব কটি দেশই শাসিত হয়েছে এবং হচ্ছে একনায়কতন্ত্র, বাদশাহি অথবা আমিরতন্ত্র দ্বারা। এদের অনেকেই পশ্চিমের মিত্র দেশ হিসেবে পরিচিত—যেমন: সৌদি আরব, তিউনিসিয়া, মিসর ও ইয়েমেন। আর শেষ বাথিস্ট রাষ্ট্র হিসেবে বর্তমানে টালমাটাল অবস্থা সিরিয়ার।
উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে যা ঘটেছে, তাকে বলা হচ্ছে ‘আরব জাগরণ’। সত্যিই কি তাই? শুধু আরব জাগরণ হিসেবে আখ্যায়িত করলে চলমান সংকটকে সরলীকরণ করা হবে।
তিউনিসিয়া ও মিসরের অভ্যুত্থান ছিল নিজস্ব শাসকগোষ্ঠী, একনায়কতন্ত্র, অর্থনৈতিক অব্যবস্থা, ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব আর অব্যবস্থার বিরুদ্ধে জনগণের আন্দোলনের ফসল। মিসরের জনগণ অনুপ্রেরণা পেয়েছিল তিউনিসিয়া থেকে। তিউনিসিয়ায় বেকারত্ব, সরকারের দুর্নীতি আর অব্যবস্থা এমন আকার ধারণ করেছিল যে সামান্য এক সবজি বিক্রেতা নিজের শরীরে অগুন লাগিয়ে আত্মাহুতি দিলে তা প্রবল গণবিক্ষোভে রূপ নেয়। ফলে ২৫ বছরের জেন এল আবেদিন বেন আলীর সরকার তাসের ঘরের মতো গুঁড়িয়ে যায়। তাঁকে তিউনিসিয়া ছাড়তে হয়। এখান থেকেই শুরু হয় কথিত আরব জাগরণ। এর পরই মিসরে ৩২ বছর পর হোসনি মোবারককেও জনরোষে গদি ছাড়তে হয়।
লক্ষণীয়, উত্তর আফ্রিকার মুসলিমপ্রধান আরব দেশ দুটির শাসক ও প্রশাসনব্যবস্থা ছিল যুক্তরাষ্ট্র তথা ইউরোপঘেঁষা। এর মধ্যে মিসর-ইসরায়েল শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করার পর থেকে মোবারক চুক্তির প্রতি অনুগত থেকেছেন। থেকেছেন মধ্যপ্রাচ্যে তথা উত্তর আফ্রিকায় যুক্তরাষ্ট্রের একনিষ্ঠ বন্ধু। এসব কারণে হয়তো তাঁদের পরিণতি সাদ্দাম হোসেন অথবা গাদ্দাফির মতো হয়নি। অনুরূপ উদাহরণ হতে পারে ইয়েমেন, যেখানে ৩২ বছরের শাসক আলী আবদুল্লাহ সালেহকে গৃহযুদ্ধের মধ্যেও নিরাপদে বের করে আনতে জাতিসংঘকে প্রস্তাব দিতে হয়েছে। আসাদের ব্যাপারে তেমন না-ও হতে পারে। ইসরায়েল ও পশ্চিমাবিরোধী বাশার আল আসাদ বাথ চিন্তাধারার শেষ নেতা। সে কারণে সিরিয়ার ভাগ্যও লিবিয়ার মতো হতে পারে।
তবে একেবারেই ভিন্ন লিবিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি। ৪২ বছরের শাসক তথা লৌহমানব বলে কথিত কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফির করুণ পরিণতির প্রেক্ষাপট শুধু আরব জাগরণের মধ্যেই নিহিত নয়; এর প্রেক্ষাপটে রয়েছে পশ্চিমা ভূ-রাজনীতি আর ভূ-অর্থনীতি; রয়েছে সমগ্র আফ্রিকায় একচ্ছত্র প্রভাব বিস্তার।
লিবিয়ার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। গাদ্দাফির এ ধরনের অমানবিক পরিণতির দায় কোনোভাবে ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন এড়াতে পারবে না। এই নির্মম হত্যায় এসব শক্তির যে সায় ছিল, তা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের অভিব্যক্তি থেকে প্রতীয়মান হয়। কতখানি অপরাধ ছিল গাদ্দাফির, তা হয়তো এখনই নিরূপণ করা সম্ভব নয়। তবে ৪২ বছরের শাসনের শেষের দিকে আরব রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে খারাপ সম্পর্কের কারণে তিনি আফ্রিকার বিষয়ে বেশি মনোযোগী ছিলেন। মনোযোগ দেননি তাঁর দেশের অভ্যন্তরে মানবাধিকার ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের দিকে। অন্যদিকে বিগত শতাব্দীর সত্তর ও আশির দশকে বহু দেশের গেরিলা বাহিনীকে অর্থের জোগান দিয়ে পশ্চিমাদের বিরাগভাজন হন। উত্তর আয়ারল্যান্ডের আইরিশ রিপাবলিকান আর্মি, ফিলিপাইনের মুসলমানদের সংগঠনগুলোকে সহায়তা প্রদান—সর্বোপরি লকারবি বিমান ধ্বংসের উৎসাহ জোগান এবং জার্মানির কয়েকটি শহরে নাশকতার জন্য দায়ী করা হয়েছিল লিবিয়ার প্রয়াত একনায়ককে। পশ্চিমা প্রচারমাধ্যম গাদ্দাফিকে ভিলেন হিসেবে চিহ্নিত করে।
শুধু কি উল্লিখিত কারণেই ইরাকের পর লিবিয়ার অভ্যন্তরে এই নির্লজ্জ হস্তক্ষেপ? মোটেই না। লিবিয়ার জ্বালানি বা তেল আর প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্র ও কর্তৃত্ব মাল্টিন্যাশনালদের হাতে নেওয়ার নগ্ন সফল প্রয়াস ছিল ‘অপারেশন লিবিয়া’। লিবিয়া আফ্রিকার সবচেয়ে বৃহৎ তেল উৎপাদনকারী দেশ। ইরাকের দক্ষিণাঞ্চলের মতো লিবিয়ার তেলও সবচেয়ে উৎকৃষ্ট। এর পরিশোধন অত্যন্ত সহজ এবং অপচয় হয় অনেক কম।
লিবিয়ায় রয়েছে ৪৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন ব্যারেল নিশ্চিত রিজার্ভ তেল। হালের এক জরিপে এর পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে আনুমানিক ৬০ বিলিয়ন ব্যারেল বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিছুদিন আগে পর্যন্ত লিবিয়ার অভ্যন্তরীণ ও অন্যান্য কারণে প্রতিদিন ১ দশমিক ৩ থেকে ১ দশমিক ৭ মিলিয়ন ব্যারেল তেল উৎপাদন করা হতো, যা ক্ষমতার তুলনায় অনেক কম। অনেক পশ্চিমা কোম্পানি মনে করেছিল, লিবিয়ার নেতা ইচ্ছা করেই তেল উত্তোলন কমিয়ে রেখেছিলেন, যে কারণে বিশ্ববাজারে তেলের দাম প্রায় ১১০ ডলার ছুঁয়েছিল। লিবিয়ার তেলের কর্তৃত্ব ছিল জাতীয় প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল অয়েল করপোরেশনের (এনওসি) হাতে। বিশেষজ্ঞদের মতে, লিবিয়ার তেল উৎপাদনের খরচ বিশ্বের তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম। এনার্জি ক্যাপিটালের মতে, লিবিয়ার তেল উৎপাদনে খরচ পড়ে ব্যারেলপ্রতি এক ডলার, বিশ্ববাজারের দরে দেশটি ১০০ ডলার আয় করে থাকে।
যদিও লিবিয়ার তেল ও গ্যাস জাতীয়করণের পরও এনওসির কর্তৃত্বে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর অংশীদারের ভিত্তিতে কঠিন শর্তে ব্যবসায় নিয়োজিত ছিল, তবু এসব কোম্পানি একক কর্তৃত্বে তেল উত্তোলনের আশায় ছিল। এর মধ্যে ফ্রান্স, ব্রিটেন, ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র এবং হালে যুক্ত হয়েছিল চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম করপোরেশন ও রাশিয়ার গেজোপ্রম। উল্লেখ্য, লিবিয়ার মোট উৎপাদনের প্রায় ১১ শতাংশ তেল চীন আমদানি করত। লিবিয়ার প্রাকৃতিক গ্যাসের সিংহভাগ সরবরাহ করা হয় ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশগুলোতে, যার মধ্যে ইতালি বৃহত্তম আমদানিকারক দেশ। ইতালিতে গ্যাস সরবরাহ করা হয় গ্রিনস্ট্রিম পাইপলাইনের মাধ্যমে। ইতালির কোম্পানি ইএনআই প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার ব্যারেল গ্যাস আমদানি করে থাকে, যা লিবিয়ার গ্যাস রপ্তানির প্রায় ২৫ শতাংশ।
গাদ্দাফি আফ্রিকার অন্যান্য অঞ্চলকে পশ্চিমাবিরোধী করে তুলতে প্রভাবিত করছিলেন বলে কথিত রয়েছে। বিশেষ করে আফ্রিকা মহাদেশে চীন ও রাশিয়ার ব্যাপক উপস্থিতি আফ্রিকান ভূতপূর্ব ঔপনিবেশিক শক্তিগুলোর এবং যুক্তরাষ্ট্রের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। লিবিয়ায় ২০ বছর আগে থেকে চীনের উপস্থিতি ক্রমেই বেড়েছে। এই পর্যায়ে লিবিয়াসহ আফ্রিকার অন্যান্য দেশ যথা নাইজার, চাদ ও দক্ষিণ সুদানে চীনের ৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের লগ্নি রয়েছে। শুধু লিবিয়াতেই চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম করপোরেশনে (সিএনপিসি) ৪০০ কর্মকর্তা ও ৩০ হাজার কর্মী ছিলেন।
চীন ছাড়াও গাদ্দাফির সহযোগিতায় রাশিয়া ওই অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারের ব্যাপক সুযোগ পেয়েছিল। তথ্যমতে, রাশিয়ার রেল কোম্পানি সির্ত থেকে বেনগাজি পর্যন্ত ট্রেনলাইন সম্প্রসারণের জন্য লিবিয়া সরকারের সঙ্গে ৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছিল। এ ছাড়া গাদ্দাফি রাশিয়ার নৌবাহিনীকে বেনগাজি বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিলেন বলে তথ্য প্রকাশ। সির্তের তেলকূপের বিস্তারের জন্য রাশিয়ার গেজোপ্রম পরিকল্পনা করছিল।
জ্বালানি বিষয় ছাড়াও ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে দারফুর, চাদ ও নাইজারের মতো দেশগুলোর বহির্গমন ও নির্গমনের সহজ পথ হলো লিবিয়ার বন্দরগুলো। চাদ ও দারফুর অঞ্চলের নতুন ক্ষেত্রগুলো আবিষ্কার এবং নাইজারের ইউরেনিয়াম, যা যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক ব্যবহারের জন্য প্রয়োজন, সহজলভ্য করতে হলে লিবিয়ার ভূখণ্ড ব্যবহারের প্রয়োজন রয়েছে। গাদ্দাফিকে পশ্চিমা শক্তি তাদের বহুমাত্রিক ব্যবসা এবং ওই অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারের অন্তরায় মনে করত। তদুপরি চীনের ব্যাপক উপস্থিতি এবং আফ্রিকায় রাশিয়ার নতুন আঙ্গিকে আগমনকে প্রতিহত করাও যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ভূ-রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। অতি সম্প্রতি লিবিয়ায় বিদ্রোহীদের অগ্রযাত্রার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র উগান্ডা সরকারকে লর্ডস আর্মির বিরুদ্ধে শক্তির জোগান দিতে ১০০ সৈনিক পরামর্শক পাঠানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। গাদ্দাফির তিরোধানের পর যুক্তরাষ্ট্রের আফ্রিকা মিশন আরও সহজ হবে।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট সারকোজি হালে গাদ্দাফির ব্যাপক বিরুদ্ধাচরণে নেমেছিলেন, যার সঙ্গে যোগ দিয়েছিল ইতালি, বেলজিয়াম আর ব্রিটেন। এই চার শক্তিই একসময় সমগ্র আফ্রিকায় উপনিবেশ স্থাপন করেছিল। আলজেরিয়া থেকে শুরু করে মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার বর্তমানের প্রায় সব স্বাধীন দেশই ছিল ফ্রান্সের উপনিবেশ। ইদানীং নিকোলা সারকোজি আফ্রিকার ফ্রানেকাফোনিক দেশগুলো নিয়ে ভূমধ্যসাগরীয় ফ্রানেকাফোনিক সংস্থা গড়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যা আফ্রিকার বেশ কিছু দেশের, বিশেষ করে গাদ্দাফির আপত্তির কারণে বাস্তবায়িত হতে পারেনি। কাজেই ফ্রান্সের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে গাদ্দাফির বিরোধীদের সহযোগিতার মধ্য দিয়ে। এমনকি গাদ্দাফির গাড়িবহরেও হামলা চালিয়েছিল ফ্রান্সের যুদ্ধবিমান।
উল্লেখ করা প্রয়োজন, গাদ্দাফি লিবিয়াকে একটি আধুনিক ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে গিয়ে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে নানা ধরনের উৎপীড়নের আশ্রয় নিয়েছিলেন। শেষের দিকে কিছুটা খ্যাপাটে হয়ে পড়েছিলেন। বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে স্থির থাকতে পারেননি। পশ্চিমা শক্তির, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের মন জয় করতে ২০০৩ সালে তিনি সব রাসায়নিক অস্ত্র বর্জন এবং লকারবির জন্য ক্ষতিপূরণ দিয়েও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য তথা উত্তর আফ্রিকার পরিবর্তনের পরিকল্পনা থেকে বাঁচতে পারলেন না। তত দিনে যুক্তরাষ্ট্রের এই পরিবর্তনের চাকা ঘুরতে শুরু করেছে, যার কান্ডারি এখন ওবামা আর তার পেছনে রয়েছেন হিলারি ক্লিনটন। গাদ্দাফির তিরোধানের পর আফ্রিকার ভূ-রাজনীতিতে কী ধরনের পরিবর্তন হয়, তাই দেখার বিষয়।
লিবিয়ায় গাদ্দাফির বিরুদ্ধে যা হয়েছে, তিউনিসিয়া, মিসর অথবা ইয়েমেনের মতো কতখানি স্বতঃস্ফূর্ত ছিল তা নিরূপণ করা কঠিন। তবে এটি পরিষ্কার, নব্য উপনিবেশবাদের যে সূত্রপাত শীতল যুদ্ধের সমাপ্তির পর হতে শুরু হয়েছিল, লিবিয়া তার সর্বশেষ শিকার। লিবিয়ায় যা ঘটেছে, তা ছিল পরাশক্তির অঘোষিত যুদ্ধ। লিবিয়ার ভবিষ্যৎ কেমন হবে, তা এই মুহূর্তে বলা কঠিন। তবে দেশটিতে শান্তি ফিরিয়ে আনতে বহু কাঠখড় পোড়াতে হবে। হয়তো দেশ পরিচালিত হবে আন্তর্জাতিক বহুমাত্রিক তেল কোম্পানির স্বার্থ সংরক্ষণে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন: সাবেক সামরিক কর্মকর্তা এবং ভূ-রাজনীতিক ও নিরাপত্তাবিষয়ক বিশ্লেষক।
লিবিয়ায় যা ঘটেছে, সেটা সামাজিক বা রাজনৈতিক পরিবর্তন তেমনভাবে বলা যাবে না। কারণ ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ। বস্তুতপক্ষে, লিবিয়ার পরিবর্তন বহিঃশক্তির সরাসরি হস্তক্ষেপের এক নগ্ন উদাহরণ। লিবিয়ার ৪২ বছরের একনায়ক মুয়াম্মার গাদ্দাফি সর্বদাই পশ্চিমের, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের চক্ষুশূল ছিলেন।
যেসব দেশ তথাকথিত ক্রিসেন্ট অব ক্রাইসিসের অন্তর্ভুক্ত, ঘটনাক্রমে সেগুলো মুসলিম দেশ হিসেবে পরিচিত এবং সিংহভাগ প্রাকৃতিক সম্পদের অধিকারী। প্রায় সব কটি দেশই শাসিত হয়েছে এবং হচ্ছে একনায়কতন্ত্র, বাদশাহি অথবা আমিরতন্ত্র দ্বারা। এদের অনেকেই পশ্চিমের মিত্র দেশ হিসেবে পরিচিত—যেমন: সৌদি আরব, তিউনিসিয়া, মিসর ও ইয়েমেন। আর শেষ বাথিস্ট রাষ্ট্র হিসেবে বর্তমানে টালমাটাল অবস্থা সিরিয়ার।
উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে যা ঘটেছে, তাকে বলা হচ্ছে ‘আরব জাগরণ’। সত্যিই কি তাই? শুধু আরব জাগরণ হিসেবে আখ্যায়িত করলে চলমান সংকটকে সরলীকরণ করা হবে।
তিউনিসিয়া ও মিসরের অভ্যুত্থান ছিল নিজস্ব শাসকগোষ্ঠী, একনায়কতন্ত্র, অর্থনৈতিক অব্যবস্থা, ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব আর অব্যবস্থার বিরুদ্ধে জনগণের আন্দোলনের ফসল। মিসরের জনগণ অনুপ্রেরণা পেয়েছিল তিউনিসিয়া থেকে। তিউনিসিয়ায় বেকারত্ব, সরকারের দুর্নীতি আর অব্যবস্থা এমন আকার ধারণ করেছিল যে সামান্য এক সবজি বিক্রেতা নিজের শরীরে অগুন লাগিয়ে আত্মাহুতি দিলে তা প্রবল গণবিক্ষোভে রূপ নেয়। ফলে ২৫ বছরের জেন এল আবেদিন বেন আলীর সরকার তাসের ঘরের মতো গুঁড়িয়ে যায়। তাঁকে তিউনিসিয়া ছাড়তে হয়। এখান থেকেই শুরু হয় কথিত আরব জাগরণ। এর পরই মিসরে ৩২ বছর পর হোসনি মোবারককেও জনরোষে গদি ছাড়তে হয়।
লক্ষণীয়, উত্তর আফ্রিকার মুসলিমপ্রধান আরব দেশ দুটির শাসক ও প্রশাসনব্যবস্থা ছিল যুক্তরাষ্ট্র তথা ইউরোপঘেঁষা। এর মধ্যে মিসর-ইসরায়েল শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করার পর থেকে মোবারক চুক্তির প্রতি অনুগত থেকেছেন। থেকেছেন মধ্যপ্রাচ্যে তথা উত্তর আফ্রিকায় যুক্তরাষ্ট্রের একনিষ্ঠ বন্ধু। এসব কারণে হয়তো তাঁদের পরিণতি সাদ্দাম হোসেন অথবা গাদ্দাফির মতো হয়নি। অনুরূপ উদাহরণ হতে পারে ইয়েমেন, যেখানে ৩২ বছরের শাসক আলী আবদুল্লাহ সালেহকে গৃহযুদ্ধের মধ্যেও নিরাপদে বের করে আনতে জাতিসংঘকে প্রস্তাব দিতে হয়েছে। আসাদের ব্যাপারে তেমন না-ও হতে পারে। ইসরায়েল ও পশ্চিমাবিরোধী বাশার আল আসাদ বাথ চিন্তাধারার শেষ নেতা। সে কারণে সিরিয়ার ভাগ্যও লিবিয়ার মতো হতে পারে।
তবে একেবারেই ভিন্ন লিবিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি। ৪২ বছরের শাসক তথা লৌহমানব বলে কথিত কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফির করুণ পরিণতির প্রেক্ষাপট শুধু আরব জাগরণের মধ্যেই নিহিত নয়; এর প্রেক্ষাপটে রয়েছে পশ্চিমা ভূ-রাজনীতি আর ভূ-অর্থনীতি; রয়েছে সমগ্র আফ্রিকায় একচ্ছত্র প্রভাব বিস্তার।
লিবিয়ার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। গাদ্দাফির এ ধরনের অমানবিক পরিণতির দায় কোনোভাবে ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন এড়াতে পারবে না। এই নির্মম হত্যায় এসব শক্তির যে সায় ছিল, তা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের অভিব্যক্তি থেকে প্রতীয়মান হয়। কতখানি অপরাধ ছিল গাদ্দাফির, তা হয়তো এখনই নিরূপণ করা সম্ভব নয়। তবে ৪২ বছরের শাসনের শেষের দিকে আরব রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে খারাপ সম্পর্কের কারণে তিনি আফ্রিকার বিষয়ে বেশি মনোযোগী ছিলেন। মনোযোগ দেননি তাঁর দেশের অভ্যন্তরে মানবাধিকার ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের দিকে। অন্যদিকে বিগত শতাব্দীর সত্তর ও আশির দশকে বহু দেশের গেরিলা বাহিনীকে অর্থের জোগান দিয়ে পশ্চিমাদের বিরাগভাজন হন। উত্তর আয়ারল্যান্ডের আইরিশ রিপাবলিকান আর্মি, ফিলিপাইনের মুসলমানদের সংগঠনগুলোকে সহায়তা প্রদান—সর্বোপরি লকারবি বিমান ধ্বংসের উৎসাহ জোগান এবং জার্মানির কয়েকটি শহরে নাশকতার জন্য দায়ী করা হয়েছিল লিবিয়ার প্রয়াত একনায়ককে। পশ্চিমা প্রচারমাধ্যম গাদ্দাফিকে ভিলেন হিসেবে চিহ্নিত করে।
শুধু কি উল্লিখিত কারণেই ইরাকের পর লিবিয়ার অভ্যন্তরে এই নির্লজ্জ হস্তক্ষেপ? মোটেই না। লিবিয়ার জ্বালানি বা তেল আর প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্র ও কর্তৃত্ব মাল্টিন্যাশনালদের হাতে নেওয়ার নগ্ন সফল প্রয়াস ছিল ‘অপারেশন লিবিয়া’। লিবিয়া আফ্রিকার সবচেয়ে বৃহৎ তেল উৎপাদনকারী দেশ। ইরাকের দক্ষিণাঞ্চলের মতো লিবিয়ার তেলও সবচেয়ে উৎকৃষ্ট। এর পরিশোধন অত্যন্ত সহজ এবং অপচয় হয় অনেক কম।
লিবিয়ায় রয়েছে ৪৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন ব্যারেল নিশ্চিত রিজার্ভ তেল। হালের এক জরিপে এর পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে আনুমানিক ৬০ বিলিয়ন ব্যারেল বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিছুদিন আগে পর্যন্ত লিবিয়ার অভ্যন্তরীণ ও অন্যান্য কারণে প্রতিদিন ১ দশমিক ৩ থেকে ১ দশমিক ৭ মিলিয়ন ব্যারেল তেল উৎপাদন করা হতো, যা ক্ষমতার তুলনায় অনেক কম। অনেক পশ্চিমা কোম্পানি মনে করেছিল, লিবিয়ার নেতা ইচ্ছা করেই তেল উত্তোলন কমিয়ে রেখেছিলেন, যে কারণে বিশ্ববাজারে তেলের দাম প্রায় ১১০ ডলার ছুঁয়েছিল। লিবিয়ার তেলের কর্তৃত্ব ছিল জাতীয় প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল অয়েল করপোরেশনের (এনওসি) হাতে। বিশেষজ্ঞদের মতে, লিবিয়ার তেল উৎপাদনের খরচ বিশ্বের তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম। এনার্জি ক্যাপিটালের মতে, লিবিয়ার তেল উৎপাদনে খরচ পড়ে ব্যারেলপ্রতি এক ডলার, বিশ্ববাজারের দরে দেশটি ১০০ ডলার আয় করে থাকে।
যদিও লিবিয়ার তেল ও গ্যাস জাতীয়করণের পরও এনওসির কর্তৃত্বে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর অংশীদারের ভিত্তিতে কঠিন শর্তে ব্যবসায় নিয়োজিত ছিল, তবু এসব কোম্পানি একক কর্তৃত্বে তেল উত্তোলনের আশায় ছিল। এর মধ্যে ফ্রান্স, ব্রিটেন, ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র এবং হালে যুক্ত হয়েছিল চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম করপোরেশন ও রাশিয়ার গেজোপ্রম। উল্লেখ্য, লিবিয়ার মোট উৎপাদনের প্রায় ১১ শতাংশ তেল চীন আমদানি করত। লিবিয়ার প্রাকৃতিক গ্যাসের সিংহভাগ সরবরাহ করা হয় ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশগুলোতে, যার মধ্যে ইতালি বৃহত্তম আমদানিকারক দেশ। ইতালিতে গ্যাস সরবরাহ করা হয় গ্রিনস্ট্রিম পাইপলাইনের মাধ্যমে। ইতালির কোম্পানি ইএনআই প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার ব্যারেল গ্যাস আমদানি করে থাকে, যা লিবিয়ার গ্যাস রপ্তানির প্রায় ২৫ শতাংশ।
গাদ্দাফি আফ্রিকার অন্যান্য অঞ্চলকে পশ্চিমাবিরোধী করে তুলতে প্রভাবিত করছিলেন বলে কথিত রয়েছে। বিশেষ করে আফ্রিকা মহাদেশে চীন ও রাশিয়ার ব্যাপক উপস্থিতি আফ্রিকান ভূতপূর্ব ঔপনিবেশিক শক্তিগুলোর এবং যুক্তরাষ্ট্রের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। লিবিয়ায় ২০ বছর আগে থেকে চীনের উপস্থিতি ক্রমেই বেড়েছে। এই পর্যায়ে লিবিয়াসহ আফ্রিকার অন্যান্য দেশ যথা নাইজার, চাদ ও দক্ষিণ সুদানে চীনের ৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের লগ্নি রয়েছে। শুধু লিবিয়াতেই চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম করপোরেশনে (সিএনপিসি) ৪০০ কর্মকর্তা ও ৩০ হাজার কর্মী ছিলেন।
চীন ছাড়াও গাদ্দাফির সহযোগিতায় রাশিয়া ওই অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারের ব্যাপক সুযোগ পেয়েছিল। তথ্যমতে, রাশিয়ার রেল কোম্পানি সির্ত থেকে বেনগাজি পর্যন্ত ট্রেনলাইন সম্প্রসারণের জন্য লিবিয়া সরকারের সঙ্গে ৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছিল। এ ছাড়া গাদ্দাফি রাশিয়ার নৌবাহিনীকে বেনগাজি বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিলেন বলে তথ্য প্রকাশ। সির্তের তেলকূপের বিস্তারের জন্য রাশিয়ার গেজোপ্রম পরিকল্পনা করছিল।
জ্বালানি বিষয় ছাড়াও ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে দারফুর, চাদ ও নাইজারের মতো দেশগুলোর বহির্গমন ও নির্গমনের সহজ পথ হলো লিবিয়ার বন্দরগুলো। চাদ ও দারফুর অঞ্চলের নতুন ক্ষেত্রগুলো আবিষ্কার এবং নাইজারের ইউরেনিয়াম, যা যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক ব্যবহারের জন্য প্রয়োজন, সহজলভ্য করতে হলে লিবিয়ার ভূখণ্ড ব্যবহারের প্রয়োজন রয়েছে। গাদ্দাফিকে পশ্চিমা শক্তি তাদের বহুমাত্রিক ব্যবসা এবং ওই অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারের অন্তরায় মনে করত। তদুপরি চীনের ব্যাপক উপস্থিতি এবং আফ্রিকায় রাশিয়ার নতুন আঙ্গিকে আগমনকে প্রতিহত করাও যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ভূ-রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। অতি সম্প্রতি লিবিয়ায় বিদ্রোহীদের অগ্রযাত্রার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র উগান্ডা সরকারকে লর্ডস আর্মির বিরুদ্ধে শক্তির জোগান দিতে ১০০ সৈনিক পরামর্শক পাঠানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। গাদ্দাফির তিরোধানের পর যুক্তরাষ্ট্রের আফ্রিকা মিশন আরও সহজ হবে।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট সারকোজি হালে গাদ্দাফির ব্যাপক বিরুদ্ধাচরণে নেমেছিলেন, যার সঙ্গে যোগ দিয়েছিল ইতালি, বেলজিয়াম আর ব্রিটেন। এই চার শক্তিই একসময় সমগ্র আফ্রিকায় উপনিবেশ স্থাপন করেছিল। আলজেরিয়া থেকে শুরু করে মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার বর্তমানের প্রায় সব স্বাধীন দেশই ছিল ফ্রান্সের উপনিবেশ। ইদানীং নিকোলা সারকোজি আফ্রিকার ফ্রানেকাফোনিক দেশগুলো নিয়ে ভূমধ্যসাগরীয় ফ্রানেকাফোনিক সংস্থা গড়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যা আফ্রিকার বেশ কিছু দেশের, বিশেষ করে গাদ্দাফির আপত্তির কারণে বাস্তবায়িত হতে পারেনি। কাজেই ফ্রান্সের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে গাদ্দাফির বিরোধীদের সহযোগিতার মধ্য দিয়ে। এমনকি গাদ্দাফির গাড়িবহরেও হামলা চালিয়েছিল ফ্রান্সের যুদ্ধবিমান।
উল্লেখ করা প্রয়োজন, গাদ্দাফি লিবিয়াকে একটি আধুনিক ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে গিয়ে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে নানা ধরনের উৎপীড়নের আশ্রয় নিয়েছিলেন। শেষের দিকে কিছুটা খ্যাপাটে হয়ে পড়েছিলেন। বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে স্থির থাকতে পারেননি। পশ্চিমা শক্তির, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের মন জয় করতে ২০০৩ সালে তিনি সব রাসায়নিক অস্ত্র বর্জন এবং লকারবির জন্য ক্ষতিপূরণ দিয়েও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য তথা উত্তর আফ্রিকার পরিবর্তনের পরিকল্পনা থেকে বাঁচতে পারলেন না। তত দিনে যুক্তরাষ্ট্রের এই পরিবর্তনের চাকা ঘুরতে শুরু করেছে, যার কান্ডারি এখন ওবামা আর তার পেছনে রয়েছেন হিলারি ক্লিনটন। গাদ্দাফির তিরোধানের পর আফ্রিকার ভূ-রাজনীতিতে কী ধরনের পরিবর্তন হয়, তাই দেখার বিষয়।
লিবিয়ায় গাদ্দাফির বিরুদ্ধে যা হয়েছে, তিউনিসিয়া, মিসর অথবা ইয়েমেনের মতো কতখানি স্বতঃস্ফূর্ত ছিল তা নিরূপণ করা কঠিন। তবে এটি পরিষ্কার, নব্য উপনিবেশবাদের যে সূত্রপাত শীতল যুদ্ধের সমাপ্তির পর হতে শুরু হয়েছিল, লিবিয়া তার সর্বশেষ শিকার। লিবিয়ায় যা ঘটেছে, তা ছিল পরাশক্তির অঘোষিত যুদ্ধ। লিবিয়ার ভবিষ্যৎ কেমন হবে, তা এই মুহূর্তে বলা কঠিন। তবে দেশটিতে শান্তি ফিরিয়ে আনতে বহু কাঠখড় পোড়াতে হবে। হয়তো দেশ পরিচালিত হবে আন্তর্জাতিক বহুমাত্রিক তেল কোম্পানির স্বার্থ সংরক্ষণে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন: সাবেক সামরিক কর্মকর্তা এবং ভূ-রাজনীতিক ও নিরাপত্তাবিষয়ক বিশ্লেষক।
No comments