ধর্ম-হজের ঐতিহাসিক পটভূমি by মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান
ইসলাম ধর্মের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম রোকন হজ। মূলত ইসলামের পূর্ব থেকেই কাবাঘর জিয়ারত ও হজ আদায়ের প্রচলন ছিল। তাই হজের একটি ঐতিহাসিক পটভূমি রয়েছে। সর্বপ্রথম নবী হজরত আদম (আ.) আল্লাহর আদেশে কাবাঘর পুনর্নির্মাণ করেন এবং বায়তুল্লাহ শরিফে হজ আদায় করেন।
মূলত ইসলামের পূর্ব থেকেই পবিত্র কাবাঘর জিয়ারত ও হজ আদায়ের প্রচলন ছিল। বর্ণিত আছে যে ‘হজরত আদম (আ.) ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে হেঁটে ৪০ বার হজ করেছেন। সর্বপ্রথম হজ সমাপনের পর হজরত জিবরাইল (আ.) তাঁকে বললেন, আপনার সাত হাজার বছর আগে থেকেই ফেরেশতারা বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করে আসছেন।’
এভাবে শত শত বছর অতিবাহিত হলেও আল্লাহর বান্দারা মহা কল্যাণময় কাবাঘর জিয়ারত করত, যা বিশ্বমানবের সৎ পথ প্রদর্শনের অগ্রপথিক ও দিশারি, তথায় সমবেত হয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে হাজিরা দিত এবং আল্লাহর পবিত্রতা ও অংশীদারহীনতা ঘোষণা করত। দিন দিন একত্ববাদের সংখ্যা বাড়তে থাকল। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই মানবজাতির জন্য সর্বপ্রথম যে গৃহ (কাবাঘর) প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তা মক্কায় অবস্থিত; এটা বরকতময় ও বিশ্বজগতের দিশারি। এতে রয়েছে মাকামে ইবরাহিমের প্রকৃষ্ট নিদর্শন। যে এর ভেতরে প্রবেশ করে, সে নিরাপদ। মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহর উদ্দেশে ওই ঘরে হজ করা তার অবশ্যকর্তব্য।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৯৬-৯৭)
হজরত নূহ (আ.)-এর যুগের মহাপ্লাবনে কাবা শরিফ ধসে যায়। আল্লাহর হুকুমে বায়তুল্লাহর স্থান ঠিক করে দেওয়া হলে হজরত ইবরাহিম (আ.) তাঁর প্রাণপ্রিয় পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-কে সঙ্গে নিয়ে কাবাগৃহের পুনর্নির্মাণকাজ সম্পন্ন করে সৃষ্টিকর্তার দরবারে আকুল প্রার্থনা করেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাদের উভয়কে আজ্ঞাবহ করো, আমাদের বংশ থেকে একটি অনুগত দল সৃষ্টি করো, আমাদের হজের রীতিনীতি বলে দাও এবং আমাদের ক্ষমা করো। হে আল্লাহ! তুমি আমাদের এ কাজটি কবুল করো।’ আল্লাহ তাআলা হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর দোয়া কবুল করে নির্দেশ দিলেন, ‘হে ইবরাহিম! তুমি মানবজাতিকে হজের জন্য আহ্বান করো। আমার বান্দারা আমার প্রেম ও ভালোবাসায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এখানে হজ করতে আসবে। তাদের সব আশা-আকাঙ্ক্ষা ও মনের সদিচ্ছা পূর্ণ হবে এবং সব অপরাধ ক্ষমাপ্রাপ্ত হবে।’ হজরত ইবরাহিম (আ.) বললেন, ‘হে আল্লাহ! সারা বিশ্বের মানুষ কি আমার ঘোষণা শুনবে?’ আল্লাহ পাক বলেন, ‘হে ইবরাহিম! তুমি ঘোষণা করো আর তা মানুষের কানে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব আমার।’
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে আজ থেকে সাড়ে চার হাজার বছর আগে হজরত ইবরাহিম (আ.) কাবাঘর পুনর্নির্মাণ সমাপ্ত করে দুনিয়াবাসীর উদ্দেশে হজের আহ্বান করেছিলেন; স্বয়ং আল্লাহ তাআলা তাঁকে এ নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন, ‘আর (হে ইবরাহিম!) মানুষের মাঝে হজের ঘোষণা দিয়ে দাও। মানুষ তোমার কাছে (আমার এ ঘরের সন্নিকটে) হজের জন্য দলে দলে চলে আসবে উটে আরোহণ করে, যা দূর-দূরান্তের রাস্তা অতিক্রম করে আসায় দুর্বল হয়ে উঠতে থাকবে। ফলে আগমনকারীরা তাদের কল্যাণসমূহ হাসিল করতে পারবে।’ (সূরা আল-হজ, আয়াত: ২৬-২৭) তখন আল্লাহ পাকের আদেশে হজরত ইবরাহিম (আ.) একটি উঁচু স্থানে আরোহণ করলেন এবং ডানে-বামে, পূর্ব-পশ্চিমে ফিরে কাবাঘরের হজ (জিয়ারত) করার উদ্দেশ্যে দূর-দূরান্ত থেকে আসার জন্য লোকদের প্রতি আহ্বান করে হজের ঘোষণা করেন, ‘হে লোক সকল! বায়তুল্লাহ শরিফের হজ তোমাদের ওপর ফরজ করা হয়েছে।’ সেদিন হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর ঘোষণা আকাশ ও জমিনের সবাই শুনেছে এবং ‘লাব্বাইক’ শব্দ বলে জবাব দিয়েছে। সেদিন যে যতবার ‘লাব্বাইক’ বলে জবাব দিয়েছে, সে ততবার হজ করার সৌভাগ্য লাভ করবে।
হজরত ইবরাহিম (আ.) ও হজরত ইসমাইল (আ.)-এর বংশধারা থেকে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসুল হিসেবে পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়। একত্ববাদ ও ঐক্যের নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন হজরত ইবরাহিম (আ.) ও হজরত ইসমাইল (আ.)-এর যৌথ দোয়ার ফল। তাঁরা উভয় নবী মহান আল্লাহর নির্দেশক্রমে কাবাগৃহের পুনর্নির্মাণ করার পর আল্লাহ তাআলার দরবারে প্রার্থনা করেছিলেন, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি তাদের (এ মক্কা নগরের অধিবাসীদের) কাছে তাদেরই মধ্য থেকে একজন রাসুল প্রেরণ করেন, যিনি তাদের সামনে আপনার আয়াতসমূহ পাঠ করবেন, তাদের কিতাব ও জীবনবিধান শিক্ষা দেবেন এবং তাদের পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করবেন; নিশ্চয়ই আপনি মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত-১২৯)
ইসলামের ইতিহাসে ৬৩১ খ্রিষ্টাব্দে নবম হিজরিতে হজের বিধান ফরজ হলে নবী করিম (সা.) উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘হে মানবগণ! আল্লাহ তোমাদের ওপর হজ ফরজ করেছেন, অতএব তোমরা হজ পালন করো।’ (মুসলিম) পরের বছরে ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে মহানবী (সা.) হজ আদায় করেন। তিনি যেখানে, যে সময়ে, যে তারিখে, যে নিয়মে যেসব আহকাম-আরকান পালন করেন, প্রতিবছর ৮ থেকে ১৩ জিলহজ মক্কা মোকাররমা এবং এর ১৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নির্দিষ্ট নিয়মে সেভাবেই হজ পালিত হয়। হাজার হাজার বছর ধরে তাওহিদের ঘোষণাকারী হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর অসত্যের বিরুদ্ধে সত্যের উচ্চারণ, নিরঙ্কুশ আনুগত্য প্রকাশ ও আত্মত্যাগের মহান দৃষ্টান্ত অনুসরণ করা হচ্ছে। উম্মতে মুহাম্মদীর কণ্ঠে ১৪০০ বছরেরও বেশি সময়কাল ধরে কাবাগৃহের চারপাশে সুমধুর ধ্বনি ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ উচ্চারিত হয়ে আসছে।
হজের মৌসুমে প্রতিবছর হজ পালন করতে বিশ্বের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান মক্কা ও মদিনা শরিফে আগমন করেন। জিলহজ মাসের ৮ থেকে ১৩ তারিখের মধ্যে মূল হজ অনুষ্ঠিত হয়। জিলহজ মাসের ১০ তারিখ পবিত্র ঈদুল আজহার দিনে যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি দিতে হয়; যা হজরত ইবরাহিম (আ.) ও হজরত ইসমাইল (আ.)-এর সুমহান ত্যাগের ঐতিহাসিক স্মৃতি বহন করে চলছে। জমজম কূপও ঠিক তেমনি হজরত ইসমাইল (আ.) ও তাঁর মাতা বিবি হাজেরা (আ.)-এর স্মৃতিচিহ্ন এবং মহান আল্লাহর কুদরতের অপরূপ ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ। হজ মুসলমানদের ঈমানের অন্যতম স্তম্ভ। বায়তুল্লাহ শরিফের তাওয়াফ, আরাফাতের ময়দানে অবস্থান ও হজের মাধ্যমে বিশ্ব মুসলমানদের মহামিলনমেলা ঘটে। তাই মুসলিম মিল্লাতের হূদয়ের মণিকোঠায় কাবাগৃহ চিরভাস্বর হয়ে থাকবে।
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক ও কলাম লেখক।
dr.munimkhan@yahoo.com
এভাবে শত শত বছর অতিবাহিত হলেও আল্লাহর বান্দারা মহা কল্যাণময় কাবাঘর জিয়ারত করত, যা বিশ্বমানবের সৎ পথ প্রদর্শনের অগ্রপথিক ও দিশারি, তথায় সমবেত হয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে হাজিরা দিত এবং আল্লাহর পবিত্রতা ও অংশীদারহীনতা ঘোষণা করত। দিন দিন একত্ববাদের সংখ্যা বাড়তে থাকল। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই মানবজাতির জন্য সর্বপ্রথম যে গৃহ (কাবাঘর) প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তা মক্কায় অবস্থিত; এটা বরকতময় ও বিশ্বজগতের দিশারি। এতে রয়েছে মাকামে ইবরাহিমের প্রকৃষ্ট নিদর্শন। যে এর ভেতরে প্রবেশ করে, সে নিরাপদ। মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহর উদ্দেশে ওই ঘরে হজ করা তার অবশ্যকর্তব্য।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৯৬-৯৭)
হজরত নূহ (আ.)-এর যুগের মহাপ্লাবনে কাবা শরিফ ধসে যায়। আল্লাহর হুকুমে বায়তুল্লাহর স্থান ঠিক করে দেওয়া হলে হজরত ইবরাহিম (আ.) তাঁর প্রাণপ্রিয় পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-কে সঙ্গে নিয়ে কাবাগৃহের পুনর্নির্মাণকাজ সম্পন্ন করে সৃষ্টিকর্তার দরবারে আকুল প্রার্থনা করেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাদের উভয়কে আজ্ঞাবহ করো, আমাদের বংশ থেকে একটি অনুগত দল সৃষ্টি করো, আমাদের হজের রীতিনীতি বলে দাও এবং আমাদের ক্ষমা করো। হে আল্লাহ! তুমি আমাদের এ কাজটি কবুল করো।’ আল্লাহ তাআলা হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর দোয়া কবুল করে নির্দেশ দিলেন, ‘হে ইবরাহিম! তুমি মানবজাতিকে হজের জন্য আহ্বান করো। আমার বান্দারা আমার প্রেম ও ভালোবাসায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এখানে হজ করতে আসবে। তাদের সব আশা-আকাঙ্ক্ষা ও মনের সদিচ্ছা পূর্ণ হবে এবং সব অপরাধ ক্ষমাপ্রাপ্ত হবে।’ হজরত ইবরাহিম (আ.) বললেন, ‘হে আল্লাহ! সারা বিশ্বের মানুষ কি আমার ঘোষণা শুনবে?’ আল্লাহ পাক বলেন, ‘হে ইবরাহিম! তুমি ঘোষণা করো আর তা মানুষের কানে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব আমার।’
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে আজ থেকে সাড়ে চার হাজার বছর আগে হজরত ইবরাহিম (আ.) কাবাঘর পুনর্নির্মাণ সমাপ্ত করে দুনিয়াবাসীর উদ্দেশে হজের আহ্বান করেছিলেন; স্বয়ং আল্লাহ তাআলা তাঁকে এ নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন, ‘আর (হে ইবরাহিম!) মানুষের মাঝে হজের ঘোষণা দিয়ে দাও। মানুষ তোমার কাছে (আমার এ ঘরের সন্নিকটে) হজের জন্য দলে দলে চলে আসবে উটে আরোহণ করে, যা দূর-দূরান্তের রাস্তা অতিক্রম করে আসায় দুর্বল হয়ে উঠতে থাকবে। ফলে আগমনকারীরা তাদের কল্যাণসমূহ হাসিল করতে পারবে।’ (সূরা আল-হজ, আয়াত: ২৬-২৭) তখন আল্লাহ পাকের আদেশে হজরত ইবরাহিম (আ.) একটি উঁচু স্থানে আরোহণ করলেন এবং ডানে-বামে, পূর্ব-পশ্চিমে ফিরে কাবাঘরের হজ (জিয়ারত) করার উদ্দেশ্যে দূর-দূরান্ত থেকে আসার জন্য লোকদের প্রতি আহ্বান করে হজের ঘোষণা করেন, ‘হে লোক সকল! বায়তুল্লাহ শরিফের হজ তোমাদের ওপর ফরজ করা হয়েছে।’ সেদিন হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর ঘোষণা আকাশ ও জমিনের সবাই শুনেছে এবং ‘লাব্বাইক’ শব্দ বলে জবাব দিয়েছে। সেদিন যে যতবার ‘লাব্বাইক’ বলে জবাব দিয়েছে, সে ততবার হজ করার সৌভাগ্য লাভ করবে।
হজরত ইবরাহিম (আ.) ও হজরত ইসমাইল (আ.)-এর বংশধারা থেকে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসুল হিসেবে পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়। একত্ববাদ ও ঐক্যের নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন হজরত ইবরাহিম (আ.) ও হজরত ইসমাইল (আ.)-এর যৌথ দোয়ার ফল। তাঁরা উভয় নবী মহান আল্লাহর নির্দেশক্রমে কাবাগৃহের পুনর্নির্মাণ করার পর আল্লাহ তাআলার দরবারে প্রার্থনা করেছিলেন, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি তাদের (এ মক্কা নগরের অধিবাসীদের) কাছে তাদেরই মধ্য থেকে একজন রাসুল প্রেরণ করেন, যিনি তাদের সামনে আপনার আয়াতসমূহ পাঠ করবেন, তাদের কিতাব ও জীবনবিধান শিক্ষা দেবেন এবং তাদের পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করবেন; নিশ্চয়ই আপনি মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত-১২৯)
ইসলামের ইতিহাসে ৬৩১ খ্রিষ্টাব্দে নবম হিজরিতে হজের বিধান ফরজ হলে নবী করিম (সা.) উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘হে মানবগণ! আল্লাহ তোমাদের ওপর হজ ফরজ করেছেন, অতএব তোমরা হজ পালন করো।’ (মুসলিম) পরের বছরে ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে মহানবী (সা.) হজ আদায় করেন। তিনি যেখানে, যে সময়ে, যে তারিখে, যে নিয়মে যেসব আহকাম-আরকান পালন করেন, প্রতিবছর ৮ থেকে ১৩ জিলহজ মক্কা মোকাররমা এবং এর ১৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নির্দিষ্ট নিয়মে সেভাবেই হজ পালিত হয়। হাজার হাজার বছর ধরে তাওহিদের ঘোষণাকারী হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর অসত্যের বিরুদ্ধে সত্যের উচ্চারণ, নিরঙ্কুশ আনুগত্য প্রকাশ ও আত্মত্যাগের মহান দৃষ্টান্ত অনুসরণ করা হচ্ছে। উম্মতে মুহাম্মদীর কণ্ঠে ১৪০০ বছরেরও বেশি সময়কাল ধরে কাবাগৃহের চারপাশে সুমধুর ধ্বনি ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ উচ্চারিত হয়ে আসছে।
হজের মৌসুমে প্রতিবছর হজ পালন করতে বিশ্বের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান মক্কা ও মদিনা শরিফে আগমন করেন। জিলহজ মাসের ৮ থেকে ১৩ তারিখের মধ্যে মূল হজ অনুষ্ঠিত হয়। জিলহজ মাসের ১০ তারিখ পবিত্র ঈদুল আজহার দিনে যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি দিতে হয়; যা হজরত ইবরাহিম (আ.) ও হজরত ইসমাইল (আ.)-এর সুমহান ত্যাগের ঐতিহাসিক স্মৃতি বহন করে চলছে। জমজম কূপও ঠিক তেমনি হজরত ইসমাইল (আ.) ও তাঁর মাতা বিবি হাজেরা (আ.)-এর স্মৃতিচিহ্ন এবং মহান আল্লাহর কুদরতের অপরূপ ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ। হজ মুসলমানদের ঈমানের অন্যতম স্তম্ভ। বায়তুল্লাহ শরিফের তাওয়াফ, আরাফাতের ময়দানে অবস্থান ও হজের মাধ্যমে বিশ্ব মুসলমানদের মহামিলনমেলা ঘটে। তাই মুসলিম মিল্লাতের হূদয়ের মণিকোঠায় কাবাগৃহ চিরভাস্বর হয়ে থাকবে।
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক ও কলাম লেখক।
dr.munimkhan@yahoo.com
No comments