একুশে বইমেলার বাছাই ২১
সঙ্গ প্রসঙ্গের লেখা সরদার ফজলুল করিম প্রকাশক: রোদেলা জীবিত মানুষের চেতনায় নবজন্ম ঘটে মৃত মানুষের। সরদার ফজলুল করিম তাঁর এ লাইনটির মাধ্যমে ‘মানুষ’ পরিচয় ও তার কর্তব্য তুলে ধরেছেন এবং তিনি বাক্যটির যথার্থ বাস্তবায়নও করেছেন। তুলে এনেছেন যথার্থ ‘মানুষ’কে।
তাঁদের মধ্যে কেউ শ্রমিক, কেউ শিক্ষক, কেউ দার্শনিক, কেউ রাজনীতিবিদ, কেউ সাংবাদিক, আবার কেউ বা বিপ্লবী। এঁদের তুলে এনে আবার নতুন প্রজন্মকে জানানোর জন্য সরদার ফজলুল করিম লিখেছেন বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়, লিটলম্যাগ ও স্মারকগ্রন্থে। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থে ‘মানুষ’ নামক মনীষীদের অভাব নেই। তার পরও অগ্রন্থিত রয়েছে কিছু। এমন হয়তো সময়ের অভাবে তিনি তাঁর অতীতের কিছু লেখা গ্রন্থবদ্ধ করে প্রকাশ করতে পারেননি। এমন কিছু অগ্রন্থিত লেখাই রয়েছে এই সঙ্গ প্রসঙ্গের লেখা বইটিতে। সরদার ফজলুল করিমের এই লেখাগুলো সংগ্রহ ও সংকলন করে গ্রন্থ আকারে প্রকাশ করেছেন শেখ রফিক।
মেঘের ওপর বাড়ি
হুমায়ূন আহমেদ
প্রকাশক: অন্যপ্রকাশ
‘লাশকাটা ঘরের পলিথিন বিছানো নোংরা টেবিলে আমার শরীর চিৎ হয়ে আছে। গায়ে কোনো কাপড় নেই। টেবিল থেকে ফিনাইলের কঠিন গন্ধ আসছে। ঘরের জানালা আছে। জানালায় হলুদ রঙের পর্দা ঝুলছে। পর্দা নোংরা। সেখানে কিছু বড় বড় নীল রঙের মাছি বসে আছে। মাছিগুলো কিছুক্ষণ বসে থাকে আবার ও ওড়াউড়ি করে পর্দার ওপর বসে। ঘরের চারটা দেয়ালের একটায় চুনকাম করা হয়েছে। সেখানে কেউ নোংরা কথা লিখেছে।’ মেঘের ওপর বাড়ি বইটিতে লেখক একজন মৃত মানুষের জবানিতে মৃত্যুর পরের মুহূর্তগুলোর কথা বর্ণনা করেছেন। জীবন ও মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে এবং দেহের বন্ধন থেকে আত্মা নামক প্রাণটি চলে যাওয়ার পর তাঁর চারপাশে কী ঘটছে, তা তিনি নিজে পাশে থেকে প্রত্যক্ষ করার কথা বলেছেন। দেহের বন্ধন থেকে আত্মা নামক প্রাণ মহাশূন্যে বিলীন হওয়ার কথা ভেবেছেন।
যারা ভোর এনেছিল
আনিসুল হক
প্রকাশক: প্রথমা প্রকাশন
কলকাতার সিরাজউদ্দৌলা হোস্টেলে শেখ মুজিব ডাকলেন সবাইকে। ব্রিটিশরা বিদায় নিচ্ছে, পাকিস্তান ও ভারত আলাদা আলাদাভাবে স্বাধীন হচ্ছে। এখন কী করা যাবে? ঢাকায় ফিরেই শেখ মুজিব ঝাঁপিয়ে পড়লেন রাষ্ট্রভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে। এমনি প্রেক্ষাপটে পূর্ব বাংলায় আসে ১৯৫২ সাল, আসে একুশে ফেব্রুয়ারি। যাঁরা ইতিহাস নির্মাণ করেছেন, তাঁরাই এ উপন্যাসের চরিত্র। ইতিহাসে সন-তারিখ থাকে; থাকে না ব্যক্তিমানুষের হূদয়ের সংবাদ। যারা ভোর এনেছিল একটি ট্রিলজির প্রথম খণ্ড, যা পাঠকের সামনে রক্ত-মাংসের মানুষ হিসেবে হাজির করবে আমাদের ইতিহাস-নির্মাতাদের। বাংলাদেশের স্বাধীনতা এক দিনে অর্জিত হয়নি, এর পেছনে আছে দীর্ঘদিনের লড়াই-সংগ্রাম। এই আখ্যান আমাদের জানাবে সে কথাই, কিন্তু তা নিছক ইতিহাস হয়ে রইবে না; হয়ে উঠবে কতগুলো মানবচরিত্রের গল্প।
সাংগীতিক স্বাক্ষরতা
আবদুশ শাকুর
প্রকাশক: শুদ্ধস্বর
সংগীত এখন শ্রমের এবং বিশ্রামের উভয়েরই সমান সঙ্গী। এই সদাসক্রিয় সুহূদ সর্বজনেরই বিশ্বস্ত। বিশেষ করে কর্মক্লান্ত দিনের শেষে মানুষ যখন ফুরিয়ে গিয়ে ঘরে ফেরে, তখন সংগীতের নিজস্ব সম্মোহ তার স্বয়ংক্রিয় ক্ষমতায় শ্রোতার সর্বসত্তায় পরিব্যাপ্ত হয়ে জীবন্মৃতকেও অবিলম্বে জীবন্ত করে তোলে। মোদ্দা কথা: জনসাধারণের চতুর্মুখী অস্থিরতার টেনশন-শাসিত এই উদ্বেগজনক বিশ্বে গণসংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দুটি আজ স্থানান্তরিত হয়ে গেছে সংগীতেরই স্বস্তিকর অঙ্গনে। সংগীতকলার ব্যাপকতার সবচেয়ে বড় কারণটি হচ্ছে যেকোনো চারুশিল্পের তুলনায় এ শিল্পটি বলে অধিক এবং বলে তাৎক্ষণিক। ধারণ-বাদন-মুদ্রণ-বিপণনের ভোক্তা-সখা প্রযুক্তির সুবাদে সংগীত আজ সকলেরই প্রথম প্রণয় ও পরম আশ্রয়। আজকের অশান্ত সমাজের যা কিছু সান্ত্বনা, তা যেন শুধু সংগীতের কাছেই পাওনা। এমনি করে আমাদের চিত্ত যখন আজ এতখানি সংগীতাশ্রিত, তখন মগজকেও হতে হবে অনেকখানি সংগীতমনস্ক। অদূর নয় বরং সুদূর ভবিষ্যতের এসব কথা-বার্তা নিয়েই রচিত হয়েছে ‘সাংগীতিক স্বাক্ষরতা’।
বাঙালির মুসলমান সমাজে প্রগতিশীলতা ও রক্ষণশীলতার দ্বন্দ্ব
হাবিব রহমান
প্রকাশক: কথা প্রকাশ
কোনো সমাজ বা সমপ্রদায়ের মধ্যে প্রগতিশীলতা ও রক্ষণশীলতার দ্বন্দ্ব একটা বহমান ব্যাপার। ইতিহাস যখন বাক দেয় তখন এই দ্বন্দ্ব বেশ জোরালো না হলেও দ্বন্দ্বটা কিন্তু থাকেই। পতন-উত্থানের সঙ্গে এর একটা নিবিড় যোগ রয়েছে। বস্তুত, এটি ইতিহাসের নিজস্ব নিয়ম। এই দ্বন্দ্বের পেছনে কেবল দৃষ্টিভঙ্গিগত বা মতাদর্শিক কারণ ক্রিয়াশীল থাকে না, বিশেষভাবে রক্ষণশীলদের পক্ষে থাকে স্বার্থগত নানাবিধ হিসাব-নিকাশ। লেখক বহু তথ্য-উপাত্ত ঘেঁটে এসবেরই উত্তর খুঁজতে চেয়েছেন বইটিতে।
কিছু ধ্যানে কিছুবা বিজ্ঞানে
মহাদেব সাহা
প্রকাশক: কলি প্রকাশনা
কবিতা নিয়ে দেশে-দেশে কবিদের নানা ভাবনা রয়েছে। কবির চিন্তা-চেতনার উন্মোচন ঘটে কবিতায়। কিছু ধ্যানে কিছুবা বিজ্ঞানে কবিতার বইটিতে কবি, মানব জাতির সৃষ্টির শুরু থেকে তার জীবনধারার ক্রমবিকাশ ও জীবনযাপনের ওতপ্রোত সঙ্গী বিজ্ঞানের ও ধ্যানের জয়যাত্রার কথা বলেছেন। কবির মতে, ধ্যান ও বিজ্ঞানের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। জীবন ধারণের প্রয়োজনের তাগিদে তৈরি হয়েছে বিজ্ঞান। আর এই বিজ্ঞানের সৃষ্টি মানবের একাগ্র সাধনা, মনোযোগকে কেন্দ্রভূত করা। আর এই দুয়েই সংযোগেই তৈরি হয় মহাচৈতন্য। এমনই কতগুলো ভাবনার প্রতিফলন ঘটেছে কবিতার বই কিছু ধ্যানে কিছুবা বিজ্ঞানে।
ঘুমের ভিতরে নিদ্রাহীন
আবদুল মান্নান সৈয়দ
প্রকাশক: শুদ্ধস্বর
কবিতার সপ্তসিন্ধু-দশ দিগন্তে বর্ণাঢ্য সফর শেষে জীবনের উপান্তে চলে গেছেন কবি আবদুল সৈয়দ। তাঁর কবিতার বইয়ের মতো ‘ঘুমের ভিতর নিদ্রাহীন’ তিনি। ঘুমের ভিতরে নিদ্রাহীন কবিতার বইয়ের ভূমিকায় কবি লিখেছেন, ‘যে-আমি কবিতা লিখি চিরকাল কোনো আবেগের জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গিয়ে, সেই আমার কী রকম-ভোঁতা-আবেগান্ত-কবিতার পঙিক্ত মাথার ভেতরে ঘুরপাক খেয়ে ফেরে আজকাল। লিখতে ইচ্ছে হয় না। কলম সরে না।’ ঘুমের ভিতরে নিদ্রাহীন-এর ভূমিকা হিসেবে কবি আবদুল মান্নান সৈয়দের সর্বশেষ কবিতাভাবনা সংযোজিত হলো তার মৃত্যুর অব্যবহিত পর (৬ সেপ্টেম্বর ২০১০)। ’
কাবুলের ক্যারাভান সরাই
মঈনুস সুলতান
প্রকাশক: প্রথমা প্রকাশন
যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে দিনের পর দিন ঘুরেছেন মঈনুস সুলতান। মিশেছেন বিচিত্র মানুষের সঙ্গে। যুদ্ধ আফগানদের জীবন বদলে দিয়েছে, বিত্তশালী পরিণত হয়েছে মিসকিনে; তালেবানদের যুগে রুদ্ধ হতে বসেছিল কবি-শিল্পীদের সৃজনশীল কর্মকাণ্ড এবং এর ভেতরেই তাঁরা সৃষ্টির জন্য নতুন নতুন পথ বেছে নিয়েছেন—এসব কাহিনির মর্মন্তুদ, কৌতূহলোদ্দীপক ও সরস বর্ণনা দিয়েছেন লেখক এই বইয়ে।
ইয়াহিয়া কাল
নির্মলেন্দু গুণ
প্রকাশক: আবিষ্কার
বইটিতে কবিতার আকারে বর্ণনা করা হয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের আখ্যান। বহু বেদনাদীর্ণ ঘটনাকে পরিবেশন করেছেন কিছুটা ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের মোড়কে। ইয়াহিয়ার শোষণের বর্ণনার থেকে তাঁর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে কবিতার বইটি। ইতিহাস না জানা ও ইতিহাস ভুলে যাওয়া বিস্তৃতিপ্রবণ বাঙালির কাছে স্বল্প পরিসরে মুক্তিযুদ্ধের অবিকৃত ইতিহাস বর্ণনা করেছেন কবি।
লড়াকু পটুয়া
হাসনাত আবদুল হাই
প্রকাশক: আগামী প্রকাশনী
ডকুমেন্টারি ভঙ্গিতে লেখা লড়াকু পটুয়া শিল্পী কামরুল হাসানের জীবনীভিত্তিক উপন্যাস। সুলতান, নভেরা এবং একজন আরজ আলী লেখার অনেক বছর পর আরও একটি জীবনীভিত্তিক উপন্যাস লিখেছেন লেখক। কামরুল হাসান আধুনিক শিল্প শিক্ষায় শিক্ষিত হলেও বাংলার গ্রামীণ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, বিশেষ করে লোকনৃত্য, কারুশিল্প ও পটচিত্রের প্রতি আকৃষ্ট হন, যা তাঁর চিত্রকর্মে ক্রমেই প্রাধান্য পেয়ে তাঁকে ‘পটুয়া’ অভিধায় অভিষিক্ত করেছে। যামিনী রায়ের সঙ্গে তুলনা করা হলেও কামরুল হাসান এই পটশিল্পের আধুনিকায়ন করেছেন সবচেয়ে বেশি সফলভাবে যে কথা বলা হয়েছে এ উপন্যাসে।
রুপ-রুপালী
মুহাম্মদ জাফর ইকবাল
প্রকাশক: সময় প্রকাশনী
রুপা খুব ভালো করে জানে কেউ আদর দিয়ে তার মাথা খায়নি। তাদের তিন ভাইবোনের মাঝে সে কালো এবং একটু মোটা। তার চেহারাটাও এমন কিছু আহামরি না, চোখে ভারী চশমা থাকার কারনে চোখগুলো দেখায় ছোট ছোট। সেই ছোট থেকে সে লক্ষ করেছে আব্বু আম্মুর আদর সোহাগ তার বড় বোন তিয়াশা আর ছোট ভাই মিঠুনের জন্যে। তার জন্যে কখনোই কিছু ছিল না। রুপ-রুপালী এই সাদামাটা রুপা, তার বন্ধু-বান্ধব এবং তার নিজস্ব জগতের গল্প। গল্পটা মমতার,ভালোবাসার এবং অন্য এক আলোর।
অনন্য জীবনানন্দ
ক্লিন্টন বি সিলি
প্রকাশক: প্রথমা প্রকাশন
১৯৫৪ সালে ট্রাম দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন জীবনানন্দ দাশ। এরপর রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতার প্রধান পুরুষ হয়ে ওঠেন এই কবি। তাঁর গভীর প্রভাব বাংলা কবিতার চেহারা পাল্টে দেয়। আধুনিক বাঙালি পাঠকের রুচির পরিবর্তনে তাঁর কবিতার অনির্বচনীয় অভিজ্ঞতা মুখ্য ভূমিকা পালন করে। মার্কিন গবেষক ক্লিন্টন বি সিলি ষাটের দশকে দুই বছর বরিশালে ছিলেন। কিন্তু তখনো জীবনানন্দ দাশের কবিতার সঙ্গে তাঁর পরিচয় ঘটেনি। পরিচয় ঘটে নিজের দেশে ফিরে যাওয়ার পর। এই কবি সম্পর্কে তাঁর গভীর গবেষণালব্দ তথ্য ও অন্তর্দৃষ্টিময় বিশ্লেষণ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত হয় আ পোয়েট । এ বইয়ের মধ্য দিয়ে উঠে আসে ব্যক্তিজীবনে জীবনানন্দ দাশের এক সামগ্রিক ও অনুপুঙ্খ চিত্র।
কবচকুণ্ডল
নাসরীন জাহান
প্রকাশক: অন্য প্রকাশ
কবচকুণ্ডল-এর কাহিনি কী? বিষয় কী? এমন প্রশ্নে বিব্রত লেখক কখনো বলেন, এই যে দেশ থেকে সবুজ কেটে ফেলা হচ্ছে। এই যে এক প্রজন্মের সঙ্গে আরেক প্রজন্মের চিরায়ত দ্বন্দের টানাপোড়েন চলছে। এই যে দাম্পত্য ভাঙছে, কিন্তু তা জোড়া লাগাতে মুখে রক্ত তুলে ফেলেছে অনেকেই। অথবা, দুজন ছেলে আর মেয়ের দীর্ঘজীবনের পবিত্র সম্পর্কের ভাঙনহীনতা অথবা....এ কি বয়ান করার বিষয়? গল্পটা এ রকম, নওশীন আর তার স্বামী শফিউলের দাম্পত্য টানাপোড়েনের মধ্যে এখানে ‘সময়’ কখনো প্রধান চরিত্র। নওশীনের গর্ভের দুই সন্তানের এক সন্তান অটিস্টিক...বড় হতে থাকে যেন বা কাকের ঘরে কোকিলের বাচ্চার মতো। এই উপন্যাসের চরিত্রদের আছে একটি শতাব্দী পেরোনোর দুর্লভ অভিজ্ঞতা। ক্রমাগত প্রযুক্তির বিবর্তনের সাথে সাথে নিঃশ্বাসহীন দৌড়।
বাঙালির পল্টন
ব্রিটিশ ভারতের বাঙালি রেজিমেন্ট
মুহাম্মদ লুৎফুল হক
প্রকাশক: প্রথমা প্রকাশন
বাঙালির সামাজিক ইতিহাসে বাঙালি পল্টন একটি মাইলফলক। বাঙালি পল্টনের মাধ্যমে বাঙালির আধুনিক সামরিক ইতিহাসের যাত্রা শুরু। প্রবল সামাজিক আন্দোলনের ফসল এই বাঙালি পল্টন। এর গঠনকালে বাঙালি একবারেই সামরিক ঐতিহ্যবিহীন জাতি। প্রথম মহাযুদ্ধকালে গঠিত এই পল্টনের জন্য সারা বাংলা থেকে প্রায় ছয় হাজার সৈনিক সংগ্রহ করা হয়। এদের একটা অংশ মেসোপটেমিয়া আর কুর্দিস্তান রণাঙ্গনে যোগ দেয়। অন্যরা করাচি, কলকাতা আর ঢাকায় অবস্থান করে। পল্টনটির আয়ুষ্কাল ছিল মাত্র চার বছর। বাঙালি পল্টন গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে এ পল্টনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।
উয়ারী-বটেশ্বর শেকড়ের সন্ধানে
সুফি মোস্তাফিজুর রহমান ও মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ পাঠান
প্রকাশক: প্রথমা প্রকাশন
উয়ারী বটেশ্বর সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের সবচেয়ে আলোচিত প্রত্নস্থান। এ অঞ্চলে ৫০টি প্রত্নস্থান থেকে আবিষ্কৃত হচ্ছে প্রাগৈতিহাসিক যুগের পাথর ও প্রস্তরীভূত জীবাশ্ম-কাঠের হাতিয়ার, তাম্য-প্রস্তর সংস্কৃতির গর্ত-বসতি এবং বাংলাদেশের ইতিহাস নতুন করে লেখার তাৎপর্যপূর্ণ সব প্রত্নবস্তু। এ উয়ারী বটেশ্বর ছিল বাংলাদেশের প্রাচীনতম মহা জনপদ। ভারতীয় মহাদেশের আদি-ঐতিহাসিক কালের অনেক নগর এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ভূমধ্যসাগর অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল এ জনপদের।
দিনবদল, গণতান্ত্রিক শাসন ও সম্ভাবনার বাংলাদেশ
বদিউল আলম মজুমদার
প্রকাশক: আগামী
অমিত সম্ভাবনার দেশ বাংলাদেশ। এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জন্ম এ দেশের। একটি গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও ন্যায়পরায়ণভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা ছিল মুক্তিযুদ্ধের মূল প্রেরণা। কিন্তু স্বাধীনতার পরও আমরা এগুলো অর্জন করতে পারিনি। গণতন্ত্র এখনো প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি এ দেশে। ধর্মীয় উগ্রবাদের কুৎসিত থাবা আজ প্রায় ঘাড়ের ওপর। এমনি এক দুঃসহ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন দিনবদল। আর দিনবদলের জন্য প্রয়োজন সমাজ-রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে, বিষেশত রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে মৌলিক পরিবর্তন।
রামগোলাম
হরিশংকর জলদাস
প্রকাশক: প্রথমা প্রকাশন
রামগোলাম হরিজনদের জীবনভাষ্য। ব্রহ্মা নাকি শুধু বিষ্ঠা সাফ করানোর জন্য নিজের শরীরের ময়লা থেকে মহীথর সৃষ্টি করেছিলেন। সেই সৃষ্টিকাল থেকে আজ পর্যন্ত তারা আজও অচ্ছুত। ময়লা পরিষ্কার করার জন্য কানপুর, এলাহাবাদ প্রভৃতি জায়গা থেকে এই সম্প্রদায়কে মোগল নবাব আর ইংরেজরা এ দেশে এনেছিল। নানা সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছিল তাদের। কিন্তু এখন তাদের কোণঠাসা অবস্থা। পর্যাপ্ত থাকার ঘর নেই, পানি নেই; কেড়ে নেওয়া হচ্ছে তাদের ঘর, বিদায় করে দেওয়া হচ্ছে চাকরি থেকে; তাদের প্রথা-সংস্কার-ধর্মবিশ্বাসকে ধ্বংস করার চেষ্টা চলছে। প্রকাশ্যে তাদের স্পর্শ করতে বাধে, কিন্তু গোপনে তাদের ভোগ করতে দ্বিধা হয় না। মেথরদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় মিশে দলিত, অধিকারবঞ্চিত এই সম্প্রদায়কে নিয়ে হরিশংকর এমন একটি উপন্যাস লিখেছেন, যেখানে মহাভারত, মনুসিংহতা, পুরাণকথা, আর বর্তমানের মেথরজীবন একাকার হয়ে উঠেছে।
স্বাধীনতা ব্যবসায়
সলিমুল্লাহ খান
প্রকাশক: আগামী প্রকাশনী
ইতিহাস কারখানা গ্রন্থমালার তৃতীয় ভাগ প্রকাশ পেয়েছে স্বাধীনতা ব্যবসায় নামে। স্বাধীনতা ব্যবসায় বইটির সব লেখাই পূর্বপ্রকাশিত। এই ইতিহাস কারখানার প্রথম ভাগের চুম্বক অংশ ছিল এরাক যুদ্ধ। একই ধাঁচে বলতে ফিলিস্তিন আর আফগানিস্তানের প্রতিরোধ সংগ্রাম ছিল দ্বিতীয় ভাগের ভরকেন্দ্র। সে অনুসারে স্বাধীনতা ব্যবসায়ী বুলির আড়ালে জগৎজোড়া ন্যায় বিসর্জণের যে মহামারি, তাহাই স্বাধীনতা ব্যবসায় বৃত্তের পরিধি। এই বইয়ে সলিমুল্লাহ খান জাঁ-জাক রুশো থেকে মিশেল ফুকো দি ক্লদ লেবিস্ত্রোস অবধি কাউকে ছেড়ে কথা বলেননি। মাহাত্মা গান্ধী থেকে নাসির আলী মামুন প্রভৃতি মনীষীর চিন্তা আমলে নিয়ে দেখেছেন তাঁদের অনেকের চিন্তাই স্বাধীনতা ব্যবসায় অতিক্রম করেনি।
বাচনিক আত্মজৈবনিক
হাসান আজিজুল হক
প্রকাশক: মাওলা ব্রাদার্স
নিজের জীবনের কিছু কথা আর দেশের জীবনের অনেক কথা নিয়ে হাসান আজিজুল হকের এই বই। বইটিতে লেখক শিক্ষা, রাজনীতি, সাংবাদিকতা, সংবাদপত্র শিল্প নিয়ে নিজের ভাবনার কথা লিখেছেন। সাতচল্লিশের দেশভাগ আর একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের কথাও ফুটে উঠেছে বাচনিক আত্মজৈবনিক বইয়ে। দেশ, রাজনীতি, ইতিহাস, সাহিত্য, সংগীত, নাটক সম্পর্কে তাঁর চিন্তার পাশাপাশি তাঁর নিজের ব্যক্তিগত জীবনের অনেক টুকরো টুকরো ঘটনার জলছবির কথা বলা হয়েছে এ বইয়ে।
শ্রেষ্ঠ কবিতা
তসলিমা নাসরিন
প্রকাশক: আগামী প্রকাশন
তসলিমা নাসরিনের শ্রেষ্ঠ কবিতার বইয়ের ব্যাপারে তিনি কবিতার কথা বলেন, ‘কবিতা দিয়ে আমার সাহিত্য-জীবনের শুরু। দুঃখে-সুখে, আনন্দ-বিষাদে কবিতার কাছে এখনো নিজেকে আমি সমর্পণ করি। গদ্যে আমি ঝলসে উঠি হয়তো, পদ্য তার শান্ত স্নিগ্ধ জলে আমাকে স্নান করিয়ে নেয়। গদ্য-পদ্য দুটোই আমার জীবনের জন্য জরুরি। শ্রেষ্ঠ কবিতার সংকলনের ব্যাপারে তাঁর ভাষ্য, ‘কোনো কবির শ্রেষ্ঠ কবিতার সংকলন তখনই বের হওয়া উচিত, যখন সে আর বেঁচে নেই, অথবা বেঁচে থাকলেও কবিতা সে আর লেখে না। আমার ক্ষেত্রে এ দুটোর কোনো ঘটনাই এখন অবধি ঘটেনি। আমি প্রচণ্ডভাবে বেঁচে আছি এবং প্রচুর কবিতাও লিখে যাচ্ছি।’
উনিশ শতকের মধ্যশ্রেণি ও বাংলা সাহিত্য
আবুল কাশেম ফজলুল হক
প্রকাশক: জাগৃতি প্রকাশনী
ব্রিটিশ-শাসিত বাংলার সমাজব্যবস্থা ও জনজীবনের পুর্নগঠন, বাঙালির জাগরণ, নতুন সাহিত্য সৃষ্টি এবং ধর্মসংস্কার ও সমাজসংস্কার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালির অসামান্য সৃষ্টিশক্তির অভিব্যক্তি ইত্যাদির চিত্তাকর্ষক বর্ণনা আছে এ-গ্রন্থে। আবুল কাশেম ফজলুল হক ইতিহাসকে মনে করেন পরিবর্তনের রহস্য উদ্ঘাটনের আর বিভিন্নমুখী সম্ভাবনার বাস্তবসম্মত চিত্র অঙ্কনের প্রয়াস। বর্তমান গ্রন্থে তাঁর পর্যবেক্ষণ: রামমোহন-ভবানীচরণ-ঈশ্বরগুপ্তের হাতে বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগের শৈশব, প্যারীচাঁদ-বিদ্যাসাগর-মধুসূদন-দীনবন্ধুর হাতে কৈশোর, বঙ্কিমে যৌবনের উন্মেষ, রবীন্দ্রনাথে যৌবন শরৎচন্দ্রের পর আধুনিকতাবাদীদের হাতে প্রৌঢ়ত্ব ও বার্ধক্য।
গ্রন্থনা: জিয়াউর রহমান চৌধুরী ও আসাদুজ্জামান
মেঘের ওপর বাড়ি
হুমায়ূন আহমেদ
প্রকাশক: অন্যপ্রকাশ
‘লাশকাটা ঘরের পলিথিন বিছানো নোংরা টেবিলে আমার শরীর চিৎ হয়ে আছে। গায়ে কোনো কাপড় নেই। টেবিল থেকে ফিনাইলের কঠিন গন্ধ আসছে। ঘরের জানালা আছে। জানালায় হলুদ রঙের পর্দা ঝুলছে। পর্দা নোংরা। সেখানে কিছু বড় বড় নীল রঙের মাছি বসে আছে। মাছিগুলো কিছুক্ষণ বসে থাকে আবার ও ওড়াউড়ি করে পর্দার ওপর বসে। ঘরের চারটা দেয়ালের একটায় চুনকাম করা হয়েছে। সেখানে কেউ নোংরা কথা লিখেছে।’ মেঘের ওপর বাড়ি বইটিতে লেখক একজন মৃত মানুষের জবানিতে মৃত্যুর পরের মুহূর্তগুলোর কথা বর্ণনা করেছেন। জীবন ও মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে এবং দেহের বন্ধন থেকে আত্মা নামক প্রাণটি চলে যাওয়ার পর তাঁর চারপাশে কী ঘটছে, তা তিনি নিজে পাশে থেকে প্রত্যক্ষ করার কথা বলেছেন। দেহের বন্ধন থেকে আত্মা নামক প্রাণ মহাশূন্যে বিলীন হওয়ার কথা ভেবেছেন।
যারা ভোর এনেছিল
আনিসুল হক
প্রকাশক: প্রথমা প্রকাশন
কলকাতার সিরাজউদ্দৌলা হোস্টেলে শেখ মুজিব ডাকলেন সবাইকে। ব্রিটিশরা বিদায় নিচ্ছে, পাকিস্তান ও ভারত আলাদা আলাদাভাবে স্বাধীন হচ্ছে। এখন কী করা যাবে? ঢাকায় ফিরেই শেখ মুজিব ঝাঁপিয়ে পড়লেন রাষ্ট্রভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে। এমনি প্রেক্ষাপটে পূর্ব বাংলায় আসে ১৯৫২ সাল, আসে একুশে ফেব্রুয়ারি। যাঁরা ইতিহাস নির্মাণ করেছেন, তাঁরাই এ উপন্যাসের চরিত্র। ইতিহাসে সন-তারিখ থাকে; থাকে না ব্যক্তিমানুষের হূদয়ের সংবাদ। যারা ভোর এনেছিল একটি ট্রিলজির প্রথম খণ্ড, যা পাঠকের সামনে রক্ত-মাংসের মানুষ হিসেবে হাজির করবে আমাদের ইতিহাস-নির্মাতাদের। বাংলাদেশের স্বাধীনতা এক দিনে অর্জিত হয়নি, এর পেছনে আছে দীর্ঘদিনের লড়াই-সংগ্রাম। এই আখ্যান আমাদের জানাবে সে কথাই, কিন্তু তা নিছক ইতিহাস হয়ে রইবে না; হয়ে উঠবে কতগুলো মানবচরিত্রের গল্প।
সাংগীতিক স্বাক্ষরতা
আবদুশ শাকুর
প্রকাশক: শুদ্ধস্বর
সংগীত এখন শ্রমের এবং বিশ্রামের উভয়েরই সমান সঙ্গী। এই সদাসক্রিয় সুহূদ সর্বজনেরই বিশ্বস্ত। বিশেষ করে কর্মক্লান্ত দিনের শেষে মানুষ যখন ফুরিয়ে গিয়ে ঘরে ফেরে, তখন সংগীতের নিজস্ব সম্মোহ তার স্বয়ংক্রিয় ক্ষমতায় শ্রোতার সর্বসত্তায় পরিব্যাপ্ত হয়ে জীবন্মৃতকেও অবিলম্বে জীবন্ত করে তোলে। মোদ্দা কথা: জনসাধারণের চতুর্মুখী অস্থিরতার টেনশন-শাসিত এই উদ্বেগজনক বিশ্বে গণসংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দুটি আজ স্থানান্তরিত হয়ে গেছে সংগীতেরই স্বস্তিকর অঙ্গনে। সংগীতকলার ব্যাপকতার সবচেয়ে বড় কারণটি হচ্ছে যেকোনো চারুশিল্পের তুলনায় এ শিল্পটি বলে অধিক এবং বলে তাৎক্ষণিক। ধারণ-বাদন-মুদ্রণ-বিপণনের ভোক্তা-সখা প্রযুক্তির সুবাদে সংগীত আজ সকলেরই প্রথম প্রণয় ও পরম আশ্রয়। আজকের অশান্ত সমাজের যা কিছু সান্ত্বনা, তা যেন শুধু সংগীতের কাছেই পাওনা। এমনি করে আমাদের চিত্ত যখন আজ এতখানি সংগীতাশ্রিত, তখন মগজকেও হতে হবে অনেকখানি সংগীতমনস্ক। অদূর নয় বরং সুদূর ভবিষ্যতের এসব কথা-বার্তা নিয়েই রচিত হয়েছে ‘সাংগীতিক স্বাক্ষরতা’।
বাঙালির মুসলমান সমাজে প্রগতিশীলতা ও রক্ষণশীলতার দ্বন্দ্ব
হাবিব রহমান
প্রকাশক: কথা প্রকাশ
কোনো সমাজ বা সমপ্রদায়ের মধ্যে প্রগতিশীলতা ও রক্ষণশীলতার দ্বন্দ্ব একটা বহমান ব্যাপার। ইতিহাস যখন বাক দেয় তখন এই দ্বন্দ্ব বেশ জোরালো না হলেও দ্বন্দ্বটা কিন্তু থাকেই। পতন-উত্থানের সঙ্গে এর একটা নিবিড় যোগ রয়েছে। বস্তুত, এটি ইতিহাসের নিজস্ব নিয়ম। এই দ্বন্দ্বের পেছনে কেবল দৃষ্টিভঙ্গিগত বা মতাদর্শিক কারণ ক্রিয়াশীল থাকে না, বিশেষভাবে রক্ষণশীলদের পক্ষে থাকে স্বার্থগত নানাবিধ হিসাব-নিকাশ। লেখক বহু তথ্য-উপাত্ত ঘেঁটে এসবেরই উত্তর খুঁজতে চেয়েছেন বইটিতে।
কিছু ধ্যানে কিছুবা বিজ্ঞানে
মহাদেব সাহা
প্রকাশক: কলি প্রকাশনা
কবিতা নিয়ে দেশে-দেশে কবিদের নানা ভাবনা রয়েছে। কবির চিন্তা-চেতনার উন্মোচন ঘটে কবিতায়। কিছু ধ্যানে কিছুবা বিজ্ঞানে কবিতার বইটিতে কবি, মানব জাতির সৃষ্টির শুরু থেকে তার জীবনধারার ক্রমবিকাশ ও জীবনযাপনের ওতপ্রোত সঙ্গী বিজ্ঞানের ও ধ্যানের জয়যাত্রার কথা বলেছেন। কবির মতে, ধ্যান ও বিজ্ঞানের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। জীবন ধারণের প্রয়োজনের তাগিদে তৈরি হয়েছে বিজ্ঞান। আর এই বিজ্ঞানের সৃষ্টি মানবের একাগ্র সাধনা, মনোযোগকে কেন্দ্রভূত করা। আর এই দুয়েই সংযোগেই তৈরি হয় মহাচৈতন্য। এমনই কতগুলো ভাবনার প্রতিফলন ঘটেছে কবিতার বই কিছু ধ্যানে কিছুবা বিজ্ঞানে।
ঘুমের ভিতরে নিদ্রাহীন
আবদুল মান্নান সৈয়দ
প্রকাশক: শুদ্ধস্বর
কবিতার সপ্তসিন্ধু-দশ দিগন্তে বর্ণাঢ্য সফর শেষে জীবনের উপান্তে চলে গেছেন কবি আবদুল সৈয়দ। তাঁর কবিতার বইয়ের মতো ‘ঘুমের ভিতর নিদ্রাহীন’ তিনি। ঘুমের ভিতরে নিদ্রাহীন কবিতার বইয়ের ভূমিকায় কবি লিখেছেন, ‘যে-আমি কবিতা লিখি চিরকাল কোনো আবেগের জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গিয়ে, সেই আমার কী রকম-ভোঁতা-আবেগান্ত-কবিতার পঙিক্ত মাথার ভেতরে ঘুরপাক খেয়ে ফেরে আজকাল। লিখতে ইচ্ছে হয় না। কলম সরে না।’ ঘুমের ভিতরে নিদ্রাহীন-এর ভূমিকা হিসেবে কবি আবদুল মান্নান সৈয়দের সর্বশেষ কবিতাভাবনা সংযোজিত হলো তার মৃত্যুর অব্যবহিত পর (৬ সেপ্টেম্বর ২০১০)। ’
কাবুলের ক্যারাভান সরাই
মঈনুস সুলতান
প্রকাশক: প্রথমা প্রকাশন
যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে দিনের পর দিন ঘুরেছেন মঈনুস সুলতান। মিশেছেন বিচিত্র মানুষের সঙ্গে। যুদ্ধ আফগানদের জীবন বদলে দিয়েছে, বিত্তশালী পরিণত হয়েছে মিসকিনে; তালেবানদের যুগে রুদ্ধ হতে বসেছিল কবি-শিল্পীদের সৃজনশীল কর্মকাণ্ড এবং এর ভেতরেই তাঁরা সৃষ্টির জন্য নতুন নতুন পথ বেছে নিয়েছেন—এসব কাহিনির মর্মন্তুদ, কৌতূহলোদ্দীপক ও সরস বর্ণনা দিয়েছেন লেখক এই বইয়ে।
ইয়াহিয়া কাল
নির্মলেন্দু গুণ
প্রকাশক: আবিষ্কার
বইটিতে কবিতার আকারে বর্ণনা করা হয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের আখ্যান। বহু বেদনাদীর্ণ ঘটনাকে পরিবেশন করেছেন কিছুটা ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের মোড়কে। ইয়াহিয়ার শোষণের বর্ণনার থেকে তাঁর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে কবিতার বইটি। ইতিহাস না জানা ও ইতিহাস ভুলে যাওয়া বিস্তৃতিপ্রবণ বাঙালির কাছে স্বল্প পরিসরে মুক্তিযুদ্ধের অবিকৃত ইতিহাস বর্ণনা করেছেন কবি।
লড়াকু পটুয়া
হাসনাত আবদুল হাই
প্রকাশক: আগামী প্রকাশনী
ডকুমেন্টারি ভঙ্গিতে লেখা লড়াকু পটুয়া শিল্পী কামরুল হাসানের জীবনীভিত্তিক উপন্যাস। সুলতান, নভেরা এবং একজন আরজ আলী লেখার অনেক বছর পর আরও একটি জীবনীভিত্তিক উপন্যাস লিখেছেন লেখক। কামরুল হাসান আধুনিক শিল্প শিক্ষায় শিক্ষিত হলেও বাংলার গ্রামীণ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, বিশেষ করে লোকনৃত্য, কারুশিল্প ও পটচিত্রের প্রতি আকৃষ্ট হন, যা তাঁর চিত্রকর্মে ক্রমেই প্রাধান্য পেয়ে তাঁকে ‘পটুয়া’ অভিধায় অভিষিক্ত করেছে। যামিনী রায়ের সঙ্গে তুলনা করা হলেও কামরুল হাসান এই পটশিল্পের আধুনিকায়ন করেছেন সবচেয়ে বেশি সফলভাবে যে কথা বলা হয়েছে এ উপন্যাসে।
রুপ-রুপালী
মুহাম্মদ জাফর ইকবাল
প্রকাশক: সময় প্রকাশনী
রুপা খুব ভালো করে জানে কেউ আদর দিয়ে তার মাথা খায়নি। তাদের তিন ভাইবোনের মাঝে সে কালো এবং একটু মোটা। তার চেহারাটাও এমন কিছু আহামরি না, চোখে ভারী চশমা থাকার কারনে চোখগুলো দেখায় ছোট ছোট। সেই ছোট থেকে সে লক্ষ করেছে আব্বু আম্মুর আদর সোহাগ তার বড় বোন তিয়াশা আর ছোট ভাই মিঠুনের জন্যে। তার জন্যে কখনোই কিছু ছিল না। রুপ-রুপালী এই সাদামাটা রুপা, তার বন্ধু-বান্ধব এবং তার নিজস্ব জগতের গল্প। গল্পটা মমতার,ভালোবাসার এবং অন্য এক আলোর।
অনন্য জীবনানন্দ
ক্লিন্টন বি সিলি
প্রকাশক: প্রথমা প্রকাশন
১৯৫৪ সালে ট্রাম দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন জীবনানন্দ দাশ। এরপর রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতার প্রধান পুরুষ হয়ে ওঠেন এই কবি। তাঁর গভীর প্রভাব বাংলা কবিতার চেহারা পাল্টে দেয়। আধুনিক বাঙালি পাঠকের রুচির পরিবর্তনে তাঁর কবিতার অনির্বচনীয় অভিজ্ঞতা মুখ্য ভূমিকা পালন করে। মার্কিন গবেষক ক্লিন্টন বি সিলি ষাটের দশকে দুই বছর বরিশালে ছিলেন। কিন্তু তখনো জীবনানন্দ দাশের কবিতার সঙ্গে তাঁর পরিচয় ঘটেনি। পরিচয় ঘটে নিজের দেশে ফিরে যাওয়ার পর। এই কবি সম্পর্কে তাঁর গভীর গবেষণালব্দ তথ্য ও অন্তর্দৃষ্টিময় বিশ্লেষণ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত হয় আ পোয়েট । এ বইয়ের মধ্য দিয়ে উঠে আসে ব্যক্তিজীবনে জীবনানন্দ দাশের এক সামগ্রিক ও অনুপুঙ্খ চিত্র।
কবচকুণ্ডল
নাসরীন জাহান
প্রকাশক: অন্য প্রকাশ
কবচকুণ্ডল-এর কাহিনি কী? বিষয় কী? এমন প্রশ্নে বিব্রত লেখক কখনো বলেন, এই যে দেশ থেকে সবুজ কেটে ফেলা হচ্ছে। এই যে এক প্রজন্মের সঙ্গে আরেক প্রজন্মের চিরায়ত দ্বন্দের টানাপোড়েন চলছে। এই যে দাম্পত্য ভাঙছে, কিন্তু তা জোড়া লাগাতে মুখে রক্ত তুলে ফেলেছে অনেকেই। অথবা, দুজন ছেলে আর মেয়ের দীর্ঘজীবনের পবিত্র সম্পর্কের ভাঙনহীনতা অথবা....এ কি বয়ান করার বিষয়? গল্পটা এ রকম, নওশীন আর তার স্বামী শফিউলের দাম্পত্য টানাপোড়েনের মধ্যে এখানে ‘সময়’ কখনো প্রধান চরিত্র। নওশীনের গর্ভের দুই সন্তানের এক সন্তান অটিস্টিক...বড় হতে থাকে যেন বা কাকের ঘরে কোকিলের বাচ্চার মতো। এই উপন্যাসের চরিত্রদের আছে একটি শতাব্দী পেরোনোর দুর্লভ অভিজ্ঞতা। ক্রমাগত প্রযুক্তির বিবর্তনের সাথে সাথে নিঃশ্বাসহীন দৌড়।
বাঙালির পল্টন
ব্রিটিশ ভারতের বাঙালি রেজিমেন্ট
মুহাম্মদ লুৎফুল হক
প্রকাশক: প্রথমা প্রকাশন
বাঙালির সামাজিক ইতিহাসে বাঙালি পল্টন একটি মাইলফলক। বাঙালি পল্টনের মাধ্যমে বাঙালির আধুনিক সামরিক ইতিহাসের যাত্রা শুরু। প্রবল সামাজিক আন্দোলনের ফসল এই বাঙালি পল্টন। এর গঠনকালে বাঙালি একবারেই সামরিক ঐতিহ্যবিহীন জাতি। প্রথম মহাযুদ্ধকালে গঠিত এই পল্টনের জন্য সারা বাংলা থেকে প্রায় ছয় হাজার সৈনিক সংগ্রহ করা হয়। এদের একটা অংশ মেসোপটেমিয়া আর কুর্দিস্তান রণাঙ্গনে যোগ দেয়। অন্যরা করাচি, কলকাতা আর ঢাকায় অবস্থান করে। পল্টনটির আয়ুষ্কাল ছিল মাত্র চার বছর। বাঙালি পল্টন গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে এ পল্টনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।
উয়ারী-বটেশ্বর শেকড়ের সন্ধানে
সুফি মোস্তাফিজুর রহমান ও মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ পাঠান
প্রকাশক: প্রথমা প্রকাশন
উয়ারী বটেশ্বর সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের সবচেয়ে আলোচিত প্রত্নস্থান। এ অঞ্চলে ৫০টি প্রত্নস্থান থেকে আবিষ্কৃত হচ্ছে প্রাগৈতিহাসিক যুগের পাথর ও প্রস্তরীভূত জীবাশ্ম-কাঠের হাতিয়ার, তাম্য-প্রস্তর সংস্কৃতির গর্ত-বসতি এবং বাংলাদেশের ইতিহাস নতুন করে লেখার তাৎপর্যপূর্ণ সব প্রত্নবস্তু। এ উয়ারী বটেশ্বর ছিল বাংলাদেশের প্রাচীনতম মহা জনপদ। ভারতীয় মহাদেশের আদি-ঐতিহাসিক কালের অনেক নগর এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ভূমধ্যসাগর অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল এ জনপদের।
দিনবদল, গণতান্ত্রিক শাসন ও সম্ভাবনার বাংলাদেশ
বদিউল আলম মজুমদার
প্রকাশক: আগামী
অমিত সম্ভাবনার দেশ বাংলাদেশ। এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জন্ম এ দেশের। একটি গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও ন্যায়পরায়ণভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা ছিল মুক্তিযুদ্ধের মূল প্রেরণা। কিন্তু স্বাধীনতার পরও আমরা এগুলো অর্জন করতে পারিনি। গণতন্ত্র এখনো প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি এ দেশে। ধর্মীয় উগ্রবাদের কুৎসিত থাবা আজ প্রায় ঘাড়ের ওপর। এমনি এক দুঃসহ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন দিনবদল। আর দিনবদলের জন্য প্রয়োজন সমাজ-রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে, বিষেশত রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে মৌলিক পরিবর্তন।
রামগোলাম
হরিশংকর জলদাস
প্রকাশক: প্রথমা প্রকাশন
রামগোলাম হরিজনদের জীবনভাষ্য। ব্রহ্মা নাকি শুধু বিষ্ঠা সাফ করানোর জন্য নিজের শরীরের ময়লা থেকে মহীথর সৃষ্টি করেছিলেন। সেই সৃষ্টিকাল থেকে আজ পর্যন্ত তারা আজও অচ্ছুত। ময়লা পরিষ্কার করার জন্য কানপুর, এলাহাবাদ প্রভৃতি জায়গা থেকে এই সম্প্রদায়কে মোগল নবাব আর ইংরেজরা এ দেশে এনেছিল। নানা সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছিল তাদের। কিন্তু এখন তাদের কোণঠাসা অবস্থা। পর্যাপ্ত থাকার ঘর নেই, পানি নেই; কেড়ে নেওয়া হচ্ছে তাদের ঘর, বিদায় করে দেওয়া হচ্ছে চাকরি থেকে; তাদের প্রথা-সংস্কার-ধর্মবিশ্বাসকে ধ্বংস করার চেষ্টা চলছে। প্রকাশ্যে তাদের স্পর্শ করতে বাধে, কিন্তু গোপনে তাদের ভোগ করতে দ্বিধা হয় না। মেথরদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় মিশে দলিত, অধিকারবঞ্চিত এই সম্প্রদায়কে নিয়ে হরিশংকর এমন একটি উপন্যাস লিখেছেন, যেখানে মহাভারত, মনুসিংহতা, পুরাণকথা, আর বর্তমানের মেথরজীবন একাকার হয়ে উঠেছে।
স্বাধীনতা ব্যবসায়
সলিমুল্লাহ খান
প্রকাশক: আগামী প্রকাশনী
ইতিহাস কারখানা গ্রন্থমালার তৃতীয় ভাগ প্রকাশ পেয়েছে স্বাধীনতা ব্যবসায় নামে। স্বাধীনতা ব্যবসায় বইটির সব লেখাই পূর্বপ্রকাশিত। এই ইতিহাস কারখানার প্রথম ভাগের চুম্বক অংশ ছিল এরাক যুদ্ধ। একই ধাঁচে বলতে ফিলিস্তিন আর আফগানিস্তানের প্রতিরোধ সংগ্রাম ছিল দ্বিতীয় ভাগের ভরকেন্দ্র। সে অনুসারে স্বাধীনতা ব্যবসায়ী বুলির আড়ালে জগৎজোড়া ন্যায় বিসর্জণের যে মহামারি, তাহাই স্বাধীনতা ব্যবসায় বৃত্তের পরিধি। এই বইয়ে সলিমুল্লাহ খান জাঁ-জাক রুশো থেকে মিশেল ফুকো দি ক্লদ লেবিস্ত্রোস অবধি কাউকে ছেড়ে কথা বলেননি। মাহাত্মা গান্ধী থেকে নাসির আলী মামুন প্রভৃতি মনীষীর চিন্তা আমলে নিয়ে দেখেছেন তাঁদের অনেকের চিন্তাই স্বাধীনতা ব্যবসায় অতিক্রম করেনি।
বাচনিক আত্মজৈবনিক
হাসান আজিজুল হক
প্রকাশক: মাওলা ব্রাদার্স
নিজের জীবনের কিছু কথা আর দেশের জীবনের অনেক কথা নিয়ে হাসান আজিজুল হকের এই বই। বইটিতে লেখক শিক্ষা, রাজনীতি, সাংবাদিকতা, সংবাদপত্র শিল্প নিয়ে নিজের ভাবনার কথা লিখেছেন। সাতচল্লিশের দেশভাগ আর একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের কথাও ফুটে উঠেছে বাচনিক আত্মজৈবনিক বইয়ে। দেশ, রাজনীতি, ইতিহাস, সাহিত্য, সংগীত, নাটক সম্পর্কে তাঁর চিন্তার পাশাপাশি তাঁর নিজের ব্যক্তিগত জীবনের অনেক টুকরো টুকরো ঘটনার জলছবির কথা বলা হয়েছে এ বইয়ে।
শ্রেষ্ঠ কবিতা
তসলিমা নাসরিন
প্রকাশক: আগামী প্রকাশন
তসলিমা নাসরিনের শ্রেষ্ঠ কবিতার বইয়ের ব্যাপারে তিনি কবিতার কথা বলেন, ‘কবিতা দিয়ে আমার সাহিত্য-জীবনের শুরু। দুঃখে-সুখে, আনন্দ-বিষাদে কবিতার কাছে এখনো নিজেকে আমি সমর্পণ করি। গদ্যে আমি ঝলসে উঠি হয়তো, পদ্য তার শান্ত স্নিগ্ধ জলে আমাকে স্নান করিয়ে নেয়। গদ্য-পদ্য দুটোই আমার জীবনের জন্য জরুরি। শ্রেষ্ঠ কবিতার সংকলনের ব্যাপারে তাঁর ভাষ্য, ‘কোনো কবির শ্রেষ্ঠ কবিতার সংকলন তখনই বের হওয়া উচিত, যখন সে আর বেঁচে নেই, অথবা বেঁচে থাকলেও কবিতা সে আর লেখে না। আমার ক্ষেত্রে এ দুটোর কোনো ঘটনাই এখন অবধি ঘটেনি। আমি প্রচণ্ডভাবে বেঁচে আছি এবং প্রচুর কবিতাও লিখে যাচ্ছি।’
উনিশ শতকের মধ্যশ্রেণি ও বাংলা সাহিত্য
আবুল কাশেম ফজলুল হক
প্রকাশক: জাগৃতি প্রকাশনী
ব্রিটিশ-শাসিত বাংলার সমাজব্যবস্থা ও জনজীবনের পুর্নগঠন, বাঙালির জাগরণ, নতুন সাহিত্য সৃষ্টি এবং ধর্মসংস্কার ও সমাজসংস্কার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালির অসামান্য সৃষ্টিশক্তির অভিব্যক্তি ইত্যাদির চিত্তাকর্ষক বর্ণনা আছে এ-গ্রন্থে। আবুল কাশেম ফজলুল হক ইতিহাসকে মনে করেন পরিবর্তনের রহস্য উদ্ঘাটনের আর বিভিন্নমুখী সম্ভাবনার বাস্তবসম্মত চিত্র অঙ্কনের প্রয়াস। বর্তমান গ্রন্থে তাঁর পর্যবেক্ষণ: রামমোহন-ভবানীচরণ-ঈশ্বরগুপ্তের হাতে বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগের শৈশব, প্যারীচাঁদ-বিদ্যাসাগর-মধুসূদন-দীনবন্ধুর হাতে কৈশোর, বঙ্কিমে যৌবনের উন্মেষ, রবীন্দ্রনাথে যৌবন শরৎচন্দ্রের পর আধুনিকতাবাদীদের হাতে প্রৌঢ়ত্ব ও বার্ধক্য।
গ্রন্থনা: জিয়াউর রহমান চৌধুরী ও আসাদুজ্জামান
No comments