আর কত দিন এভাবে চলবে?-চিকিৎসকবিহীন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
কয়েক দিন আগে জাতীয় সংসদে দেশের বেহাল স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়ে সরকারি দলের সদস্যরা তোলপাড় করেছিলেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রশ্নবাণে জর্জরিত হলেও সদুত্তর দিতে পারেননি। কিন্তু জাতীয় সংসদে যতটুকু আলোচনা হয়েছে, বাস্তব পরিস্থিতি যে তার চেয়েও নাজুক, তাহিরপুর সরকারি হাসপাতালই তার জ্বলন্ত প্রমাণ।
সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলায় ৩৬ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছয় মাস ধরে কোনো চিকিৎসক নেই। স্থানীয় একজন সাংসদের ভাষায়, ‘এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওয়ার্ড বয় দেয় প্রসূতিসেবা, নৈশপ্রহরী দেয় জরুরি চিকিৎসা।’ ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি থেকেই নাকি এ অবস্থা চলছে। এখানে মাঝেমধ্যে চিকিৎসক আসেন এবং বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যান।
যেখানে শয্যার চেয়ে অনেক বেশি রোগী থাকার কথা, সেখানে ৩৬ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আছে পুরুষ ওয়ার্ডে মাত্র পাঁচজন, নারী ওয়ার্ডে একজন ও শিশু ওয়ার্ডে তিন শিশু রোগী। তাদের চিকিৎসা দিচ্ছে ওয়ার্ড বয়। এই চিত্র কেবল তাহিরপুরের নয়, দেশের অধিকাংশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই চিকিৎসক থাকেন না। তাঁরা এখানে আসেন বেতন-ভাতা তুলতে এবং সেই কাজ শেষ হলেই লাপাত্তা হয়ে যান। চিকিৎসাপ্রার্থীদের প্রতি যেন তাঁদের কোনো দায়িত্ব নেই। সিভিল সার্জন কিংবা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বড় কর্মকর্তার সঙ্গে খাতির থাকলে কর্মস্থলে না গিয়েও বেতন-ভাতা তোলা যায়। চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা এতটা দায়িত্বহীন আচরণ করতে পারেন, তা ভাবলেও বিস্মিত হতে হয়। তাঁরা যদি সরকারি চাকরিবিধি না-ই মানবেন, চাকুরিটা ছেড়ে দিলেই পারেন।
স্থানীয় সাংসদের দাবি অনুযায়ী, যদি তাহিরপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক আসেনও তাঁরা কতদিন থাকবেন নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারবেন না। কর্মস্থলে চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি নিয়ে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী উষ্মা প্রকাশ করেছেন, কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। প্রধানমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী যতই হুমকি-ধমকি দেন না কেন, এই চিকিৎসকেরা জানেন, কাদের খুশি করলে কর্মস্থলে উপস্থিত না থেকেও চাকরি রক্ষা করা যায়। সরকারের অন্যান্য খাতের মতো চিকিৎসা খাতেও ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত দুর্নীতি জেঁকে বসেছে। আর কত দিন এভাবে চলবে?
তাহিরপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অবিলম্বে প্রয়োজনীয়সংখ্যক চিকিৎসক ও কর্মকর্তা নিয়োগ করার পাশাপাশি তাঁরা যাতে সেখানে থাকেন সেই ব্যবস্থাও কর্তৃপক্ষকে করতে হবে। সেখানে চিকিৎসকদের থাকার কোনো অসুবিধা থাকলে তা-ও অবিলম্বে দূর করতে হবে।
No comments