সততার সনদপত্র by জাহিরুল ইসলাম

চাকরির আবেদনপত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতার অন্যান্য সনদের সঙ্গে সংযুক্তি হিসেবে চারিত্রিক সনদপত্র সংযোজন করাটা আমাদের দেশে প্রচলিত নিয়ম। অনেক চাকরির বিজ্ঞাপনেও চারিত্রিক সনদ সংযুক্তি হিসেবে দেওয়ার কথা উল্লেখ থাকে। প্রথম শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তা কর্তৃক প্রত্যয়ন করা এ সনদে লেখা থাকে_ 'আমার জানামতে তার স্বভাব চরিত্র ভালো


এবং সে রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কাজের সঙ্গে যুক্ত নয়।' এ ধরনের সনদ নিয়ে চাকরি প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ ব্যক্তির চরিত্র সম্পর্কে হয়তো কিছুটা নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি দেখা যায় পুরো উল্টো। চাকরিতে যোগদানের পর কারও কারও স্বভাব চরিত্র খারাপ হয়ে যায়। দুর্নীতির মতো রাষ্ট্রবিরোধী কাজেও জড়িয়ে পড়েন কেউ কেউ।
কথায় আছে_ 'মানুষ মরে গেলে পচে যায়, আর বেঁচে থাকলে বদলায়, কারণে-অকারণে বদলায়।' সময় এবং অবস্থানের পরিবর্তনের সঙ্গে মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটে। মানসিকতার পরিবর্তন তার চরিত্রেও পরিবর্তন আনে। তাই কোনো মানুষের চরিত্র সম্পর্কে লিখিতভাবে প্রত্যয়ন করা অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ। কে জানে কার চরিত্র কখন বদলাবে। আর এটা বাস্তবতাবর্জিতও বটে। কেননা, একজন মানুষের পক্ষে আরেকজন মানুষের চরিত্রের কতটুকু জানা সম্ভব? কারও চরিত্র সম্পর্কে সনদ দেওয়ার জন্য তাকে পুরোপুরি জানা অপরিহার্য। তাই যদি প্রয়োজন হয়-ই, সেক্ষেত্রে কেবল একজন মানুষের নিকটাত্মীয় বা বন্ধুবান্ধবরাই তার সম্পর্কে চারিত্রিক সনদ প্রদান করতে পারেন। কিন্তু বাস্তবতা পুরো উল্টো। মজার বিষয় হলো এ ধরনের প্রত্যয়নপত্র নেওয়া এবং দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও কর্মকর্তার জানাশোনা প্রয়োজন হলেও বাস্তবে তার বালাই নেই। প্রত্যয়নপত্র যারা দিচ্ছেন এবং বাধ্য হয়ে যারা নিচ্ছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা পরস্পরকে চেনেন না। বিশ্বের আর কোনো দেশে এ রকম অদ্ভুত নিয়ম প্রচলিত আছে বলেও শোনা যায় না।
চারিত্রিক সনদ নেওয়ার জন্য অনেকে কষ্ট করে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা পর্যন্ত গেলেও কেউ কেউ সে প্রয়োজনও বোধ করেন না। প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা সেজে অনেকে আবার নিজেই নিজের সনদ প্রত্যয়ন করেন। এই প্রত্যয়নপত্রের মূল্য কী? অথবা চাকরিতে যোগদানের পর ব্যক্তির চারিত্রিক পরিবর্তনের ফলে রাষ্ট্র এবং জনগণ যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সেই দায় কার_ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির, নাকি প্রত্যয়নকারী কর্মকর্তার? এসব প্রশ্ন অসংখ্যবার উত্থাপিত হলেও অদ্ভুত এ নিয়মটি আমাদের দেশে প্রচলিত রয়েছে। চারিত্রিক সনদের উপযোগিতা এবং প্রয়োজনীয়তা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও সংযুক্তি হিসেবে তা এখনও দিতে হচ্ছে। এই নিয়ম কেন চালু করা হয়েছিল সে সম্পর্কেও জুতসই কোনো উত্তর পাওয়া যায় না। এ ব্যাপারে অনেক আলোচনা হলেও পরিস্থিতি বদলায়নি। আর আদৌ বদলাবে কি-না কে জানে।
প্রয়োজনীয়তাই উদ্ভাবনের জনক। প্রয়োজনের তাগিদেই মানুষ নতুন আইন বানায়, নিয়ম প্রবর্তন করে। যোগাযোগমন্ত্রীর সততা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় তিনি টিআইবি এবং দুদকের দ্বারস্থ হয়েছেন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম খতিয়ে দেখার জন্য। দুর্নীতি এখন আমাদের সমাজের রল্প্রেব্দ রল্প্রেব্দ প্রবেশ করেছে। সে কারণে সততার বিষয়টি এখন রাষ্ট্র ও জনগণ উভয়ের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। তাই ভবিষ্যতে চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে সংযুক্তি হিসেবে দুদক কর্মকর্তাদের দ্বারা প্রত্যয়ন করা 'সততার সনদপত্র' চাওয়া হলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না।
ুধযরৎঁষ.ফঁ@মসধরষ.পড়স
 

No comments

Powered by Blogger.