চরাচর-লিচুর 'স্বর্গরাজ্য' by বিশ্বজিৎ পাল বাবু

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার অন্তত ৫০টি গ্রামে লিচুর চাষ হয়। এবার লিচুর ফলন হয়েছে বেশি। ওই অঞ্চলের লিচু একটু আগেভাগেই আসতে শুরু করেছে বাজারে। তবে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে আকার ছোট হওয়ায় লিচুচাষিরা দাম নিয়ে পড়েছেন শঙ্কায়।


উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের আউলিয়া বাজারে লিচু এনে বিক্রি করেন ওই এলাকার চাষিরা। রাত ৩টা থেকেই জমতে শুরু করে লিচুর বাজার। সূর্যোদয়ের কিছু সময়ের মধ্যেই বাজারে নেমে আসে সুনসান নীরবতা। অন্তত ছয়-সাতটি জেলার পাইকার এসে এ বাজার থেকে লিচু কিনে নিয়ে যান। স্থানীয়দের ধারণা, এ বাজারে প্রতিদিন অন্তত ৩০ লাখ টাকার লিচু বিক্রি হয়। সম্প্রতি এক ভোরে গিয়ে দেখা যায়, এ যেন লিচুর 'স্বর্গরাজ্য'। বিশাল বাজারজুড়ে লিচু আর লিচু। কেউ লিচুর আঁটি গুনছেন, কেউ গুনছেন টাকা। কেউবা লিচু কিনে গাড়িতে রাখছেন। ক্রেতা আর বিক্রেতাদের হাঁকডাকে সরগরম সর্বত্র। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভারত সীমান্তবর্তী পাহাড়পুর, বিষ্ণুপুর ও হরষপুর ইউনিয়নের অন্তত ৫০টি গ্রামের লিচু এ বাজারে ওঠে। এ বাজারে চায়না থ্রি, এলাচি, বোম্বাই, পাটনাইসহ নানা জাতের লিচু বিক্রি হয়। অলিপুর এলাকার বড় জাতের লিচুর কদর সবচেয়ে বেশি। ঢাকা, নোয়াখালী, কুমিল্লা, ভৈরব, নরসিংদী, লাকসাম, হবিগঞ্জ, মাধবপুরসহ বিভিন্ন স্থানের পাইকাররা এখানে লিচু কিনতে আসেন। কথা হয় লিচু ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে। সর্বনিম্ন এক হাজার ২০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ চার হাজার টাকা করে প্রতি হাজার লিচু বিক্রি হচ্ছে। কয়েকজন বিক্রেতা জানান, এবার লিচুর ফলন বেশি হলেও আকারে ছোট হওয়ায় দাম উঠছে কম। তবে অন্য বছরের তুলনায় অন্তত দুই সপ্তাহ আগেই লিচু বাজারে আসতে শুরু করে। আরো সপ্তাহ দুয়েক বাজারে লিচু থাকবে। স্থানীয়রা জানান, বিজয়নগরের অনেক পরিবারই আছে, যাদের আয়ের প্রধান উৎস লিচু চাষ। অনেকে নিজের বাগানে, অনেকে অন্যের বাগানে লিচু চাষ করে থাকেন। বৈশাখে গাছে লিচু ধরতে শুরু করলেই বাগান বিক্রি হয়ে যায়। দূর-দূরান্তের পাইকাররা ৫০ হাজার থেকে শুরু করে তিন লাখ, চার লাখ টাকায় একেক বাগান কেনেন। কোনো কোনো বাগান মালিক নিজের উদ্যোগেই লিচু বাজারজাত করেন। স্থানীয় অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক প্রভাব ব্যাপক।
বিশ্বজিৎ পাল বাবু

No comments

Powered by Blogger.