মেসি-রোনালদো লড়াইয়ে এবারও সেই একই ছবি

গোলদাতাদের তালিকায় লিওনেল মেসির নামটা যেমন নেই, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর নামটাও অনুপস্থিত। অপেক্ষাকৃত শান্ত স্বভাবের মেসি দেখেছেন হলুদ কার্ড, উল্টো দিকে অপেক্ষাকৃত উদ্ধত রোনালদোকে কোনো কার্ডই দেখতে হয়নি। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে, বার্সেলোনা-রিয়াল মাদ্রিদ ম্যাচে অন্তর্নিহীত মেসি-রোনালদো দ্বৈরথে হয়তো পর্তুগিজ অধিনায়কই এগিয়ে। আসলেই কি তাই? মোটেও না। বিশ্বের সেরা ফুটবলার মেসি তাঁর শ্রেষ্ঠত্বটা ধরে


রেখেছেন সর্বাত্মকভাবেই। গোল না করলেও ম্যাচের রাশটা ছিল মেসির পায়েই, যে কারণে পিছিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত জয়টা কাতালানদের। অন্যদিকে রিয়াল যে তুলনামূলক ভালো অবস্থানে থেকেও শেষ পর্যন্ত হার মানল, সেই ব্যর্থতার দায় অনেকটাই রোনালদোর।
সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে 'এল ক্লাসিকো' মাঠে গড়ানোর আগে দুজনেই ছিলেন একই সমতলে। লিগে সমান ১৭ গোল, ৬টি অ্যাসিস্ট। বরং দলগত অবস্থানে রোনালদোই ছিলেন কিছুটা এগিয়ে। পয়েন্ট টেবিলে কাতালান প্রতিপক্ষের চেয়ে মাদ্রিদের অভিজাতরাই ছিল এগিয়ে, তার সঙ্গে যোগ হয়েছে প্রতিপক্ষের মাঠে বার্সেলোনার ক্ষয়িষ্ণু ফর্ম। কিন্তু এল ক্লাসিকো হলেই যেন উলটে যায় সব হিসাব। শুধু কী এল ক্লাসিকো? প্রতিপক্ষে মেসির উপস্থিতি মানেই নিষপ্রভ রোনালদো। রিয়াল মাদ্রিদে যোগদানের আগে ২০০৮-০৯ মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে ফিরে তাকালেও দেখা যাবে একই ছবি। তখন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে খেলা রোনালদো ছিলেন দুর্বার। আগের মৌসুমে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে করেছিলেন ৩১ গোল, ফিফার বর্ষসেরা ফুটবলারের তকমাটা তখন ছিল এ পর্তুগিজ উইঙ্গারের গায়ে। কিন্তু ফাইনালে যেন খুঁজেই পাওয়া গেল না তাঁকে, যদিও প্রথম ১০ মিনিটের পর প্রতিপক্ষ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কাউকেই আসলে বলের পেছনে ছোটাছুটি করা ছাড়া আর কোনো ভূমিকাতেই দেখা যায়নি। রিয়াল মাদ্রিদে আসার পরেও খুব একটা বদলায়নি ছবিটা। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনা জোঁকের মুখে নুন ছিটিয়ে দেওয়ার মতোই কার্লোস পুয়োলকে লেলিয়ে দেয় রোনালদোর পেছনে। ঝাঁকড়া চুলের এই ডিফেন্ডারের কড়া নজরদারি থেকে আর বের হয়ে আসতে পারেন না রোনালদো।
নিজে গোল করতে না পারলেও বার্সেলোনার প্রথম গোলটা করিয়েছেন মেসিই। তাঁর পাস থেকেই না সুনিপুণ দক্ষতায় বলটা জালে জড়ালেন অ্যালেঙ্সি সানচেজ। দানি আলভেসের ক্রস থেকে সেস্ক ফ্যাব্রেগাস করেছেন তৃতীয় গোল, কিন্তু মধ্যমাঠ থেকে কাউন্টার অ্যাটাকটা দারুণভাবে শুরু করেছিলেন মেসি। সার্জিও র‌্যামোস মাটিতে পড়ে যখন বলের দখলটা হারিয়ে ফেললেন, তখন বল নিজের দখলে নিয়ে দৌড়ে এসে দারুণ শট নিয়েছিলেন মেসি। প্রায় সুপারম্যানের মতো উড়ে গোলটা বাঁচিয়েছেন ক্যাসিয়াস, নইলে সপ্তম মিনিটেই যে সমতা ফিরে যায় খেলায়। তার তুলনায় হতাশই করেছেন রোনালদো। ফাঁকায় দাঁড়িয়ে বল বাইরে মেরেছেন, লক্ষ্যচ্যুত হয়েছে হেড, এমনকি কাজে আসেনি জাদুকরী ফ্রি-কিক। শেষ পর্যন্ত তাই মেসির কাছে আরো একবার হার মানতে হয়েছে রোনালদোকে।
ফিফার বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কারের তালিকায় থাকা মেসি, রোনালদো ও জাভির_তিনজনই খেলেছেন এ ম্যাচে। এ মুহূর্তে ফুটবলের বিশ্বসেরাদের সংক্ষিপ্ত তালিকায় তাঁদের নামটাই থাকবে সবার ওপরে। কেউ কেউ হয়তো নেইমারকেও রাখবেন তাঁদের সঙ্গে। তালিকায় যাঁরাই থাকুন, মেসির নামটাই থাকবে সবার ওপরে। এরপর হয়তো রোনালদোর নাম, তারপর অন্য কারো। তবে বড় ম্যাচের পারফরম্যান্স, বিশেষত এল ক্লাসিকো বিবেচনায় নিলে মেসির সঙ্গে রোনালদোর ফারাকটা কিন্তু অনেক বেশি। এতে করে বিশ্বের সবচেয়ে দামি ফুটবলার যদি আহত হন, তাহলে সান্ত্বনার জন্য থাকছে অন্য হিসাব। প্রথম ও দ্বিতীয়ের যে তফাৎ, দ্বিতীয় ও তৃতীয়তে তফাৎটা যে তার চেয়েও অনেক বেশি! ওয়েবসাইট



No comments

Powered by Blogger.