প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন সামান্যই-১৭৫টির বেশি প্রকল্প, কাজ চলছে মাত্র ৩২টির by আবুল কাশেম
পুলিশ পরিদর্শক পদ প্রথম শ্রেণীতে এবং উপপরিদর্শক (এসআই) ও সার্জেন্ট পদ দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হয়নি প্রায় তিন বছরেও। প্রধানমন্ত্রীর ওই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের ফাইল আটকে আছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। ২০০৯ সালে রাজারবাগ পুলিশ লাইন মাঠে পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। গত ৪ জানুয়ারিও পুলিশ সপ্তাহ উদ্বোধন করতে গিয়ে একই প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।
কিন্তু পুলিশ সদর দপ্তর থেকে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি পূরণসংক্রান্ত ফাইলটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে গিয়ে আটকে আছে।
২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সময় নানা জায়গায় এ ধরনের অনেক প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়নে অগ্রগতি নেই। গত আগস্ট পর্যন্ত এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ১৭৫টিরও বেশি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। কিন্তু এসবের মধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে ৩২টি।
এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি ও নির্দেশনা বাস্তবায়ন অগ্রগতি-সংক্রান্ত বিষয়ে মন্ত্রণালয়গুলোর কাছে প্রতিবেদন চেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন ও অগ্রগতি বিষয়ে আগামী ১৩ ডিসেম্বর বৈঠকে বসবেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তারা। বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক মোহাম্মদ নজমুল ইসলাম।
সরকারি প্রতিশ্রুতি সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. ফজলে রাব্বী মিয়া গত শনিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা জরুরি। কিন্তু আমলারা রাজনীতিবিদদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে আগ্রহী হন না। এটি আমলাদের পুরনো স্বভাব। আর প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না, তা যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণও করা হচ্ছে না।
ফজলে রাব্বী মিয়া আরো বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী যেখানেই যে প্রতিশ্রুতি দেন না কেন, তা দেশ ও মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা করেই দেন। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা কর্তব্য। সরকারি প্রতিশ্রুতি সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকেও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নে সম্প্রতি জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। তারপর বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে ওই সব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন পরিস্থিতির প্রতিবেদন আমাদের দিয়েছিল। তাতে কিছুটা অগ্রগতি দেখা গেলেও তা মোটেই সন্তোষজনক নয়। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে আরো গুরুত্ব দেওয়া উচিত।'
প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করতে এর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোল্লা ওয়াহেদুজ্জামানও বৈঠক করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে। তার পরও এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে অগ্রগতি আসেনি। প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে গত বছরের অক্টোবর মাসে কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে। এসবের মধ্যে রয়েছে_প্রতিশ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো সমস্যা থাকলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে যথাসময়ে তা চিহ্নিত করে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে হবে। বাস্তবায়ন কার্যক্রমে কোনো অনিয়ম বা শ্লথগতি ধরা পড়লে মন্ত্রণালয়ের জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারী-ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রচলিত বিধিবিধানের আওতায় ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি যথাযথভাবে মনিটরিং করতে হবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে।
চট্টগ্রামের উন্নয়নে ১০ প্রতিশ্রুতি, বাস্তবায়ন একটি : চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইট 'চট্টগ্রাম জেলা তথ্য বাতায়ন' পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চট্টগ্রামের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সেগুলো প্রকল্প হিসেবে অন্তর্ভুক্তও হয়েছে। বরাদ্দ হয়েছে অর্থও। কিন্তু বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র একটি।
চট্টগ্রামের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে বহদ্দারহাট জংশনে ফ্লাইওভার নির্মাণ; মুরাদপুর, ২নং গেট ও জিইসি মোড় জংশনে ফ্লাইওভার নির্মাণ; কদমতলী জংশনে ফ্লাইওভার নির্মাণ, সাগরিকা রোডের সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন, সিরাজউদ্দৌলা রোড থেকে শাহ-আমানত ব্রিজ পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ এবং ডিসি রোডের সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন, পাঠানটুলী রোডের সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন, হাটহাজারী রোডের সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন, ঢাকা ট্রাংক রোড সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ এবং মুরাদনগর থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত ফ্লাইওভার নির্মাণ। এগুলোর মধ্যে কেবল সাগরিকা রোডের সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
চট্টগ্রামের প্রকল্পগুলোর মধ্যে ঢাকা ট্রাংক রোডের সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন প্রকল্পটি গত ৮ মার্চ একনেকে অনুমোদিত হয়েছে মাত্র। কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল নির্মাণ এবং মুরাদনগর থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্প দুটির ব্যয় ধরা হয়েছে চার হাজার কোটি টাকা। বড় এই প্রকল্প দুটি নীতিগত অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে মাত্র।
যোগাযোগ খাতে ১৪ প্রতিশ্রুতি, বাস্তবায়ন একটি : যাতায়াতের ক্ষেত্রে দুর্ভোগ কমাতে ৯ জেলার মানুষকে ১৪টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এগুলোর মধ্যে ১৩টিই ছিল রেলপথে যাতায়াতের ক্ষেত্রে সুবিধা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি। নতুন রেলপথ নির্মাণ, রেলপথ ডাবল লাইনে উন্নীত করা এবং ট্রেন চালু করার এসব প্রতিশ্রুতির মধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র একটি।
যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রধানমন্ত্রীর ১৪ প্রতিশ্রুতির একটি হলো ঢাকার সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের যোগাযোগব্যবস্থা উন্নয়নের লক্ষ্যে কমিউটার ট্রেন সার্ভিস ও ঢাকা উড়াল সড়ক চালু করা। গত বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি তিনি এ ঘোষণা দেন। ১০ সেট ডিইএমইউ (ডিজেল ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট) সংগ্রহ প্রকল্প চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি একনেকে অনুমোদন হয়। পরে তা বাতিল করে আরো নতুন প্রকল্প পাঠানো হয়। কিন্তু তা পড়ে আছে পরিকল্পনা কমিশনে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের ৪১ প্রকল্পের মধ্যে বাস্তবায়ন ১০ : মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের ৪১টি প্রকল্পের মধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে ১০টি। বাস্তবায়নাধীন আছে ১৪টি, আংশিক বাস্তবায়ন ১৫টি এবং কার্যক্রম বন্ধ আছে দুটির।
একইভাবে সাবেক বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের যশোর আইটি পার্ক স্থাপন সংক্রান্ত প্রকল্প এখনো কাগজপত্র তৈরির পর্যায়ে রয়েছে।
বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীন টাঙ্গাইল জেলার বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকায় একটি বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার প্রকল্প এক বছরেও চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, কংসসহ ভরাট হওয়া অপর নদ-নদীগুলো খনন সংক্রান্ত প্রকল্পের তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ৪২টি প্রকল্পের মধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে সাতটি। বাস্তবায়নাধীন আছে ২৪টি। আংশিক বাস্তবায়িত হয়েছে ১১টি।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ৩২টি প্রকল্পের মধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে ছয়টি এবং বাকিগুলো বাস্তবায়নাধীন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ বিভাগের পাঁচটি প্রকল্পের একটি বাদে সব কটি বাস্তবায়নাধীন।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের পাঁচটি প্রকল্পের মধ্যে দুটির বাস্তবায়ন হয়েছে এবং বাকিগুলো বাস্তবায়নাধীন।
খাদ্য বিভাগের ১১টির মধ্যে একটি বাস্তবায়িত এবং বাকিগুলো বাস্তবায়নাধীন।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ১৩টি প্রকল্পের দুটি শেষ হয়েছে। বাকিগুলো বাস্তবায়নাধীন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তিনটির মধ্যে সব কটি বাস্তবায়িত হয়েছে।
২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সময় নানা জায়গায় এ ধরনের অনেক প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়নে অগ্রগতি নেই। গত আগস্ট পর্যন্ত এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ১৭৫টিরও বেশি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। কিন্তু এসবের মধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে ৩২টি।
এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি ও নির্দেশনা বাস্তবায়ন অগ্রগতি-সংক্রান্ত বিষয়ে মন্ত্রণালয়গুলোর কাছে প্রতিবেদন চেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন ও অগ্রগতি বিষয়ে আগামী ১৩ ডিসেম্বর বৈঠকে বসবেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তারা। বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক মোহাম্মদ নজমুল ইসলাম।
সরকারি প্রতিশ্রুতি সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. ফজলে রাব্বী মিয়া গত শনিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা জরুরি। কিন্তু আমলারা রাজনীতিবিদদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে আগ্রহী হন না। এটি আমলাদের পুরনো স্বভাব। আর প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না, তা যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণও করা হচ্ছে না।
ফজলে রাব্বী মিয়া আরো বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী যেখানেই যে প্রতিশ্রুতি দেন না কেন, তা দেশ ও মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা করেই দেন। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা কর্তব্য। সরকারি প্রতিশ্রুতি সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকেও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নে সম্প্রতি জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। তারপর বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে ওই সব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন পরিস্থিতির প্রতিবেদন আমাদের দিয়েছিল। তাতে কিছুটা অগ্রগতি দেখা গেলেও তা মোটেই সন্তোষজনক নয়। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে আরো গুরুত্ব দেওয়া উচিত।'
প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করতে এর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোল্লা ওয়াহেদুজ্জামানও বৈঠক করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে। তার পরও এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে অগ্রগতি আসেনি। প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে গত বছরের অক্টোবর মাসে কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে। এসবের মধ্যে রয়েছে_প্রতিশ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো সমস্যা থাকলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে যথাসময়ে তা চিহ্নিত করে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে হবে। বাস্তবায়ন কার্যক্রমে কোনো অনিয়ম বা শ্লথগতি ধরা পড়লে মন্ত্রণালয়ের জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারী-ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রচলিত বিধিবিধানের আওতায় ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি যথাযথভাবে মনিটরিং করতে হবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে।
চট্টগ্রামের উন্নয়নে ১০ প্রতিশ্রুতি, বাস্তবায়ন একটি : চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইট 'চট্টগ্রাম জেলা তথ্য বাতায়ন' পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চট্টগ্রামের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সেগুলো প্রকল্প হিসেবে অন্তর্ভুক্তও হয়েছে। বরাদ্দ হয়েছে অর্থও। কিন্তু বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র একটি।
চট্টগ্রামের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে বহদ্দারহাট জংশনে ফ্লাইওভার নির্মাণ; মুরাদপুর, ২নং গেট ও জিইসি মোড় জংশনে ফ্লাইওভার নির্মাণ; কদমতলী জংশনে ফ্লাইওভার নির্মাণ, সাগরিকা রোডের সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন, সিরাজউদ্দৌলা রোড থেকে শাহ-আমানত ব্রিজ পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ এবং ডিসি রোডের সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন, পাঠানটুলী রোডের সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন, হাটহাজারী রোডের সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন, ঢাকা ট্রাংক রোড সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ এবং মুরাদনগর থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত ফ্লাইওভার নির্মাণ। এগুলোর মধ্যে কেবল সাগরিকা রোডের সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
চট্টগ্রামের প্রকল্পগুলোর মধ্যে ঢাকা ট্রাংক রোডের সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন প্রকল্পটি গত ৮ মার্চ একনেকে অনুমোদিত হয়েছে মাত্র। কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল নির্মাণ এবং মুরাদনগর থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্প দুটির ব্যয় ধরা হয়েছে চার হাজার কোটি টাকা। বড় এই প্রকল্প দুটি নীতিগত অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে মাত্র।
যোগাযোগ খাতে ১৪ প্রতিশ্রুতি, বাস্তবায়ন একটি : যাতায়াতের ক্ষেত্রে দুর্ভোগ কমাতে ৯ জেলার মানুষকে ১৪টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এগুলোর মধ্যে ১৩টিই ছিল রেলপথে যাতায়াতের ক্ষেত্রে সুবিধা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি। নতুন রেলপথ নির্মাণ, রেলপথ ডাবল লাইনে উন্নীত করা এবং ট্রেন চালু করার এসব প্রতিশ্রুতির মধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র একটি।
যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রধানমন্ত্রীর ১৪ প্রতিশ্রুতির একটি হলো ঢাকার সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের যোগাযোগব্যবস্থা উন্নয়নের লক্ষ্যে কমিউটার ট্রেন সার্ভিস ও ঢাকা উড়াল সড়ক চালু করা। গত বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি তিনি এ ঘোষণা দেন। ১০ সেট ডিইএমইউ (ডিজেল ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট) সংগ্রহ প্রকল্প চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি একনেকে অনুমোদন হয়। পরে তা বাতিল করে আরো নতুন প্রকল্প পাঠানো হয়। কিন্তু তা পড়ে আছে পরিকল্পনা কমিশনে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের ৪১ প্রকল্পের মধ্যে বাস্তবায়ন ১০ : মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের ৪১টি প্রকল্পের মধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে ১০টি। বাস্তবায়নাধীন আছে ১৪টি, আংশিক বাস্তবায়ন ১৫টি এবং কার্যক্রম বন্ধ আছে দুটির।
একইভাবে সাবেক বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের যশোর আইটি পার্ক স্থাপন সংক্রান্ত প্রকল্প এখনো কাগজপত্র তৈরির পর্যায়ে রয়েছে।
বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীন টাঙ্গাইল জেলার বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকায় একটি বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার প্রকল্প এক বছরেও চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, কংসসহ ভরাট হওয়া অপর নদ-নদীগুলো খনন সংক্রান্ত প্রকল্পের তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ৪২টি প্রকল্পের মধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে সাতটি। বাস্তবায়নাধীন আছে ২৪টি। আংশিক বাস্তবায়িত হয়েছে ১১টি।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ৩২টি প্রকল্পের মধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে ছয়টি এবং বাকিগুলো বাস্তবায়নাধীন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ বিভাগের পাঁচটি প্রকল্পের একটি বাদে সব কটি বাস্তবায়নাধীন।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের পাঁচটি প্রকল্পের মধ্যে দুটির বাস্তবায়ন হয়েছে এবং বাকিগুলো বাস্তবায়নাধীন।
খাদ্য বিভাগের ১১টির মধ্যে একটি বাস্তবায়িত এবং বাকিগুলো বাস্তবায়নাধীন।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ১৩টি প্রকল্পের দুটি শেষ হয়েছে। বাকিগুলো বাস্তবায়নাধীন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তিনটির মধ্যে সব কটি বাস্তবায়িত হয়েছে।
No comments