চুরির পর বাসায় আগুন-রাজশাহী নগর পুলিশ গোলকধাঁধায় by আনু মোস্তফা

রাজশাহী নগরীর বাসাবাড়িতে চুরির পর আগুন লাগিয়ে পালিয়ে যাওয়ার একাধিক ঘটনা ঘটছে। গত এক বছরে এ ধরনের ঘটনা অন্তত ৩৫টি। কিন্তু কোনো ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। দফায় দফায় বৈঠক করেও পুলিশ চোরদের উদ্দেশ্য শনাক্ত করতে পারেনি। পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, এ ধরনের অভিনব চুরি বন্ধে এবং সংঘবদ্ধ চোরদের ধরতে ব্যর্থ হওয়ায় রাজশাহীর মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (সদর) মোর্শেদুল আনোয়ার খান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা রহস্যময় এই চুরি নিয়ে উদ্বিগ্ন। চুরির পর কেন ঘরে আগুন দিচ্ছে চোরেরা এর কোনো মোটিভ আমরা পাচ্ছি না।'
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক মাস ধরে রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বাসাবাড়িতে চুরি করার পর দুর্বৃত্তরা বিভিন্ন জিনিসপত্রে পেট্রল ছিটিয়ে আগুন লাগিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। কখনো কখনো চোরেরা ঘরের ভেতরের দামি আসবাবপত্র জ্বালিয়ে দিচ্ছে। আবার ঘরের জানালায় আগুন লাগাচ্ছে পেট্রল ঢেলে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে নগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকায় ডা. দেবাশীষের বাসার গ্রিল কেটে ভেতরে প্রবেশ করে একদল চোর। নগদসহ লক্ষাধিক টাকার মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে চোরেরা ভেতরে দুটি কক্ষে পেট্রল ঢেলে আগুন লাগিয়ে পালিয়ে যায়। এলাকাবাসী আগুন জ্বলতে দেখে ফায়ার সার্ভিসে খবর দিলে দুটি গাড়ি ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ডা. দেবাশীষের পরিবারের সবাই বাসার বাইরে ছিলেন।
এ ঘটনার তিন ঘণ্টা পর রাত সাড়ে ১১টার দিকে নগরীর উপশহর ঈদগাহ এলাকার ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীরের তিনতলা বাড়ির নিচতলার গ্রিল কেটে চোরের দল বাসায় ঢোকে। চুরি শেষে একই কায়দায় আগুন দিয়ে পালিয়ে যায় তারা। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এতে প্রায় এক লাখ টাকার ক্ষতি হয়।
এ দুটি ঘটনার এক দিন আগে ৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর নগরীর সাগরপাড়ায় দুর্গাপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সানোয়ার হোসেনের বাসায় চুরির ঘটনা ঘটে এবং ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয় চোরেরা। গত ১ ডিসেম্বর নগরীর উপশহরে আরেকটি বাসায় একই ধরনের চুরির ঘটনা ঘটে।
মহানগর পুলিশের বিশেষ শাখার হিসাব মতে, গত জানুয়ারি থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজশাহী মহানগরীতে একই ধরনের চুরির ঘটনা ঘটেছে ৩৫টি। বেশি ঘটনা ঘটেছে নগরীর রাজপাড়া ও বোয়ালিয়া থানা এলাকায়। এসব ঘটনায় প্রায় ৯৮ লাখ টাকার জিনিসপত্র চুরি হয়েছে। তবে চুরির পর বাসাবাড়িতে আগুন দেওয়ার ফলে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কোটি টাকার ওপরে।
পুলিশের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এ ধরনের প্রতিটি চুরির ঘটনা ঘটেছে ফাঁকা বাসায়। তালা লাগিয়ে বাসার লোকজন কোনো কাজে বাইরে গেলেই চোরের দল দিনে হোক বা রাতে হোক গ্রিল কেটে ঘরে ঢুকে চুরি করছে। চুরি শেষে পালিয়ে যাওয়ার আগে বাসার ভেতরে আগুন দিয়ে যাচ্ছে।
ধারাবাহিকভাবে সংঘটিত এ ধরনের অভিনব চুরির বিষয়ে বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি শাহাদাৎ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে একই কৌশলে চুরি করে বাসাবাড়িতে আগুন দিয়ে পালাচ্ছে চোরেরা। চলতি বছরের মাঝামাঝি পুলিশ ব্যাপক তৎপর হওয়ায় মাঝে কিছুদিন চুরি হয়নি। কিন্তু সম্প্রতি আবার একই কৌশলে চোরের দল চুরি করছে এবং ঘরে আগুন দিচ্ছে। ওসি আরো বলেন, পুলিশ নিশ্চিত, একই চোরচক্র এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে। পুলিশ শিগগিরই দলটিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবে বলে তিনি আশা করছেন।
অন্যদিকে চুরির পর ঘরে আগুন দেওয়া বিষয়ে নগর পুলিশের উপকমিশনার (সদর) মোর্শেদুল আনোয়ার খান বলেন, 'আমরা এ ধরনের অভিনব চুরির ঘটনা নিয়ে একাধিক বৈঠক করেছি। এসব চুরির মোটিভ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছি।'
ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরো বলেন, 'চুরি তো গোপনে করা একটি অপরাধ। কিন্তু চোরেরা কেন চুরি শেষে আগুন দিচ্ছে, তা পুলিশকে কিছুটা ধাঁধায় ফেলেছে।'
এদিকে ভুক্তভোগীরা মনে করছেন, বছরখানেকের বেশি সময় ধরে নগর গোয়েন্দা পুলিশ নিষ্ক্রিয় থাকায় নগরীতে এ ধরনের অপরাধের সংখ্যা বেড়ে গেছে। বছরখানেক আগে নগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) থেকে সহকারী কমিশনার (এসি) মাহফুজকে অন্যত্র বদলির পর থেকেই ডিবি কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে আছে। আর এ ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে থানা পুলিশ কোনো বিশেষ ভূমিকা দেখাতে ব্যর্থ হচ্ছে। কারণ হিসেবে ভুক্তভোগীরা বলছেন, এক বছর ধরে একই কায়দায় চোরেরা চুরি করে আগুন দিচ্ছে অথচ একটি চোরও ধরা পড়েনি এবং চুরি যাওয়া মালামালও উদ্ধার হয়নি।

No comments

Powered by Blogger.