আত্মজীবনী-কড়া পরীক্ষায় ফেলে নিজেকে যাচাই করার পালা
বেশির ভাগ বিশ্লেষণে তিনিই গত শতকের সেরা ক্রীড়াবিদ। বাংলাদেশের মানুষের কাছেও মোহাম্মদ আলীর আবেদন অন্য রকম। নিজের উত্থান-পতন, লড়াই-সংগ্রামের গল্প আলী শুনিয়েছেন 'দ্য গ্রেটেস্ট মাই ওন স্টোরি' বইয়ে। কালের কণ্ঠ পাঠকদের জন্য সেটার অনুবাদ ছাপা হচ্ছে প্রতি সোমবার যেকোনো লড়াইয়ের আগে, প্রস্তুতির একটা বড় অংশ হচ্ছে, সঠিক স্পারিং পার্টনার খুঁজে বের করা। এমন একজন বঙ্ারের সঙ্গে জিমে লড়াইয়ের
অনুশীলন করতে হবে, যার সঙ্গে মূল প্রতিপক্ষের লড়াইয়ের ধাঁচটা মিলে যায়। রিংয়ে যাওয়ার পর যাতে প্রতিপক্ষের নড়াচড়াগুলোকে অচেনা মনে না হয়। কানাডার জর্জ চুভালোর সঙ্গে লড়াইয়ের আগে আমি খুঁজে বের করেছিলাম কোডি জোনসকে। ছোটখাটো, ধীর, কিন্তু গাট্টাগোট্টা। ফ্লয়েড প্যাটারসনের সঙ্গে লড়াইয়ের আগে খোঁজ পেয়েছিলাম জিমি এলিসের। জর্জ ফোরম্যানের সঙ্গে লড়াইয়ের প্রস্তুতিতে আমি তিনজনকে স্পারিং পার্টনার হিসেবে বেছে নিয়েছি। বসম্যান জোনস, ফিলাডেলফিয়ার হেভিওয়েট ল্যারি হোমস ও পেনসিলভানিয়ার রাজ্য চ্যাম্পিয়ন রয় উইলিয়ামস। সবাই তরুণ, দ্রুত ও চতুর।
সব কিছু গোছানোর পরও অনুশীলন পুরোদমে শুরু করতে এক সপ্তাহ লেগে গেল। এই সাতটা দিন আমি ভাবলাম, বারবার সব কিছু চিন্তা করলাম, কারণ এখন শুধু আমি নই, অনেক টাকার মামলা। জিতলে কী হবে, হারলে কী হবে, সব কিছু। আমার চিন্তায়, ভাবনায়, চেতনায়, অনুভব করতে শুরু করলাম ফোরম্যানকে। এরপর ঠিক করলাম অনুশীলনের পরিকল্পনা। সকালে দৌড়, এরপর নাস্তা, বিশ্রাম, বিকেলে জিমে অনুশীলন, এভাবে শরীরটাকে একটা ঘড়ির কাঁটায় বেঁধে ফেলতে হবে। প্রথম তিন দিন সকালে উঠে একা একাই দৌড়াতে বের হলাম। সঙ্গে স্পারিং পার্টনার, প্রশিক্ষক কেউ নেই। তখন আঁধার কাটেনি। পাহাড়ি বনপথে আমি ছাড়া দ্বিতীয় জীবিত প্রাণী হচ্ছে একটা খরগোশ। আসলে সকালে দৌড়ানোর অভ্যাসটা তৈরি করার জন্যই একা একা বের হওয়া। আমি গন্ধ নিচ্ছি সবুজ ঘাসের, ফুসফুুস ভর্তি করছি তাজা পাহাড়ি বাতাসে, অনুভব করছি পাহাড়ি রাস্তা, এভাবেই আমি তৈরি করছি আমার গোড়ালি ও পায়ের পাতা। প্রস্তুত হচ্ছে হৃৎপিণ্ডও। এরপর ঠিক করলাম, প্রতিদিন এক মাইল দৌড়াব।
আমার রক্ষণ নির্ভর করে আমার পা জোড়ার ওপর। প্রাণশক্তি বাড়াতে হবে। যৌন অভ্যাসও ছেড়ে দিয়েছি। সঠিক খাবার খাচ্ছি। এখন নিজেকে কড়া পরীক্ষার মুখে ফেলে সামর্থ্য যাচাই করার পালা। আমি তিন মাইল দৌড়ানোর পরেও যদি ক্লান্ত না হই, তাহলে বুঝতে হবে, গা মোটেই গরম হয়নি। তখন আরো এক কি দুই মাইল দৌড়াব, যতক্ষণ না ক্লান্তিতে শরীর অবসন্ন হয়ে আসে। ততক্ষণ ব্যায়াম করে যাই, যতক্ষণ না দেহের প্রতিটা পেশি ব্যথায় টনটন করে ওঠে। এভাবেই আমি ব্যথাকে জয় করার চেষ্টা করি। আজ যদি বিশটা সিটআপ দেই, কাল ত্রিশটা। এভাবে ধীরে ধীরে নিজের কর্মক্ষমতা বাড়াচ্ছি।
সকালের অনুশীলনের পর হাঁটতে বের হই। হাঁটতে হাঁটতে অনেক কিছু ভাবি। একই সঙ্গে ক্লান্তিও দূর করি। হাঁটলে ব্যথার কথাও মনে থাকে না। এতে করে ক্লান্তি দূর হলেও অবসাদ আমাকে গ্রাস করে না। এরপর কেবিনে ফিরি, স্নান সেরে নাস্তা খাই। দৈনিক পত্রিকা, ম্যাগাজিন এসব কিছু পড়ি। প্রতিপক্ষকে ঘিরে রণপরিকল্পনা সাজাই। এরপর এগারোটা থেকে দেড়টা পর্যন্ত ঘুমাই। উঠে দুটোর সময় জিমে যাই। আমার প্রস্তুতিও চলে লড়াইয়ের নিয়মে। অনেক মুষ্টিযোদ্ধাই অনুশীলন করে চার থেকে পাঁচ মিনিটের রাউন্ডে। কিন্তু আমি তিন মিনিটের রাউন্ডই পছন্দ করি। তিন রাউন্ড ঘুষি অনুশীলন চলে বালির বস্তার ওপর। প্রতি রাউন্ডের পর ১ মিনিটের বিশ্রাম, ঠিক আসল ম্যাচের মতো। এরপর তিন রাউন্ড স্পিডব্যাগে, এরপর তিন রাউন্ড দড়িলাফ। আমি জানি, শরীরটা যদি ঠিক থাকে, তাহলে এক মিনিটের বিশ্রামই যথেষ্ট।
* অনুবাদ : সামীউর রহমান
সব কিছু গোছানোর পরও অনুশীলন পুরোদমে শুরু করতে এক সপ্তাহ লেগে গেল। এই সাতটা দিন আমি ভাবলাম, বারবার সব কিছু চিন্তা করলাম, কারণ এখন শুধু আমি নই, অনেক টাকার মামলা। জিতলে কী হবে, হারলে কী হবে, সব কিছু। আমার চিন্তায়, ভাবনায়, চেতনায়, অনুভব করতে শুরু করলাম ফোরম্যানকে। এরপর ঠিক করলাম অনুশীলনের পরিকল্পনা। সকালে দৌড়, এরপর নাস্তা, বিশ্রাম, বিকেলে জিমে অনুশীলন, এভাবে শরীরটাকে একটা ঘড়ির কাঁটায় বেঁধে ফেলতে হবে। প্রথম তিন দিন সকালে উঠে একা একাই দৌড়াতে বের হলাম। সঙ্গে স্পারিং পার্টনার, প্রশিক্ষক কেউ নেই। তখন আঁধার কাটেনি। পাহাড়ি বনপথে আমি ছাড়া দ্বিতীয় জীবিত প্রাণী হচ্ছে একটা খরগোশ। আসলে সকালে দৌড়ানোর অভ্যাসটা তৈরি করার জন্যই একা একা বের হওয়া। আমি গন্ধ নিচ্ছি সবুজ ঘাসের, ফুসফুুস ভর্তি করছি তাজা পাহাড়ি বাতাসে, অনুভব করছি পাহাড়ি রাস্তা, এভাবেই আমি তৈরি করছি আমার গোড়ালি ও পায়ের পাতা। প্রস্তুত হচ্ছে হৃৎপিণ্ডও। এরপর ঠিক করলাম, প্রতিদিন এক মাইল দৌড়াব।
আমার রক্ষণ নির্ভর করে আমার পা জোড়ার ওপর। প্রাণশক্তি বাড়াতে হবে। যৌন অভ্যাসও ছেড়ে দিয়েছি। সঠিক খাবার খাচ্ছি। এখন নিজেকে কড়া পরীক্ষার মুখে ফেলে সামর্থ্য যাচাই করার পালা। আমি তিন মাইল দৌড়ানোর পরেও যদি ক্লান্ত না হই, তাহলে বুঝতে হবে, গা মোটেই গরম হয়নি। তখন আরো এক কি দুই মাইল দৌড়াব, যতক্ষণ না ক্লান্তিতে শরীর অবসন্ন হয়ে আসে। ততক্ষণ ব্যায়াম করে যাই, যতক্ষণ না দেহের প্রতিটা পেশি ব্যথায় টনটন করে ওঠে। এভাবেই আমি ব্যথাকে জয় করার চেষ্টা করি। আজ যদি বিশটা সিটআপ দেই, কাল ত্রিশটা। এভাবে ধীরে ধীরে নিজের কর্মক্ষমতা বাড়াচ্ছি।
সকালের অনুশীলনের পর হাঁটতে বের হই। হাঁটতে হাঁটতে অনেক কিছু ভাবি। একই সঙ্গে ক্লান্তিও দূর করি। হাঁটলে ব্যথার কথাও মনে থাকে না। এতে করে ক্লান্তি দূর হলেও অবসাদ আমাকে গ্রাস করে না। এরপর কেবিনে ফিরি, স্নান সেরে নাস্তা খাই। দৈনিক পত্রিকা, ম্যাগাজিন এসব কিছু পড়ি। প্রতিপক্ষকে ঘিরে রণপরিকল্পনা সাজাই। এরপর এগারোটা থেকে দেড়টা পর্যন্ত ঘুমাই। উঠে দুটোর সময় জিমে যাই। আমার প্রস্তুতিও চলে লড়াইয়ের নিয়মে। অনেক মুষ্টিযোদ্ধাই অনুশীলন করে চার থেকে পাঁচ মিনিটের রাউন্ডে। কিন্তু আমি তিন মিনিটের রাউন্ডই পছন্দ করি। তিন রাউন্ড ঘুষি অনুশীলন চলে বালির বস্তার ওপর। প্রতি রাউন্ডের পর ১ মিনিটের বিশ্রাম, ঠিক আসল ম্যাচের মতো। এরপর তিন রাউন্ড স্পিডব্যাগে, এরপর তিন রাউন্ড দড়িলাফ। আমি জানি, শরীরটা যদি ঠিক থাকে, তাহলে এক মিনিটের বিশ্রামই যথেষ্ট।
* অনুবাদ : সামীউর রহমান
No comments