পিপিপিতে পদ্মা সেতু-বিশ্বব্যাংককেই অভিযোগ প্রমাণ করতে হবে

প্রধানমন্ত্রী স্পষ্টতই বলেছেন, প্রয়োজনে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা ছাড়াই পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হবে। পদ্মা সেতু আমাদের দরকার, যেভাবেই হোক আমাদের তা করতে হবে। ইতিমধ্যে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) সেল গঠন ও তার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মালয়েশিয়া, তুরস্কসহ বেশ কিছু দেশ সেতু নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। প্রয়োজনে সে পথেই সেতু নির্মিত হবে।


প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণাকে আমরা স্বাগত জানাই। অবশ্যই আমাদের উন্নয়নের প্রয়োজনে আমাদেরই মাথা ঘামাতে হবে, অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকার পুরনো অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে।
দীর্ঘ দেন-দরবারের পর পদ্মা সেতুর অর্থায়নের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছিল। জমি অধিগ্রহণসহ কাজকর্ম শুরুও হয়েছিল। কিন্তু কয়েক মাস আগে হঠাৎ করেই দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর অর্থায়ন স্থগিত করে দেয়। এ নিয়ে সরকার ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে অনেক আলোচনা ও চিঠি চালাচালি হয়েছে। কিন্তু এ পর্যন্ত বিশ্বব্যাংক তাদের অবস্থানে অনড়ই রয়েছে। গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন ও আলোচনা থেকে এমন ইঙ্গিতও পাওয়া গিয়েছিল, বিশ্বব্যাংক চাইছে বর্তমান যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দেওয়া হোক। এখন তো সৈয়দ আবুল হোসেন যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে নেই। তার পরও বিশ্বব্যাংক এ ব্যাপারে মুখ খুলছে না। অন্যদিকে কানাডীয় কম্পানি এসএনসি লাভালিনকে পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরামর্শক নিয়োগের ক্ষেত্রে উৎকোচ গ্রহণ ও প্রদানের যে অভিযোগ উঠেছে, সে বিষয়টি বাংলাদেশে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং কানাডায় সে দেশের পুলিশ তদন্ত করে দেখছে। দুদক এখন পর্যন্ত দুর্নীতির কোনো আলামত পায়নি। তারা বিশ্বব্যাংকের কাছেও দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট তথ্য চেয়েছে। অন্যদিকে কানাডার পুলিশও এখন পর্যন্ত দুর্নীতির সপক্ষে কোনো প্রমাণ পেয়েছে বলে জানা যায়নি। তাই সংগতভাবেই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিশ্বব্যাংককে প্রমাণ করতে হবে পদ্মা সেতু নির্মাণে কী দুর্নীতি হয়েছে, কোথায় দুর্নীতি হয়েছে, কত টাকা দুর্নীতি হয়েছে এবং কিভাবে দুর্নীতি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমরাও একমত। বিশ্বব্যাংক ইচ্ছা করলেই কোনো দেশ বা জাতির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না, কলঙ্কলেপন করতে পারে না। এ দেশের মানুষ হিসেবে আমরাও চাই, প্রধানমন্ত্রীর এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির যথার্থ প্রমাণ তুলে ধরুক। কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা যদি দুর্নীতি করে থাকে, আমরা অবশ্যই তাদের যথাযথ শাস্তি চাই। বর্তমান তদন্তে আস্থা না থাকলে তারা আন্তর্জাতিক কোনো দক্ষ তদন্ত সংস্থা দিয়ে তদন্ত করুক। সে ক্ষেত্রে সৈয়দ আবুল হোসেন যেহেতু যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে নেই, সেহেতু তদন্ত অনেক সহজও হবে। তবু তাদের উত্থাপিত দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ করতেই হবে। অন্যথায় বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অভিযোগে আন্তর্জাতিক আদালতে বাংলাদেশের উচিত হবে বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে মানহানি মামলা রুজু করা। অবান্তর অভিযোগ তুলে কোনো দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা অত্যন্ত গর্হিত অপরাধ। এদিকে বিশ্বব্যাংকও যে ধোয়া তুলসীপাতা নয়, আন্তর্জাতিক বহু ঘটনায়ই আমরা তার অনেক নজির দেখেছি। পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে বিশ্বব্যাংকের বর্তমান অবস্থানকে আমরা কোনোমতেই সমর্থন করতে পারছি না। কানাডীয় কম্পানিকে নিয়োগের ব্যাপারে যে অভিযোগ উঠেছে, তা দুটি দেশেই তদন্ত করা হচ্ছে। দুর্নীতি হয়ে থাকলে তদন্তের ফলাফলে তা নিশ্চয়ই উঠে আসবে। তার আগেই শুধু অভিযুক্তের নয়, একটি দেশের বিরুদ্ধে এ ধরনের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত। বিশ্বব্যাংকের অবস্থানের কারণে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে অন্যান্য দেশ ও সংস্থা একইভাবে পিছিয়ে গেছে। কাজেই বিশ্বব্যাংকের এ অভিযোগের সত্যতা নিরূপণের বিষয়টিকে হালকাভাবে নেওয়ার কোনো সুযোগই নেই। বিশ্বব্যাংক একটি দেশের উন্নয়নে সহায়তা না করে বাধা সৃষ্টি করেছে, এটি লঘু নয়, গুরুতর অপরাধ। আশা করি, বর্তমান সরকার দেশের মর্যাদা বিবেচনা করেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।

No comments

Powered by Blogger.