অবশেষে পানামার পথে নরিয়েগা

বশেষে পানামার সাবেক একনায়ক ম্যানুয়েল নরিয়েগা গতকাল রবিবার নিজ দেশের পথে রওনা হন। গত ২০ বছর ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের কারাগারে কাটানোর পর এক প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় প্যারিস থেকে দেশে ফিরছেন তিনি। গতকালই তাঁর পানামায় পেঁৗছানোর কথা। নিজ দেশে ফিরলেও মুক্ত জীবনের স্বাদ পাবেন না তিনি। হত্যা আর মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে পানামাতেও ২০ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে ৭৭ বছর বয়সী


নরিয়েগাকে। রবিবার সকালে প্যারিস থেকে পানামার উদ্দেশে যাত্রা করেন নরিয়েগা। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ছয় কর্মকর্তা, পুলিশ, একজন চিকিৎসক এবং পানামার অ্যাটর্নি জেনারেল। প্রথমে প্যারিসের অরলি বিমানবন্দর থেকে মাদ্রিদে যান তিনি। পরে মাদ্রিদ থেকে আরেকটি বিমানে করে গতকালই তাঁর পানামা পেঁৗছানোর কথা। সেখান থেকে সরাসরি কারাগারে পাঠানো হবে তাঁকে। তবে পানামার আইনানুসারে, বয়সের কারণে কারাভোগের সময়টি গৃহবন্দি অবস্থায় কাটানোর সুযোগ পেতে পারেন তিনি। যদিও বিষয়টি নিয়ে আপত্তি রয়েছে নরিয়েগার আমলে নিহতদের স্বজনদের।
৭৭ বছর বয়সী সাবেক সেনা কর্মকর্তা নরিয়েগা ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত পানামার সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। প্রেসিডেন্ট না হলেও কার্যত তিনিই ছিলেন পানামার শাসক। তাঁর বিরুদ্ধে ওই সময় সংঘটিত হত্যা, মাদক ব্যবসাসহ নানা অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তাঁর অনুপস্থিতিতে এসব অভিযোগের অন্তত তিনটি মামলা নিষ্পত্তি হয় এবং প্রতিটিতেই তাঁকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
নরিয়েগা ইতিমধ্যে মাদক চোরাকারবার ও অর্থ পাচারের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্সে ২০ বছরের বেশি সময় জেল খেটেছেন। নরিয়েগাকে হস্তান্তরে পানামার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে প্যারিসের একটি আদালত গত মাসে এর অনুমোদন দেন। নরিয়েগার আইনজীবী জানান, নরিয়েগা নিজেও দেশে ফেরার জন্য আকুল হয়ে পড়েছিলেন।
একসময় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নরিয়েগার ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল। পরবর্তী সময়ে মধ্য আমেরিকার রাষ্ট্র পানামাকে তিনি মাদক চোরাচালানের মূলকেন্দ্রে পরিণত করেছেন বলে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ১৯৯০ সালের জানুয়ারিতে মার্কিন বাহিনী পানামায় একটি অভিযান চালিয়ে নরিয়েগাকে আটক করে। এরপর যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে গিয়ে তাঁর বিচার করা হয়। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ২০ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাঁকে। কারাভোগ শেষ হলে ২০১০ সালে নরিয়েগাকে ফ্রান্সের হাতে তুলে দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
অভিযোগ রয়েছে, কলাম্বিয়ার একটি মাদকগোষ্ঠীর অর্থে ফ্রান্সে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন নরিয়েগা। এ জন্য ফ্রান্সে তাঁর বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের মামলা হয়। আদালত তাঁকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়।
তবে আজকের পানামার জন্য রাজনৈতিকভাবে নরিয়েগা খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নন। অর্থনৈতিকভাবে ক্রমেই ফুলেফেঁপে ওঠা পানামার তরুণ প্রজন্ম তাঁর কারাভোগ বা দেশে ফেরা নিয়ে খুব একটা মাথাও ঘামায় না। নরিয়েগার আমলে শতাধিক নিহত বা নিখোঁজ স্বজনদের জন্য তাঁর দেশে ফেরা এখনো গুরুত্ব বহন করে। সূত্র: বিবিসি, এএফপি, দ্য টেলিগ্রাফ।

No comments

Powered by Blogger.