চালকের আসনে অস্ট্রেলিয়া

৬৯ রান নাকি ১০ উইকেটের পতন_সিডনির কন্ডিশনে যেভাবে টপাটপ উইকেট পড়ছে, তাতে ব্যাটিং দলের ভাগ্যে মেঘের ঘনঘটা দেখতে পাওয়াটাই স্বাভাবিক। সে হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার জন্য কাজটা সহজ হওয়ার কথা না। কিন্তু ২৪১ রানের টার্গেট নিয়ে কাল খেলতে নেমে তারা যে বিনা উইকেটে ৭২ রান করে ফেলেছে সেটা শুনলে আবার কাজটাকে কঠিনও মনে হবে না! তাই ২৬ বছর পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে নিউজিল্যান্ডের টেস্ট জয়ের স্বপ্নের ডানা গুটিয়ে দিয়ে


এখন সিডনিতে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে পিটার সিডলের সেই ঘোষণা, 'যে কোনো টার্গেট তাড়া করার সামর্থ্য আছে অস্ট্রেলিয়ার।'
খাদের কিনারা থেকে অস্ট্রেলিয়ার ঘুরে দাঁড়ানোটা নতুন কিছু নয়। তবে বেলেরিভ ওভালে গতকাল তাঁদের ঘুরে দাঁড়ানোয় ভাগ্যদেবীরও কৃপা আছে। যেমন ডিআরএস সুবিধা থাকা সত্ত্বেও নিশ্চিত আউট হয়েও পার পেয়ে যান ফিলিপ হিউজেস। ক্রিস মার্টিনের বলটা অস্ট্রেলীয় এ ওপেনারের গ্লাভস ছুঁয়ে আসা বলটাই ধরেছিলেন কিউই কিপার রিস ইয়াং। সে আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। আবার খুব একটা নিশ্চিত না হওয়ায় রিভিউও চায়নি নিউজিল্যান্ড। তাই শূন্য হাতে যাঁর সাজঘরে ফিরে যাওয়ার কথা, সেই হিউজেস আজ আবার ব্যাট করতে নামছেন ২০ রান নিয়ে। অপর প্রান্তে ডেভিড ওয়ার্নারও ভাগ্যের সহায়তা পেয়েছেন। তবে তা সামান্যই। বরং টপ অর্ডারে একজন আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান থাকলে যে অসম্ভবকেও জয় করা যায়, সে বিশ্বাস জাগিয়েছেন ওয়ার্নার। বৃষ্টির কারণে চা-বিরতির পর তৃতীয় দিনের খেলা এগুতে পারেনি। তবে তার আগেই ৫০ বলে ৮ বাউন্ডারিতে ৪৭ রান করে দলকে দারুণ জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন ওয়ার্নার।
অথচ সকালে শুরুটা হয়েছিল নিউজিল্যান্ডের স্বপ্ন পূরণের আবির ছড়িয়ে। নিজেরা ১৫০ রান করেও দারুণ বোলিংয়ে প্রথম ইনিংসে ১৪ রানের 'লিড'টা দ্বিতীয় দিনে বেড়ে হয়েছিল ১৫৩ রানের। অক্ষত ৭ উইকেট নিয়ে নিউজিল্যান্ড কত বড় টার্গেট ছুড়ে দেয়_এ সম্ভাবনাই ছিল সিডনির সকালের চায়ের আড্ডার মূল বিষয়। কিন্তু আলোচনার মোড় ঘুরতে থাকে দিনের প্রথম ওভারেই। পিটার সিডলের বলে কেন উইলিয়ামসনের দুর্দান্ত এক ক্যাচ নেন আগের রাতে দাদির মৃত্যু সংবাদ শোনা রিকি পন্টিং। এ ধাক্কা অবশ্য ডিন ব্রাউলিনকে নিয়ে অনেকটাই সামলে উঠেছিলেন টেলর। কিন্তু পরপর দুই ওভারে এ দুজনকে ফিরিয়ে দেন এ সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার সেরা প্রাপ্তি জেসন প্যাটিনসন। শেষদিকে ট্রেন্ট বোল্ট এবং টিম সাউদির দ্রুত রান তোলার মিশনে বাধা হয়ে দাঁড়ান অফস্পিনার নাথান লিও। ২৫ রানে নিউজিল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংসের শেষ ৩ উইকেট নিয়ে সুইং বোলারদের স্বর্গে বসে যেন স্পিনেরই জয়গান গাইলেন তিনি। অবশ্য শুধু গতকালই নয়, এ সিরিজে চার ইনিংসের তিনবারই নিউজিল্যান্ডের লোয়ার অর্ডার কাটা পড়েছে নাথান লিও'র স্পিনে। ব্যাটিং বিপর্যয়ের ম্যাচে টেল এন্ডারদের প্রতিপক্ষ বোলারদের ঘাম ঝরিয়ে দেওয়ার অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। সেটি হতে দেননি লিও। সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ার ঘুরে দাঁড়ানোর মিশনে প্যাটিনসন-সিডলদের পাশে তাই বড় করেই লেখা হয়ে গেছে নাথান লিও'র নামটিও।
সংক্ষিপ্ত স্কোর : নিউজিল্যান্ড : ১৫০ ও ২য় ইনিংস ৭৮.৩ ওভার ২২৬/১০ (টেলর ৫৬, উইলিয়ামসন ৩৪, বোল্ট ২১, প্যাটিনসন ৩/৫৪, সিডল ৩/৬৬, লিও ৩/২৫)। অস্ট্রেলিয়া : ১৩৬ ও ২য় ইনিংস ১৯ ওভার ৭২/০ (হিউজেস ব্যাটিং ২০, ওয়ার্নার ব্যাটিং ৪৭)।

No comments

Powered by Blogger.