মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার-নিজামী-মুজাহিদ-কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ

কাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মাদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এ ফরমাল চার্জ আমলে নেওয়ার বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ১৮ ডিসেম্বর দিন ধার্য করা হয়। জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল


আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জও সেদিন দাখিল করতে রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
এদিকে ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলা সম্পর্কে কোনো মন্তব্য না করতে সব পক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। অন্যদিকে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপক্ষের এক নম্বর সাক্ষীকে জেরা করা শুরু হয়েছে। আজ সোমবার পুনরায় তাঁকে জেরা করা হবে। তাঁকে জেরার সময় আসামি পক্ষে যেসব ডকুমেন্ট দেখানো হবে, তা দাখিল করতে সাঈদীর আইনজীবীর প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়।
বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গতকাল রবিবার সকালে নিজামী, মুজাহিদ, কামারুজ্জামান ও কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জ দাখিল করার জন্য দিন ধার্য ছিল। রাষ্ট্রপক্ষে প্রধান প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপু গতকাল আলাদাভাবে নিজামী, মুজাহিদ ও কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে তিনটি ফরমাল চার্জ দাখিল করেন। সেই সঙ্গে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টও দাখিল করা হয়। এ তিনজনের ফরমাল চার্জ দাখিল করার পর প্রধান প্রসিকিউটর বলেন, 'কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জ তৈরি করতে পারিনি। এ জন্য সময় দরকার।' ট্রাইব্যুনাল সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে আগামী ১৮ ডিসেম্বর কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জ দাখিল করতে নির্দেশ দেন।
গতকাল এ চারজনের বিষয়ে শুনানির আগেই তাঁদের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক সংবাদপত্রে প্রকাশিত আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন। ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, 'আইনমন্ত্রী শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক অনুষ্ঠানে ট্রাইব্যুনাল সম্পর্কে বক্তব্য দিয়েছেন। আইনমন্ত্রী বলেছেন, একাত্তরে যারা ৩০ লাখ বাঙালিকে শহীদ করেছে, দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জত লুণ্ঠন করেছে, ট্রাইব্যুনালে তাদের বিচার হচ্ছে। ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে। ট্রাইব্যুনাল সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই মন্ত্রী দোষী প্রমাণিত করছেন। এটা বিচারকাজকে প্রভাবিত করার শামিল।'
এর জবাবে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, 'শুধুই মন্ত্রী বা সরকার পক্ষেরই নয়, আপনাদের মধ্য থেকেও বিভিন্ন টিভি টক শোতে এবং সংবাদপত্রে বিচারাধীন বিষয় নিয়ে মন্তব্য করা হচ্ছে। সংবাদপত্রে আমাদের আদেশ যথাযথভাবে লেখা হচ্ছে না। কখনো আংশিক লেখা হয়। সবার প্রতি অনুরোধ, ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সম্পর্কে মন্তব্য করবেন না। আপনার মাধ্যমে সবাইকে এটা বলতে চাচ্ছি।'
সাক্ষীকে জেরা সাঈদীর আইনজীবীর : নিজামী, মুজাহিদসহ চারজনের বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল সিদ্ধান্ত দেওয়ার পর সাঈদীর আইনজীবীরা রাষ্ট্রপক্ষের এক নম্বর সাক্ষী মাহবুবুল আলম হাওলাদারকে জেরা করেন। সাঈদীর পক্ষে অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম সকাল ১১টা থেকে দুপুর সোয়া ১২টা পর্যন্ত জেরা করেন। এ পর্যায়ে সাঈদীর আইনজীবীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ সোমবার সকাল পর্যন্ত জেরা মুলতবি করা হয়।
২০০৪ সালে ঘর নির্মাণের জন্য সাহায্য চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে মাহবুবুল আলম হাওলাদারের করা একটি আবেদনের কপি দেখিয়ে তাঁকে জেরা করতে গেলে প্রসিকিউশন ও ট্রাইব্যুনাল আপত্তি জানান। আসামি পক্ষের ডকুমেন্ট হিসেবে কোনো কিছু ট্রাইব্যুনালে দাখিল না করে সেই বিষয়ে জেরা করা যাবে না বলে সিদ্ধান্ত দেন ট্রাইব্যুনাল। এ পর্যায়ে আসামিপক্ষ জেরা মুলতবি করার আবেদন করে।

No comments

Powered by Blogger.