অদল-বদল by ইকবাল খন্দকার
যত কথা তত লাভ নো চাল ভাতে বাড়ে_এই অজুহাতে একটা পুরনো কৌতুক দিয়ে শুরু করি। এক লোক ডাক্তারের কাছে গেছে। ডাক্তার জিজ্ঞেস করল_আপনার সমস্যা? লোকটা বলল_আমার দাঁত ভেঙে গেছে। ডাক্তার ব্যস্ত হয়ে বলল_ কই! দেখি দেখি, তা দাঁত ভাঙল কীভাবে? লোকটা বলল_ বউ বাসায় আজ যে রুটি বানিয়েছিল, সেগুলো খুব শক্ত ছিল। ডাক্তার বেশ অবাক হলো_আহা, রুটি শক্ত ছিল বলে সেগুলো খেয়ে দাঁত ভাঙতে হবে? রুটি শক্ত হয়েছে,
এটা আপনি বউকে বলবেন না? লোকটা মিনমিনে গলায় বলল_ তাকে কথাটা বলেছিলাম বলেই তো দাঁতগুলো ভাঙল। পাঠক, কথা বলার অর্থাৎ উচিত কথা বলার পরিণাম এমন হয়_এটা আমরা এতদিন ধরে জেনে আসছিলাম। কিন্তু এখন আর সেইদিন নেই। এখন মোবাইলে বেশি কথা বললে যেমন বেশি বোনাস পাওয়া যায়, ঠিক তেমনি উচিত কথা বেশি বললে ভালো পদ পাওয়া যায়। ভালো পদ বলতে যে সে পদ নয়। একদম মন্ত্রীর পদ। সদ্য শপথ নেওয়া আমাদের মাননীয় দুই মন্ত্রী ক'দিন আগে কিন্তু ভালোই মুখ খুলতে শুরু করেছিলেন। দল ক্ষমতায় আসার শুরুর দিকে যদি তারা এভাবে মুখ খুলতেন তাহলে হয়তো দল থেকে বহিষ্কৃতও হতে পারতেন। কিন্তু শেষ দিকে এসে কাউকে দল থেকে বহিষ্কার করলে নির্বাচনের সময় বিপদে পড়তে হবে_এই ভেবে তাদের সন্তুষ্ট রাখাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। এক লোক নাকি বেশি কথা বলত। কোনোভাবেই তার কথা থামাতে না পেরে তাকে সবসময়ই ভালো ভালো খাবার দেওয়া হতো। এবার তার মুখ বন্ধ হয়ে গেল। কারণ মুখে খাবার থাকলে কথা বলা যায় না। তো মুখ বন্ধ করার জন্য হোক আর দুটো মন্ত্রণালয় বাড়িয়ে নতুন দুটো ক্ষেত্র তৈরি করে দেওয়ার জন্য হোক_আমরা দু'জন নতুন মন্ত্রী পেয়েছি এটাই হলো বড় কথা। এখন দেখার বিষয়, মন্ত্রী হওয়ার আগে তারা যেভাবে সরকারের সমালোচনা করেছিলেন, এখনও তারা সেটা অব্যাহত রাখেন নাকি 'জি হুজুর' বলে আগামী দুই বছর কাটিয়ে দেন।
হারিয়ে গেছে, ফিরে পাব না
হারিয়ে গেছে ফিরে পাব না_আজম খান বোধহয় এই গানটা আমাদের হারানো মানসম্মানকে উদ্দেশ করেই লিখেছিলেন। আসলেই দুর্নীতির কারণে আমাদের অনেক সম্মান হারিয়ে গেছে, যা কোনোদিন ফিরে পাব না। পদ্মা সেতুর কথাই ধরা যাক। সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। শুধু কাজ শুরু হবে। এ সময় দুর্নীতির অভিযোগ দিয়ে দাতা দেশগুলো অর্থসাহায্য বন্ধ করে দিল। এর চেয়ে বড় লজ্জা আর কী হতে পারে? দাতা দেশগুলোর অভিযোগের বৃদ্ধাঙ্গুলি যার দিকে ছিল, তার বিরুদ্ধে আরও ম্যালা অভিযোগ ছিল। কিন্তু সরকার তাকে বহুদিন পদ থেকে সরায়নি। কেন সরায়নি, সরালে কী এমন বিশাল ক্ষতি হয়ে যাবে, এটা কেবল সরকারই জানে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সরকারের ঘোর কাটল এবং তার কপাল ফাটল। তাকে এই পদ থেকে সরানো হলো। দেশের মানসম্মান খোয়ানোর পর সরিয়ে কী লাভ হলো, সেটা বোধগম্য নয়। নতুন যিনি এলেন তিনি এসেই বললেন, পদ্মা সেতু দিয়েই নাকি তিনি কাজ শুরু করতে চান। তিনি এটাও বলেছেন, পকেট ভারী করার জন্য তিনি মন্ত্রী হননি। শুনে আমরা হাততালি দিয়েছি। তিনি যদি তার কথা রাখেন, তাহলে এই হাততালি চলতেই থাকবে। অনেকের আশা তিনি কথা রাখবেন। 'কম কম খান' বিখ্যাত এই ডায়ালগটি যার মুখ থেকে এসেছিল, তিনিও তার স্বচেয়ারে বহাল নেই। এখানে অন্য একজন এসেছেন। আর তিনি গেছেন আরেক চেয়ারে। গোপন সূত্রে জানা গেছে, তিনি যেখানে গেছেন, সেখানে নাকি দুর্নীতি করার সুযোগ আরও বেশি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে থেকে তিনি বলেছেন 'কম কম খান', এখন বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ে থেকে বলতেও পারেন_কম কম বিমানে চড়েন। তখন দেখা যাবে, সবাইকে বিমানের পরিবর্তে হেঁটে বা অন্য কোন যানবাহনে ধীর গতিতে বিদেশে যেতে হচ্ছে। রেল মন্ত্রণালয় নামে নতুন আরেকটা মন্ত্রণালয় বানানো হয়েছে। এ মন্ত্রণালয়ের নতুন মন্ত্রী বলেছেন, সময়মতো ট্রেন চলাচলের বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করবেন। কারণ তিনি হয়তো সেই কৌতুকটা জানেন। একদিন দেখা গেল, ৯টার ট্রেন ঠিক ৯টায়ই এলো। সবাই অবাক। যেখানে ৯টার ট্রেন বিকেল ৩টা-৪টায়ও আসে না, সেখানে কি-না ৯টায়ই চলে এলো? কিন্তু পরে খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, এটা আসলে আগের দিন সকাল ৯টার ট্রেন। মন্ত্রী মহোদয় ট্রেন সিডিউলের এই দুর্দশা যদি একটুও লাঘব করতে পারেন, তাহলে আমরা বড়ই কৃতজ্ঞ থাকব। অবশ্যই এর মধ্যে নাকি যথা সময় ট্রেন ছাড়ার কতিপয় যাত্রী ট্রেন ফেল করেছেন। এটা খুব ভাল লক্ষণ বলতেই হবে।
অন্যরকম বদল চাই
গায়ে প্রচুর দুর্গন্ধ। কিন্তু একটার পর একটা জামা পাল্টাচ্ছি। লাভ নেই। তাই মন্ত্রণালয় কিংবা মন্ত্রী পাল্টিয়েও কোনো লাভ নেই। যদি মনমানসিকতা আর আচার-আচরণ না পাল্টায়। তবে আমরা বরাবরই আশাবাদী। আশা করছি, এই রদবদলের সঙ্গে সঙ্গে যা কিছু মন্দ, সবকিছু বদলে গিয়ে ভালোর আলো জ্বলবে। ভোজনরসিক বাঙালিদের আর কেউ কম খেতে বলবে না, পদ্মা সেতু নিয়ে শুধু ঘুমিয়ে ঘুমিয়েই স্বপ্ন দেখতে হবে না, বাস্তবেও এই সেতুর ওপর দিয়ে যাতায়াত করতে পারব। এ ছাড়া রেল নিয়ে যে অভিযোগগুলো আমরা বহু বছর ধরে করে আসছি, সেই অভিযোগ আমরা নিজেরাই ভুলে যাব। এমনকি রেলগাড়ির গতি নিয়ে এ ধরনের কৌতুকও আর কখনও আমরা বানাব না, কাউকে শোনাব না_ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ এলো, রেল চলাচলের কারণে এলাকার কৃষকদের গরুর বড় ধরনের ক্ষতি হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ ধরেই নিল, ট্রেনের নিচে নিশ্চয়ই গরু কাটা পড়ছে। পড়ে জানা গেল, কর্তৃপক্ষের ধারণা ঠিক নয়। রেল চলাচলের কারণে গরুর ক্ষতি হচ্ছে অন্যভাবে। রেলের গতি এতটাই স্লো যে, চলন্ত রেল থেকে যাত্রীরা নেমে গাভীর দুধ দুইয়ে নিয়ে চলে যায়।
হারিয়ে গেছে, ফিরে পাব না
হারিয়ে গেছে ফিরে পাব না_আজম খান বোধহয় এই গানটা আমাদের হারানো মানসম্মানকে উদ্দেশ করেই লিখেছিলেন। আসলেই দুর্নীতির কারণে আমাদের অনেক সম্মান হারিয়ে গেছে, যা কোনোদিন ফিরে পাব না। পদ্মা সেতুর কথাই ধরা যাক। সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। শুধু কাজ শুরু হবে। এ সময় দুর্নীতির অভিযোগ দিয়ে দাতা দেশগুলো অর্থসাহায্য বন্ধ করে দিল। এর চেয়ে বড় লজ্জা আর কী হতে পারে? দাতা দেশগুলোর অভিযোগের বৃদ্ধাঙ্গুলি যার দিকে ছিল, তার বিরুদ্ধে আরও ম্যালা অভিযোগ ছিল। কিন্তু সরকার তাকে বহুদিন পদ থেকে সরায়নি। কেন সরায়নি, সরালে কী এমন বিশাল ক্ষতি হয়ে যাবে, এটা কেবল সরকারই জানে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সরকারের ঘোর কাটল এবং তার কপাল ফাটল। তাকে এই পদ থেকে সরানো হলো। দেশের মানসম্মান খোয়ানোর পর সরিয়ে কী লাভ হলো, সেটা বোধগম্য নয়। নতুন যিনি এলেন তিনি এসেই বললেন, পদ্মা সেতু দিয়েই নাকি তিনি কাজ শুরু করতে চান। তিনি এটাও বলেছেন, পকেট ভারী করার জন্য তিনি মন্ত্রী হননি। শুনে আমরা হাততালি দিয়েছি। তিনি যদি তার কথা রাখেন, তাহলে এই হাততালি চলতেই থাকবে। অনেকের আশা তিনি কথা রাখবেন। 'কম কম খান' বিখ্যাত এই ডায়ালগটি যার মুখ থেকে এসেছিল, তিনিও তার স্বচেয়ারে বহাল নেই। এখানে অন্য একজন এসেছেন। আর তিনি গেছেন আরেক চেয়ারে। গোপন সূত্রে জানা গেছে, তিনি যেখানে গেছেন, সেখানে নাকি দুর্নীতি করার সুযোগ আরও বেশি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে থেকে তিনি বলেছেন 'কম কম খান', এখন বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ে থেকে বলতেও পারেন_কম কম বিমানে চড়েন। তখন দেখা যাবে, সবাইকে বিমানের পরিবর্তে হেঁটে বা অন্য কোন যানবাহনে ধীর গতিতে বিদেশে যেতে হচ্ছে। রেল মন্ত্রণালয় নামে নতুন আরেকটা মন্ত্রণালয় বানানো হয়েছে। এ মন্ত্রণালয়ের নতুন মন্ত্রী বলেছেন, সময়মতো ট্রেন চলাচলের বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করবেন। কারণ তিনি হয়তো সেই কৌতুকটা জানেন। একদিন দেখা গেল, ৯টার ট্রেন ঠিক ৯টায়ই এলো। সবাই অবাক। যেখানে ৯টার ট্রেন বিকেল ৩টা-৪টায়ও আসে না, সেখানে কি-না ৯টায়ই চলে এলো? কিন্তু পরে খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, এটা আসলে আগের দিন সকাল ৯টার ট্রেন। মন্ত্রী মহোদয় ট্রেন সিডিউলের এই দুর্দশা যদি একটুও লাঘব করতে পারেন, তাহলে আমরা বড়ই কৃতজ্ঞ থাকব। অবশ্যই এর মধ্যে নাকি যথা সময় ট্রেন ছাড়ার কতিপয় যাত্রী ট্রেন ফেল করেছেন। এটা খুব ভাল লক্ষণ বলতেই হবে।
অন্যরকম বদল চাই
গায়ে প্রচুর দুর্গন্ধ। কিন্তু একটার পর একটা জামা পাল্টাচ্ছি। লাভ নেই। তাই মন্ত্রণালয় কিংবা মন্ত্রী পাল্টিয়েও কোনো লাভ নেই। যদি মনমানসিকতা আর আচার-আচরণ না পাল্টায়। তবে আমরা বরাবরই আশাবাদী। আশা করছি, এই রদবদলের সঙ্গে সঙ্গে যা কিছু মন্দ, সবকিছু বদলে গিয়ে ভালোর আলো জ্বলবে। ভোজনরসিক বাঙালিদের আর কেউ কম খেতে বলবে না, পদ্মা সেতু নিয়ে শুধু ঘুমিয়ে ঘুমিয়েই স্বপ্ন দেখতে হবে না, বাস্তবেও এই সেতুর ওপর দিয়ে যাতায়াত করতে পারব। এ ছাড়া রেল নিয়ে যে অভিযোগগুলো আমরা বহু বছর ধরে করে আসছি, সেই অভিযোগ আমরা নিজেরাই ভুলে যাব। এমনকি রেলগাড়ির গতি নিয়ে এ ধরনের কৌতুকও আর কখনও আমরা বানাব না, কাউকে শোনাব না_ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ এলো, রেল চলাচলের কারণে এলাকার কৃষকদের গরুর বড় ধরনের ক্ষতি হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ ধরেই নিল, ট্রেনের নিচে নিশ্চয়ই গরু কাটা পড়ছে। পড়ে জানা গেল, কর্তৃপক্ষের ধারণা ঠিক নয়। রেল চলাচলের কারণে গরুর ক্ষতি হচ্ছে অন্যভাবে। রেলের গতি এতটাই স্লো যে, চলন্ত রেল থেকে যাত্রীরা নেমে গাভীর দুধ দুইয়ে নিয়ে চলে যায়।
No comments