শেষ দিনে লংমার্চ জকিগঞ্জে-টিপাইমুখ বাঁধের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলবে : এরশাদ

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, ভারতের টিপাইমুখ বাঁধের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়েছে। যত দিন ভারত এ বাঁধ নির্মাণ থেকে সরে না আসবে তত দিন জাতীয় পার্টির আন্দোলন চলবে। এ বাঁধের বিরুদ্ধে বিশ্ববাসীর সমর্থন আদায় করা হবে। তিনি বলেন 'রাস্তায় নামলাম, জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় নিয়ে ঘরে ফিরব।' ভারতের টিপাইমুখ বাঁধ প্রকল্পের বিরুদ্ধে জাতীয় পার্টি দুই দিনের লংমার্চ কর্মসূচি দেয়।


এর শেষ দিনে গতকাল রবিবার জকিগঞ্জে স্থানীয় জাতীয় পার্টি আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
গতকাল বিকেলে জকিগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের জনসভা টিপাইমুখ বাঁধকে সামনে রেখে শুরু হলেও একপর্যায়ে তা নির্বাচনী জনসভায় পরিণত হয়। সমাবেশে এরশাদ আবারও এককভাবে নির্বাচন করার ঘোষণা দেন এবং ক্ষমতায় ফিরে আসার স্বপ্নের কথা জানান। তিনি বলেন, 'সিদ্ধান্ত নিয়েছি আগামী নির্বাচন এককভাবে করব। কারো জোটে যাব না। দেখতে চাই আমার জনপ্রিয়তা কত। আমার মনে হচ্ছে, সেদিন বেশি দূরে নয়, একদিন না একদিন ফিরে আসব।'
জকিগঞ্জে ২০ মিনিটের বক্তৃতায় এরশাদ আগামী নির্বাচনে সিলেটের কানাইঘাট-জকিগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার আসনে দলের প্রার্থী ঘোষণা এবং ক্ষমতায় গেলে কী করবেন, তার কিছু প্রতিশ্রুতিও দেন।
এরশাদ বলেন, 'ক্ষমতায় এলে প্রাদেশিক সরকার করব, সিলেটকে জালালাবাদ প্রদেশ করব।' বর্তমানে দেশে নানা সংকট ও জনদুর্ভোগের উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'দেশবাসী মুক্তি চায়, আমি মুক্তি দিতে চাই। আরেকবার সুযোগ দিন, গ্যাস-বিদ্যুৎ আসবে, যুবকদের চাকরি হবে, বন্ধ কলকারখানা চালু হবে, শ্রমিকরা সুখে-শান্তিতে থাকতে পারবে।'
গত শনিবার সকালে ঢাকা থেকে গাড়িবহর নিয়ে এরশাদ সিলেটের সীমান্ত উপজেলা জকিগঞ্জের উদ্দেশে লংমার্চ শুরু করেন। সিলেটের পথে সাতটি পথসভা এবং বিকেলে সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে জনসভায় তিনি বক্তব্য দেন। এসব সমাবেশে এরশাদ টিপাইমুখ বাঁধের বিষয়ে দেশের সব রাজনৈতিক দলকে একমত হয়ে আলোচনায় বসার আহ্বান জানান এবং প্রধানমন্ত্রীকে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার পরামর্শ দেন।
গতকাল জকিগঞ্জের জনসভায়ও এরশাদ একই আহ্বান জানান। তিনি বলেন, 'আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য না থাকায় ভারত আমাদের দুর্বল মনে করে বাঁধ নির্মাণ করার সাহস পেয়েছে। আমার বিশ্বাস, আমরা একমত হতে পারলে ভারত বাঁধ নির্মাণ করতে পারবে না।' তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সমালোচনা করে বলেন, 'আপনি ওয়াদা করে তা রাখেননি, আমরা রাস্তায় নেমেছি, জীবন থাকতে টিপাইমুখ বাঁধ হতে দেব না।'
গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ থেকে জকিগঞ্জের উদ্দেশে লংমার্চ শুরু হয়। দুপুর সোয়া ২টায় লংমার্চের গাড়িবহর জকিগঞ্জ পেঁৗছায়। বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত সমাবেশ চলে। এতে এরশাদসহ দলের ২২ জন কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতা বক্তব্য দেন।
জকিগঞ্জের জনসভায় স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান ও জাতীয় পার্টির নেতা শাবি্বর আহমদকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, 'শাবি্বর আমাদের আগামী দিনের সংসদ সদস্য।' এর আগে সকাল সোয়া ১১টায় গোলাপগঞ্জ উপজেলা সদরের চৌমুহনী ও দুপুর সোয়া ১২টায় বিয়ানীবাজারের চারখাই বাজারে দুটি পথসভায় গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, 'সেলিমকে আপনাদের কাছে রেখে গেলাম, ওকে আপনারা দেখবেন।'
সভায় টিপাইমুখ বাঁধ প্রতিরোধ লংমার্চ বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক ও জাপার সভাপতিমণ্ডলীর জ্যেষ্ঠ সদস্য কাজী জাফর আহমেদ 'সরকারকে চরমপত্র দেওয়ার সময় এসে গেছে' বলে মন্তব্য করেন। তিনি এরশাদকে উদ্দেশ করে বলেন, 'আপনি প্রধানমন্ত্রীকে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিতে বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী আপনার কথা না শুনলে মহাজোটকে লাথি মেরে বেরিয়ে আসুন, জনগণ আপনার সঙ্গে আছে।' কাজী জাফর টিপাইমুখ বাঁধবিরোধী লংমার্চ কর্মসূচি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের কয়েকজন মন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, '...এর অর্থ, সরকারের মৌন সম্মতি নিয়েই টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ হচ্ছে।'
জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক শাবি্বর আহমদের সভাপতিত্বে দলের মহাসচিব রুহুল আমীন হাওলাদার, কেন্দ্রীয় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কাজী ফিরোজ রশীদ, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, নূরে হাসনা লিলি চৌধুরী, সালমা ইসলাম, আতিকুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন।

No comments

Powered by Blogger.