শিক্ষা-সেমিস্টার পদ্ধতি ও চাকরির বাজারের চাহিদা by বিপাশা দত্ত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টার পদ্ধতি চালু হলেও ইংরেজি এখনও বাধ্যতামূলক নয়, যেহেতু গ্রাম থেকে প্রচুর ছাত্রছাত্রী প্রতি বছর ঢাবিতে ভর্তি হয় এবং তাদের জন্য হঠাৎ সম্পূর্ণ ইংরেজি মাধ্যমে মানিয়ে নেওয়া কঠিন হতে পারে বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে ও বাজার অর্থনীতির চাহিদা পূরণ করতে ২০০৬-২০০৭ সেশন থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টার পদ্ধতি চালু হয়। একই সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে অসংখ্য নতুন কোর্স। কিন্তু নতুন এই কোর্সগুলো চাকরির


বাজারের চাহিদা কতটা মেটাতে পারছে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই যায়। বর্তমানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ রয়েছে সবচেয়ে বেশি। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা মনে করেন, বেসরকারি চাকরিতে সফলতা পেতে হলে প্রাথমিকভাবে চারটি বিষয়ে দক্ষতা থাকা আবশ্যক_ উপস্থাপন, ক্ষমতা, বাণিজ্য অনুষদের বিষয়গুলোতে প্রাথমিক ধারণা, কম্পিউটার ও ইংরেজিতে দক্ষতা। তারা বলেন, চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদেরই অগ্রাধিকার দিতে চান। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তা সম্ভব হয় না ঢাবির ছাত্রছাত্রীদের দুর্বল উপস্থাপন ক্ষমতার কারণে। আইবিএ ছাড়া বেশিরভাগ ঢাবির ছাত্রছাত্রীদের ইংরেজি বলা এবং লেখার ব্যাপারে ব্যাপক সমস্যা রয়েছে এবং জানা বিষয়গুলোও তারা ঠিকমতো উপস্থাপন করতে পারেন না।
ঢাবির কয়েকজন শিক্ষক এই সমস্যার কারণ হিসেবে মনে করেন সেমিস্টার পদ্ধতিতে আগের থেকে অনেক সময়ে কোর্স শেষ করা এবং বিপুলসংখ্যক ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতিকে_ যার ফলে তাদের দিয়ে প্রেজেন্টেশন করানো সম্ভব হয় না, যা তাদের উপস্থাপন ক্ষমতা বাড়াতে পারত। তার ওপর ক্লাস নেওয়ার সময় মাল্টিমিডিয়া বেশিরভাগ সময়ই পাওয়া যায় না।
নতুন সিলেবাসগুলো থেকে দেখা যায়, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে লোকপ্রশাসন ও অর্থনীতি বিভাগে বাণিজ্য অনুষদের যথাক্রমে ১১টি (২৯%) বিষয়, ৯টি (১৫%) বিষয় অন্তর্ভুক্ত আছে এবং সমাজবিজ্ঞান বিভাগে বাণিজ্য অনুষদের কোনো কোর্স নেই। এই তিনটি বিভাগের মধ্যে একমাত্র লোকপ্রশাসন বিভাগেই সেমিস্টার পদ্ধতিতে উল্লেখযোগ্য অনেক কোর্স বাণিজ্য অনুষদ থেকে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। উলি্লখিত তিনটি বিভাগেই বাধ্যতামূলক কম্পিউটার শিক্ষার কোর্স রয়েছে। যদিও লোকপ্রশাসন বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের অনেক ছাত্রছাত্রী মনে করেন, এই কোর্সটি কম্পিউটারে তাদের দক্ষতা অর্জনে তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টার পদ্ধতি চালু হলেও ইংরেজি এখনও বাধ্যতামূলক নয়, যেহেতু গ্রাম থেকে প্রচুর ছাত্রছাত্রী প্রতি বছর ঢাবিতে ভর্তি হয় এবং তাদের জন্য হঠাৎ সম্পূর্ণ ইংরেজি মাধ্যমে মানিয়ে নেওয়া কঠিন হতে পারে।
এমন অবস্থায় নিয়োগকর্তারা যেসব দক্ষতা চাইছেন এবং ঢাবিতে যেসব বিষয় পড়ানো হচ্ছে তাতে একটা ব্যবধান রয়ে যাচ্ছে। কারণ অনুসন্ধান করতে গেলে লোকপ্রশাসন বিভাগের একজন অধ্যাপক বলেন, 'সিলেবাস পরিবর্তন এবং নতুন কোর্স চালু করার ক্ষেত্রে লিখিতভাবে ঢাবির সব স্বাধীনতা থাকলেও সিলেবাস পরিবর্তন করা এতই সময়সাপেক্ষ ব্যাপার যে, এরই মধ্যে নতুন বিষয়গুলো পুরনো হয়ে যায়। এই কারণে দশ বছরে (১৯৯৬-৯৭ থেকে ২০০৫-০৬) লোকপ্রশাসন বিভাগে সিলেবাসে পরিবর্তন হয়নি। এ ছাড়া কোনো শিক্ষক একদম নতুন কোনো কোর্স শুরু করতে চাইলে, অন্যরা ভাবেন ওই শিক্ষক কোনো কারণে চলে গেলে কে সেই কোর্স পড়াবেন?'
যদিও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন মনে করেন, কোর্স চালু করা ও পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে ঢাবির সম্পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে এবং সেমিস্টার পদ্ধতিতে বিষয়টি আর আগের মতো সময়সাপেক্ষ নেই।
চাকরির চাহিদা পূরণে ব্যর্থতার সবচেয়ে গুরুত্বর্পূ কারণ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে, নতুন কোর্স চালু করার সময় কখনোই নিয়োগকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা না করা বা তাদের চাহিদা বিবেচনা না করা। ঢাবির শিক্ষকরাও এই বিষয়টি নিয়ে একমত নন।
কয়েকজন শিক্ষক মনে করেন, শিক্ষক এবং নিয়োগকর্তাদের একসঙ্গে মতবিনিময় সভায় অংশ নেওয়া উচিত। আবার কয়েকজন শিক্ষক বলেন, ঢাবি কোনো ট্রেনিং সেন্টার নয় যে এই ধরনের সভার প্রয়োজন হবে।
অন্যদিকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা মনে করেন, এই ধরনের মতবিনিময় সভা আয়োজন করলে উভয়পক্ষই উপকৃত হবে, তাদের চাহিদা এবং ঢাবির প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় যে বৈসাদৃশ্য তা এই ধরনের সভার মাধ্যমেই দূর করা সম্ভব।

বিপাশা দত্ত : শিক্ষার্থী, মাস্টার্স অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিস (এমডিএস)
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

No comments

Powered by Blogger.