আরো দুটি মৃত্যু-বখাটের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন চাই

বার বখাটেদের উৎপাতের বলি মুন্নী ও রুমা। 'ইভ টিজিং' নামের যৌন হয়রানি থেকে নিজেদের রক্ষা করতে আত্মহননের পথই বেছে নিয়েছে দুই কিশোরী। এ মৃত্যুর দায় কে নেবে? সমাজ থেকে কবে দূর হবে ইভ টিজিং নামের এই সামাজিক ব্যাধি? ইভ টিজিং নামের সামাজিক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছে সমাজ। এ রোগ থেকে মুক্তি মিলছে না। কোনোভাবেই দূর করা যাচ্ছে না এই সামাজিক ব্যাধির সংক্রমণ। বখাটেরা কত নির্মম ও নিষ্ঠুর হয়ে উঠতে পারে,


তার অনেক উদাহরণ আছে। বখাটেদের উৎপাতে অনেক পরিবারই হারিয়েছে তাদের স্বজনকে। স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে অনেক পরিবারের। বখাটেদের উৎপাতে এলাকা ছেড়ে চলে গিয়েও মেয়েদের রক্ষা করা যায়নি। নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের রুমা রানী দাসই তো এর শেষ উদাহরণ। রূপগঞ্জের একটি স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী রুমাকে স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে উত্ত্যক্ত করত বখাটেরা। পরিবারের ও মেয়ের সম্ভ্রম রক্ষা করতে গিয়ে পরিবারটি এলাকা ছেড়ে চলে গিয়েছিল; কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হয়নি। পরিবারের একজনের অসুস্থতার কারণে এলাকায় এলে সন্ধ্যায় বখাটেরা রুমাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ অপমান সহ্য করতে পারেনি কিশোরী রুমা। রাতে ঘরে গিয়ে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেয় সে। একই গল্প ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মুন্নীর। পরিবারের অভিযোগ, তাকেও স্কুলে যাওয়া-আসার পথে উত্ত্যক্ত করত এলাকার এক বখাটে। তার হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে মুন্নীও বেছে নিয়েছে আত্মহননের পথ।
রুমা কিংবা মুন্নী ইভ টিজিংয়ের প্রথম বলি নয়। ইভ টিজিং থেকে নিজেদের রক্ষা করতে এভাবে কতজনের প্রাণ গেছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। সামাজিক অবস্থা থেকে এটা নিশ্চিত করে বলা যায়, এই সামাজিক ব্যাধি থেকে সমাজকে মুক্ত করার অনেক চেষ্টা করা হলেও সমাজের মুক্তি মেলেনি এ থেকে। আইন করা হয়েছে, ভ্রাম্যমাণ আদালত বখাটেদের শাস্তি দিয়েছেন। কিন্তু বখাটেরা এই অপতৎপরতা বন্ধ করেনি। বখাটেদের হাত থেকে মেয়েকে রক্ষা করতে গিয়ে জীবন দিতে হয়েছে মা-বাবাকে। শিক্ষক লাঞ্ছিত হয়েছেন ছাত্রীদের রক্ষা করতে গিয়ে। শিক্ষক মিজানুর তো জীবন দিয়েছেন বখাটের হাতে। এত কিছুর পরও বখাটেরা রয়ে গেছে বহাল তবিয়তে।
আমাদের সমাজব্যবস্থা বদলে ফেলার সময় এসেছে এখন। সামাজিক মূল্যবোধগুলো নতুন করে প্রতিষ্ঠিত করতে না পারলে সমাজকে এই রোগ থেকে মুক্ত করা যাবে না। দিনের পর দিন বেড়েই যাবে ইভ টিজিং নামের যৌন হয়রানি। আরো অনেক মুন্নী ও রুমাকে হয়তো এই হয়রানির বলি হতে হবে।
মুন্নী ও রুমার আত্মহননের কারণ এলাকার চিহ্নিত বখাটেরা। এর মধ্যে রুমাকে উত্ত্যক্ত করত_এমন বখাটেদের নাম পাওয়া গেছে। তাদের পাকড়াও করতে হবে। এই চিহ্নিত বখাটেদের এলাকার সন্ত্রাসী হিসেবেই বিবেচনা করতে হবে। বখাটেদের বিরুদ্ধে আইনকে আরো কঠোর হতে হবে। তাদের আইনের আওতায় এনে বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। মুন্নী-রুমার পরিবারের যে ক্ষতি হয়েছে, সে ক্ষতি পূরণ হবে না; কিন্তু সমাজকে কিছুটা হলেও যদি কলঙ্কমুক্ত করা যায়, তার চেষ্টা করতে হবে। বখাটেদের পরিবারকে সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। বখাটেদের বিরুদ্ধে গড়ে তুলতে হবে সংঘবদ্ধ সামাজিক আন্দোলন।

No comments

Powered by Blogger.