শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-শিকড়ের ১৬ বছর by রাজীব দে

'মুক্ত সংস্কৃতিতে গড়ে তুলি মানববন্ধন'_ এই স্লোগানকে সামনে রেখে ১৯৯৫ সালের ১৯ নভেম্বর সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাত্রা শুরু করে অন্যতম সাংস্কৃতিক সংগঠন 'শিকড়'। দেশজ সংস্কৃতিকে অন্তরে ধারণ করে চলছে এই সংগঠনটি। সব জাতীয় দিবস, পহেলা বৈশাখ, ঋতুবরণ, আদিবাসী_ লোকজ উৎসব, আবৃত্তি-নৃত্য উৎসব, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আয়োজিত সব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শিকড় তাদের কার্যক্রম অব্যাহত


রেখেছে। সংস্কৃতির ৪টি শাখা নিয়ে এর পথচলা। সঙ্গীত ও নৃত্যকলা, আবৃত্তি ও সাহিত্য, নাট্যকলা, চিত্রকলা বিভাগ নিয়ে দেশীয় সংস্কৃতির চর্চা করে আসছে সংগঠনটি। আলোকসজ্জা বিভাগ নিজস্ব অনুষ্ঠান, অন্যান্য সংগঠনের ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং সিলেট শহরের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সফল আলোকসজ্জার কাজ করে আসছে। সাংগঠনিক বিভাগ সব বিভাগের সমন্বয় সাধন ও প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেয়। শিকড় তার জন্মলগ্ন থেকেই জাতীয় দিবসে দেশীয় ধারার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। তা ছাড়াও পহেলা বৈশাখ, বসন্ত উৎসবে বিশ্ববিদ্যলয়ে এবং বাইরে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে আসছে। সিলেটে শিকড়ই সর্বপ্রথম মুখোশবিষয়ক কর্মশালা ও প্রদর্শনীর আয়োজন করে। ফানুস উৎসব, ঘুড়ি উৎসব এ ধরনের দেশীয় ধারার উৎসবকে সার্থক করে তুলেছে শিকড়ের অবিচ্ছেদ্য চিত্রকলা বিভাগ। লালন-হাসন লোকজ উৎসব, আদিবাসী লোকজ উৎসব, বর্ষাবরণ, বসন্তবরণ ইত্যাদি বাঙালি ধারার অনুষ্ঠান শিকড় করে আসছে আপন জাতি চেতনায় উদ্বুুদ্ধ হয়েই। এ পর্যন্ত ১৯টি নাটকের প্রায় ৩০টি মঞ্চায়ন, ক্যাম্পাসে প্রথম আবৃত্তি ও নৃত্য উৎসব, গুণীজন সংবর্ধনা, রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী ও আদিবাসীদের সংস্কৃতিকে উপস্থাপনসহ প্রায় সব ধারার সংস্কৃতি চর্চাকেই প্রধান্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে শিকড়। গত ৩০ নভেম্বর, ২ ডিসেম্বর, ৩ ডিসেম্বর ছিল শিকড়ের বর্ষপূর্তি উৎসব। 'আমার বল্গগ ডটকম-শিকড়ের ১৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উৎসব ২০১১' নামক এ বর্ণাঢ্য আয়োজনের প্রথমদিন সকালে ছিল আনন্দ র‌্যালি। এরপর শিকড়ের সব সদস্য, উপদেষ্টামণ্ডলী ও শুভানুধ্যায়ীদের নিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কেক কেটে এবং ফানুস উড়িয়ে ১৬ বছরপূর্তি উদযাপন করা হয়। এ সময় ক্যাম্পাসে সাবেক সদস্য, বর্তমান সদস্যদের এক মিলনমেলায় পরিণত হয়। উৎসবের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার বিকেলে শাবিপ্রবির কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যার শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন শিকড়ের অন্যতম উপদেষ্টা অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমদ। উৎসাহ-উদ্দীপনা সংবলিত এই অনুষ্ঠানে বিপুলসংখ্যক অতিথির উপস্থিতি ছিল। নৃত্যকলা বিভাগের পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠানটি। এ অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি শিল্পী হিসেবে রবীন্দ্রভারতী থেকে নৃত্যকলায় ডিগ্রিপ্রাপ্ত নওরীন রহমান দিশি নৃত্য পরিবেশন করেন। একক নৃত্য পরিবেশন করেন এ্যানি, দীপা এবং দলগত নৃত্য পরিবেশন করেন মলি্লকা, এ্যানি, অতশী। এরপর শিকড় আবৃত্তি ও সাহিত্য বিভাগ পরিবেশন করে বাংলা কবিতার ইতিহাস। 'কাব্য সিঞ্চনে' এই শিরোনাম দিয়ে চর্যাপদ থেকে শুরু করে রবীন্দ্র, নজরুল, জীবনানন্দ, সুনীল, শামছুর রাহমান প্রমুখ
কবির সব কবিতা দিয়ে সাজানো হয় এই
পর্বটি। 'সাদা-কালো গানগুলি' এই নামে শিকড় তাদের পরিবেশনায় পুরনো দিনের গান দিয়ে সাজায় তাদের পরিবেশনা। যা দর্শকদের আনন্দে মাতিয়ে রাখে। সব অনুষ্ঠান উপলক্ষে শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। বর্ষপূর্তির শেষ দিনে মিনি অডিটোরিয়ামে এক মিলনমেলার আয়োজন করা হয়। এরপর বিকেলে বর্ণিল ঘুড়ি উৎসবের মাধ্যমে বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের সমাপ্তি
ঘোষণা করা হয়। 

No comments

Powered by Blogger.